somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

@ ঈদঃ তাকওয়া ও ত্যাগের প্রেক্ষাপটে স্বদেশ (১)

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৬ রাত ৮:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদ মানেই তো খুশী, আনন্দ। মুসলমানদের জন্য আল্লাহ্ তা'আলা বছরে দু'বার এ আনন্দের ব্যবস্থা করেছেন- ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা। গতকাল চলে গেল মক্কা-মদীনাসহ মধ্যপ্রাচ্য এবং আশপাশের অনেকাঞ্চলেরই ঈদের দিন। পৃথিবীর আর সব জাতির মত মুসলমানেরাও তাদের সংস্কৃতিতে আরো অনেক আনন্দদিন পালন করে থাকে। কিন্তু আনন্দের সাথে যদি যোগ হয় ইবাদাত-পবিত্রতা, যদি আনন্দটাই হয়ে উঠে কল্যাণার্জনের পথ তাহলে সে আনন্দে কতটা ব্যাপকতা, নির্মলতা আর পরিপূর্ণতা থাকে, তার উপলব্ধি প্রতিজন মুমিনের কাছেই অনুভূত। কেননা, সাধারণতঃ আনন্দের ব্যাপারগুলোর সাথে থাকে মানুষের রিপুর-নফ্সের একটু অতিরিক্ত সহযোগিতা, আর রিপু বা নফ্স কখনোই মানুষকে বৃহত্তর কল্যাণের পথ দেখায় না; বরং দেখায় সাময়িক উত্তেজনা-সুখ-ভাললাগার সরুপথ। তাই ঈদের আনন্দের মূল ব্যাপারগুলো যখন হয় সর্বশক্তিমান, সবচেয়ে প্রিয়, দয়াময় প্রভু আল্লাহর উদ্দেশ্যে সালাত আদায়, যখন হয় ফিতর এর মত দান, যখন হয় প্রিয় গবাদি পশুকে আল্লাহর নামে তাঁর জন্যে কুরবানীর করার মত ত্যাগ, তখন রিপু বা নফ্সের দৌরাত্ম আর প্রাধান্য পায় না, সেখানে আনন্দের সম্পর্ক স্থাপিত হয় সরাসরি আত্মার সাথে, আর মূলতঃ আত্মার আনন্দই প্রকৃত আনন্দ।

প্রতিটি সভ্যতাই পরিবর্তনশীল, তা হয়ে থাকে সময়ের তালে তাল মেলাতে, জীবনাচারের নব নব ঊৎকর্ষতার প্রেক্ষিতে কিংবা গতানুগতিক ভাললাগা-মন্দলাগার গ্রহণ-বর্জনের ধারাবাহিকতায় অথবা আগ্রাসনের ভিত্তিতে। সংস্কৃতিতে পরিবর্তন-পরিবর্ধন যখন যেভাবে যেটুকুই হোক না কেন, কোন জাতি যদি এই বিবর্তনে তার মৌলিকত্ব হারিয়ে ফেলে, তাহলে তার অন্তঃসারশূন্যতা অনিবার্য। অর্থাৎ, আকীদা-বিশ্বাস, সে অনুযায়ী মৌলিক ইবাদাতসমূহ, যাবতীয় জাগতিক জীবনাচার এবং রসম-রেওয়াজ-উৎসব ইত্যাদি বিষয়সমূহে কালের বিবর্তনের যা কিছু নব নব নেয়া প্রয়োজন, যা কিছু প্রয়োজন বাদ দেয়া, এক কথায় সবকিছুই গ্রহণ বা বর্জনের মানদণ্ড হিসেবে নিতে হবে মূলধারাকে, শুরুর পরিপূর্ণ অবস্থাকে তথা মৌলিক গ্রন্থাবলীর আলোকে। এখানে আরেকটি ব্যাপারও বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়- সংস্কৃতির যে মৌলিকত্ব বা মূল ধারার কথা বলা হয়েছে এবং যে মানদণ্ডের কথা বলা হয়েছে, তাও পরিপূর্ণভাবে উপস্থিত থাকা প্রয়োজন সে জাতির বা সে ধর্মের বিধিবিধানে। সুখের কথা যে, ইসলাম এবং মুসলিম জাতিই এ ব্যাপারে একমাত্র পরিপূর্ণতার দাবী রাখে। যার মধ্যে বিশ্বাস থেকে শুরু করে জীবনের ছোট-বড় সকল দিক ও বিভাগের বিস্তারিত পুঁথিগত ও ব্যবহারিক বিধিবিধান এবং সেসবের ব্যবহারিক উদাহরণও মজুদ রয়েছে। যদিও অঞ্চলভেদে সাধারণ মুসলমানদের মাঝে কিছু কিছু বৈপরীত্য দেখা যায়, তবুও মূল উৎস থেকে লাভ করা জ্ঞানী বা আলেম সমপ্রদায়ের নিকট তা পরিস্কার এবং সংক্রামিত সেসব অপসংস্কৃতির অপনোদনে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল, আছে এবং থাকবেও ইনশাআল্লাহ্।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আজকাল ঈদের চালচিত্রে যা ঘটছে তার মধ্যে কয়েকটি বর্জনীয় দিক খুবই লক্ষ্যণীয়, যা শুধু ঈদ বলেই নয়; বরং সর্বাবস্থায়ই বর্জনীয়। তার মধ্যে একটি হলো- 'কুরবানীর প্রচারণা'। কে কত বেশী দামী গরু কুরবানী দিতে পারলো, তা নিয়ে রীতিমত প্রচারণার প্রতিযোগিতা। সৎকাজে আল্লাহ্ভীরুতা নিয়ে প্রতিযোগিতা করা অবশ্যই ভাল, কিন্তু তা করতে হবে যতদূর সম্ভব আল্লাহ্ ও বান্দার মাঝেই সীমাবদ্ধ রেখে। কারণ, প্রচারনা মূলতঃ লোকদেখানোর জন্যই নামান্তর, আর লোকদেখানোর অপরাধকে ইসলামী পরিভাষায় বলা হয় 'রিয়া', যা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে 'গোপন শির্ক' বা 'ছোট শির্ক বা অংশীবাদ' হিসেবে প্রমাণিত। যার শাস্তি সম্পর্কে মুসলিম শরীফের ১৯০৫ নং হাদীসে তিন জন ব্যক্তির করুণ পরিণতি সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। যারা হলেন ইসলামের সৎকর্ম ও প্রতিদান বিষয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের- অর্থাৎ, শহীদ, আলেম এবং দাতা। কেয়ামতের দিনের সেই বিচারের পরিণামে তাদের লোক দেখানোর নিয়ত ও সে অনুযায়ী তা বাস্তবায়নের জন্য সকলেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। (দীর্ঘ হাদীস বলে এখানে উল্লেখ করলাম না, পড়ে নেয়ার অনুরোধ রইল) সুতরাং সর্বাবস্থায় সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আমাদের কুরবানী আমাদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নামের কারণ না হয়ে যায়।

পরের পর্ব পড়ুন-
@ !@@!339592 !@@!339593 !@@!339594 !@@!339595 !@@!339596 !@@!339597 (2)

ছবির জন্য !@@!339600 যেখানে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৬ রাত ৮:৪২
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×