somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সচিবালয় বেসরকারী খাতে

২১ শে জানুয়ারি, ২০০৭ রাত ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সত্যি চমকে উঠার মতো খবর!!! কেমন হবে যদি বাংলাদেশে সচিবালয় ও প্রশাসনিক কাঠামোকে পুরোপুরি ব্যক্তিগত খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়? তারা কি খুব দক্ষ ও যোগ্য হবে? নানা মুনির নানা মত। দেশ বিদেশ ঘুরে আমার মনে হয়েছে আমাদের মতো মাথাভারী ও শ্রমঘন প্রশাসনিক ব্যবস্থা পৃথিবীতে আর কোথাও বোধ হয় নেই। একজন কর্মকর্তার চারজন চাপরাশী লাগে। এখনও বসের মৌখিক নোট নিয়ে তারপর টাইপিং করতে ব্যস্ত থাকেন অফিস সহকারীরা।

বছরের পর বছর বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সরকারী চাকরিতে ঢুকছে আপাতদৃশ্যত সবচেয়ে যোগ্য গ্র্যাজুয়েটরা। তারপরেও বাংলাদেশের প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের গুণগত মান দিনের পর দিন শুধু নীচের দিকে নামছে। নৈতিকতার কথা বা জবাবদিহির কথা বাদই দিলাম। আমি ঢালাওভাবে বলব না, সবার অবস্থাই হযবরল। কিন্ত আপাতত ট্রেন্ডটা খুবই বিপজ্জনক। বিশেষত: মাঠ পর্যায়ে যেসব কর্মকর্তা আছেন তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। অবশ্য যারা স্রোতের সাথে মিলেমিশে থাকেন তাদের কথা একেবারেই আলাদা।

অনেকদিন আগের কথা। আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশের বাইরে পশ্চিমে কোথাও একটা শর্ট কোর্স করতে গেছে। চাকরিতে প্রমোশন পেয়ে বন্ধু উপসচিব পদমর্যাদায় উঠেছেন। বিভিন্ন আড্ডাতে তার সাথে যোগাযোগ নিয়মিত। বিদেশ যাওয়ার পর একদিন তার ই-মেইল। বিষয়: মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে কিভাবে ডকুমেন্ট সেইভ করতে হয়। আমার চক্ষু চড়ক গাছে। বন্ধু, "বলো কি"? বন্ধুর উওর: "দোস্ত, স্টেনোকে সাথে করে তো কোর্সে আনতে পারিনি। তাই সামাল দিতে একটু হিমসিম খেতে হচ্ছে"। বাংলাদেশে উপসচিব পর্যায়ে কম্পিউটার লিটারেসী কতোটুকু তা নিয়ে প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ দেওয়ার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু যদি প্রযুক্তিগতভাবে সচেতন, চৌকস ও দক্ষ জনশক্তি যদি প্রশাসনিক কাঠামোর মেরুদন্ড না হয় তখন তো রাজনৈতিক লেজুরবৃওির যোগ্যতা একমাএ মানদন্ড বলে গণ্য হবেই।

একসময় আমলাদের চক্ষুশুল ছিল সিএসপি'রা। সিএসপিদের বিরুদ্ধে যতোই বিষোদগার আমরা করি না কেন, তাদের যোগ্যতা নিয়ে হয়তো অভিযোগ তেমন একটা টিকবে না। ভয় নেই, তারাও এখন বিদায় নিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন ও মেধাভিওিক নির্বাচনে নিযুক্ত কর্মকর্তারাই এখন দেশ চালাচ্ছেন। তাদের গুণগত মান আমাদেরকে আতঙ্কিত করে। কথা বলতে গেলে যে কি ভাঙ্গাচুরা অবস্থা, ভাষার যে শ্রী, তাতে মনে হয় ধরণী দ্বিধা হও। আমার মনে হয়, বাংলাদেশে লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ একাডেমীতে এখন ভাষা কোর্স ও উচ্চারণ কোর্সও চালু করা দরকার। মাঝে মাঝে যেসব অফিসিয়াল সার্কুলার চোখে পড়ে তার প্রণেতাদেরকে ভাষা বিশারদ মনে হয়। না, ভয় নেই। ভাষা দিবস আসছে আগামী মাসে। ভাষার জন্য আবার আমাদের দরদ উথলে পড়বে। কিন্তু যারা আমাদের প্রশাসক তাদের ভাষা শুনলে বোধহয় ভাষা সৈনিকরা কবর থেকে আর্তনাদ করে বলে উঠেন উদর্ু রাস্ট্রভাষা হলে বোধহয় এই যন্ত্রণা আমাদের ভোগ করতে হতো না। কারণ, আমরা বুঝতাম না আমলারা কি মারাত্মক ভুল ক্রটিতে কথা বলছেন!!!

সরকারী কর্মকর্তাদের যোগ্যতা ভাষাগত শুদ্ধতা বা স্মার্টনেস দিয়ে প্রমানিত হয় এধরণের অসম্পূর্ণ হাইপোথিসিস নিয়ে আমি কাজ করছি না। তবে, এই প্রান্তিক সমস্যার মূলে রয়েছে আমাদের শিক্ষার ক্রমাবনত মান সেসম্পর্কে আলাদা করে গবেষণার দরকার নেই। তাই আজ থেকে প্রায় আট বছর আগে যখন রেহমান সোবহান বলেছিলেন, "যদি অদক্ষতা আর লোকসানের কারণে সরকারী প্রতিষ্ঠান বিক্রি করতে হয় তবে সবার আগে বেসরকারী খাতে ছাড়তে হবে বাংলাদেশ সচিবালয়কে" (সংবাদ, 15ই জানুয়ারী, 1999)। অধ্যাপক সোবহানের ভাষায় এধরণের অদক্ষ জনশক্তির পেছনে ব্যয়কৃত অর্থের পুরোটাই লোকসান।

সচিবালয় বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেওয়া হোক এই প্রস্তাব একেবারেই অযৌক্তিক। কিন্তু প্রশাসনিক দক্ষতা ও যোগ্যতা নিরুপনে ও মূল্যায়নে নিয়োগ ব্যবস্থার মধ্যে আমূল পরিবর্তন আনা দরকার। কর্ম কমিশনকেও ঢালাও ভাবে সাজানোর দরকার। আমরা শুধু কর্মকর্তা চাই না, চাই যোগ্য কর্মকর্তা যারা আমাদের দেশকে নতুন মিলেনিয়ামে এগিয়ে নিবেন। দরকার জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার। প্রতিটি প্রশাসনে উচ্চতর পর্যায়ে কর্মকর্তাদের মূল্যায়নে তৃণমূল পর্যায়ে ভোক্তা ও জনগণের ভূমিকা থাকা দরকার। প্রফেশনালিজম একদিনে আসে না। কিন্তু সে জন্য রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কমিটমেন্টেরও দরকার। না হলে আবারও স্মরণ করতে হয়, দুস্ট গরুর চেয়ে শূণ্য গোয়ালই হয়তো ভাল...।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×