somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যা টাইম ইজ নট আউট অফ জয়েন্ট!

২৫ শে জানুয়ারি, ২০০৭ রাত ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধানমন্ডি ওয়েস্টার্ন গ্রীলের পাশের পেট্রল পাম্পের ফুটপথে দাড়িয়ে হাতের তালু হলুদ করে মুড়ি খাচ্ছি। রাত তখন পোনে দশটা। সিএনজির চাপ কমে যাওয়ায় প্রাইভেট কারের লম্বা লাইন লেগেছে। আমি মুড়ি খাচ্ছি আর অপেক্ষা করছি। হঠাৎ দি হ্যামলেট, হেমায়েত স্যারকে দেখে আমি চমকে উঠলাম। তিনি রাস্তার অন্যপাশে কিছু দেখার চেষ্টা করছেন আর হাঁটছেন। 7 বছর পর দেখা। আমি মুড়ি ফেলে স্যারের সামনে গিয়ে সালাম দিলাম। স্যার আমাকে দেখে, আরে, ওহ, বলতে বলতে জরিয়ে ধরলেন। তার হাতে আমার হাত। তুমি ফয়সাল জামিল না! আমি বুঝতে পারি তিনি আমার নাম হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। মনে করিয়ে দেই ডাক নাম। সাথে সাথে অফিসিয়াল নামটাও তার মনে পড়ে গেল! আমি তাকে পেয়ে মহাখুশী। জিজ্ঞেস করলাম, স্যার কেমন আছেন, কোথায় আছেন! যতদূর জানি তার অবসর নেয়ার কথা দুইবছরের আগে। তাই বললেন, এলপিআর শেষ হলো! এখন একটা চাকরী পেয়েছে ঢাকায়। তার সেই বিখ্যাত নাইদার আর নর দিয়ে কথা বলার অভ্যাস এখনও বহাল আছে। বুঝলে, নাইদার ইটস মাই টাইম ফর এ জব, নর ইটস মাই নেসেসারী, কিন্তু কাজ ছাড়া ভাল লাগছিল না! মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজীর হেড হিসাবে জয়েন করেছি!

স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার খবর কি! বললাম বৃত্তান্ত। শুনে খুশী। অন্যান্য ক্লাসমেটদের খবর জিজ্ঞেস করলেন, জানালাম জামিল ব্রাক ব্যাংকে, রমন পুলিশ, রুশো এডুকেশন অফিসার, সেলিম স্টামফোর্ডে, পনির একটা বিদেশী কোম্পানীতে, ইভা পনিরের বউ হয়েছে, চাকুরী করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। ঢাকায় যারা আছে তাদের এই খবর জানি, বাকীরা সব কলেজের শিক্ষক হয়েছে। হেমায়েত হোসেন স্যার ক্লাসে আমাদের সেক্সপিয়ার পড়াতেন। হ্যামলেটের ডায়লগ এত চমৎকারভাবে বলতেন, মনে হতো পড়াশুনা শেষ করে আমিও তার মত হ্যামলেট পড়াবো। সবসময় ক্লিনশেভ, সু্যট পরিহিত হ্যামলেটস্যারকে প্রথম দেখি তার 44 বছরে বয়সে যখন সবে কলেজে ভর্তি হয়েছি। আজকে 16 বছর পরে তিনি বার্ধক্যের ছায়াতলে সমস্ত স্নায়ুকে সমর্পন করে কিছুটা প্রগলভ হয়েছেন কিন্তু আমার চোখে তার সেই সৌম্যকান্ত, নির্ভিক, পরিষ্কার ঋজুবদ্ধ একটা মানুষের প্রতিচ্ছবি নাড়া দিয়ে উঠল। আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকি, তিনি বলেন তার দুঃখের কথা, কোন স্টুডেন্ট তার সাথে দেখা করতে আসে না যাদেরকে তিনি নিজের ছেলের মত ভালবাসতেন। নিজের তিনটি মেয়ে, সেজন্য ছেলেদের জন্য মায়া একটু বেশী। স্যারের আপন করে নেয়া আন্তরিক গ্রহণ অনেক দিন আগের একটা ঘটনার জন্য নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করলো।

তখন আমরা অনার্স পরীক্ষা দিয়েছি। আমাদের ডিপার্টমেন্টের ভাইভার একটা বদনাম ছিল। যে 50 মার্ক সেখানে বরাদ্দ থাকে তার মধ্যে সবের্াচ্চ দেয়া হয় 25। যদি 10 মার্ক বেশী দেয়া হয় তবে অনেক স্টুডেন্টের রেজালট ভাল হতে পারে। ভাইভার আগে আমরা এ নিয়ে ডিপার্টমেন্ট হেড হেমায়েত স্যারের হস্তক্ষেপ চাইলাম। এক্সটারনালদের যেভাবে পারে সে যেন ম্যানেজ করে। কিন্তু ভাইভার সময় এমন উলটা পালটা প্রশ্ন করলো যে আমাদের 15 পাওয়াই কষ্টকর হয়ে গেছে। পরীক্ষা শেষে মার্কিং এর নাম্বার একজন স্টাফ মারফত আমাদের হাতে চলে আসে। দেখলাম হাইয়েস্ট হচ্ছে 22। মুহূর্তের মধ্যে আমরা মিছিল করলাম, হেমায়েতের চামড়া, তুলে নেব আমরা, পাড়ার কয়েকটা ফ্রেন্ড ছিল তাদের কাছে রেডিমেড বোমা থাকতো, খবর দেয়ার সাথে সাথে তারা এসে ডিপার্টমেন্টের সামনে কয়েকটা হাতবোমা মেরে পুরো ক্যাম্পাস অচল করে ফেললো। আমরা হেডের রুমে গিয়ে তার সামনে টেবিল, চেয়ার, ফার্নিচার ভাঙলাম, তারপরে তাকে তালা দিয়ে বের হয়ে আসলাম! প্রেসক্লাবে গিয়ে স্মারক লিপি, সন্ধ্যায় টাউন হলের সামনে সমাবেশ, সে এক বিশাল আন্দোলন!

মাস্টার্স পরীক্ষার সময় ভাইভায় তিনি আর সে ভুল অবশ্য করেননি। এর মাঝে তার কাছে আমরা ক্ষমা চেয়ে এসেছিলাম। আজকে প্রায় 10 বছর পরে সে ঘটনার জন্য নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। আমার প্রিয় তিনজন শিক্ষকের মধ্যে দুইজন আগেই মারা গেছেন। স্কুলের ছিলেন তারা। বেঁচে থাকা এই প্রিয় শিক্ষকের সানি্নধ্য পাবার জন্য এখন আমি উতলা হয়ে আছি। তাকে আমার জানাতে হবে দ্যা টাইম ইজ নট আউট অফ জয়েন্ট!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০০৭ রাত ১২:৪৫
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×