somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বসুন্ধরায় বারান্দালী

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৬ রাত ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বারান্দালীর সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন পরিচয় নেই। নেটের মাধ্যমেই পরিচয়। কথা বলছিলাম ইয়াহু মেসেঞ্জারে। ওর অফিস উত্তরায়। আমার অফিস মতিঝিল। কথা প্রসঙ্গে বললাম দেখা করা কী সম্ভব? সে বললো চলে এসো উত্তরায়। অফিস ছুটি পাঁচটায়। বের হয়ে বাস ধরবো। যাব ধানমন্ডি। তুমি এলে একসাথে ফিরবো। সঙ্গে আমার জানটুশ থাকবে। ওকে বলেছি তোমার কথা।

মতিঝিল থেকে রওনা দিলাম সাড়ে তিনটায়। বনানী পৌঁছুতেই পৌণে পাঁচটা। রাস্তায় ভীষণ ট্রাফিক জ্যাম। সময় যা দেখলাম তাতে পাঁচটার মধ্যে উত্তরা পৌঁছানো কোনভাবেই সম্ভব নয়। মতিঝিল থেকে রওনা হবার পর পথে মোবাইলে প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর কথা হতে থাকলো। অবশেষে বনানী পৌঁছে সিদ্ধান্ত নিলাম উত্তরা যাব না। কাকলী থেকেই বাসে উঠে ওর সঙ্গী হবো। এর মধ্যেই জেনে নিলাম বারান্দালী কোন বাসে উঠেছে। পার্ল সিটিতে উঠেছে। উত্তরা-আজিমপুর বুটের বাস। সঙ্গে ওর জানটুশ আছে। আমি কাকলী বাস ষ্ট্যান্ডে অপো করতে থাকলাম নির্দ্দিষ্ট ঐ বাসটার জন্য।

বারান্দালী মিস কল দিয়ে জানান দিল বাস কাকলীর কাছাকাছি। আমিও প্রস্তুত। বাস এলো। আমি বাসে উঠলাম। এদিক ওদিক তাকিয়ে আমার বারান্দালীকে খুঁজতে লাগলাম। আগে কখনও চাক্ষুস দেখিনি ওকে। ছবিতে যতটুকু দেখেছি তাতে মুখের সামান্য অংশবিশেষ মাত্র। তাই চিনতে একটু কষ্ট হবারই কথা। বাসের মাঝামাঝি সিট থেকে ডাগর ডাগর চোখে একটা ফর্সা মেয়ে আমাকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিল। ভাবলাম এটাই হবে আমার বারান্দালী। পাশে যেয়ে হাই বলে বসতে যাব এমন সময় আরও পিছন দিকের সিট থেকে অন্য এক চশমা পড়া মেয়ে এবং তার পাশে বসা একটা ছেলে আমাকে ইশারা করছে- আরে এদিকে আসুন, আমরা এখানে। ভাগ্যিস ঐ অপরিচিতা মেয়েটার পাশে বসিনি বা হাত ধরিনি। নইলে কপালে কী জুটতো খোদা মালুম। যাই হোক পরে বুঝলাম আমাকে যারা ডাকছে তাদেরই একজন আমার ব্লগের সেই বারান্দালী। আর সাথের ছেলেটা তার জানটুশ। ছেলেটাকে নাম জিজ্ঞেস করতে বললো, শাকিল। গায়ের রং শ্যামলা, মাঝারী গড়ন। দেখতে ভালই।

আমি তাদের পাশের সিটে বসলাম। বাসে ভীড় ছিল তবে দাঁড়িয়ে কোন যাত্রী ছিল না। আমার জোকার মার্কা চেহারা, রবিউল গোছের কেলানী, হাসমত টাইপের গড়ন আর দিলদারের মত বাচ্চাসুলভ ভাবভঙ্গি দেখে আমার বারান্দালীর টাসকি খাবার উপক্রম। তার সাথের বয় ফ্রেন্ডও কয়েক ঢোক আলগা হাসি গিলে আর অযাচিত বিষম তুলে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়েছে।

এরপর শুরু হলো বাসে নানা ধরণের কথাবার্তা, হাসি, ঠাট্টা আর চটুল সংলাপের ফুলঝুরি। হাসতে হাসতে সবার দুপুরের লাঞ্চ পুরো দস্তুর হজম। এখন কিছু খাওয়া দরকার। সিদ্ধান্ত নিলাম নামবো যেয়ে বসুন্ধরা সিটির সামনে। ওখানে যেয়ে কিছু খাব। তাই বাস থেকে নেমে সোজা উঠে গেলাম বসুন্ধরা সিটির লিফটে। অষ্টম তলায় ফুড কোর্টের এক চিপা গলিতে যেয়ে বসলাম তিন জনে। অর্ডার দিলাম দই ফুচকা আর ছোলা কারি সাথে কিং সাইজের ডোবা তেলে ভাজা লুচি।

হঠাৎ আমার আনিকার কথা মনে হলো। ভাবলাম ও থাকলে জমবে ভালো। ওর মাধ্যমেইতো বারান্দালীর সাথে যোগাযোগ। বারান্দালীকে বললাম যেখানেই থাকুক ওকে ডেকে আনো। আনিকা বেচারা তখন সামহোয়ারইন-এ সবে মাত্র একটা ইন্টারভিউ শেষ করে বাড়ী ফিরবে। ঠিক ঐ সময় বারান্দালীর কল। ওকে ফোনে জরুরী ভিত্তিতে আসতে বললো বসুন্ধরা সিটিতে। ওর জন্য বিরাট একটা সারপ্রাইজ অপো করছে যা শেয়ার না করলেই নয়। না এলে সে দারুন কিছু একটা মিস করবে। এমন পাম্পপট্টি মারলে কেউ না এসে পারে? ব্যস আর যায় কই! আনিকা তাড়াহুড়া করে পড়ি কি মরি করে একটা সিএনজি ধরে ছুটে আসলো বসুন্ধরা সিটিতে। বারান্দালীর জানটুশ শাকিল গেল আনিকাকে আনতে সোজা নীচে। আমিও সুযোগ পেলাম আমার বারান্দালীর সাথে একা একা কথা বলার। এই অল্প সময়ের মধ্যে আমার সাথে বারান্দালীর স্টান্ট রাধা-কৃষ্ণ টাইপের কিছু প্রেমলীলা ও আন্তরিকতা অনেকটা ঘনীভূত হলো (শাকিল আর আনিকা তোমরা অন্যদিকে চোখ ফেরাও)।

আনিকা আসার পর আরেক দফা ফুচকার অর্ডার (শুধুই আনিকার জন্য) দেয়া হলো। আমার পেটে তখন ট্যাবলেট খাবারও জায়গা নেই। তবুও আনিকার পীড়াপীড়িতে একটু খেলাম। খেতাম না যদি আনিকা আমাকে অমন আদর করে মুখে তুলে খাইয়ে না দিত (ইথার তুমি মাইন্ড খাইও না, চাপা হইলেও হইতে পারে)। আনিকা জোড় করে সাধলে আরও একটু খেতাম। এরই মাঝখানে কিছু ছবি তোলা হলো অবশ্যই শর্ত সাপে।ে যেন এই ছবিগুলো কোনভাবেই ব্লগে প্রকাশ না পায়। লোকে কত কী ভাবতে পারে। আমিও ওয়াদা করলাম। ছবি প্রকাশ হবে না। আমি অতটা মন্দ লোক নই।

যাই হোক আমার আবার পেটে কথা থাকে না। সবাই বলে পেট পাতলা মানুষ। সব কথা আপনাদের বলে দিলাম। আল্লাহ্ মালুম আমার কপালে কী আছে। আমার মত পিচ্চি পোলা ইথারের ছ্থফুটি পাঞ্চ, শাকিলের কিল, আনিকার সুমো রেসলার মার্কা শরীরের চাপ, বারান্দালীর চোখা হিলের খোঁচা- এতসব নানা স্টাইলের মাইর সইতে পারবো কী না সেই চিন্তায় অস্থির। আতঙ্কে ও দুর্ভাবনায় আমার রাতের ঘুম হারাম। কই যাই সেটাই ভাবছি।

বসুন্ধরা সিটি থেকে বের হয়ে আমরা ফোর স্টুজেস যার যার ব্যাকইয়ার্ডে ফিরে যেতে ইচ্ছুক। কিন্তু কোন গাড়ী পাইনা। সবাই মিলে একসাথে চাপাচাপি করে পৌরসভার এক ভাড়া গাড়ীতে উঠে বসলাম ৬০ টাকার অলিখিত চুক্তিতে। গাড়ীচালককে বললাম যেভাবেই পারেন ভাই এই বেকার, আধাবেকার, কর্মজীবি ও পরজীবি হিউম্যান গারবেজগুলোকে অতিসত্ত্বর বাড়ীর নিকটবর্তী কোথাও ডিসপোজ করার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু মাঝ রাস্তায় বাদ সাধলো এই হিউমাল গাড়ী। যান্ত্রিক গোলযোগ নয় যানজটের কারণে আমাদের আর নিয়ে যেতে পারবে না। আর যদি যেতে হয় তবে রোজার দিন না হলেও সেহেরীর সময় বাড়ী পৌঁছুতে হবে। গাড়ী ধানমন্ডি ব্রীজের মাঝখানে ইফতারী খেতে বসে গেল। নড়েও না চড়েও না।

গাড়ীর ভেতরে আমাদের কথা তখন চলতেই ছিল, চলতেই ছিল। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম আনিকার আম্মার মর্নিং ওয়াকে যাবার সৎ অভ্যাসের কথা। আর সেখানেই ঘটলো এক মজার অসৎ ঘটনা। ভোরের বিশুদ্ধ বাতাসে অনেক কষ্টে দীর্ঘ এক লম্বা শ্বাস নিয়ে এক বয়স্ক (অন্যমনষ্ক নয়) ভদ্রলোক আনিকার আম্মাকে প্রেম নিবেদন করে বসেছিল। এরপর থেকে আনিকার আম্মার আর মর্নিং ওয়াকে যায় না বরং বারান্দায় বসে মানুষ ওয়াচ করে। আর আনিকার কানের কাছে ওয়াজ করে খবরদার সকালে জগিং-এ যাবি না।

যাই হোক শীতের রাতে এমন ঠান্ডায় ধানমন্ডি লেকে সাঁতার কাটার কোন অবস্থা আমাদের ছিল না। সাথে সুইমিং কষ্টিউমও কারো ছিল না। তাই নেমে পড়লাম আমাদের বয়ে আনা গাড়ী থেকে। চারজনে মিলে হাঁটতে শুরু করলাম। আমি আনিকার আম্মার সাথে না হলেও আনিকার সাথে বেশ খানিকটা জগিং করলাম। আমার মনে হলো আনিকার ব্ল্ল্লগিং বেশী না করে জগিংটাই বেশী করা দরকার। বেশ কিছুদূর হাঁটার পর আমরা কান্ত এক নাবিকদল স্বপ্নের দারুচিনি দ্বীপের শান্ত শ্যামল ছায়ায় পৌঁছানোর জন্য যার যার মত ডিঙ্গি নয় রিক্সা নিলাম। রওনা হলাম নিজ নিজ গন্তব্যে। বেশ সুন্দর একটা স্বর্নালী সন্ধ্যা যে কীভাবে কেটে গেল টেরই পেলাম না। এব রেশ হয়তো কাটতে সময় লাগবে, তাই অপোয় থাকবো আরও একটা স্বপ্নিল বিকেলের।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০০৬ রাত ৩:৪৬
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×