somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভার্চুয়াল সংস্কৃতি

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০০৬ রাত ২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সভ্যতার অগ্রসরতা পরিমাপের জন্য স্থানিক কিছু পরিমাপাঙ্ক আমরা নির্ধারণ করে দিতে পারি, হয়তো এসব পরিমাপাঙ্ক ব্যবহৃত হচ্ছে সভ্যতার অবস্থান নির্ণয়ের জন্য। এসব মানদন্ড কোনো স্থির বিষয় নয় তবে সভ্যতার ক্রামবিকাশ পর্যবেক্ষণ করে আমরা এমন কিছু মানাংককে স্পষ্ট চিহি্নত করতে পারি যা সভ্যতার অগ্রগতির পরিমাপক।
এ কথা স্মরণ রাখা প্রয়োজন সভ্যতা মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের জটিলতার সাথেও সম্পর্কিত। যন্ত্রব্যবহার জাতীয় বস্তুগত উৎকর্ষতাও সভ্যতার অগ্রসরতা পরিমাপের মনদন্ড হয়ে উঠতে পারে। প্রযুক্তির ব্যবহার, স্থাপনা নির্মানের দক্ষতা, এসব প্রত্নতাত্তি্বক বিষয়ও সভ্যতার অগ্রসরতা পরিমপের প্রামান্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
নৃতাত্তি্বক পর্যালোচনায় সম্পর্কের ভিত্তি, চেতনার ক্রমবিকাশের সাথে সভ্যতাকে একিভূত করে দেখে। আমি যেভাবে সভ্যতাকে চিহি্নত করতে চাচ্ছি হয়তো এভাবে অনেকেই সভ্যতার ক্রমবিকাশকে চিহি্নত করে গেছেন।
ইশ্বর চেতনা ও যৌনতা বিষয়ক নীতিমালা এবং অর্থনৈতিক ভিত্তিতে সামাজিক শ্রেনীবিন্যাস করণ প্রক্রিয়াকে আমি এমন 2টা মানদন্ড ধরে নিতে পারি। সভ্যতার ক্রমবিকাশের পর্যায়ে অর্থনৈতিক সামাজিক স্তরায়ন,কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সাথে যৌনতা বিষয়ক নীতিমালা ও ইশ্বর চেতনার সংশ্লেষণ আমার বিবেচনায় ধর্ম।
ইশ্বর চেতনা সভ্যতার অগ্রগতির সাথে বিবর্তিত হয়। 4000 বছর আগের মানুষের ইশ্বর চেতনার সাথে বর্তমানের মানুষের ইশ্বর চেতনার বিভেদ নিরসনের জন্যই ধর্মকে পুনরায় আধুনিকিকরন করা হয়। ধর্মের নিষেধ ও ব্যাখ্যাকে যুগোপযোগী করা হয় নিয়মিত ভাবে।
ইশ্বর শব্দটার অর্থকেও নতুন ভাবে নির্ণয় করা হয়।তার পুর্বানুমিত গুনাবলীর সংস্কার সাধন, বিলোপ ও সংযোজনের মতো ঘটনাগুলোও ঘটতে থাকে।প্রযুক্তির ব্যবহারও এই নতুন অর্থায়নে একটা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
ধর্মকে ইশ্বর চেতনা বিযুক্ত করলে আমরা একটা সংস্কৃতি পাই, সে সংস্কৃতির নির্দিষ্ট নীতিমালা, শব্দ সংগ্রহ আমাদের নির্দিষ্ট ধর্মিয় সংস্কৃতির পরিচয় দেয়।
আমরা ধর্ম আর ধর্মিয় বিভাজনের ইঙ্গিত হিসেবে এই সংস্কৃতিকেই ব্যবহার করি, ধর্মের অন্তর্নিহিত সংস্কৃতি ও কৃষ্টি আমাদের অনেক তথ্যই জানায় মানুষের জীবনযাপন নিয়ে। ইশ্বর উপাসনার প্রকাশ্য দৃষ্টান্ত না থাকলেও সাংস্কৃতিক চিহ্ন দিয়ে ধর্মকে অনুসরণের বিষয়টাও প্রতিষ্ঠিত একটা ধারা ।
যান্ত্রিক আগ্রাসন ইশ্বর চেতনার বিবর্তন ঘটাচ্ছে, আমাদের ইশ্বরের উদ্দেশ্য বা মানব সমপ্রদায়ের পরিণতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে, বিবর্তন বাদের আগে ও পরে যেমন ধর্মিয় চেতনার স্পষ্ট বিভাজন লক্ষ্য করা যায়, তেমন স্পষ্ট একটা বিভাজন গড়ে উঠছে কম্পিউটার যুগ শুরু হওয়ার পর।
কম্পিউটার চেনা সামাজিক ব্যবস্থা একেবারে বদলে ফেলেছে। মানবিক সম্পর্ক মানুষের সাংস্কৃতিক বিনিময়, মানুষের অনৈতিকতা, মানুষের বিকৃতি, মানুষের উদ্ভাবনি ক্ষমতা-সব কিছুই আসলে নতুন করে নির্ণয় করতে হচ্ছে। পৃথিবী তার ও তারবিহীন ভাবে সংযুক্ত হয়ে যাওয়ায় এখন আমাদের সামগ্রিক সভ্যতাএকটা কল্পিত জগতে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় বিবর্তিত হচ্ছে।
যৌনতা বিষয়ক নীতিমালা টেমন ভাবে বিকশিত হয়ে উঠে নি এখনও, তেমন ভাবে অত্যাধুনিক কোনো ধর্মের বুনিয়াদ তৈরি হয় নি এখনও। কৃষ্টি ও সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে, অর্থনৈতিক স্তরবিন্যাসও তেমন ভাবে স্পষ্ট না যদিও তৃতীয় বিশ্বের দেশ সমুহে এখনও অর্থনৈতিক স্তরের উপরের অংশই শুধুমাত্র কল্পিত জগতে প্রবাশাধিকার রাখে তবে অন্য উন্নত দেশগুলোতে এমন কোনো অর্থনৈতিক বিভাজন নেই।
এই সংস্কৃতিকে ধারাবাহিক ভাবে বির্তিত হতে দেখা এবং এর সামাজিক প্রতিক্রিয়া নিয়েও অনেকেই কাজ করছেন। কি হতে পারে এই ভার্চুয়াল সংস্কৃতির ভবিষ্যত। চ্যাট রুমের সম্পর্ক এবং সামাজিক সম্পর্কের ভেতরে ফারাক আসলেই কি আছে কোনো? তবে এই ভার্চুয়াল সম্পর্ক এবং দৈনন্দিন সম্পর্কের ভেতরে যোগাযোগ স্থাপনের একটা সচেতন প্রয়াসও বিদ্যমান। বস্তুর বিবর্তন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্তবস্তুর পরিণতি সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা আমাদের ভাববাদি করে তুলতে পারে। আমাদের আধ্যাতি্বকতা বেড়ে যেতে পারে। যা কিছু সহজে বোধগম্য হয় না সেই সব অনিশ্চিত অবস্থাকে ব্যাখ্যা করে দর্শন কিংবা ধর্ম। আদৌ সে ব্যাখ্যা সত্য কি না এটা নির্ধারণ করে বিজ্ঞান। তবে পরীক্ষাগারে নিরূপিত না হওয়া পর্যন্ত বা কোনো রকম নিশ্চিত ব্যাখ্যা না আসা পর্যন্ত আধ্যাতি্বকটা ও বস্তুবাদ সহগামী। তবে অনিশ্চয়তা বিচারে আধ্যাতি্বকতা অনেক বেশী পরিনতি সচেতন। এখানে নির্ধারিত হয়েই থাকে পরিনতি। একটা ব্যাখ্যা যতই হাস্যকর হোক না কেনো তৈরি থাকেই। বস্তুবাদ যদিও একটা যৌক্তিক ধারবাহিকতা বহন করে তবুও এটা পরিনতি সম্পর্কিত কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা দেয় না সাম্ভাব্য অনেকগুলো পরিনতি সামনে নিয়ে আসে এবং অনুমান করে এক একটা কিংবা এর সবগুলোই কিংবা এর কিছু সংখ্যক ঘটনা ঘটা সম্ভব। পুর্বনির্ধারিত কোনো গতিপথ নেই বরং তাৎক্ষনিক বিন্যাসের উপর সাম্ভাব্য পরিনতির সম্ভবনা পরিবর্তিত হয়।
সভ্যতার অগ্রসরতার সাথে মানুষের মানুষের সম্পর্কের জটিলতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়, মানুষ অনেক মানুষের ভাবধারার সাথে সম্পর্কিত হয়, এসব ধণাত্বক পরিবর্তন সূচিত হলেও প্রযুক্তি প্রাথমিক ভাবে মানুষের অন্ধকার চেতনাকেই মুক্ত করে। প্রযুক্তির ভুল বা অনৈতিক ব্যবহারই স্পষ্ট হয় প্রথমে। একই ভাবে ভার্চুয়াল সংস্কৃতির অনৈতিক ব্যবহার আমাদের এই নেট ব্যবহারের কিছু স্ব ীকৃত নীতিমালা দিয়েছে। কোনো কোনো দেশ এই জায়গায় স্পষ্ট বিধিনিষেধ আরোপ করছে, কেউ বলছে এটাকে কোনো রকম সেন্সরশিপের বাইরে রাখতে। তবে নেটিকেট বলে যেই শব্দটা এখন আভিধানিক হয়ে উঠেছে তার ব্যব হার সম্পর্কে সচেতনতার অভাবও স্পষ্ট এখনও।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০০৬ রাত ২:১৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×