একখানা ইট যদি পাওয়া যেতো
নোংরা মুখটা করতাম থেঁতো
ভাবতে ভাবতে গেলো একজন
ক্ষত-বিক্ষত ছেলেটার দিকে...
সেদিন পত্রিকায় একখানা খবর দেখে মনটা আবারো বিষিয়ে উঠলো। কেনো আমরা মানবতাকে বিসর্জন দিই, কেনো ভুলে যাই "পাপী নয়, পাপকে ঘৃণা করো"। ঘটনাটা ছিলো এরকমঃ
বাজারে ছুটে যাওয়া মুরগি ধরার মতো করে চারজন লোক দৌড়াচ্ছিলেন সামনের দিকে। যানবাহনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে খুঁজছিলেন কাউকে। কিছুক্ষণ পর একটি বাসের আড়াল থেকে এক হেরোইনসেবী বের হতেই তাকে পাকড়াও করলেন তারা। শুরু হলো চারজনের ধোলাই। চারজনের একজন বয়স্ক। সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা ও টুপি পরা এ লোকটা এক খন্ড ইট নিয়ে মারতে লাগলেন হেরোইনসেবীকে। কিছুক্ষণ পর ক্লান্ত হয়ে পেটানো থেকে ক্ষান্ত দিলেন তারা। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেলো, পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। যাত্রাবাড়ি গিয়ে গাড়ি জ্যামে আটকা পড়ে। তখনই সবার সামনে সামনে গাড়ির সামনের 'লুকিং গ্লাস' খুলে পালাচ্ছিল এই নেশাখোর। সবাই মিলে আচ্ছামতো ধোলাই দিয়ে ফিরিয়ে নিল গ্লাসটি। তাদের যাওয়ার পরও হেরোইনসেবীকে পেটাচ্ছিল জড়ো হওয়া লোকজন। চোরের একটু বাঁচার চেষ্টাও নেই, নেই শরীরে শক্তি। অনেকে ভাবছে মরে গেছে কিনা। একজন শব্দ করলো, "পুলিশ আসছে!" এ কথা শুনে সরে পড়তে লাগলো সবাই। একটু পরেই ক্ষত-বিক্ষত লোকটা এদিক-ওদিক তাকিয়ে দাঁড়িয়ে হাঁটতে লাগলো। ...
এরকম ঘটনা প্রায়ই ঘটতে দেখা যায়। শুধু নেশাখোর চোর কেনো, পকেটমার, ছিনতাইকারি ইত্যাদি ধরা পড়লেই গণপিটুনির শিকার হয়; হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর এই ফাঁকে সবাই চাই মনের ঝাল মিটিয়ে নিতে। আইনের হাতে তুলে দেয়ার কথা মনে আসে না; আসবেই বা কেনো? আইনের লোক তো বড়ো চোর। কিন্তু সেখানে আমরা নীরব। কারণ তারা লাইসেন্সধারী চোর। আরে আমি তো অন্য পথে চলে যাচ্ছি! যা বলছিলাম- আমরা সবাই জানি এদের মেরেকেটে লাভ নাই। তবুও মারি। অপরাধকে নির্মূল করার লক্ষ্যে মেরে যাই। মানবতার দোহাই দিয়ে কোনো লাভ নেই। যতই বুলি আওরাই না কেনো- "অপরাধী নয়, অপরাধকে ঘৃণা করো"। ব্যাপারটা যে শারীরিকভাবে মানে গায়ের জোরে নির্মূল হবে না- এ-ও আমাদের অজানা নয়। তবুও একটাকে পেলে আচ্ছামতো ধোলাই দেয়া চাই। পারলে একেবারে নরকের দুয়ারে পাঠিয়ে দিই। কিন্তু আমরা কি নিশ্চিত যে, এ চোরটা নরকেই যাবে! এই না হলো লেখকের ধরণ! শুধু লেন পাল্টে অন্য লেনে চলে যাওয়া চাই। যাহোক আবার ফিরে আসি। আসলে মাথার ভিতর এতো কথার ঝড় ওঠে যে মাঝেমধ্যে তাল হারিয়ে ফেলি।
লেখার আকার বেশ বড়ো হয়ে গেলেও এখনো মূল কথাই হয়তো পাঠককে বোঝাতে পারেনি। যখন চোখের সামনে ভেসে উঠে ডজনখানেক মানুষ একজন মানুষকে পেটাচ্ছে তখন আর সহ্য হয় না। বিরুধিতাও করতে পারি না, পাছে নিজে মার খাই। তাই "পুলিশ! পুলিশ আসছে!" বলে আড়ালে চিৎকার করে ওঠি। যদি একটু বাঁচানো যায় মার খাওয়া মানুষটাকে। আর মন মনকে বলে ওঠে, কাঁদতে দে... কাঁদতে দে...
একটি শিকড়, স্থির যেন সে সেই শিকেড়ের মতো
যে চায়, কাড়ে, শিকড় বাড়ে- হাতের ছোঁয়া চোখের আড়ে
পাতালে যায়, পাতালে যায়... দুরন্ত, সংহত
একটি শিকড়, স্থির যেন সে সে-ই শিকড়ের মতো।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ১১:৪৩