somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চীনা পাড়ায় বসবাস

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থাৎ !@@!467164 !@@!467165 !@@!467166 !@@!467167 !@@!467168-!@@!467169 ঠাট্টা করে যে নামগুলোতে ডাকা হয়, তার একটা হলো - ইউনিভার্সিটি অফ ইন্ডিয়ান অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি অফ চাইনিজ। কারণটা আসলেই ঠিক - এখানে চীনা ও ভারতীয় ছাত্রের সংখ্যা খুবই বেশি। এটা প্রকৌশলে অনেক শাখাতেই আমেরিকার প্রথম ৫টা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাতারে পড়ে, কিন্তু প্রথম সারির অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইতে এখানে বিদেশি ছাত্র ভর্তি করে অনেক বেশি।

যাহোক, এখানে আমি থাকি ফ্যামিলি অ্যান্ড গ্রাজুয়েট হাউজিং, অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায়। যেসব ছাত্রদের পরিবার আছে, তারা অনেকেই এখানে থাকে। আমাদের এলাকাটাকে দেখলে অনেক সময় চায়নাটাউন বলে ভ্রম হতে পারে। কারণ, এখানে বসবাস করা অধিকাংশ মানুষই চীনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস হতে বাসায় আসতে বাসে দশ মিনিট লাগে। এই দশ মিনিট চীনা ভাষায় বিভিন্ন কথা শুনতে হয়।

অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের সিঁড়িঘরে ঢুকলেই বিচিত্র সব গন্ধ পাওয়া যায়। চীনাদের রান্না আমরা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে কিন্তু কখনোই খাই না। আসলে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে চীনা খাবারের নামে আমাদেরকে দেশী খাবারই অন্য কায়দায় গছিয়ে দেয়। আসল চীনাদের খাবার পুরা আলাদা, আর আমাদের বাঙালি নাকে তা সহ্য করা বড় দায়।

মানুষ হিসাবে চীনারা কিন্তু খুব পরিশ্রমী। চীনা ছাত্র বা অধ্যাপকেরা পাগলের মতো খাটতে পারে। তাই দেশ হিসাবে এদের উন্নতি এরকম হচ্ছে। এদের গলা দিয়ে ইংরেজি বের হয় না, কিন্তু তার পরেও এরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা পায় প্রচন্ড অধ্যাবসায়ের জোরে।

গরম কালে আমাদের বাসস্ট্যান্ডে কাঁচাবাজার বসে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার পাশে ক্ষেত আছে, যা থেকে বাগান করার জন্য গ্রীষ্মকালে প্লট বরাদ্দ দেয়। চীনারা অনেকেই বাবা-মাকে নিয়ে এসেছে। ঐসব বুড়াবুড়িরা রীতিমত কোদাল, বালতি, শাবল ইত্যাদি নিয়ে চাষবাস শুরু করে। তাই গরমকালে একেবারে টাটকা ফল, শাক, এসব পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার হলো, চীনা যে বুড়িরা এসব বেচতে বসে, তারা বিন্দুমাত্র ইংরেজি জানে না। ওদেরকে যাই প্রশ্ন করিনা কেনো, জবাব একটাই One Dollar!!! ওরা কেবল এইটাই জানে। অবশ্য কিছু প্রশ্ন করলে উৎসাহের সাথে চীনা ভাষায় অনেক অনেক কথা বলতে থাকে। আমি আর আমার স্ত্রী মাঝে মাঝে বোঝার চেষ্টা করি, কোনো শব্দ যদি কোনোদিন আঁচ করতে পারি।

এখানে যারা পিএইচডি করতে আসে, সবাই প্রচন্ড মেধাবী, তবে অন্যরকম ব্যাপার ঘটে গরম কালে। সামারের ৩ মাসে এখানে সাধারণত ক্লাস বন্ধ থাকে, কিন্তু অনেক শর্ট কোর্স থাকে। আর আমাদের দেশের মতো চীনেও "মামা-চাচা ধরা"র ব্যাপারটা চালু আছে। তাই সামারে যেসব চীনারা এক দঙ্গল বেঁধে এই শর্ট কোর্স করতে আসে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের দেখেই বোঝা যায়, খুব অগা-মগা টাইপের। আমি এই অ্যাপার্টমেন্টে প্রথম আসি বছর তিনেক আগে। একদিন বিকালে বাইরে হাটছিলাম। হঠাৎ দেখি পুরাপুরি খালি গায়ে শুধু শর্টস পরে এক লোক হাটা হাটি করছে। আমার নিচের তলার চীনা বেশ কয়েকজন ঐ শর্ট কোর্স করতে এসেছিলো, তাদের বাসার পর্দা টর্দা কিছুই নাই। ভিতরে চীনা লোকগুলো শর্টসও বাদ দিয়ে কেবল অন্তর্বাস পরে দিব্বি হাটা চলা, আড্ডা, খাওয়া দাওয়া সব করছে। বাইরে থেকে তাদের দেখা যাচ্ছে, এটা নিয়ে তাদের কোনোই মাথা ব্যাথা নাই। আমার বেকুব বনে যাওয়া দেখে পাশের বিল্ডিংএর বাংলাদেশী ভাই জানালেন, এরা ঐ "মামা-চাচা-ধরা" পার্টি। অন্য চীনারা, যারা একটু শিক্ষিত, তারা অন্তত খালি গায়ে এভাবে ঘুরাঘুরির অসভ্যতাটা করে না।

শেষ করছি ডিপার্টমেন্টে ল্যাবের কথা বলে। আমাদের ল্যাবে বেশ কয়েকজন প্রফেসরের ছাত্ররা বসে। এর অনেকেই চীনা। আমার প্রফেসর একদিন আমাদের গ্রুপের একজনকে প্রশ্ন করলো, "এখানে অন্য কে কী কাজ করছে"। ঐ মার্কিনী ছেলেটা জানালো, ল্যাবে ইংরেজিতে তো কেউ কথা বলেনা। ল্যাবের জাতীয় ভাষা এখন চীনা হয়ে দাঁড়িয়েছে, ফোন থেকে শুরু করে আড্ডা, সবই চীনা ভাষায় হয়।

এই ঘটনা শোনার পরের দিনই প্রফেসরেরা সব বৈঠক করে পরে ইমেইল করলেন, ল্যাবে আজ থেকে ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় নিজেদের মধ্যে আড্ডাবাজি বন্ধ। এখন কিছুটা মুক্তি পেয়েছি, চীনা ভাষার কথোপকথন শোনা থেকে। নইলে হয়তো চীনা ভাষাটা নিজেও বলা শুরু করতাম!!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ১:১৭
২১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×