আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রথমবারের মতো প্রচারাভিযানে নেমে নৌকা মার্কায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
Published : 15 Sep 2013, 11:48 AM
এই প্রচারাভিযানের অংশ হিসাবে রোববার ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে টঙ্গীর টেলিফোন শিলল্প সংস্থা কলোনি মাঠে এক পথসভায় তিনি বলেন, “আমরা যে অগ্রযাত্রা শুরু করেছি তা শেষ করতে আওয়ামী লীগেকে ভোট দিন।”
রোববার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে বিশেষ নিরাপত্তায় গণভবন থেকে রওয়ানা হন তিনি। নেতাকর্মীরা ছাড়াও সাংবাদিকরা তার গড়িবহরে সঙ্গে আছেন।
দুই দিনের সফরে গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায় পথসভা ও কর্মীসভা করবেন জয়। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং ভোটের আগে তাদের চাঙ্গা করতেই জয়ের এই সফর।
জয়ের গাড়িবহর উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টর পার হওয়ার সময় সড়কের দুই পাশে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী-সমর্থককে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীপুত্রকে স্বাগত জানিয়ে শ্লোগান দিতে দেখা যায়।
এক পর্যায়ে জয় গাড়ি থামিয়ে ভেতর থেকেই হ্যান্ডমাইকে শুভেচ্ছার জবাব দেন।
তিনি বলেন, “আমরা দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়েছি। আপনারা মানুষকে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের কথা জানান।”
উত্তরা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত হাজারো নেতা-কর্মীর শ্লেগানের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যায় জয়ের গাড়িবহর। এ সময় শ্লোগান শোনা যায়- ‘জয় ভাইয়ের আগমণ, শুভেচ্ছা স্বাগতম।
জয় টঙ্গীর টেলিফোন শিলল্প সংস্থা কলোনি মাঠে পৌঁছালে স্থানীয় সাংসদ জাহিদ হাসান রাসেল ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজমতউল্লাহ খান তাকে স্বাগত জানিয়ে মঞ্চে নিয়ে যান।
সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় জয় বলেন, “আমরা সন্ত্রাস বন্ধ করেছি। আমাদের সময় দেশে বোমা হামলা হয়নি। আপনারা শান্তিতে বসবাস করেছেন। বিএনপি এলে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ দুরর্নীতি আবার ফিরে আসবে। বিদ্যুতের অভাবে কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।”
এক পর্যায়ে মাঠে সমবেতদের উদ্দেশ করে প্রশ্ন রাখেন- “আপনারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেবেন?”
সেখানে উপস্থিত কয়েক হাজার মানুষ এ সময় দুই হাত তুলে সম্মতি জানান।
গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন খাতে সরকারের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে জয় বলেন, “ভিশন ২০২১ এর অর্ধেক পথ পেরিয়েছি। একাত্তরের যে অসমাপ্ত বিপ্লব তা আমরা শেষ করতে চাই।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুরেই তার ছেলে জনতার উদ্দেশে বলেন, “আপনারা ওয়াদা করেন- নৌকায় ভোট দেবেন।”
বর্তমান সরকার পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়েছে উল্লেখ করে জয় বলেন, আগামী তা আরো বাড়ানো হবে।
আগামীতে আমরা ক্ষমতায় এলে এখানে ইলেকট্রনিক যন্ত্রোংশের কারখানা তৈরি করব। তখন আপনাদের বেতন আরো বেড়ে যাবে। ”
উপস্থিত নেতা-কর্মী-সমর্থকরা হাততালি দিয়ে জয়ের এ বক্তব্যকে স্বাগত জানান।
টেশিশ মাঠের জনসভার পর ১১টা ৩৮ মিটিটে জয়ের গাড়িবহর প্রবেশ করে গজীপুর চৌরাস্তার পাশেই চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে, যেখানে তীব্র রোদ আর গরম উপেক্ষা করে আগেই থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন হাজার হাজার মানুষ।
জয়ের বক্তব্য শুরুর আগে সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকম মোজাম্মেল হক।
এরপর জয় বলেন, “আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হবে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে যাবে। এখানে পোশাক শিল্পের মতোই ইলেকট্রনিকস পণ্যের কারখানা স্থাপন করা হবে।”
স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য আবাসন নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে জয় বলেন, এসব বাড়ি কেনার জন্য সরকার ঋণ দেবে।
বিগত চার দলীয় জোট সরকারের সমালোচনা করে জয় বলেন, “বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে বিদ্যুতের অভাবে কারখানা বন্ধ হবে, স্কুলের শিক্ষর্থীরা বই পাবে না।
“আমরা মোটা চালের দাম ৪২ টাকা থেকে ২৮ টাকায় নামিয়ে এনেছি। শিক্ষার্থীরা মোবাইলে পরীক্ষার ফল পাচ্ছে, মানুষ মোবাইলে টাকা পাঠাতে পারছে। দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে ৪০ নম্বরে নিয়ে এসেছি আমরা।”
বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে জয় বলেন, “তখন ২১ আগাস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছে, আইভি রহমান, আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করা হয়েছ। সারাদেশে বোমা হামলা হয়েছ। এ সবই হয়েছিল হাওয়া ভবনের পরিকল্পনায়।”
গাজীপুরের পথসভা শেষে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে রওনা হন জয়।
প্রধানমন্ত্রীর ছেলের আগমন উপলক্ষে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে অসংখ্য তোরণ। মহাসড়কের বিভিন্ন বাজারে হাজার হাজার মানুষ রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে জয়কে শুভেচ্ছা জানান।
বেলা পৌনে ২টার দিকে জয় ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজে পৌঁছে দুপুরের খাবার খান। বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী এ সময় শোভাযাত্রা ও মিছিল নিয়ে সার্কিট হাউজের সামনে জড়ো হয়।
বিকালে মুক্তাগাছা পৌর শহরের আর কে উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে পথসভায় অংশ নেয়ার পর ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ সংলগ্ন জিমনেসিয়ামে কর্মীসভায় অংশ নেবেন জয়।
ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজে রাত কাটিয়ে সোমবার সকালে জয়ের টাঙ্গাইলের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে জয়ের। সেখানে মধুপুর রানী ভবানী স্কুল মাঠে এক জনসভা এবং টাঙ্গাইল ভাসানী হলে এক সভায় তার অংশ নেবেন তিনি।
এরপর সোমবার বিকালে মির্জাপুর আবদুল গণি স্কুল মাঠ ও চন্দ্রায় দুটি পথসভায় অংশে নিয়ে তিনি ঢাকায় ফিরবেন।