somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাফ নদীর তীরে...কিম্বা তীরের পাশেই নাফ নদী...(2)

০৭ ই জানুয়ারি, ২০০৭ রাত ২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টেকনাফ যাওনের জন্য আমরা টার্মিনালের মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডে গিয়া পৌছাইলাম। বাস সার্ভিস এখন বেশ ভালো ঐ এলাকার, কিন্তু বাস পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে চালাইতে গেলে একটু বেশি সতর্কতায় চলে...যেই কারনে মাইক্রোবাস এখন অনেক জনপ্রিয় । পুরা এক ঘন্টা বাঁচাইয়া দেয়...আমরাও মাইক্রোবাসে সওয়ার হইলাম। চাটগাইয়া একসেন্টে অনেক বিনোদন খুঁইজা পাই আমরা যারা ঢাকাবাসী, তয় ব্যক্তিগত ভাবে চাটগাইয়া বাংলারে আমার অনেক পছন্দ। অনেক বেশি অন্য ভাষার ইন্টার টেক্সচু্যয়ালিটি আছে...মাইকোবাসে আমি সেই মজা আর মৌসুম সেই বিস্ময় নিয়া চললাম টেকনাফ অভিমুখে...
এইরম টিলাময় পথে আমরা গত সাড়ে ছয় মাসের যুগল জীবনে প্রায় 4 বার গেছি...তাই অনেক ভালো লাগা থাকলেও মুগ্ধতা ছিলো না আমাগো চোখে। আমি নজর রাখতেছিলাম রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলি কখন ক্রস কইরা যাই। আমার ধারনা ছিলো ক্যাম্প গুলি পাহাড় ঘেরা হওনের চানস আছে...তাই পাহাড় দেখলই চোখ দুখানি সুতীব্র...মৌসুমের প্রিয় পাহাড়ি বুনো ফুল। আমরা সোয়া একঘন্টার মধ্যেই টেকনাফের নীকটবর্তী... হঠাৎ চোখ টানলো বন্দরের কাছে সারে সারে নীচু কইরা বানানো বাশের বেড়া দিয়া বানানো ঘর। শয়ে শয়ে ঘর। আমার পাশের সিটে এক বৃদ্ধ বসছিলো, তার বয়স আশির কোটায় হইতে পারে, তারে আমি জিগাইলাম এইটা কি? সে আমারে যা কইলো তার থেইকা আমি খালি জাহাজী শব্দটার অর্থ উদ্ধার করতে পারলাম। বয়সের কারনে জড়ানো কথা।আমিও তাই আর উৎসাহ পাইলাম না কথা কওনে। আমরা টেকনাফ শহরে পৌছাইলাম। বাস স্টেশনে পোৗছানোর সময়েই মৌসুমের চোখে আটকাইছিলো হিলটপের উচু সাইনবোর্ড...আমরা রিকসা নিয়া আগে হিলটপ তারপর খাওনের লেইগা রেস্তোঁরা খুঁজতে বাইর হইলাম।
টেকনাফ শহরের খাওনের হোটেলের অভাব নাই এইটা আমি নিশ্চিত। কিন্তু ঈদের টাইমে অলমোস্ট সবই বন্ধ...রিকসাআলা আমাগো প্রথমে নিয়া গেলো হোটেল সোনারগাঁওতে...ঐটা বন্ধ...তারপর গেলাম চিটাগাং হোটেলে...ঐটাও বন্ধ...তারপর আমাগো ঠাই মিললো হোটেল শেরাটনে। আমার চিরকালের পছন্দ সামুদ্রিক মাছ খাইলাম আর মৌসুম খাইলো তার চিরাচরিত মেনু মুরগী। যেই মাছ খাইলাম তার স্বাদ আমার কাছে সার্দিনের মতো লাগলেও ম্যাসিয়ার কইলো ঐটা হইলো চুমা মাছ...লোকালি যেইটারে মাইট্টা মাছ কওয়া হয়।
হোটেলে ফিরা ব্যাগটা থুইয়াই আমি বাইর হইয়া গেলাম...মৌসুম রুমেই থাকলো। টেকনাফ শহর একটা রাস্তার উপর তৈরী হওয়া শহর। সেইন্ট মার্টিন যাওনের বন্দর শহরের বাইরে হওয়াতে শহরের কোনরম পরিবর্তন হয় নাই। হাজার হাজার টুপি আর দাড়িওয়ালা অলস লোকের শহর মনে হইলো ঈদের ছুটতে থাকা টেকনাফ। আগের ঈদের ছুটিতে বান্দরবানেও দেখছিলাম জনপদে উৎসব ভাবটা ছিলো পুরাপুরি, কিন্তু টেকনাফে ঈদ মানে ঢাকার মতোন দোকানপাট বন্ধ। বিনোদনের কোন ব্যবস্থা নাই, কোন সিনেমা হল দেখি নাই...আমি চা'য়ের দোকানে বইসা খানিক্ষণ শহর বুঝনের চেষ্টা করলাম...আইলসামি আমার খুব প্রিয় একটা প্রপঞ্চ হওয়া সত্ত্বেও টেকনাফি আইলসামি আমার বিরক্তিকরই লাগলো...সম্ভবতঃ বেকারী আর কিছু ফিশিং কোলড স্টোরেজ ছাড়া কোন ইন্ডাস্ট্রি নাই এই শহরে। টু্যরিস্ট গো মানুষজন খুব ভালো চোখে দেখে না। আলভীর কথা মতোই এরা আসলে টাকা কেন্দ্রীক ভাবনের চেষ্টা করে সবকিছুরেই।

গিয়া দাঁড়াইলাম স্কুটার স্ট্যান্ডে...নুরুল আমিন মাত্র তখন তার স্কুটারটারে ধুইয়া মুইছা পরিস্কার করতেছে...আমি তারে ঠিক করলাম রোহিঙ্গা রিফিউজি ক্যাম্প পর্যন্ত। পথে তার সাথে বিবিধ কথা...রোহিঙ্গারা কেমনে শহরে বাঙালীগো সাথে একসাথে থাকনের কথা ভাবতেছে...যে কোন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মতোনই অভিবাসীগো নামে যতো কূটকচালী, সব শুনলাম পুরা রাস্তায়। রোহিঙ্গা মেয়েরা দেখতে সুন্দর হয় এই তথ্য আমি প্রথম শুনলাম তার মুখেই। বাঙালী পয়সা আলারা তাগো বংশগতিতে সুন্দর চেহারার পোলাপাইন আনতে রোহিঙ্গা মেয়ে বিয়া করে দুই নাম্বার বা তিন নাম্বার বৌ হিসাবে। এইটারে নুরুল আমিন জায়েজ কইরা দিলো পুরা...কিন্তু রোহিঙ্গা পুরুষরা বাঙালী মেয়ের প্রেমে পইরা যেই বিয়া করে সেইটা নিয়া তার আপত্তি আছে প্রবল। আমি বুঝলাম রোহিঙ্গাগো লেইগা বাঙালীরা এখন আর টেকনাফে খুব শান্তিতে নাই...কারন রোহিঙ্গারা তাগো অস্তিত্বের স্বার্থে যেই খাটনি, যেই শ্রম মূল্যে বিক্রি করে তাতে বাঙালী শ্রমিকগো অনেক সমস্যা তৈরী করে...তাগো আইলসামী বেশি জমেনা আগের মতো।

নুরুল আমিন আমারে নিয়া এক জায়গায় থাইমা কইলো এইটাই ক্যাম্প। আমি তো তাজ্জব! এ কী! এইটা সেই বন্দরের পাশের বস্তি টাইপ জায়গাটা। বৃদ্ধের সেই জাহাজীরা। তুমুল উৎসবে আছে এই জনগোষ্ঠী তখনো, একটা হলুদ রঙের ব্যানারের নীচে দাঁড়াইয়া আছে একদল দাঁড়িওয়ালা লোক...মুসলিম এইড, টার্কি থেইকা আইজকা রোহিঙ্গাগো লেইগা কোরবানী দেওন হইবো। তিনটা মাঝারী সাইজের গরু আনা হইছে...রোহিঙ্গাগো মধ্যে আমি ধর্মীয় কোন অনুভূতি দেখলাম না এই কোরবানিতে, তারা বরং থালাবাটি নিয়া দাঁড়াইছে, কখন মাংস কাটা সম্পূর্ণ হইবো...নুরল্ল আমিনের সাথে কথা কইতেছিলাম আমি, যদি একজন মাঝির সাথে কথা কওন যায়, হাতে আমার হ্যান্ডি ক্যামকর্ডার...পাশের থেইকা একজন হঠাৎ কয়...এইটা সনি ক্যামেরা না? আমি এই গুলি সৌদী আরবে বেচতাম...আমি তাকাইয়া দেখি এক বাঙালী চেহারার তরুণ, বেশ স্বপ্রতিভ। তারে জিগাইলাম আপনে কই থাকেন? সে কয় এই ক্যাম্পেই এখন তার বাড়ি। আমার কিছুতেই বিশ্বাস হইতেছিলো না এই ছেলে রোহিঙ্গা...তার বাড়ির আঙিনায় গিয়া বইসা যখন তার ইন্টারভূ্য করতে শুরু করলাম তখন তার ভাষার পরিবর্তন দেখলাম মায়ের সাথে...ঐটাও চাটগাঁইয়াগো মতোনই একটা ভাষা। সেলিম তার দেড় বছর বয়সে এই দেশে আসছে...তারপর থেইকা এইরম ক্যাম্পে ক্যাম্পেই জীবন, মাঝে বাংলাদেশী পাসপোর্ট বানাইয়া সৌদী আরবে 5 বছর চাকরী শেষে আবার মাঝি বাবার গদিরসীন হইতে দেশে ফেরৎ। সে আমারে যেইসব কথা কয় সব হইলো আর্তি...এই দেশে তারা বাংলাদেশী হিসাবেই থাকতে চায়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিরা তাগো নির্যাতন কইরা বার্মার থেইকা বাইর কইরা দিছে। ঐটা তাগো দেশ না আর...এখন তারা মুসলমান ভাতৃত্ব খোঁজে...
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×