অর্থ উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা যেতে পারে। এটা রুটিন কাজ হলে তেমন আলোচনার দরকার পড়ে না। তবে বড়ো কোনো কাজের জন্য হলে মন্ত্রিপরিষদ বা উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কার্যপত্র উপস্থাপন ও আনুষ্ঠানিক আলোচনার দরকার হয়। এবার কী উদ্দেশ্যে, কোন শর্তে এবং কতো দিনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, সে সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে এবং সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তার কারণও ব্যাখ্যা করেছে। তাতে মনে হয়, রুটিন কাজের জন্যই সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তবুও আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার কারণ জানার চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার উদ্দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়ে থাকে, তাহলে তারা পুলিশ বাহিনীর কাজে সহায়তা করবে। আর যদি নির্বাচনী কাজে সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়ে থাকে, তাহলে সেনা সদস্যদের নির্বাচন সংক্রানত্দ কাজে ব্যবহার করা হবে।
প্যাকেজ প্রসত্দাব বাসত্দবায়নে জট লেগে যাওয়ায় অনেকেই নিরাশ হয়ে পড়েছেন। এ ব্যাপারে উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, নিরাশ হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। অনেকেই মনে করছেন, অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়ে গেছে। তাই বলে হাত-পা ছেড়ে বসে থাকলে তো চলবে না। নতুন উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ, তফসিলের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগই নেই। প্যাকেজ প্রসত্দাব অনুযায়ী আলোচনা হওয়ার কথা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে। কিন' আমরা আবর্তিত হচ্ছি কয়েকজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে নিয়ে।
তিনি বলেন, প্যাকেজ প্রসত্দাবের কয়েকটি ক্ষেত্রে জট লেগেছে। কিন' সে জট খোলা যাচ্ছে না। এ জন্য কে দায়ী, সে সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা বলেন, তা ঠিক করবে ভবিষ্যৎ। যদি আমি ব্যর্থ বলে প্রমাণিত হই, তাহলে পদ ছেড়ে চলে যেতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করবো না।
হাসান মশহুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের কাজ প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেওয়া। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের পরামর্শ শোনেন, কিনত্দ তিনি তা গ্রহণ করেন না। গত শনিবার অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সেনাবাহিনী নিয়োগের প্রসত্দাব উত্থাপন করা হয়। কোনো উপদেষ্টাই সেনা সদস্য মোতায়েনের পক্ষে সম্মতি দেননি। তারপরও প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতি নিজস্ব ক্ষমতাবলে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধানত্দ নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি, দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার মতো পরিস্থতি সৃষ্টি হয়নি। এর কোনো প্রয়োজনও ছিল না। যদি নিজের মানসম্মান নিয়ে কাজ করা না যায়, তাহলে শুধু শুধু পদ অাঁকড়ে থাকার কোনো অর্থ হয় না।
পরামর্শ গ্রহণ না করার কারণে তার পদত্যাগ করার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না সে সম্পর্কে সরাসরি জবাব না দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমরা স্বসত্দি বোধ করছি না। এখন সময় সমষ্টিগতভাবে এবং এককভাবে পরবতর্ী কার্যক্রম নিয়ে চিনত্দা করা। সিদ্ধানত্দ নেয়া। এককভাবে সিদ্ধানত্দ নিয়েছেন কিনা প্রশ্ন করা হলে হাসান মশহুদ চৌধুরী বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধানত্দ নিয়ে ফেলেছি ইনশাল্লাহ! সেটা দৃশ্যমান হতে খুব দেরি হবে না।
সি এম শফি সামী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছি না বুঝতে পারলে পদ থেকে সরে দাঁড়াবো। তিনি বলেন, দুই জোটের সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা প্যাকেজ প্রসত্দাব তৈরি করেছি। সে প্যাকেজ প্রসত্দাব সফল করার ব্যাপারে আমরা পুরোপুরি সফল হইনি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে সফল হইনি, তা তো নয়। আমরা নির্বাচনী তফসিল পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি। যদি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে পারতাম, তাহলে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ সৃষ্টির সহায়ক হতো। অবশ্য সে ক্ষেত্রে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে আমরা উৎকন্ঠিত, উদ্বিগ্ন। তবে আমরা তা দূর করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি। সেনাবাহিনী মোতায়েন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে আমাদের দ্বিমত আছে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মতের অমিল থাকতেই পারে। আমরা একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদি আমরা দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হই, তাহলে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়াবো।
তথ্য উপদেষ্টা মাহবুবুল আলম বলেন, আমরা অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি। আমরা বেশ কয়েকটি সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি। আরো কয়েকটি অনিষ্পন্ন বিষয় রয়ে গেছে। যদি সেগুলোর সমাধান হয়ে যায়, তাহলে একটা অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা অসম্ভব হবে না। আপনার কোনো কোনো সহকর্মী ইতিমধ্যে পদত্যাগ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী? এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
সেনাবাহিনী মোতায়েনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। সেনাবাহিনী মোতায়েনের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। সেনাবাহিনী মোতায়েনের কারণ জানাতে পারবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০