somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইয়ুবশাহী পতন আন্দোলনের পথিকৃৎ শহীদ ছাত্রনেতা আসাদের মৃত্যুবাষিকী আজঃ শহীদ আসাদের মৃত্যু দিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান একজন শহীদ ছাত্রনেতা। শহীদ আসাদ নামেই যিনি বেশি পরিচিত। যাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান আরো বেগবান হয়েছিল। শহীদ আসাদ ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনে পথিকৃৎ তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের তিন শহীদদের একজন, অন্য দু'জন হচ্ছেন - শহীদ রুস্তম ও শহীদ মতিউর। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি আইয়ুবশাহীর পতনের দাবীতে মিছিল করার সময় তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হন। ১৯৬৯ সালে মৃত্যুকালীন সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে এম.এ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। শহীদ আসাদের মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।


শহীদ আসাদ ১০ই জুন, ১৯৪২ইং সালে নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার ধনুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বড় ভাইয়ের নাম ইঞ্জিনিয়ার রশিদুজ্জামান। শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে মাধ্যমিক শিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ও মুরারী চাঁদ মহাবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে ১৯৬৬ সালে বি.এ এবং ১৯৬৭ সালে এম.এ ডিগ্রী অর্জন করেন। এই বৎসরেই আসাদ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এবং কৃষক সমিতির সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষাণী'র নির্দেশনায় কৃষক সমিতিকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে শিবপুর, মনোহরদী, রায়পুরা এবং নরসিংদী এলাকায় নিজেকে নিযুক্ত করেন।রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত প্রাণ আসাদুজ্জামান শহীদ আসাদ তৎকালীন ঢাকা হল (বতর্মান শহীদুল্লাহ হল) শাখার পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে এবং পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (ইপসু-মেনন গ্রুপ), ঢাকা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৪ জানুয়ারি, ১৯৬৯ইং তারিখে ছাত্রদের ১১-দফা এবং বঙ্গবন্ধুর ৬-দফা দাবীর সাথে একাত্মতা পোষণ করে ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, যাতে প্রধান ভূমিকা রাখেন শহীদ আসাদ। ১৭ জানুয়ারি, ১৯৬৯ইং সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ছাত্ররা দেশব্যাপী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ডাক দেয়। ফলে গভর্নর হিসেবে মোনেম খান ১৪৪-ধারা আইন জারী করেন যাতে করে চার জনের বেশী লোক একত্রিত হতে না পারে।


পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে ২০ জানুয়ারী, ১৯৬৯ইং তারিখ দুপুরে ছাত্রদেরকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পার্শ্বে চাঁন খাঁ'র পুল এলাকায় মিছিল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন আসাদুজ্জামান। পুলিশ তাদেরকে চাঁন খাঁ'র ব্রীজে বাঁধা দেয় ও চলে যেতে বলে। কিন্তু বিক্ষোভকারী ছাত্ররা সেখানে প্রায় এক ঘন্টা অবস্থান নেয় এবং আসাদ ও তার সহযোগীরা স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। ঐ অবস্থায় খুব কাছ থেকে আসাদকে লক্ষ্য করে এক পুলিশ অফিসার গুলিবর্ষণ করে। তৎক্ষণাৎ গুরুতর আহত অবস্থায় আসাদকে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।


হাজারো ছাত্র-জনতা আসাদের মৃত্যুতে একত্রিত হয়ে পুণরায় মিছিল বের করে এবং শহীদ মিনারের পাদদেশে জমায়েত হয়। কেন্দ্রীয় প্রতিরোধ কমিটি তাকে শ্রদ্ধা জানাতে ২২, ২৩ ও ২৪ জানুয়ারী সারাদেশে ধর্মঘট আহ্বান করে। ধর্মঘটের শেষ দিনে পুলিশ পুণরায় গুলিবর্ষণ করে। ফলশ্রুতিস্বরূপ আসাদের মৃত্যুতে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান সরকার দু'মাসের জন্য ১৪৪-ধারা আইনপ্রয়োগ স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়। ১৯৭০ সালের ১৫ জানুয়ারী তারিখের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদ দিবস হিসেবে পালনের জন্য পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন ঐদিন পূর্ণ দিবস হরতাল আহ্বান করে।প্রতি বছর জানুয়ারির ২০ তারিখে শহীদ আসাদের দেশমাতৃকার সেবায় মুক্তি এবং স্বাধীনতার লক্ষ্যে তার মহান আত্মত্যাগ ও অবদানকে বাঙ্গালী জাতি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ও গভীর শ্রদ্ধায় শহীদ আসাদ দিবস পালন করে থাকে।


বাংলাদেশের অনেক জায়গায় জনগণ আইয়ুব খানের নামফলক পরিবর্তন করে শহীদ আসাদ রাখে বিশেষতঃ জাতীয় সংসদ ভবনের ডান পার্শ্বে অবস্থিত আইয়ুব গেটের পরিবর্তে আসাদ গেট রাখা হয়। এছাড়াও, আইয়ুব এভিন্যিউ'র পরিবর্তে আসাদ এভিন্যিউ এবং আইয়ুব পার্কের পরিবর্তে আসাদ পার্ক নামকরণ করা হয়। ১৯৭০ সালে ১ম শহীদ আসাদ দিবসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকে জনগণ "ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের স্মারক ও অমর আসাদ" শিরোনামে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করে যেখানে আসাদ গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। শিবপুর ও ধনুয়া এলাকার স্থানীয় লোকজন ১৯৭০ সালে শিবপুর শহীদ আসাদ কলেজ নামে একটি মহাবিদ্যালয় এবং ১৯৯১ সালে আসাদের নিজের গ্রাম ধনুয়া'য় স্থানীয় অধিবাসীরা "শহীদ আসাদ কলেজিয়েট গার্লস স্কুল ও কলেজ" প্রতিষ্ঠা করে।


আসাদের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য হচ্ছে গণজাগরণ। ১৯৯২ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরী বিভাগের গেটের উত্তরদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের বা ডাকসু'র উদ্যোগে আসাদের স্মৃতিকে অমর ও অক্ষয় করে তুলতে এবং গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে জাগ্রত রাখতে গণজাগরণ নামে নির্মিত হয় আসাদের স্মৃতিস্তম্ভ। শিল্পী প্রদ্যোত দাস এ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছিলেন। গণ আন্দোলনের পথিকৃৎ শহীদ ছাত্রনেতা আসাদের মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৫৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×