somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইহুদিরা কি বেশী বুদ্ধিমান?

১২ ই ডিসেম্বর, ২০০৬ বিকাল ৩:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঐদিন নিকোলাস ওয়েডের Before the dawn পড়ছিলাম। খুব অল্প কথায় অনেক তথ্য আছে বইটাতে। এক জায়গায় উনি প্রসঙ্গটা তুলেছেন ইহুদিরা আসলেই বেশী বুদ্ধিমান কি না? এরকম একটা সন্দেহ আমার নিজেরও অনেক দিন ধরে ছিল। পৃথিবীতে ইহুদি ধর্মালম্বী মানুষের সংখ্যা 1 কোটির কিছু বেশী, অথচ কেবল গত এক শতকে সভ্যতায় ইহুদিদের কন্ট্রিবিউশন আনুপাতিক ভাবে অনেক বেশী। যেমন আমেরিকার মোট জনসংখ্যার মাত্র 3% ইহুদি, অথচ আমেরিকায় যত জন নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন তার 27% ইহুদি ধর্মাবলম্বি অথবা অনুসারী। এ পর্যন্ত মোট সাড়ে সাতশর কিছু বেশী মানুষ নোবেল পেয়েছেন তার মধ্যে প্রায় দেড়শজন ইহুদি বংশোদ্ভুত (মানে দাড়াচ্ছে প্রায় 20%) অথচ পৃথিবীর 600 কোটি লোকের মাত্র 0.2% ইহুদি বা আধা ইহুদি। আর পুরস্কার গুলোর বেশীর ভাগই পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নে। এমনিতে আমেরিকানরা প্রচুর পরিসংখ্যান রাখে, এর একটাতে দেখা যায় ইহুদি বংশোদ্ভুতদের আই কিউ স্কোর গড়ে অন্যান্যদের চেয়ে 1 পয়েন্ট বেশী (সে অর্থে খুব একটা পার্থক্য নেই)। তবে যাদের আই কিউ 140 এর চেয়ে বেশী এরকম লোক হিসাব করলে আনুপাতিকভাবে ইহুদিদের সংখ্যা বেশী।

তো কি এমন বিশেষত্ব আছে ওদের যে ওরা এত মেধাবী? ঠিক সরাসরি কোন জেনেটিক প্রমান এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি এর পেছনে। তবে ইউটা বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Utah) হেনরি হার্পেন্ডিং এবং গ্রেগরী কক্রান (Gregory Cochran) কিছুদিন আগে বেশ কিছু সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ওরা দেখিয়েছেন গত এক হাজার বছরের ডারউনিয়ান ন্যাচারাল সিলেকশনের একটা ভুমিকা থাকতে পারে বা আছে এর পেছনে। অনেকগুলো জেনেটিক রোগ আছে যেগুলো ইহুদিদের মধ্যে অনেক বেশী দেখা যায় (যেমন Sphingolipid), ক্ষেত্র বিশেষে 15% আশকেনাযিম (Ashkenazim) ইহুদিদের এই রোগের মিউটেশন আছে, 60% এর কোন না কোন রোগের অন্তত একটা জিন আছে। আশকেনাযি ইহুদি কারা ইন্টারনেটে খুজলে পাবেন, মোটামুটি ইউরোপিয়ান ইহুদিদেরকে আশকেনাযি ধরে নেয়া যায়। এবং নোবেল প্রাইজ গুলো মুলত আশকেনাযি ইহুদিরাই পেয়েছে, অন্যান্যরা যেমন মধ্যপ্রাচ্যের বা ঊত্তর আফ্রিকার ইহুদিদের মধ্যে বিশেষ মেধার উপস্থিতি তেমন দেখা যায় না।

কক্রান এবং হার্পেন্ডিং দেখিয়েছেন ইহুদিদের মধ্যে জেনেটিক রোগগুলোর ব্যপকতা কেবল ফাঊন্ডার ইফেক্ট (founder effect) দিয়ে ব্যখ্যা করা সম্ভব নয়। কারন ফাউন্ডার ইফেক্টের জন্য পপুলেশন খুব কমে যাওয়া দরকার, গত এক হাজার বছরে এরকম কোন ঐতিহাসিক প্রমান নেই। সুতরাং এই জেনেটিক রোগগুলোর নিশ্চয়ই কোন সুবিধা আছে যে কারনে ন্যাচারাল সিলেকশন এদেরকে ধরে রেখেছে, এবং ক্রমশ সংখ্যা বাড়িয়েছে। কক্রান আরও প্রমান দেখিয়েছেন যে Sphingolipid রোগ থাকলে বা একটা মিউটেশন থাকলে মস্তিষ্কের নিউরনের গ্রোথ এবং ইন্টারকানেকশন ভালোভাবে হয়। অনেক ক্ষেত্রে নিউরাল রেস্ট্রিকশন গুলো কমাতে সাহায্য করে। কক্রানের ধারনা ইহুদীদের বাকী রোগগুলোরও এরকম দরকারী ভুমিকা থাকতে পারে।

কিন্তু এই রোগগুলো কেন শুধু ইহুদিদের মধ্যে বেশী দেখা যায়? কক্রানের ধারনা কারনটা ঐতিহাসিক। 900 খৃষ্টাব্দে আশকেনাযিরা ফ্রান্সে ঊত্তরাঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। 1100 খৃষ্টাব্দের মধ্যে তারা টাকা পয়সা ধার দেয়া, ট্যাক্স কালেকশেনের পেশায় জড়িত হয়। এর কারন তখনকার খৃষ্টীয় ইউরোপে ইহুদিদের সব কাজের অধিকার ছিল না। ক্রিশ্চিয়ানরা টাকা-পয়সা সংক্রান্ত কাজগুলোকে নিচু চোখে দেখত এজন্য ইহুদিদেরকে দিয়ে ওগুলো করাত। মধ্যযুগের সামাজিক ব্যবস্থা ইহুদিদের জন্য খুবই hostile ছিল, সুতরাং বেশ খানিকটা চতুর না হলে ঐরকম পরিবেশে টিকে থাকা কঠিন। পরবর্তি 900 বছর তাই ইহুদিদের মধ্যে যারা একটু বেশী বুদ্ধিমান বা স্টার পারফর্মার তাদেরকে বেশী সুবিধা দিয়েছে। আরকেটা কথা সে সময় ইঊরোপে ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতি চালু ছিল না, সুতরাং আশকেনাযিরা ট্যাক্স হিসাব করত রোমান নিউমেরাল দিয়ে যেমন cccl টাকার xvii পার্সেন্ট কত ইত্যাদি। বেশ পরিমান স্কিল না থাকলে রোমান নিঊমেরাল দিয়ে পার্সেন্ট হিসাব করা বেশ কঠিন। কক্রানের মতে এসব কারনে জেনেটিক রোগগুলোর অসুবিধা থাকলেও সুবিধা বেশী হওয়াতে এগুলো আশকেনাযিদের মধ্যে গত এক হাজার বছরে ব্যপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে (ন্যাচারাল সিলেকশন)। যার ফলাফল হিসেবে আজকের যুগের ইহুদি বংশোদ্ভুতরা অন্যান্য এথনিক গ্রুপের চেয়ে বেশী মেধাবী বলে মনে হয়।

নিকোলাস ওয়েডের বইয়ে এ অংশটি পড়ার পর আমার মনে হল, আচ্ছা আমাদের বাঙালীদের পুর্বপুরুষরাও তো 200 বছর ইউরোপীয়ান, আর তার আগে 800 বছর আরব-তুর্কি ঊপনিবেশে কষ্ট-সৃষ্টে ছিলেন। এর বিনিময়ে তাদের ঊত্তরাধিকার হিসেবে আমাদের তো এমন দুচারটা সুবিধা এখন পাওয়া ঊচিত। কে জানে আসলেই আমাদের কোন বিশেষত্ব আছে কি না, যা এখন ব্যবহার করা যেতে পারে।

[ইটালিক] বেশীরভাগ তথ্য নিকোলাস ওয়েডের বই থেকে। [/ইটালিক] হাতে সময় থাকলে আমার [link|http://utsablog.blogspot.com/|BDwb
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×