somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০০৬ রাত ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কদিন আগে একজনের একটা পোষ্ট পড়ে আশ্চর্য হলাম, মানুষের চেতনার অভাব কিংবা মানুষের কুশিক্ষা কিভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করে রাখে তার একটা নিদর্শনও দেখতে পেলাম। সেই পোষ্টের বিষয়বস্তু ও যুক্তি ছিলো ধর্মিয় রাজনীতি ও ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতি দুটাই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি। এমন প্রস্তাবনা কেউ সামনে নিয়ে আসলে তার মানসিক সুস্থতাকে প্রশ্ন করা যায়, প্রশ্ন করা যায় তার বিশ্লেষণ ক্ষমতাকে। তার অবস্থান বর্তমান সমাজের প্রেক্ষিতে ঠিক কোন অনগ্রসর সভয়তায় এই নিয়ে একটা কৌতুকালোচনাও শুরু করা যেতে পারে। অনেকেই অনেক মন্তব্য করেছেন সেই লেখায়- বিজ্ঞ লেখক তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষনও দিয়েছেন। তবে সেসব পড়ে তার মানসিক সুস্থতার অভাব সম্পর্কে প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়া যায়। এই মানুষটা কোনো দিনও যুক্তির ব্যবহার করে নি জীবনযাপনে কিংবা কোনো রকম বিশ্লেষণের সময় সংশ্লেষণ নামক যেই প্রক্রিয়া আছে তাও ব্যবহার করে নি। চিন্তন প্রক্রিয়ার সাথে কোনো ভাবেই সচেতন ভাবে যুক্ত নয় এই পোষ্টের লেখক।
তবে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি এবং ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতির ভেতরে যে ধর্মকে খুঁজে পায় তার কল্পনা শক্তির প্রশংসা করতে হয়, তবে একই সাথে তার ধর্মিয় চেতনা যে কতটা িিনম্ন স্তরের সেই বিষয়টাও সামনে চলে আসে। শব্দগত একটা ঐক্য বিদ্যমান এটা স্ব ীকার করে নেওয়াটা উচিত।
ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বা ধর্মকে সামনে এনে একটা রাজনৈতিক ধারা তৈরি এবং এর সূচনার শব্দটা ধর্ম এবং ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতি- যা কোনো রকম ধর্ম বিষয়ক ভাববাদকে রাজনৈতিক ইসু্য হিসেবে ব্যবহারের বিরোধি এর সূচনার শব্দটাও ধর্ম। এই প্রারম্ভিক মিলটুকু বাদ দিলে সম্পুর্ন বিষয়টাতে চেতনাগত প্রভেদ বিদ্যমান। এবং খুবই মোটাদাগের চেতনাগত প্রভেদ বিদ্যমান।অবশ্য চেতনার স্তর যদি নিম্ন মানের হয় তাহলে শব্দগত ঐক্য ছাড়া অন্য কিছুই বিবেচনা করতে পারে না মানুষ।


ধর্ম ীয় রাজনীতি, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি, সামপ্রদায়িকতামুলক রাজনীতি যেখানে ধর্মিয় আবেগকে রাজনৈতিক কুটচালে ব্যবহার করা হয়। ধর্ম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন- রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা- কিংডম ওফ হ্যাভেন জাতীয় সমপ্রদায়ভিত্তিক দেশ ও রাষ্ট্রিয় নীতিমালা তৈরির আন্দোলন এবং এর বিভিন্ন রকম সরল জটিল নৈতিক, উগ্র ও নমনীয় মাত্রার ব্যবহার নির্ধারণ করে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতিতে সেই নির্দিষ্ট ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের অবস্থান।
জামাতে ইসলামী ও ইশলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন দু দলই রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলামেরঅনুসরণ চায়।কিন্তু আদর্শ ও চরিত্রগত দিক থেকে তারা ভিন্ন দুটি দল। একই রকম ভাবে জামায়াতুল মুজহাদিন আর হিজবুল তাহিরিও আলাদা দুটি রাজনৈতিক মতবাদে চলে যদিও তাদের লক্ষ্য একই।
ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনৈতিক ধারা সভ্য এবং আধুনিক।ধর্মিয় রাজনীতির ধারা মধ্যযুগীয় চেতনার সমপ্রসারণ। ইশ্বর চেতনার ধারার বিংশ শতাব্দির বিবর্তনকে ধারণ করতে ব্যথর্রাগৈতিহাসিক ধারার রাজনীতির সাথে আধুনিক রাজনীতির পার্থক্য গুহাবাসী মানুষের সাথে শহুরে মানুষের পার্থক্যের মতোই স্পষ্ট।নুন্যতম জ্ঞানচর্চার ধারা এবং বিশ্লেষনের নুন্যতম যোগ্যতা আর মানসিক সুস্থতা থাকলেই এই স্পষ্ট পার্থক্যটা বুঝতে পারা যায়।
ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনৈতিক ধারা সচেতন ভাবেই কিছু জিনিষকে বর্জন করে সামনে আগানোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার না করার সভ্য সংস্কার যা ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতিকে ধর্মিয় রাজনীতির বিরুদ্ধে নীতিগত ভাবে অবস্থান নিতে বাধ্য করে।
ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতি কখঐ ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে না, রাজনৈতিক ইসু্য হিসেবে ধর্মিয় কোনো অনুশাসন বা মানুষের ধর্ম বিশ্বাস ব্যবহৃত হবে না, সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় ইসু্য ভিত্তিক রাজনীতি হবে মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন হবে এইসব ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতির ধারা।

প্রধান পার্থক্যটা এখানেই।ধর্মিয় উন্মাদনা যা পক্ষান্তরে সামপ্রদায়িক ও সংকীর্ণ এমন উন্মাদনা যেনো কখনই রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আসতে না পারে এই রাজনীতি চর্চাই ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির চর্চা। মানুষের ব্যক্তিগত শ্বিাস মানুষের সমষ্টিগত ধর্মিয় উৎসব এসব কোনো গঠনমুলক রাজনীতির বিষয় হতে পারে না। কে মাজারে সিনি্ন দিবে কে দরগায় ানত করবে এটা একজন মানুষের নিজস্ব ধর্ম পালনের অধিকার, সেখানে সংঘবদ্ধ ভাবে মানুষের নিজস্ব ধর্মপালনের অধিকারকে রক্ষা করার জন্য সুস্থ রাজনীতির চর্চা প্রয়োজন। যখন এই ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে রাজনীতির ইসু্য করা হয় তখন অন্য সব মানুষ যারা সেই ব্যক্তিগত বিশ্বাস ধারন করে না তাদের বিশ্বাস আক্রান্ত হয়।
খাতমে নবুয়তের নামে আন্দোলন করে আহমদিয়াদের ধর্মপালনের অধিকার ক্ষুন্ন করার কোনো সাংবিধানিক অধিকার নেই কোনো রাজনৈতিক দলের- অথচ এই ইসু্যতে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলেছে রাজনৈতিক দল। বেআইনি ঘোষিত ফতোয়া পুনর্বহালের দাবী কিংবা আইন প্রণয়নের জন্য ধর্মগ্রন্থকে ব্যবহারের অনৈতিক দাবির জন্য আন্দোলন করাও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি।
আইন প্রণীত হয় রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জন্য এবং সকল নাগরিকের অধিকার অক্ষুন্ন রাখা রাষ্ট্রের কর্তব্য। যেহেতু সকল নাগরিকের ধর্মিয় বিশ্বাস এক নয় এই সহজ সত্যটা অস্ব ীকার করে কোনো একটা ধর্ম বিশ্বাসের সপক্ষে রাজনৈতিক আন্দোলন করা অসুস্থ রাজনীতির চর্চা। এই অসুস্থ রাজনৈতিক ধারার বিপরীতে যে সভ্য রাজনৈতিক ধারা তা হতেভবে সকল মানুষের অধিকারের পক্ষে- এই দাবিটা পুরণ করে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক আন্দোলনের ধারা।
ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক ধারা মানুষের ধর্মপালনের অধিকার রক্ষার জন্যই গৃহীত। যেহেতু ব্যক্তিগত বিশ্বাসের জায়গাটাতে ানেক মতভিন্নতা আছে তাই এই মতভিন্নতাকে সম্মান করে কোনো রকম ধর্মবিশ্বাসকে ক্ষমতা দখলের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার না করার সভ্য সংস্কৃতি ধর্মনিরপেক্ষতা।
শাহজালালের মাজারে বোমা মারা হলো, ওরশে বোমাবাজি হলো-পুকুরে বিষ ছড়িয়ে মাছ মারা হলো- এসব অসুস্থ রাজনৈতিক পন্থা যারা অবলম্বন করছে তারা তাদের নিজস্ববিশ্বাস অন্য সবার উপরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে এটা নিশ্চিত ভাবেই জোরজরবদস্তি মূলক আচরন। এটাও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উপজাত হিসেবে আসে। একটা নির্দিষ্ট বিশ্বাসকে সবার উপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা। ব্যক্তির অধিকারকে সম্মান না করে তার উপর বিশ্বাস ও আচরন বিধি চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টাকে নীতিগত ভাবে সভ্য মানুষ বিরোধিতা করে। এই বিরোধিতাই তাকে ধর্মনিরপেক্ষা সভ্য রাজনৈতিক ধারাকে সমর্থন করতে বলে।
কোরানের আলোকে সংবিধান রচনার প্রয়োনীয়তা কোথায়? বিজ্ঞ ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সমর্থকরা কোরান হ্যানো কোরান ত্যানো - ওখানে এই ভালো কথা বলা আছে - ও খানে সেই ভালো কথা বলা আছে - হাদিসের এই ব্যাবস্থা ভালো সেই ব্যাবস্থা ভালো করে শোরগোল করছেন অথচ আইন প্রণয়নের জন্য ঠিক কোরানের কি ব্যবহ ৃত হবে এই বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। কি হবে কোরানের আইনের ভিত্তি, মাদানি 14টা সুরা? কি হবে সুন্নাহ ও কোরান ভিত্তিক রাষ্ট্রের আইনের রুপরেখা? সেখানে কি কি বিষয় থাকবে? এ নিয়ে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য নেই তাদের অথচ প্রতিদিন কিবোর্ড ফাটিয়ে ফেলছেন ইসলামী জীবনব্যবস্থার কথা বলে। তা যারা মুসলিম না তারা কি করবে? তারাও কি মুসলিম জীবনযাপন করবে তাদের সংস্কৃতিকে বর্জন করে? তাদের অধিকারের সীমারেখা কি হবে? আইন প্রণয়নের সময় কোরানের অপব্যবহার হবে না এমন নিশ্চয়তাও তারা দিচ্ছেন না, কোন ব্যাখ্যার আলোকে তারা আই জীবনব্যবস্থা প্রণয়ন করবেন তাও বলছেন না,অথচ পরস্পর বিরোধি বক্তব্যও আছে হাদিসে, বিভ্রান্তিকর শব্দাবলীও আছে- যার অপব্যাখ্যা হচ্ছে এবং এটা রোধ করা যাচ্ছে না কোনো মতেই।
তারা একটু ঝেড়ে কাশুন, আলোকিত ইসলামী জিবনব্যাবস্থার প্রদীপের নীচের অন্ধকারকেও প্রকাশিত করুন, একটা নিরপেক্ষ অবস্থান জানান আমাদের আমরা সেই অবস্থানটাকে ধ্রুব মেনে নিয়ে একটা আলোচনা করে দেখি।


সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×