somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলোর উদ্ভাসে

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“রুপক তার ক্যানভাস, রং, প্যালেট আর ব্রাশ নিয়ে বসে। এখন রাত আড়াইটা। এমন নয় যে রুপক কোন প্রফেশনাল চিত্রকর। ছবি আঁকা তার নেশা। একদিন ক্যানভাসে রং লাগাতে না পারলে তার দম বন্ধ করা অনুভুতি হয়। পেইন্টিং তার স্বত্তা, তার অবসেশন। পেইন্টিং করার সময় সে সবকিছু ভুলে যায়। কোন কিছুই তাকে স্পর্ষ করতে পারে না। কয়েকদিন ধরে সে একটা এবস্ট্র্যাক্ট ছবি আঁকার চেষ্টা করছে। কিন্তু এবস্ট্র্যাক্ট পেইন্টিং বলে সে অনেক অর্থহীন আকিবুকি দেখেছে। কোনটাই তার মনে ধরেনি। ছবির সাবজেক্ট সে ঠিক করেনি। পেইন্টিং চলুক তার নিজের ছন্দে। এই ছন্দ অনেকটা কবিতার মতো। ছন্দে খানিক ভুল হলে যেমন কবিতা ভাল লাগে না তেমনি পেইন্টিং এর ছন্দে সামান্য দুর্বলতা তার সহ্য হয় না। রুপক ঠিক করে শুধু লাল রঙ্গের বিভিন্ন শেড দিয়েই ছবিটি আঁকবে। সে প্যালেটে লাল লং নেয় সাথে সাদা। বিভিন্ন শেড বানায়। আধঘন্টাপার হয়ে যায়। ক্যানভাসে শুধু একটি আঁচড় দিতে পেরেছে সে। রুপকের ভীষন অস্বস্তি লাগে। কেন এমন হচ্ছে! তাহলে কি..........”

এটুকু লিখে সে থেমে যায়। লাঞ্চব্রেকের পর পনের মিনিটে আর কতই লিখা যাবে! কবিতা হোক বা গল্প তার ভিতরে সবসময়েই উলট পালট খায়। ওরা বাইরে আসতে চায় কিন্তু জাগতিক কর্মব্যস্ততার মাঝে ওরা ভিতরে আটকে থাকে। ছন্দগুলো, গল্পগুলো তার ভিতরে জমা হতে থাকে।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে লেখা বন্ধ করে। তার মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে কোন নির্জন যায়গায় চলে যেতে। যেখানে শুধুই নিস্তব্ধতার তরঙ্গ থাকবে। হ্যাঁ নিস্তব্ধতারও তরঙ্গ আছে। এই তরঙ্গ অনেক শক্তিশালী। ভিতরের নতুন এক স্বত্তা তখন কথা বলে উঠে। আরেকবার একচিলতে আকাশের দিকে চেয়ে সে কাজে মন দেয়।

কাজ তাকে ছাড়ে না। সব কাজ শেষ করতে হবে। তারপরে নিজের জন্য সময় পাওয়া যাবে। এভাবে হয়তো একদিন তার চামড়া কুঞ্চিত হয়ে আসবে, চুলে পাক ধরবে, দৃষ্টি ঝাঁপসা হয়ে আসবে। তারপর কাজই তাকে বিদায় দেবে। সেদিন কোন এক নির্জনতায় সে চাওয়া পাওয়ার হিসেব মিলাতে বসবে। তার শঙ্কা হয় সেদিন যদি দেখে কিছুই পাওয়া হয় নি তাহলে! এই ভাবনা থেকেই তার সৃজনশীলতার উন্মেষ। আসলে এটা সব মানুষের মাঝেই জন্ম থেকেই থাকে। মানুষের চেয়ে বেশী সৃজনশীল কে আছে? কিন্তু সবাই বের করতে পারে না এটা।

বিচ্ছিন্ন চিন্তা গুলোর সুতো ছিড়ে যায় তার। মোবাইলের রিংটোন শুনে। নতুন কোন এসাইনমেন্ট হবে হয়তো। বসের ফোন। সে রিসিভ করে।


এখন রাত। সারদিনের প্রচন্ড ব্যাস্ততার পর তার রেস্ট নেয়ার দরকার ছিল। কিন্তু শারীরিক বিশ্রাম থেকে মানসিক বিশ্রাম বড়। মানসিক বিশ্রাম হলে শরীরও বিশ্রাম পায়। সে মনকে বিশ্রাম দিতে হাঁটছে রাস্তায়। মন্ত্রমুগ্ধের মতো যা দেখছে তাতেই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে সে। আকাশে মরা চাঁদকে ও এত সুন্দর লাগছে! কুয়াশার চাদর ভেদ করে আসা চাদের কোমল মায়াবী আলো ভ্রমের সৃষ্টি করে।

সে যেন দেখতে পায় রপক কে ক্যানভাস হাতে। দিশেহারার মতো পেইন্টিং এর সাবজেক্ট খুঁজে বেড়াচ্ছে। রুপককে তার নিজের স্বত্তার অংশ মনে হয়। মনে হচ্ছে রুপক যেন তাকে বলছে “ আমাকে আর কষ্ট দেবেন না প্লিজ, পেইন্টিং আমার জীবন। আমি ক্যানভাস ছাড়া কিছু ভাবতেও পারি না। আপনি আমাকে এভাবেই কল্পনা করেছেন এখন ছেড়ে দিতে পারেন না!” লেখক দেখে তার সাবজেক্ট তো তার কাছেই চলে এসেছে!

একটি মোটরসাইকেলের তীব্র হর্ণে তার হুঁশ ফিরে। মনে হচ্ছে যেন রুপক হয়ে তার ভিতরের স্বত্তাটি চলে এসেছে। তার ভিতরের স্বত্তা রুপম হয়ে কথা বলছে তার সাথে। সে দ্রুত বাড়িতে যায়। এখনও রাতের অনেক খানিই বাকি। সে রুপকের মতো পেইন্টার নয়। কিন্তু রুপম আর সে দুজনেই শিল্পী।

সে লিখতে বসে। রুপমের হাতে চলে তার ক্যানভাসে। রং আর ব্রাশ দিয়ে সে সৃষ্টি করে চলে তার শিল্প। আর লেখকের হাতে চলে কি বোর্ড এর উপর। সেও সৃষ্টি করে তোলে রুপককে। রুপক তো তারই সৃষ্ট শিল্প! সে যত্ন করে সৃষ্টি করে রুপমের শিল্পী স্বত্তাকে যেখানে রুপক শুধু লাল রং এর শেড দিয়ে পেইন্ট করে চলে। লাল রং গুলো যেন সুনিপুন এক শিল্পীর ব্রাশের আঁচড়ে ক্যানভাস জুড়ে খেলা করতে থাকে। আর লেখকের হাতের ছোয়া রুপক যেন জীবিত হয়ে উঠে। এখানেই লেখকের সার্থকতা।
পেইন্টার না হয়ে ও একজন পেইন্টার সৃষ্টি করেছে কল্পনায় যে পেইন্টারের চোখে মুখে শিশুর মুগ্ধতা নিজের সৃষ্টি দেখে। এই মুগ্ধতা তো লেখকের মুগ্ধতাই! রুপক নামের একটি চরিত্র সৃষ্টি আনন্দে তার চোখে মুখেও শিশুর মুগ্ধতা। লেখা শেষ হলে লেখকের রজনী ক্লান্ত চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। সে এত আনন্দ কি কখন ও পেয়েছে আগে! সৃষ্টির আনন্দ এত তীব্র কেন? শিল্পী তো নিজেই জানে না! মানুষ যখন শিল্পী হয়ে ওঠে তখন সে জানতে পারে সেও স্রষ্টা।

তার মনে হতে থাকে হয়তো সেই দিন যেদিন জীবনের চাওয়া পাওয়ার হিসেব মিলাতে বসবে সেদিন আজকের রাতটা অনন্য এক পাওয়া হয়ে থাকবে! রাতে শেষ ভোরের সূর্যকে উঁকি দিতে দেখা যাচ্ছে। চারদিক রক্তিম হয়ে আসছে। লেখক তার সদ্যসমাপ্ত লেখাটা একবার দেখে আরেকবার ভোরের অনন্য দৃশ্য দেখে।

গল্পের শেষাংশ টুকু লিখে- “ রুপক তার পেইন্ট শেষ করে। মুগ্ধ হয়ে তাকায়। চিত্রকর্মের বিষয় ভোরের সুর্যোদয়। শুধু লাল রঙের শেড দিয়ে যে পেইন্টিংটা এত ভাল হবে সে আগে জানতো না। ভোর হয়ে আসছে রুপক একবার সুর্যটিকে দেখে আরেকবার নিজের তৈরী পেইন্টিংটি দেখে। ভোরের সূর্যোদয় থেকে তার কাছে নিজের তৈরী পেইন্টিংটিই ভাল লাগে। রজনীক্লান্ত চোখে সে মুগ্ধ চোখে নিজের পেইন্টিংটি দেখে।”

ঠিক লেখকও ভোরের সুর্যোদয়কে না দেখে নিজের লেখাটিই বারবার পড়ে। নিজের ভিতরে এক অনালোকিত আলোর উদ্ভাস সে নতুন করে আবিষ্কার করে। এত আলো যে তার ভিতরে ছিল সে জানতো না। অনালোকিত আলো।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:১৫
২১টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×