somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাফ নদীর তীরে...কিম্বা তীরের পাশেই নাফ নদী...(5)

১৫ ই জানুয়ারি, ২০০৭ রাত ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

4জানুয়ারী তারিখে আমার অবস্থা যা তা! ঘুম ভাঙলো সেলফোনের শব্দে। সময় তখন 8টা। আলমগীর মাস্টার ফোন দিছে...তাগো ক্যাম্পে যাওনের কথা আইজকা। তড়িঘড়ি কইরা উঠলাম বিছানা থেইকা। মৌসুমের জন্য নাস্তা আনতে টাকা দিলাম রুম বয়রে। আমার নাস্তা করনেরও টাইম নাই...গিয়া দাঁড়াইলাম স্কুটার স্ট্যান্ডে, নুরুল আমিন ভাইয়ের থাকার কথা, কিন্তু তিনি নাই, কিছু করার নাই তখন আরেকজন স্কুটার আলারে ঠিক করলাম সাথে সাথে...তারপর নয়াপাড়া অভিমুখে যাত্রা...

ক্যাম্পে পৌছানের আগেই জানি সামনের ইনসপেক্টরের চৌকি থেইকা পারমিশন লইয়া তারপর ভিতরে ঢুকন যাইবো। প্রথম প্রশ্ন ইনসপেক্টরের, কিসের জন্য আসছেন? আমি কইলাম ঘুরতে...দ্্বিতীয় প্রশ্ন, কি করেন? আমি তারে আমার চাকুরী স্থলের আইডি কার্ড বাইর কইরা দেখাইলাম। সে কি বুঝলো কে জানে, পাশে বইসা থাকা একজনরে কইলো, দ্্বীন মুহাম্মদ এরে লইয়া যাও, খানিকটা ঘুরাইয়া লইয়া আসো। তয় ক্যামেরাতে যাতে কোন ছবি না তোলা হয়। আমি দ্্বীন মুহাম্মদের সাথে চললাম ভিতরে। পথিমধ্যেই তার সাথে পরিচয় পর্ব...দ্্বীন মুহাম্মদ নয়াপড়া ক্যাম্পের 5 নাম্বার ব্লকের একজন মাঝি, তার নিয়ন্ত্রণে 50/60 টার মতো ঘরের দায়িত্ব আছে। তার তথ্য অনুযায়ী এখন নয়াপাড়া ক্যাম্পে লোক আছে 14,000-এর মতো। 1769টা পরিবার বাস করে।আমি তার লগে হাটি আর ডিসিপ্লিন্ড একটা ক্যাম্পের চেহারা দেখি, আমার বোধ হয় রোহিঙ্গারা বেশ পরিচ্ছন্ন জাতিগোষ্ঠী...কিন্তু যাওনের আগে আমার যেই সব বন্ধু 91, 94 কিম্বা 98তে গেছিলো ক্যাম্প ভিজিটে তাগো কাছ থেইকা পাওয়া তথ্যে জানছিলাম রোহিঙ্গারা খুবই নোঙরা তাগো কোন পরিকল্পণা নাই, বাচ্চা বিয়ানো ছাড়া...

কিন্তু এখন আসলে তাগো কোন একটা তাড়না আছে পরিবর্তনের, বা তারা আসলেও গোছানো চরিত্রগত ভাবে, কিন্তু যেহেতু নিজের ভূমি না তাই প্রয়োজনবোধ করে নাই অনিশ্চিত ভূমিরে গোছগাছ করনে। যাই হোক হাটতে হাটতে দ্্বীন মুহাম্মদ মারফত জানলাম ব্লক গুলি এখন কেমনে চলে, কিরম ভাবে তাগো আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রিত হয়। দ্্বীন মুহাম্মদের আত্মবিশ্বাস চরম, সে কইয়া দিলো রোহিঙ্গা পল্লীতে কেউ আর এখন কোন ঝামেলা তৈরী করে না। সবাই নিজের অনিশ্চয়তা লইয়া ভালোই কনসার্ন। দেখলাম মধ্যবয়স্ক পুরুষেরা রাস্তার মোড়ে গোল হইয়া বইসা রোদ পোহাইতেছে। তাগো মধ্যে হয়তো কেউ কথা কয় মাঝে সাঝে...কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই দৃষ্টি কেরম ভাসাইয়া দেওয়া...কি যে ভাবেন তারা!?

আমি আলমগীর মাস্টররে ফোন দিলাম দ্্বীন মুহাম্মদের সাথে হাটতে হাটতেই, সে আমারে কইলো কাশেম মিয়ার দোকানে গিয়া বসতে সে আসতেছে কিছুক্ষণের মধ্যেই। আমরা গিয়া বসলাম দোকানে। সেইখানে বিভিন্ন ব্লকের মাঝিরা বসছে...ক্যাম্প ইনসপেক্টর বদলী হইছেন তারে ফেয়ারওয়েল দেওনের লেইগা পরিকল্পণা করতাছে তারা। আমি গিয়া একদল নেতা পাইয়া গেলাম মুফতে। ভাগ্যে বিশ্বাস করলে কইতাম বড় কপাইল্যা আমি। যাউগ্গা তারা সেই পুরানা ইতিহাসই আমারে শুনায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সেনা শাসক তাগো মুসলিম বইলা নির্যাতন কইরা বাইর কইরা দিছে...তাগো এখন কোন দেশ নাই...তারা এখন বাংলাদেশরেই নিজের দেশ ভাবতে ভালোবাসে...

আমার কাছে রোহিঙ্গাগো এই ইসলাম প্রীতিরে নিতান্তই একটা চালাকী মনে হইলো...তাগো জীবন যাপনে ইসলাম আছে তা সত্য, মসজিদে গিয়া তারা নামাজ পড়নের চেষ্টা করে নিয়মিত। ঘর গুলি ছোট মাত্র 10ফিট বাই 15 ফিট হইলেও মসজিদগুলি বিশাল আকারের। রোহিঙ্গা মেয়েরা বোরকা পরলেও সেইটা কেবল কোন কারণে বেড়াইতে বা কাজের সন্ধানে বাইর হইলেই পরে। আর ঘরে থাকার সময় তাগো পড়নে রাখাইনগো মতোন থামি আর ফুল আঁকা বার্মিজ টপ...আরো একটা বিষয় হুবহু রাখাইন মেয়েগো মতোন...মুখে চন্দনের চক্র আঁইকা ঘোরে তারা, আর যেই কারণে ত্বক অনেক মসৃন আর চকচইকা হয় তাগো।

আমি গান শুনতে চাওনের পর দুইটা ব্যাঞ্জো নিয়া দুইজন তরুণ আইলো...তারা সেমেটিক ঘরানার বাজনাও বাজাইতে শুরু করলো, কিন্তু গান শুরু করনের আগেই কোন এক ইমামের নিষেধে বন্ধ হইলো...আমি জিগানোতে আলমগীর মাস্টর কইলো তাগো পুরান জমানার নেতারা মনে করে...গান বাজনার সাথে অনিয়ম আইসা পরে...নেশা ভাঙ চলে যেই কারনে...ক্যাম্পে এইসব চালানের নিয়ম নাই। কিন্তু তাগো শুরুটা দেইখা আমার এক্কেরেই তা মনে হয় নাই...যেই ছেলেটা ব্যাঞ্জো বাজাইতেছিলো ওর নাম জুবের...তার বয়স 17/18, সে জন্মই নিছে এই ক্যাম্পে...তারপক্ষে তো অন্য কোথাও থেইকা শিখনের উপায় নাই। রোহিঙ্গাগো মধ্যে এতোসব নিয়ন্ত্রণ, অহেতুক শৃঙ্খলার প্রবণতা এইসব আসছে অনিশ্চয়তার বোধ থেইকা। এই দেশীয় মুসলিম ভ্রাতৃত্বের
নৈকট্য পাওনের চেষ্টা থেইকা এই বিশ্বাস আমার দৃঢ় হইলো।

তয় একটা জিনিষ দেইখা আমি একটু অবাকই হইছি, রোহিঙ্গা শিশুদের একটা বড় অংশ নারী শিশু...হয়তো জেনেটিক কোন প্রভাব আছে এই পরিসংখ্যাণের। কিন্তু এইটার সুবিধা নেয় রোহিঙ্গা পুরুষরা। তারা বিয়া করে একাধিক। এই বিষয় নিয়া জিগানের পর অবশ্য দ্্বীন মুহাম্মদ রীতিমতোন খেপলো...তার কথা এইটা তো অনেকেই করে আমরা করলে ক্যান সমস্যা হইবো। আমি খুবই মজা পাইলাম তার বলার ধরনে, কিন্তু আমারে অবাক কইরা সে একবারো ধর্মীয় ফরজ বিয়ার কথা উল্লেখ করলো না। আর এই সময়েই আলমগীরের গোপণ কথা জানলাম, সে এর আগে বিয়া করছিলো, তারে 'ডাইভোর্স' দিয়া এখন আরেকজনরে বিয়া করছে। সে আমারে তার 2 বাচ্চার কথা শুনাইছিলো...এখন শুনলাম তার দুই বউয়েরই 2টা কইরা বাচ্চা।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×