somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিঁপড়া বিজ্ঞানী

২৫ শে জানুয়ারি, ২০০৭ দুপুর ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বছর 6/7 বয়স হবে ছেলেটার। মাটিতে উবু হয়ে গভীর মনোযোগের সাথে দেখছে সারিবাঁধা পিঁপড়ের দল। কিছু খই পড়ে ছিলো। একটা পিঁপড়া বাহিনী সেগুলোকে নিয়ে জমা করছে হাত চারেক দূরের মাটির বাসায়। ছেলেটা কাজটা প্রায়ই করে। কিছু খাবার ফেলে দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে পিঁপড়াদের কার্যকলাপ।

সে আবিষ্কার করেছে, দেখতে এলোমেলো মনে হলেও প্রত্যেকটা পিঁপড়া একটা নির্দিষ্ট ছন্দে ছুটে চলেছে। আশেপাশের এলাকা রেকি করছে একটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে। মাঝে মাঝে অন্য পিঁপড়ার মুখোমুখি হলে মুখে মুখ লাগিয়ে ভাব বিনিময় করছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার ঘটে হঠাৎ কোনো খাবার আবিষ্কৃত হলে। উত্তেজনা বেড়ে যায় অনেক। আশেপাশে থাকা অন্য পিঁপড়াকে খবরটা পৌঁছে দেয়। অন্যটা পৌঁছে দেয় তার কাছের টাকে। এভাবে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যই গড়ে ওঠে একটা সুশৃঙ্খল পিঁপড়া বাহিনী। বাসায় যাওয়ার সবচেয়ে সোজা রাস্তাটা তারা আবিষ্কার করে অনায়াসে। তারপর আবিষ্কৃত দ্্রব্যের বহনপর্ব। একজন কিছুদূর বয়ে নিয়ে গিয়ে অন্যকে জিনিসটা দিয়ে দেয়, সে কিছুদূর গিয়ে আবার অন্যকে। মাঝে চলে ছোট্ট শুঁড় নাড়িয়ে ভাবের আদান-প্রদান। অপরিসীম দ্্রুততায় ছেলেটার মুগ্ধতা শেষ হওয়ার আগেই কাজ শেষ করে পিঁপড়া বাহিনী।

এডিসনের হাঁসের ডিমে তা দেয়ার গল্প ছেলেটা জানে না। কিন্তু তার খুব ইচ্ছে হয়, যদি পিঁপড়াদের ভাষা জানা যেতো! এত পিচ্চি শুঁড় নাড়িয়ে যে কথা ওরা বলে একে অপরকে, তা যদি বুঝা যেত! ছেলেটা মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়, বড় হয়ে সে এমন একটা যন্ত্রতৈরি করবে, যাতে সে বুঝতে পারবে পিঁপড়াদের সমস্ত কথা, সমস্ত আবেগ, কাজের পদ্ধতি। মা এসে তাড়া দেয়। যোগ অঙ্কগুলো সে ঠিকমতোই করেছে। এবার 5 অঙ্কের গুণন।

ছেলেটা পড়াশুনায় ফাঁকিবাজ হলেও রেজালট হয় দুর্দান্ত। কেউ কখনো বকা দেয় না। কিন্তু সবাইকে খুশি করতে তাকে মুখস্ত করতে হয় অনেক অপ্রিয় বিষয়ের পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। দিনকে দিন তার পিঁপড়া দেখার সময় কমতে থাকে।

এসএসসিতে অসাধারণ রেজালট করে সে। সমস্ত শিক্ষাবোর্ডে বিজ্ঞানে সর্বোচ্চ মার্কস পায়। এই বিশেষ অবদানের জন্য তাকে পুরস্কৃতও করা হয়। সেইসাথে বলা হয়, ক্ষুদে বিজ্ঞানী। ছেলেটা মুচকি হাসে। সে এখন আর পিঁপড়া দেখে না।

নদীতে চর পড়ে। থেমে থেমে একসময় নাই হয়ে যায়। সময়ের নদী থামে না কখনো। ছেলেটা সময়ের স্রোতে ভেসে চলে। আজ 26 বছরের নিজের দিকে তাকিয়ে সে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, সময় তাকে এতদিনে পুরোপুরি স্বপ্নহীন করতে পেরেছে।

খুব কি কষ্টের অনুভূতি? না, তা ও নয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×