somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই মেলা গতকাল

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বই মেলা এখনা আকর্ষণ করে না আমাকে। নানাবিধ অনুশাসনের ভীড়ে বইমেলার হট্টগোলে নিজেকে অবাঞ্ছিত উটকো আগন্তুক মনে হয়। বারোয়ারী বইমেলার সময়টাতে দোয়েল চত্ত্বর থেকে টি এস সি পর্যন্ত ছমছম মানুষের ভীড়ে হেঁটে যেতে যেতে বিমর্ষ হতাম। বটি, স্যান্ডেল, রাজ্যের অহেতুক পসরা নিয়ে বসে থাকা মানুষ, উচ্চশব্দের গান, দিনমান উৎসবের সময়টাতে অসহ্য লাগতো সবকিছুই। পরিচ্ছন্ন বইমেলার কথা ভাবতাম।
তেমন সুযোগ হলো, বাইরের রাস্তার ভীড় সরিয়ে একেবারে পাঠক-লেখকের বই মেলায় গেলাম, তখন দুপুরে যাওয়া যেতো। বই মেলা জুড়ে ধুলা উড়ছে, তেমন ভীড় নেই, বই মেলা বই দেখা, বই বাছাই সবই অন্য রকম লাগতো।
হুমায়ুন আজাদ তখন বিকালের সোহওয়ার্ডিতে দৌড়ানো বাদ দিয়ে নিবিষ্ট মনে বসে থাকতেন অনন্যার স্টলে। তার গলার স্বর, তাক কথা বলার ভঙ্গি, তার উচ্চারণ সচেতনতা আমার অপছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকতো বইমেলা কালীন সময়ে।
হুমায়ুন আহমেদকে আজাদের তেমন পছন্দ ছিলো না। আমার বই মেলা বিনোদনের একটা অংশ ছিলো কল্পনায় হুমায়ুন আহমেদের বই নিয়ে তাতে হুমায়ুন আজাদের অটোগ্রাফ নেওয়া।অনেক ভেবেও সেরকম সাহস হয় নি, হুমায়ুন আহমেদের বইয়ে হুমায়ুন আজাদের অটোগ্রাফ নেওয়া হয় নি। বই মেলা তখন হুমায়ুন আহমেদের ভক্তদের কবলে। তিনি আসছেন, বইয়ের স্টলে মাছি থকথকে ভীড়।

ইমদাদুল হক তেমন আকর্ষণের বস্তু হয়ে উঠতে পারেন নি। প্রায়শই তার সাথে দেখা হতো। রিকশা দরদামের প্রতিদন্ডি। তাকেও বই মেলায় উদভ্রান্তের মতো ঘুরতে দেখলে মনে হতো, ম'লো যা ম্লেচ্ছতো পিছা ছাড়ে না- বই মেলা পর্যন্ত ধাওয়া করেতেছে।
জাফর ইকবাল, তখনও তার বিখ্যাত গোঁফ সাদা হয় নি, নির্বিঘনে হাঁটতে পারতেন, হাঁটতে পারতো আনিসুল হক, রফিক আজাদ, মহাদেব সাহা, দিলারা হাফিজ- অসীম সাহার কবিতা পড়ে তাকে গালি দেওয়ার তীব্র মর্ষকাম পূরণ হয় নি- কবির স্ত্র ীকেও বোধ হয় কবিতা লিখতে হয়, তাই তার বিবিজানও কবিতা লিখেন- অতিশয় অখাদ্য কবিতা এর পরও তাদের চামড়ার চোখে ধরা যেতো অবলীলায়। অবশ্য কারো সাথেই ব্যক্তিগত পরিচয়ের সুযোগ হয় নি। তাদের চিনতাম ফ্ল্যাপের ছবি দেখে। ফ্ল্যাপের একমাত্র উপযোগিতা।

অহেতুক কাউকে হয়রানী করার ভালো উপলক্ষ হতে পারে বই মেলায় তাকে বিকেল বেলা ছেড়ে দেওয়া-যদি বিখ্যাত কিংবা জনপ্রিয় লেখন হন তিনি- হেনেস্তার চুড়ান্ত হবেন। এর পরের কোনো এক সময় স্বাস্থ্য সচেতন পাঠকেরা এবং ততোধিক সচেতন কতৃপক্ষ বই মেলায় সিগারেট ফুঁকা নিষিদ্ধ ঘোষণার পর বই মেলার আকর্ষণ কমে গেলো।
এবং তখন নিটান্ট দায় না পড়লে বই মেলায় যাওয়া হতো না, গেলেও বাংলা একাডেমী, সুপার ডিসকাউন্টে বই কিনতে।
মাঝে 4 বছর হাহাকার ছিলো, বই মেলার বাতিল ধুলা গায়ে মাখবো- তবে বইমেলা এখন উন্মুক্ত স্বাস্থ্যার্থিদের জন্য এমন ধারনা ছিলো না। হাজার হাজার মানুষ ছোট একটা পরিসরে গায়ে গা ঠেকিয়ে হাঁটা চর্চা করছে এমন বইমেলা আমি চাই না। উটকো মানুষ গায়ের উপর পড়লে সেটা উপভোগ্য না- যদি তেমন উপভোগ্যা নারী পড়তো হয়তো অন্যরকম হতো বিবেচনা- তবে পোড়ার কপালে তেমন জুটে না। ছেলেদের ধাককা আর কানুইয়ের গুঁতা যার নিত্যভক্ষণ তাকে মাছি থকথকে ভীড়ের সুন্দরী ললনা আকর্ষণ করে না।
যাবো না, যাবোই না ভেবেছিলাম। দুপুরে শাহবাগ থেকে রিকশা নিয়ে ভাবছিলাম কার্জন হল যাবো। যাওয়া গেলো না। টি এস সি পর্যন্ত আসার পরও পরিকল্পনা বদল হয় নি। সেখানেই রাস্তায় ব্যারিকেড। রিকশা চলবে না। পরিকল্পনা ছিলো এই মাঝের পথটা হেঁটে তার পর দোয়েল চত্ত্বর থেকে রিকশা নিয়ে বাসা। টিএসসির গেটের সামনে আসতেই দেখলাম শরৎ বিখ্যাত শরীর নিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে রাস্তা পার হচ্ছে।তার পেছনে কড়া মাঞ্জা মারা কৌশিক আর তার বৌ। শিং ভাঙবো না ভাংবো না ভেবেও শিং মুড়িয়ে এঁড়ে বাছুর। হাঁটতে হাঁটতে বটতলা। মাঝে র্যাব ভাইদের কর্মতৎপরতা- এর পর একে একে সব পরিচিত মানুষদের দেখা পাওয়া- সামনে কালপুরুষ, ঝড়ো হাওয়া, বাকী ,ব্রাত্য, জামাল ভাস্কর, এবং জেবতিক-
ব্রাত্য কালপুরুষ ঝড়ো বাদ দিলে "অপরবাস্তবের কল্যানে সবার সাথেই টুকটাক আড্ডা হয়েছে। এর পর সাকিবালমাহমুদ এবং তার পরেই কাতরলোচন যুবকসহ ইমন, শুভ এবং তার প্রকাশক। বিশাল লটবহরের মাঝেই বইমেলা নীতিমালা ভঙ্গ করে ধুমপায়ী জনগনের প্রতিনিধি হয়ে আমরা ক'জনায় বিড়ি টানলাম। ক্লেশময় ধুমপান বলা যায়- স্পষ্ট আইন লঙ্ঘন করতে বিবেকে বাধে তবে ছড়ানো সিগারেটের অবশিষ্টাংশ দেখে সান্তনা পাই বেআইনি আচরন শুধু আমরাই করছি এমন না।
শুভ'র নাকাল হওয়ার ঘটনায় বিমর্ষ হই। একজন লেখককে অপরাধির মতো খানাতল্লাশী করা অনুচিত মনে হয়। তাছাড়া শুভ র চেহারায় তেমন প্রফেশনাল রংবাজ ভাব নেই- বেশ নিরীহ গোছের মানুষ।
এর ভেতরেই জাফর ইকবালের উপর অটোগ্রাফ শিকারীদের হামলা- একবার মনে হলো তাকে গিয়ে বলি- জনা বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে পকেটে স্ট্যাম্প প্যাড নিয়ে ঘুরেন, সাক্ষরতার লেভেলে আপনি অনেক উঁচু হতে পারেন তবে এই অটোগ্রাফশিকারিদের হাত থেকে বাচার সহজ উপায় টিপসহি। জীবন বাঁচাতে বৃদ্ধাঙ্গুলির ব্যাবহার শিখে নেন। ঝপাঝপ ছাপ মারবেন, আপনার স্পর্শ পেয়ে ধন্য হয়ে যাবে তাদের হৃদয়।
বই মেলায় কেজি মামুন " একমুঠো ভালোবাসা " বেচছেন 20 টাকায়- যদি তিনি স্ট্যান্ডার্ড ওয়ান হতেন তবে কত দামে একমুঠো ভালোবাসা বেচতেন সে হিসাব কষতে কষতে আমি বইমেলা চত্ত্বর ছেড়ে ভাগলাম।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×