somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এবং ভ্যালেন্টাইন

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ ভোর ৪:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুরনো গল্প দিয়ে শুরু করা যাক ।
শত্রু রাজ্যের রাজকণ্যার প্রেমে পড়লো রাজপুত্র। একদিকে দুই রাজায় চলে যুদ্ধ। মারামারি। হানাহানি। অন্যদিকে রাজপুত্র আর রাজকণ্যার উথাল পাথাল প্রেম। গোপন অভিসার। ঘটনাক্রমে একদিন শত্রু রাজ্যে ধরা পড়লো রাজপুত্র। নিয়ে যাওয়া হলো রাজ দরবারে। রাজপুত্র প্রবল বিক্রমে ঘোষণা করলো - 'আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই'। শুনে রাজা রেগে অগি্নশর্মা। অন্যদিকে রাজকণ্যাও অনড়, এই রাজপুত্রের গলায় সে মালা পরাবেই পরাবে। নয়তো আহার নিদ্্রা ছেড়ে...।
রাজা পড়লেন মহা সমস্যায়। একদিকে শত্রু রাজ্যের রাজপুত্র। অন্যদিকে কণ্যা স্নেহ। উভয় সংকট! উজির-নাজির-সভাসদ ডেকে আসর জমালেন রাজা। কীভাবে এ রাজপুত্রকে শায়েস্তা করা যায়! চলে জটিল সব শলা-পরামর্শ।
শেষে রাজা বের করলো এক চমকানো খেলা। ঘোষণা দেয়া হলো - লটারী হবে। দুইটা কাগজ থাকবে ভাজ করা। একটায় লেখা থাকবে - 'আমি রাজকণ্যাকে পেলাম, এবং তাকে আমার রাজ্যে বৌ করে নিয়ে যাচ্ছি'। অন্যটায় লেখা থাকবে - 'আমি রাজকণ্যাকে পেলাম না। আমার মৃতু্যদন্ড ঘোষণা করা হোক'।
লটারীর আয়োজন করা হলো।
ঢোল-বাজনা বাজিয়ে আশেপাশের তিন রাজ্যের লোক জমা হলো।
কিন্তু রাজা করলো অন্য চালাকী । দুটা কাগজেই লিখলো - 'আমি রাজকণ্যাকে পেলাম না। আমার মৃতু্যদন্ড ঘোষণা করা হোক'।
যথাসময়ে রাজপুত্রের সামনে দুটি ভাজ করা কাগজ রাখা হলো। রাজপুত্র একটি কাগজ তুলে পড়লো। তারপর রহস্যময় হাসি দেয়।
...শেষ পর্যন্ত রাজপুত্র রাজকণ্যাকে বিয়ে করে বীরবেশে স্বরাজ্যে গিয়েছিল।
মাঝে কী ঘটলো সেটা বলছি একটু পরে...।

[গাঢ়]ভালোবাসা অন্ধ, বিয়ে চোখ খুলে দেয়:[/গাঢ়]
রাজপুত্র-রাজকণ্যার কাহিনী এখন নেই। একবিংশে এসে ভালোবাসাও এখন উৎসব। দিনক্ষণ বেছে ঘটা করে বলতে হবে - 'আমি তোমাকে অনেক অনেক আই লাভ য়ূ্য করি'। ভালোবাসা পরিমাপ হবে রঙীণ কার্ডের চমকানো বাহারে। কে জানি একবার বলেছিল - 'ভালোবাসা মরে যায় একমাস দশ দিন পর'। মরে কোথায় যায়? হয়তো বা চল্লিশ দিনের তাবলীগি চিল্লায় যায় আখেরী জামানার এন্তেজামে। এদিকে বিয়ের পর দুনিয়াদারীর হিসাব-নিকাশে যখন মাথা চককর দেয় নিয়ত, তখন ক'জনেরই বা মনে থাকে ভ্যালেন্টাইন ডে-র কথা!

ভ্যালেন্টাইন ডে-র সকালে ঘুম থেকে উঠে স্ত্রী তার স্বামীকে বলছে
- জানো, আজ রাতে স্বপ্নে দেখলাম তুমি আমাকে দামী একটি হীরার নেকলেস দিয়েছ। বলো তো এর মানে কী?
স্বামী মুচকি হেসে বলে - এর মানে তুমি আজ সন্ধ্যায় জানবে।
স্ত্রী সারাদিন নানান ভাবনায় ডুবে থাকে। ভাবে - স্বামী বুঝি সন্ধ্যায় সত্যি সত্যি হীরার নেকলেস নিয়ে আসবে...।
সন্ধ্যায় স্বামী ঘরে ফিরে। হাতে রঙীণ কাগজে মোড়ানো একটি প্যাকেট। স্ত্রীর জন্য উপহার। স্ত্রী অস্থির উত্তেজনায় প্রবল আগ্রহে প্যাকেট খুলে দেখে ছোট্ট একটি বই। বইয়ের নাম - সোলেমানী খাবনামা ও তাবীর, স্বপ্নে কি দেখিলে কি হয়!!!

[গাঢ়]ভালোবাসার এপাশ ওপাশ:[/গাঢ়]
ভালোবাসা নাকি অনেকটা জলবসন্তের মতো। সবার জীবনে একবার না একবার আসবেই। ভালোবাসার তীব্রতাও প্রকট, কবিতায় যেমন - 'ভালোবাসতে বাসতে ফতুর করে দেবো'। ভালোবেসে কেউ কেউ সত্যিই নি:স্ব হয়ে যায়। মান্না দে গেয়ে গেছেন - 'ভালোবাসা মোরে ভিখারী করেছে তোমারে করেছে রাণী'। তবে ভার্সিটির এক কণ্যাকে ভালোবেসে ভিখারীনি হতে দেখেছিলাম। প্রেমিক প্রবর পুরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নিয়েছিল নানান ছলে কৌশলে। এ নিয়ে প্রেমিকার কোন ােভ ছিল না। ওটা নাকি - 'যে দরে কেনা সে দরে বেচা' কাহিনী! অল্প কিছু দিনের মাঝেই ঐ জুটি নতুন ভালোবাসার সন্ধান পেয়েছিল। ছেলেটিকে দেখেছিলাম সেকেন্ড ইয়ারের লোমেলার সাথে ধাবা রেস্টুরেন্টে দই ফুচকা খেতে। আর মেয়েটি ততদিনে এমবিএ-এর এক সিনিয়র ভাইয়ার সাথে লিমুজিনে চড়ে বেড়ায়। ওয়েস্টার্ণ গ্রীলে বার্গার আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেতে খেতে সুইজারল্যান্ডে হানিমুনের স্বপ্ন দেখে। কারো কারো জীবনে ভালোবাসা আসে নানা রঙে কিংবা ঢঙে। ই-মেল অ্যাড্রেস কিংবা মোবাইল নাম্বারের মতো পালটে যায় ভালোবাসার মানুষ। নচিকেতার ভাষায় - 'ভালোবাসা কোন পেসমেকার তো নয়, শুধু এক বুকে পাবে যা আশ্রয়, ... যার মন বড় যত ভালোলাগে অবিরত, তারাই তো ভালোবাসে বারবার।'

তবুও কমিটমেন্টের ব্যাপারটি একদম অগ্রাহ্য করা যায় না। কেউ কেউ মন থেকে বলে - 'পৃথিবীর কাছে তুমি একজন মানুষ মাত্র, কিন্তু জেনে নিও - একজন মানুষের কাছে তুমিই তার পৃথিবী। আমিই সেই জন!'


[গাঢ়]কেন এই ভালোবাসাবাসি:[/গাঢ়]
সওয়াল-জবাবের পর স্বর্গে প্রবেশের অনুমতি পেলো রোমিও। ঈশ্বরকে বললো - ঈশ্বর, আমি কি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে পারি?
ঈশ্বর অনুমতি দিলো।
রোমিও জিজ্ঞেস করে - আপনি মেয়েদের এতো চমৎকার করে বানালেন কেন?
- চমৎকার বলেই তো তোমরা তাদের পছন্দ করো।
- কিন্তু আপনি তাদের এতো রূপবতী করে পাঠালেন কেন?
- রূপবতী বলেই তো তোমরা তাদের ভালোবাসো।
রোমিও এবার একটু ভাবে, আবার প্রশ্ন করে - রূপবতী করলেন, মানলাম। কিন্তু তাদের বুদ্ধিসুদ্ধি কম দিলেন কেন?
- এ জন্যই তো তারা তোমাদের ভালোবাসে।
ঈশ্বরের জবাব শুনে রোমিও স্বর্গে পা রাখে। ভালোবাসা হোক বোকার স্বর্গ, তবুও ভালোবাসা বেঁচে থাক।

ফিরে আসি সেই রাজপুত্র আর রাজকণ্যার গল্পে।
রাজপুত্র আগেই টের পেয়েছিল - কোথাও একটা চালাকী হচ্ছে। তাই অনুমানও করে নিয়েছিল কাগজগুলোয় কী লেখা থাকবে।
...কাগজ হাতে নিয়ে রাজপুত্র পড়ে কী লেখা আছে। তারপর রহস্যময় হাসি দেয়। হাসি দিয়ে কাগজটি ভাজ করে নিজের মুখে দিয়ে গিলে ফেলে। বলে - 'আমার পছন্দের অপশনটি আমি গিলে ফেললাম, এখন দেখি অন্য কাগজে কী লেখা আছে!'
সবাই দেখলো অন্য কাগজে লেখা আছে - 'আমি রাজকণ্যাকে পেলাম না। আমার মৃতু্যদন্ড ঘোষণা করা হোক'।
রাজা থতমত খায়।
রাজপুত্র বিজয়ীর হাসি হাসে।
সবাই জেনে যায় - রাজপুত্রের তুলে নেয়া কাগজে লেখা ছিল - 'আমি রাজকণ্যাকে পেলাম, এবং তাকে আমার রাজ্যে বৌ করে নিয়ে যাচ্ছি'।
ততক্ষণে বেজে উঠে সানাইয়ের সুর।
জয় হয় ভালোবাসার।
কেবল আবেগ নির্ভর নয়, সাথে জয় হোক - বুদ্ধিবৃত্তিক ভালোবাসার!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ৮:১১
২১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রফেসদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×