somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বি মাই ভ্যালেনটাইন

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগামীকাল ভ্যালেনটাইন'স ডে। এদেশে আমার তৃতীয় ভ্যালেনটাইন'স ডে হবে এটা। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো আমার কোন ভ্যালেনটাইন নেই, কোনদিন ছিলও না। কেউ আমাকে শুভেচ্ছা জানাবে না, পাঠাবে না একটি চিত্তাকর্ষক টেক্সট ম্যাসেজ বা হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা নিয়ে কেউ লিখবে না একটি ই-মেইল। ব্যস্ততার মাঝেই হয়ত দিনটি কেটে যাবে। কিন্তু দিন শেষে বাড়ি ফিরে একটু কি আক্ষেপ করব না? অবশ্যই করব। ফেলে আসা সুযোগগুলোর সদ্্ব্যবহার করতে না পারার গ্লানি তো কিছুটা তাড়া করবেই।

আমার জীবনের প্রথম ভালোলাগার গল্প আগেই বলেছি। ভাইস প্রিন্সিপাল স্যারের বেত্রাঘাতে সে ভালোলাগা জানালা দিয়ে পালিয়েছিল। 14 থেকে 16 বছর বয়সটা ছিল একটা অদ্ভূত সময়। যাকে দেখতাম তাকেই ভালো লাগত। সকালে এক মেয়ের জন্য পাগল হয়ে যেতাম। আবার বিকালে মনে হত "ধূর!! ঐ মেয়ে পুরা ফাউল।" স্বপ্নময় সময় ছিল সেটা। তবে সত্যিকার অর্থে যাকে পছন্দ করেছিলাম, তাকে কখনই ভালোলাগার কথাটা বলা হয়ে উঠে নি। তার নাম ছিল মৌরিন। একই ব্যাচে প্রাইভেট পড়তাম স্যারের বাসায়। আমার জীবনে দেখা সেরা মেয়ে হলো মৌরিন। প্রথমে পাত্তা দেই নি। ভেবেছিলাম সাময়িক ভালোলাগা। সময়ের সাথে চলে যাবে। কিন্তু আমার জীবনের সবচেয়ে বড় "ক্র্যাশ" ছিল ওই মৌরিন। শুরুটা আমার বন্ধু রাবি্বকে নিয়ে। রাবি্ব প্রথম মৌরিনকে পছন্দ করে বসে। তারপর ব্যাচ বদল করে আমাদের ব্যাচে চলে আসে। আমরাও রাবি্বকে মৌরিনের আশেপাশে বসার সুযোগ করে দিতাম। কিন্তু গর্দভটা একদিন স্যারের সামনে আমাকে বলে বসে "দোস্ত, তোর কাছে কি মৌরিতানিয়ার স্ট্যাম্প আছে?" এই কথাটাই রাবি্বর কাল হয়ে দাঁড়ায়। স্যার তৎক্ষণাত ওকে বেরিয়ে যেতে বলেন ও আমাদের ব্যাচে ওকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন।

এ ঘটনার পর থেকে কেন জানি আমার হৃদয় মৌরিনের জন্য বিগলিত হয়ে যায়। পড়াশুনা মোটামুটি লাটে উঠে বসে। ফলাফল টেস্ট ও প্রিটেস্টে টি টি পি (টেনে টুনে পাস)। বাবা-মা মহা চিন্তিত হয়ে পড়েন। আমিও নিজের ভবিষ্যত অন্ধকারের মত কালো দেখতে পাই। কিন্তু মৌরিনকে কিছু বলার সুযোগ বা সাহস পাই না। তাছাড়া কোন কাজেও উৎসাহ পাই না। সারাদিন মাথার মধ্যে এই মেয়ের চিন্তা। মহা যন্ত্রণা যাকে বলে আর কি!! সবচেয়ে বড় যে বিপত্তিটা ছিল তা হলো একই ব্যাচে স্যারের কাছে আমার ছোট বোনও পড়ত। ছোটবোনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। তাছাড়া এই মেয়ে খুবই মৌরিনভক্ত, সারাদিন "মৌরিন আপু এই করেছে, ওই করেছে" বিষয়ক কথাবাতর্া বলে। তাই এই বাধা টপকে মৌরিনকে কিছু বলা আমার সম্ভব হয়ে উঠে নি। ধীরে ধীরে আমিও কিছু হবে না ও নিয়তির হাতে নিজের ভাগ্য সমর্পণ করে পড়াশুনায় মনোনিবেশ করলাম। এস এস সি পরীক্ষাতে অনেক লেটার ও স্টার-মুন মার্ক পেলেও প্রেমের পরীক্ষার খাতায় একটি নম্বরও স্কোর করতে পারি নি।

পৃথিবীটা খুবই ছোট জায়গা। এস এস সির পর ধরে নিয়েছিলাম, আমার জীবনে মৌরিনের কোন সহান নেই ও ওর সাথে আমার আর দেখা হবে না। কিন্তু কলেজের প্রথম বর্ষেই ওর সাথে আমার দেখা হয়ে গেল। বিতর্কের একটি ওয়ার্কশপে অংশগ্রহন করার জন্য কলেজ থেকে গিয়েছিলাম ভিকারুনি্নসাতে। বিতর্কে আমার কোন ইচ্ছা বা আগ্রহ ছিল না। শুধুমাত্র ভিকারুনি্নসাতে প্রবেশের জন্যই আমার এই অংশগ্রহন ছিল। যাই হোক, ভিকারুনি্নসাতে ঢুকেই চোখে পড়ল মৌরিনকে। ভদ্্রতার খাতিরে জিজ্ঞাসা করলাম কেমন আছো? কি? খবর এ জাতীয় কিছু টুকটাক কথা। আরও কিছুক্ষন কথা বলার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সহপাঠিদের তাড়ায় তা আর হয়ে উঠে নি। এই বিষয়টা আমার সহপাঠিনী নাদিয়ার চোখে পড়ে গেল ও সে আমাকে পূর্ণসহযোগীতার আশ্বাস দিল।কিন্তু আমার পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর জন্য কেন জানি আর মনের সাড়া পেলাম না।

মৌরিনের সাথে শেষবার দেখা হয় আমার কলেজের এক সহপাঠির ভাইয়ের বিয়েতে। এমনিতে সে দেখতে ছিল অপূর্ব সুন্দরী। সোনালী রঙের শাড়ি পরা অবসহায় সেদিন ওকে দেখে মনের গভীরে থাকা সুপ্ত ভালোলাগার অনুভূতিগুলো যে হালকা ঝাঁকি দেয় নি, তা স্বীকার না করলে মিথ্যা বলা হবে। সেদিন আমি মোটামুটি ঠিক করেছিলাম বলব তাকে এই ভালোলাগার কথা। সব বন্ধুরা যখন খেতে বসলাম, তখন নাদিয়া এসে আমাকে বলেছিল, "আমি ও মৌরিন একটু পরে বসব। কারন মৌরিনের বয়ফ্রেন্ড এখনও আসেনি।"

মৌরিনের বয়ফ্রেন্ড ছিল আমারই এক বন্ধু সামি। পরবতর্ীতে তাদের ব্রেক আপ হয়ে যাওয়ার পর সামি আমার বন্ধুমহলে রসিয়ে রসিয়ে মৌরিনের কাল্পনিক বা বাস্তব শারীরিক সৌন্দয্যর্ের বর্ণনা দিত, যা শুনে আমি খুবই মমর্াহত হয়ে পড়তাম। জীবন বড়ই নিষ্ঠুর। অস্ট্রেলিয়ায় আসার কিছুদিন আগে শুনেছি মৌরিন ওর হাসব্যান্ডের সাথে এদেশেই কোথাও আছে।

জানি না শোনা ঘটনাগুলো কতখানি সত্য বা মিথ্যা বা মীথ। আমার কাছে মৌরিন সবসময়ই ছিল "সরলতার প্রতিমা"। ব্যস্ততার মাঝে কেটে যাওয়া ভ্যালেন্টাইন'স ডের অবসর সময়ে তাই কিছুসময় মৌরিনের স্মৃতিচারণে ব্যয় হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। জীবনের কিছু ঘটনা, কিছু স্মৃতি ভুলে যাওয়া কঠিন।"মৌরিন উপাখ্যান" যে সেরকমই একটি ঘটনা।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×