somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পায়ের তলায় সর্ষে

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৬ দুপুর ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা কোলাহল কানে আসতে আবার চোখ গেল ঐ বেড়িয়ে ফেরা নৌকোটিতে, এক ভদ্রলোক চেঁচামেচি করছেন। কথা শুনে বোঝা গেল, তিনি বসে থাকা ভদ্রমহিলাটির স্বামী আর চেঁচামেচি করছেন নৌকোর ভেতরে বসে থাকা পাঁচ-ছটি ছেলের উদ্দেশ্যে। একটি ছেলে তার স্ত্রীর সাথে অসভ্যতা করার চেষ্টা করেছিল নৌকোর ভেতর। নৌকোটি জলে থাকা অবস্থায় তিনি কিছুই বলেননি, তীরে ভেড়া মাত্রই কান ধরে হিড়হিড় করে ছেলেটিকে টেনে নামিয়েছেন আর মুখে বলছেন ' কি করবি এবার কর, নৌকোতে বসে কি করতে চাইছিলি আমার বৌকে, এবার কর, এখানে কর'। ছেলেটি প্রতিবাদ করতে চাইছিল, সে কিছুই করেনি বলে আর তার সাথীরাও সেকথাই বলছিল, কিন্তু ততক্ষণে তার কানের দফারফা আর চড় চাপড়ও পড়ছিল মুষলধারে। আকাশনীল স্কার্ট আর ম্যাজেন্টা রঙের কুর্তি পরা তার সুন্দরী স্ত্রী বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে, সবাই একবার তাঁর দিকে তাকায় তো পরবর্তী মুহুর্তেই আবার তাকায় তার স্বামীর দিকে। যিনি একহাতে ছেলেটির কান ধরে রেখে সমানে মেরে যাচ্ছেন অন্যহাতে। দাঁড়িয়ে তামাশা দেখা লোকেরা এবার এগিয়ে গেল ছাড়ানোর চেষ্টায়, বেগতিক দেখে মার খেতে থাকা ছেলেটির বন্ধুরা এগিয়ে এসে এবার ক্ষমা চাইতে লাগল বন্ধুর হয়ে কিন্তু যার স্ত্রীর সাথে অশালীন ব্যবহার করা হয়েছে তিনি ছাড়তে নারাজ। শেষমেষ ছাড়তে রাজী হলেন কিন্তু ছেলেটিকে তাঁর স্ত্রীর পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে হবে এই শর্তে। এব ংশুধু বেয়াদবী করা ছেলেটিই নয়, তার বন্ধুদেরও ক্ষমা চাইতে হবে ঐ একই ভাবে, কারণ তারা এই অসভ্য ছেলেটির বন্ধু এব ংতার সাথে আছে। ছেলেটি মুক্তির রাস্তা পেয়ে সাথে সাথেই ভদ্রমহিলার পায়ের কাছে বসে পড়ে ক্ষমা চাইল এব ংজীবনে আর কারও সাথে এরকম করবে না সেই অঙ্গীকারও করল। তার সাথীদের একজন ক্ষমা চাইতে রাজী ছিল না যেহেতু সে অপরাধ করেনি তখন মার খাওয়া ছেলেটি তাকে বলল শিগগীর ক্ষমা চেয়ে নে আর এখান থেকে চল! একে একে ৬জনের দলটি ভদ্রমহিলার পায়ের কাছে বসে ক্ষমা চাইল আর ঝটপট এগিয়ে গেল ফেরার পথে! একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লোক এতক্ষণে সামনে এগিয়ে এল যার হাতে এই বেড়াতে আসা দম্পতির জলের ক্যান, রুকস্যাক। এগিয়ে এসে বলল, বাবু, গাড়িতে যাই এবার? বাবু বললেন, যা, বস গিয়ে, আসছি। স্বামী স্ত্রী ধীরপায়ে এগোলেন ফেরার পথে, ভদ্রলোক তখনও গজগজ করে যাচ্ছেন আর তাঁর স্ত্রী তখনও চুপ, চেহারায় বিরক্তির ছাপ। আমার তিনি তখন বন্দরের আরেক কোণে দাঁড়িয়ে আছেন ফোন কানে, এই কোলাহল থেকে দূরে।

একভাবে নদীর বুকের এই বন্দরে জলের ধার ঘেঁষে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে হঠাত্ মাথা ঘুরে উঠল! একেবারে যাকে বলে উপর থেকে নিচে আর নিচে থেকে উপরে ২-৩বার যেন পাক খেয়ে উঠল। রেলি ংধরে দাঁড়িয়েছিলাম বলে সামলে নিলাম কিন্তু আর দাঁড়াতে সাহস না পেয়ে জলের ধার ছেড়ে চাতালের অন্যদিকে এসে বসে পড়লাম একটু সিঁড়িমত জায়গায়। পেছনে শুকনো নদী আর সামনে মাছের বন্দর যেখানে এখন নৌক থেকে মাছ তুলে বেছে আলাদা করা হচ্ছে। এক একটি নৌকো থেকে এক এক রকমের মাছ। কোন নৌকো থেকে শুধুই পার্শে তো কোনটি থেকে পাঁচমেশালী। লটে দেখা গেল প্রায় সব নৌকো থেকেই নামছে। দেখলাম চকচকে রুপোলী ছুরি মাছ, সোনালী তোপসেরা সব শুয়ে আছে একের পরে এক ঢিবি হয়ে। হঠত্ চোখে পড়ল এক হাঁসের উপর! হাঁস! এখানে কোত্থেকে এল! বেশ বড় একটি বুনোহাঁস। মাছ নিয়ে ফেরা একটি নৌকো একে তুলে এনেছে জম্বুদ্বীপ থেকে। হাঁসটি উড়তে পারছে না, ডানায় নাকী বাত ভর করেছে, ফুলে আছে ডানা! আমি প্রথমে ভাবলাম এ বোধ হয় বিক্রী করার জন্যে ধরে এনেছে কিন্তু দেখলাম না, তা নয়। পাখিটাকে শুশ্রুষা করবে বলেই জেলেরা এটিকে ধরে নিয়ে এসেছে সাথে করে। কিছু কুচো মাছ রাখা আছে পাখিটার সামনে, কিন্তু তার খাওয়ার কোন ইচ্ছে দেখা যাচ্ছে না। সে এদিক ওদিক তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে হয়ত, কোথায় এল! আগ্রহী মানুষদের আগ্রহ মিইয়ে গেল খানিক পরেই এই পাখিটিকে নিয়ে, সবাই সরে গেল যার যার জায়গায়, কাজে। ফাঁকা দেখে পাখিটা ধীর পায়ে, প্রায় গড়িয়ে গড়িয়ে জলের ধারে গিয়ে ঝাঁপ দিল জলে। খুব ধীরে অসুস্থ ডানায় সাঁতার কেটে এগোতে লাগল অন্যপারের দিকে, সেবা করতে চাওয়া মানুষগুলোকে ছেড়ে, এই বন্দরকে ছেড়ে সে এগিয়ে যেতে লাগল তার নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×