somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই পড়ার শুরুর কথা !

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বই পড়ার শুরু সেই ছোট বেলা থেকেই। পত্রিকা পড়তে পড়তেই অভ্যাস হয়েছে বই পড়ার। আব্বা সবসময় না হলেও বেশিরভাগ দিনই বাজার থেকে পত্রিকা নিয়ে আসতেন। গ্রাম এলাকা বলে পত্রিকা বাড়িতে দিয়ে যেত না হকাররা। নিজেদের বাজার থেকে কিনে আনতে হতো। মনে পড়ে যখন থেকে বাংলা পড়তে শিখেছি তখন থেকেই পত্রিকা পড়তাম। আমার প্রিয় পাতা ছিল খেলার পাতা আর মাঝে মাঝে গল্প খুঁজে পেলে পড়তাম।পত্রিকার সাথে যে ম্যাগাজিন গুলো দিত সেগুলো প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তাম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। কোন ঈদের সময় আব্বা যদি ঈদসংখ্যা নিয়ে আসতেন তবে সবার আগে ওটা শেষ করতেই হবে। ওটা শেষ না করা পর্যন্ত অন্য কোন কাজ করা যাবে না। যখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি তখন আপুরা প্রায় গল্প উপন্যাসের বই নিয়ে আসতেন। হয় কিনে না হয় ওনাদের বন্ধু-বান্ধবীদের কাছ থেকে ধার করে। দেখে ফেললে ধমক খেতে হবে এই ভয়ে আপুদের আনা বইগুলো লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তাম। বই এর ভাষা কঠিন হলে অনেক সময় বুঝতাম না তারপরেও পড়তাম। আরো একটা কাজ করতাম সেটা হলো বাসায় বড় ভাইবোনদের যত পাঠ্য সাহিত্যের বই ছিল তাও পড়ে শেষ করা।

হাইস্কুলে উঠার পর বই পড়ার নেশা আরো বেড়ে যায়। আমার আপুরা যে বই গুলো পড়তেন সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ ছিল উপন্যাস। এর মধ্যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় , হুমায়ুন আহমেদ , ইমদাদুল হক মিলন ও সমরেশ মজুমদার প্রমুখদের উপন্যাসই ছিল বেশি। আমাদের হাইস্কুল লাইব্রেরি খুব একটা বড় ছিল না। বইয়ের সংখ্যাও ছিল হাতে গোনা। তারপরেও রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র থেকে শুরু করে উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর বেশিরভাগ কবি সাহিত্যিকদের বই ছিল। কোন লেখকের সব বই না থাকলেও বিখ্যাত বইগুলো অবশ্যই পাওয়া যেত। স্কুলের লাইব্রেরির দায়িত্বে যে স্যার ছিল তিনি খুব সহজে কাউকে বই দিতে চাইতেন না। কারণ ছেলেমেয়েরা বই নিলে নাকি আর ফেরত দিতে চায় না। অন্যদিকে জরিমানার কোন নিয়মও স্কুলে ছিল না। তবে ভাল ছাত্র ছিলাম আর স্যাররাও ভালো জানতেন বলে বই নিতে সমস্যা হতো না। আমার কয়েকজন এই সুযোগটাই কাজে লাগাতাম। হেডমাস্টার স্যার আবার আমাদের খুব ভালো জানতেন। ঐ স্যার বই না দিতে চাইলে সরাসরি হেডমাস্টারের কাছে চলে যেতাম ।এভাবে অষ্টম শ্রেণিতে থাকাকালিন সময়েইএকে একে বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র , রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মধুসূদন দত্ত,সৈয়দ মুজতবা আলী, জহির রায়হান প্রমুখদের রচনাসমগ্র পড়া হয়ে যায়। নবম শ্রেণির মধ্যে আমাদের স্কুল লাইব্রেরির বেশিরভাগ পড়ে ফেলি। দশম শ্রেণিতে উঠে অবশ্য খুব একটা বই পড়া হতো না। তবে হাতের কাছে যখন যার বই পেতাম পড়তাম। স্কুল লাইব্রেরির এখনও একটা বই আমার কাছে আছে। নজরুলের “সঞ্চিতা”। এটা দেব দেব করে আর দেয়া হয় নি। অন্যায় হলেও স্কুলের স্মৃতি হিসেবে রেখে দিলাম নিজের কাছে। গ্রামের স্কুল তো তাই স্যাররাও এসব ব্যাপারে তেমন কোন খোঁজও রাখেন না।

ঢাকায় এসে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আমার বই পড়ার উৎস হয় নীলক্ষেত বই মার্কেট। বই কেনার জন্য অতিরিক্ত টাকা হাতে থাকতো না। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যেত ফুটপাত থেকে সস্তায় বই কিনতাম। এগুলোর মধ্যে ছিল গল্প, কবিতা, উপন্যাস এবং টুকটাক প্রবন্ধ টাইপের বই। বেশি টাকা দিয়ে যে বই কিনতাম না তা না। সেটা ছিল একেবারেই নগণ্য। দামি বইগুলো বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে পড়তাম। কলেজে লাইব্রেরি থেকেও নিতাম পড়ার জন্য। কলেজ লাইফে বই পড়ার হার স্কুল লাইফ থেকে কম হবে হয়তো। তবুও চেষ্টা করতাম নিয়মিত বই পড়ার।

মেডিকেলে এসে বই পড়ার নেশা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। এখন ইচ্ছা হলে একটা পড়ি না হয় পড়ি না। নিজের পড়ালেখার চাপ আছে ঠিক। কিন্তু এটার উপর দায় চাপানো মনে হয় ঠিক হবে না। তবে এখনো চেষ্টা করি পড়ার। আনন্দের জন্যই পড়া। আত্মশুদ্ধি আর মননের বিকাশের জন্য মনে হয় বই এর বিকল্প কিছু নেই। নিজের সীমাবদ্ধ জ্ঞান নিয়ে হয়তো বলা ঠিক হবে না তবে আমি খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করেছি যারা বই পড়ে অর্থাৎ সাহিত্য ভালবাসে আর যারা বই পড়ে না তাদের মধ্যে চিন্তার জগতে বিরাট একটা পার্থক্য থেকে যায়। এসব সাহিত্যবিমুখরা সঙ্কীর্ণতা এড়িয়ে মানসিকতার উন্নয়ন থেকে অনেকটা দূরেই রয়ে যায়। এরা কেমন জানি আবেগ অনুভূতিহীন জড় বস্তুর মত। আমি যেরকম বলছি সবাই হয়তো এরকম না । এটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত মতামত।

ধন্যবাদ সবাইকে ।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:০৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×