somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ভৌতিকতা ভরা ঘটনাগুলো

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইদানিং শুধু ভূত আর ভৌতিকতা নিয়েই আমি ব্যস্ত। শিক্ষিত মানুষের ভাষায় বলতে গেলে প্যারানরমাল ঘটনা নিয়ে বেশ চিন্তিত আমি।

তবে শুভ সংবাদ হল, আমার শুধু চিন্তাই হয়, দুশ্চিন্তা হয় না। গভীর রাতে ভয়ের স্বপ্ন দেখে আঁতকে উঠেছি, এ আমার ২৩ বছরের জীবনে ঘটেছে হাতে গোনা ৩-৪ বার।

অদ্ভুতুড়ে ঘটনা আমার জীবনে ঘটেছে। কিন্তু সামনাসামনি ভূত বা ভৌতিকতা দেখার সৌভাগ্য (অথবা দুর্ভাগ্য) আমার কখনও ই হয় নি। আসলে ভূতের গল্প গুলোই এমন। যার কাছ থেকে শুনছি সে শুনেছে আরেক জনের কাছ থেকে। সেই আরেকজন আবার শুনেছে অন্য আরেকজনের কাছ থেকে। এভাবেই চলতে থাকে। সরাসরি অন্য জগতের সাথে সম্পর্ক আছে এমন মানুষ চোখে পড়েনি কখনও।

আমার দুশ্চিন্তার সূত্রপাত ঘটে অনেক আগেই, হুমায়ুন আহমেদ স্যারের মিসির আলী পড়ে পড়ে। মনের মধ্যে ঢুকতে থাকে, সত্যিই বোধহয় মানুষ আয়নার রাজ্যে চলে যায়। সত্যিই বোধহয় কিছু মানুষের ইনার সেন্স অনেক বেশি উন্নত, তাক্ লাগানোর মত উন্নত।

আর হিপনোটাইজ ব্যাপারটার উপর কৌতূহল সারা জীবনে বোধহয় আমার যাবে না। তবে সম্মোহনী ক্ষমতা বলতে পৃথিবীতে কিছু যে একটা সত্যিই আছে, তার প্রমাণ আমি পেয়েছি বাস্তব জীবনেই।

না, কোন অশরীরী বা প্রেতত্মা বা উপাসক আমাকে সম্মোহন করেন নি।

আমি সম্মোহিত হয়েছি রক্ত-মাংসে গড়া কিছু মানুষের দ্বারা।


একটি ঘটনা। আমি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি তখন। পড়াশোনা করি না। সবার বকাবকি শুনতে শুনতে স্থির করে ফেললাম যে, আর পড়াশোনাই করব না। আমার দ্বারা পড়াশোনা হবে না (তখন ‘শত মনীষীর জীবনী’ বইটি পড়ে বুঝে ফেলেছি যে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা না করেও বিখ্যাত হওয়া যায়)।

ঠিক সেই সময়ে আমার গৃহশিক্ষক হয়ে এলেন নওশাদ মামা। এই লোকটা যে আমার শিক্ষক হতে পারেন, কোনদিনও তা ভাবিই নি। প্রথম প্রথম ভাবতাম, এই লোকটা আমাকে কি পড়াবে।

সত্যিই, লোকটা আমাকে কি পড়াতো তা নিয়ে আমি চিন্তিত ছিলাম না। কয়েকদিনের মধ্যেই আমি চিন্তিত হয়ে পড়ি একটি কথা ভেবে যে, আমি আগের থেকে অনেক বেশি পড়াশোনা করছি। আমার প্রায় সারা দিনই নওশাদ মামার কথা মনে পড়তে থাকে এবং যখনই তার কথা মনে পড়ে তখনই আমি পড়াশোনা নিয়ে ভাবি।

বাড়ির লোকজনও চিন্তিতে হয়ে পড়ল, এত দুষ্টু, নিরেট অপদার্থ একটি ছেলে কেন সারাদিন পড়াশোনা করে।

আমার সেই সম্মোহন কাটল অনেক দেরীতে, ঢাকায় কোচিং করতে এসে। ততদিনে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ফেলেছি স্বদর্পে। সে সব অন্য কথা।

আমাকে সম্মোহন করে ফেলা সেই মানুষটিকে অনেক দিন দেখি না। তিনি বিয়ে-সাদি করে ভালই আছেন। শুনেছি, এখন নাকি ওকালতি করেন। তাঁর কাছে আমার অনেক দেনা।



লেখাটি লিখছি মাঝরাতে। রাত মানেই মায়া। রাত মানেই অস্বাভাবিকতার অলৌকিক কল্পনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে কখনওই ভয় হয় না (হলে তো আমরা প্রত্যেকেই এক একটা ভূত !)। কিন্ত বাসায় এলে মাঝরাতের আলো-আঁধারিতে গা একটু আধটু ছম্ ছম্ করেই।

মাঝখানে একটা সময় (তখস সেভেন কি এইটে পড়ি) প্লাঞ্চেট নিয়ে খুব আগ্রহী হয়ে পড়ি। প্লাঞ্চেট হল, সহজ কথায়, আত্মা নামানোর কৌশল। অন্ধকার ঘরে (হালকা আলো, যেমন মোমবাতি হলেও চলবে) কয়েকজন একটি চারকোণা (মতান্তরে গোল বা উভয়) টেবিলের চারপাশে বসে পাশাপাশি একজনের হাত আরেকজনের হাতের উপর রেখে একমনে সবাই মিলে একটি নির্দিষ্ট আত্মাকে ডাকতে হয়। তবেই যে কোন একজনের মধ্যে আত্মা ভর করে।

প্রচুর উৎসাহ থাকলেও শেষ পর্যন্ত এই কাজটি আর করা হয়ে ওঠেনি।



আমি ইংরেজী ভালো পারতাম না । কোনরকমে পাশ মার্ক তুলতাম। আমাকে পড়াতে এলেন রব্বানী মামা। আমি মনে মনে হাসছি, যত চেষ্টাই করুন না কেন, আমাকে কিছুতেই ইংরেজীতে ভালো করাতে পারবেন না।

একদিন সন্ধ্যাবেলা রব্বানী মামা এলেন আমাকে পড়াতে। পড়তে বসেছি। কিছু একটা করতে দিয়েছেন। পারছি না। মাথার চুল টানছি আর আড়চোখে রব্বানী মামার দিকে তাকাচ্ছি। রব্বানী মামা আমার দিকে তাকাচ্ছেন না। তিনি একমনে পেপার পড়ছেন।

হঠাৎ বিদ্যুত্ চলে গেল। ঘর অন্ধকার। একটু পর একটি মোমবাতি এল। টেবিলের মাঝখানে মোমবাতিটি রাখা হল। চারপাশ নীরব। বাইরে শন্ শন্ হাওয়া বইছে। কারও সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।

এর পরের কয়েক মিনিট আমার ঠিক মনে নেই, কি হয়েছে জানি না, সম্বিত ফিরে আসা মাত্রই দেখলাম মোমবাতিটা নিভে গেল। ঠিক্ তক্ষুনি বিদ্যুত্টাও চলে এল।

তার পর দিন থেকে আমার ইংরেজী পড়ার আগ্রহ যেন কয়েকগুণ বেড়ে গেল। সেই আগ্রহ দিনের পর দিন বেড়েই চলল। থামল উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর (ঢাকায় কোচিং করতে এসে)।

অনেক দিন রব্বানী মামার সাথেও দেখা হয় না। শুনেছি, তিনি নাকি ভালই আছেন।


এবার সরাসরি একটি অলৌকিক গল্প বলি। কোন কল্পনার আশ্রয় নেব না, কথা দিলাম।

তবে সমস্যা একটাই, আমি গল্পটা শুনেছি। এটুকু ছাড় দিতেই হবে।

যার কাছে শুনেছি সে আমার খুব কাছের বন্ধু । গল্পটা ওর ভাষাতেই বলি,


- ‘আমার গুন্ডা টাইপের তিনটা বন্ধু ছিল। ওদের কাছে অস্ত্র থাকে। তাই ওদের অনেক সাহস।

একবার ওরা ঠিক করল অমাবস্যা রাতে গোরস্থানে গিয়ে নেশা করবে।

আমি বাঁধা দিলাম। বললাম, গোরস্থান পবিত্র জায়গা। কি দরকার তোদের ওখানে যেয়ে নেশা করার।

নেশাখোররা ভাল ‍উপদেশ কানে শোনে, কিন্তু মাথায় নেয় না।

আমার বন্ধুগুলোও তাই করল।

খুব শীত তখন। জানুয়ারীর ১৩ তারিখ (আনলাকি থার্টিন)। ওরা তিনজন গেল গোরস্থানে। নেশা করতে।

পরদিন ওদের কাছে ওদের গতরাতে নেশা করার উন্মত্ত গল্প শুনলাম।

এরপর যা বলব, সেটি হয়ত বিশ্বাস হবার নয়। কিন্তু আমাকে তো বলতেই হবে।

মাস তিনেক পর থেকে আমার সেই তিন বন্ধুই অসুস্থ হতে শুরু করল। চিকিৎসা করিয়েও লাভ হয় না।

কিন্তু তারা মরল না । তারা বেঁচে থাকল পরের বছর ১৩ জানয়ারী রাত পর্যন্ত।



ওদের দলপতির লাশ পাওয়া গেল ওই গোরস্থানেই। রাতে। পুলিশের গুলি খেয়ে মরেছিল ও।

বাকি দুজনের একজন মারা গেল বাসাতেই। আকস্মিকভাবে। ওই একই রাতে।

আর একজন মারা গেল সড়ক দুর্ঘটনায়। ওই ১৩ জানুয়ারী রাতে।’

এসব ফালতু আষাঢ়ে গল্পের ধার আমি ধারি না।

একবার এক পবিত্র রাতে আমরা কয়েকজন বন্ধু ঠিক করলাম নেশা করব।

কিন্ত সে রাতে আমার এমনই মাথাব্যথা শুরু হল যে, আমি বিছানা থেকে উঠতেই পারলাম না।

পরদিন সকালে শুনি, আমার যে বন্ধুরা নেশা করতে গিয়েছিল, তার সবাই কোনরকম প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছে। সে এক ভয়ংকর গল্প। আরেক দিনের জন্য তোলা থাক।

আমার অনেক নেশা আসক্ত বন্ধু, ছোটভাই, বড়ভাই রয়েছে। তারা সকলেই আমার প্রাণের খুব কাছাকাছি থাকা মানুষজন।

আমি অনেকবারই অনেকভাবে অনেককেই নিষেধ করি।কে শোনে কার কথা। তবে খারাপ লাগে, যখন দেখি আমার বন্ধু নেশা আসক্ত হয়ে জীবন বিপন্ন করে দিচ্ছে। নিজ হাতে নিজের ক্যারিয়ার ধ্বংশ করছে।

আগেই বলেছি, নেশাখোররা উপদেশ বড়জোড় কানে নেয়, মাথায় নেয় না। তাই উপদেশ দিয়ে কোন লাভ নেই। তবে একটি কথা বলে রাখা ভাল, প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজ প্রকৃতি পছন্দ করে না। সে নিজের সাম্য রক্ষা করবেই। তার বিনিময়ে সে যেকোন কিছুই করতে পারে ।


বারবার মনে হয়, এই বুড়ো বয়সে আমাকে যদি আবার কেউ সম্মোহন করত, আবার যদি আমার পড়াশোনায় মন ফিরে আসত। পড়াশোনা একদমই করি না। তাই এসব চিন্তা হয়।

তবে পেছনের দিকে যতবারই তাকাই, ততবারই আমার দুই গৃহশিক্ষকের মুখ সামনে ভেসে ওঠে। তাঁরা আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছেন। কোনদিন তাঁদেরকে বলাও হয় নি সে কথা।

প্রত্যেকটি জীবনের গল্পেই এমন অনেক মানুষ থাকেন। তাঁরা অগোচরে থাকতেই ভালোবাসেন, তাঁরা পর্দার আড়ালে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

তাঁদেরকে সরাসরি কৃতজ্ঞতা জানানো হয় না কোনদিন, কিন্তু হৃদয়টা অনবরত তাঁদের শ্রদ্ধা জানাতে থাকে প্রতিটি মুহূর্তে। বাড়িয়ে বলছি না। একথাটি খুবই সত্য- আমি জানি ।।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×