somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডা. জাকির নায়েকঃ ভ্রান্ত নাকি সহীহ

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডা. জাকির নায়েক : দারুল উলূম দেওবন্দের ফতোয়া

মূল : যয়নুল ইসলাম কাসেমী ইলাহাবাদী

নায়েবে মুফতি দারুল উলূম দেওবন্দ



অনুবাদ : মুফতি তাউহীদুল ইসলাম

উস্তাদ দারুল ইফতা

জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া

সাত মসজিদ মুহাম্মদপুর,ঢাকা



ডা. জাকির নায়েকের বয়ানসমূহে বিশুদ্ধ আকীদা থেকে বিচ্যুতি, কুরআনে কারীমের তাফসির বিকৃতি ও মনগড়া ব্যাখ্যা এবং সাইন্সের গবেষণা দ্বারা প্রভাবিত হওয়া ইসলামবিরোধী পাশ্চাত্যের চিন্তা-চেতনার সাথে সম্পর্ক এবং ফিকহী মাসায়েলে সালফে সালেহীন ও জুমহুরের পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার মতো বিভ্রান্তকারী বিষয়াদি পাওয়া যায়।

এছাড়া তিনি মুসলিম উম্মাহকে আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের ইত্তিবা থেকে ফেরানো, দীনী মাদরাসা সমূহের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করা এবং হক্কানী উলামায়ে কেরামের ব্যাপারে জনসাধারণকে কুধারণার বশীভূত করাতে লিপ্ত। নিচে তার বিভ্রান্তকারী বিষয়াদির কিছু দৃষ্টান্ত দেয়া হলো-



১. আকীদা (যা অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয় যাতে সামান্য বিচ্যুতি অনেক সময় ঈমানের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়)

এ সম্পর্কে ডা. সাহেবের কিছু কথা-



ক. আল্লাহ তায়ালাকে বিষ্ণু ও ব্রহ্ম নামে ডাকা বৈধ।



ডা. সাহেব একটি প্রোগ্রামে বলেন- ‘আল্লাহ তায়ালাকে হিন্দুদের

উপাস্যদের নামে ডাকা বৈধ, যেমন বিষ্ণু ‘রব’ এবং ব্রহ্ম ‘সৃষ্টিকর্তা’ তবে শর্ত হলো বিষ্ণুর ব্যাপারে এই বিশ্বাস রাখতে পারবে না যে তার চারহাত আছে যে পাখির ওপর আরোহণ করে আছে।’

[ইসলাম আউর আলমী উখুওয়াত-৩৩ ডা. জাকির নায়েক]

অথচ অনারবি ভাষায় ঐ সকল শব্দাবলী দিয়েই কেবল ডাকা বৈধ যা আল্লাহ তা’য়ালার জন্যই বিশেষায়িত। এগুলো ছাড়া অন্যকোনো নামে ডাকা বৈধ নয়। তাহলে বিষ্ণু ও ব্রহ্ম যা হিন্দুদের প্রতীক এগুলো দিয়ে ডাকা কিভাবে বৈধ হতে পারে?



খ. আল্লাহ তায়ালার কালাম কোনটি তা পরখ করার জন্য বিজ্ঞান ও টেকনোলোজির আশ্রয় নেয়া আবশ্যক।



ডা. সাহেব একটি প্রোগ্রামে বলেন- প্রত্যেক মানুষ এটা মনে করে যে তার পবিত্র গ্রন্থই আল্লাহ তায়ালার কালাম। যদি আপনি জানতে চান যে কোনো গ্রন্থটি বাস্তবিক পক্ষেই আল্লাহর কালাম তাহলে তাকে চূড়ান্ত পরীক্ষা তথা আধুনিক বিজ্ঞান ও টেকনোলজির সাহায্য নিন। যদি তা আধুনিক বিজ্ঞান মোতাবেক হয় তাহলে মনে করুন এটা আল্লাহর কালাম।’

এই বক্তব্যটি থেকে ডা. সাহেবের বিভ্রান্তকারী ধৃষ্টতা! কিতাবুল্লাহর ব্যাপারে তার চিন্তা-চেতনার পথ ভ্রষ্টতা ও আধুনিক বিজ্ঞানের ব্যাপারে আশংকাজনক পর্যায়ে প্রভাবান্বিত হওয়ার ঠিকানা পাওয়া যায়। কেননা তিনি প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তনশীল বৈজ্ঞানিক গবেষণার দিকে আসমানী কিতাবসমূহ বিশেষত; ঐশী কালাম কুরআনে কারীমের যাচাইয়ের মানদন্ড সাব্যস্ত করেছেন। অথচ আল্লাহ তায়ালার কালাম হওয়ার সবচেয়ে বড় প্রমাণ এর অলৌকিকত্ব যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন জায়গায় চ্যালেঞ্জ করেছেন।



গ. ফতোয়া দেয়ার অধিকার যে কোনো ব্যক্তির রয়েছে।



ডা. সাহেব এক জায়গায় বলেন- প্রত্যেকের জন্য ফতোয়া প্রদান করা জায়েয। কারণ ফতোয়ার অর্থ হলো মতামত দেয়া।’

ফতোয়া দেয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুমের ভাষায় মুফতি আল্লাহ তায়ালার বিধান বর্ণনা করার ক্ষেত্রে বিশ্বজগতের প্রতিপালকের ভাষ্যকার এবং তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে দস্তখত করার দায়িত্বশীল হয়।’দেখুন [ই’লামুল মাআক্কিঈন ১/৯১]

এই ফতোয়াকে তিনি ‘মতামত দেয়ার’ মতো হালকা পাতলা শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করে শুধু নিজের জন্যই নয়; বরং প্রত্যেকের জন্য এর বৈধতা দিচ্ছেন। অথচ কুরআনে কারীমে বলা হয়েছে-

‘যদি তোমাদের জ্ঞান না থাকে তাহলে জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কর।’

নবীজি সা. এর হাদিসে উল্লেখ হয়েছে- ‘যে ব্যক্তি (বিশুদ্ধ) জ্ঞান ছাড়া ফতোয়া দেয় এর গুনাহ ফতোয়া দাতার ওপর হবে।’ [আবু দাউদ হাদিস নং ৩৬৫৯৩]

তিনি এই আয়াত ও হাদিসকে একেবারেই ভুলে গেলেন।



২. তাফসীরুল কুরআনের ক্ষেত্রে মনগড়া ব্যাখ্যা অর্থাৎ অর্থগত বিকৃতি।



কুরআনে কারীমের তাফসিরের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কেননা মুফাসসিরগণ কুরআনে কারীমের আয়াত দ্বারা আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে থাকেন- যে আল্লাহ তায়ালা এই অর্থ উদ্দেশ্য নিয়েছেন। অতএব অনুপযুক্ত ব্যক্তির এই ময়দানে কদম রাখা খুবই আশংকাজনক। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে- ‘যে ব্যক্তি নিছক তার যুক্তি দিয়ে তাফসির করে সে ঘটনাক্রমে সঠিক অর্থ করে ফেললেও সে ভুলকারী সাব্যস্ত হবে।’ [তিরমিযি- হাদিস নং ২৭৭৬]

এ কারণে মুফাসসিরগণের জন্য অনেক শর্ত রয়েছে। যেমন কুরআনে কারীমে সমস্ত আয়াতের প্রতি গভীর দৃষ্টি, হাদিসের ভান্ডারের ব্যাপারে গভীরজ্ঞান আরবি ভাষা ও ব্যকরণ যথা- নাহু, সরফ, ইশতিকাক, ফাসাহাত­-বালাগাত ইত্যাদির ওপর ভালো পান্ডিত্য থাকা ইত্যাদি। যতোদূর জানা যায়, ডা. সাহেবের মধ্যে উল্লেখিত শর্তাবলীর অনেকগুলোই আবশ্যকীয় পর্যায়ে নেই। তিনি আরবি ভাষা ও ব্যাকরণ সমন্ধে যথাযথ অবগত নন। হাদিসের ভান্ডারের ওপর তার গভীর দৃষ্টি নেই। অনুরূপ ফাসাহাত- বালাগাতেও তার নেই তেমন জ্ঞান। (নিম্নে দৃষ্টান্তগুলোতে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে) বরং তাফসীরের ক্ষেত্রে তার মধ্যে গোমরাহীর অনেক কারণ রয়েছে যথা -

নবীজি সা. সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের তাফসির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া। যুগের ধ্যান ধারণা দ্বারা প্রভাবিত কুরআনে কারীমের বিষয়কে ভুল বুঝা ইত্যাদি ডা. সাহেবের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান। এজন্যই তিনি বেশ কিছু আয়াত নিয়ে তার অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। নিচে তার কিছু নমুনা লক্ষ্য করুন-



ক. কুরআনে কারীমের আয়াত-

{الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ} [النساء: ৩৪]

‘আররিজালু কাওয়ামুনা আলান্নিসা’



এই আয়াতের তাফসীরে ডা. সাহেব বলেন- লোকেরা বলে قَوَّامُونَ ‘কাওয়ামুন’ শব্দটির অর্থ একস্তর উঁচু মর্যাদা। অথচ মূলত : এই শব্দটি اقامة‘ইকামাতুন’ থেকে উদ্ভুত হয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে দন্ডায়মান হওয়া তাই এর উদ্দেশ্য হচ্ছে দায়িত্বের দিক দিয়ে উঁচু মর্যাদার দিক দিয়ে নয়। [ খুতুবাতে জাকির নায়েক : ২৯০]

ডাক্তার সাহেব পাশ্চাত্যের সমতার ধ্যান ধারণার স্বপক্ষে কুরআনের আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা করে পুরুষদের এক স্তর মর্যাদাকে নাকচ করে দিলেন অথচ উম্মাহর বড় বড় মুফাসিসরগণ মর্যাদার দিক দিয়ে উঁচু হওয়ার অর্থ ব্যক্ত করেছেন। যেমন ইবনে কাসীরে লিখেছেন- পুরুষের অবস্থান তার স্ত্রীর সামনে শাসক ও সরদারের মতো। প্রয়োজন হলে স্বামী-স্ত্রীকে সমুচীন শাস্তিও দিতে পারে। অনুরূপ

{ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ } [البقرة: ২২৮]

‘লিররিজালি আলাইহিন্না দারাজাহ’

এই আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসির লিখেছেন- ‘স্বামী স্ত্রী থেকে মর্যাদা, সম্মান ও আনুগত্য ইত্যাদির ক্ষেত্রে এক স্তর ওপরে’ অনুরূপ ডা. সাহেবের তাফসিরটি নবীজি রা. এর হাদিসের পরিপন্থি। হাদিসটি হলো- নবীজি সা. বলেন- ‘আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কারো জন্য সেজদা বৈধ হলে আমি নারীদেরকে নির্দেশ দিতাম তারা যেনো তাদের স্বামীদের সেজদা করে।’ [আবু দাউদ ২১৪০]

কেননা যদি উভয়ের মর্যাদা এক হতো এবং স্বামীর জন্য স্ত্রীর ওপর কোনো প্রাধান্য না থাকতো তাহলে নবীজি সা. নারীদের তাদের স্বামীদের চূড়ান্ত সম্মানের প্রতীক সেজদা করার নির্দেশ দেয়ার উপক্রম কেন হলেন?



খ. ডা. সাহেবকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো। কুরআনে কারীমের মধ্যে আছে। কোনো মায়ের জরায়ুতে বিদ্যমান বাচ্চার লিঙ্গ কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন। অথচ বর্তমান বিজ্ঞান যথেষ্ট উন্নতি করেছে। এখন আমরা অতি সহজেই আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে ভ্রুণ নির্ধারণ করতে সক্ষম। তাহলে এই আয়াতটি কি মেডিকেল সাইন্সের পরিপন্থি নয়। এর জবাবে তিনি বলেন, একথা ঠিক যে কুরআনের এই আয়াতের বিভিন্ন অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে কেবল মাত্র আল্লাহই জানেন যে মায়ের জরায়ুতে বিদ্যমান বাচ্চার লিঙ্গ কি? কিন্তু এই আয়াতের আরবি টেক্সটটি পাঠ করুন সেখানে সেক্স [লিঙ্গের] কোনো আরবি বিকল্প শব্দ ব্যবহৃত হয়নি। মূলত: কুরআন যা বলছে তা হলো- জরায়ুতে কি আছে? এর জ্ঞান কেবল মাত্র আল্লাহ তায়ালার রয়েছে। অনেক মুফাসসির ভুল বুঝে বসেছেন, তারা এর অর্থ এই করেছেন যে কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালাই মায়ের পেটে বাচ্চার লিঙ্গ সমন্ধে জানেন। এটা ঠিক নয়। এই আয়াত ভ্রণের লিঙ্গের দিকে ইঙ্গিত করছে না এবং এর ইঙ্গিত এই দিকে যে মায়ের পেটে বিদ্যমান বাচ্চার স্বভাব কেমন হবে? সে তার মা বাবার জন্য রহমতের কারণ হবে? না আজাবের কারণ হবে? ইত্যাদি।

[ইসলাম পর চালিস এ'তেরাযাত : [১৩০]



ডা. সাহেব বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রভাবিত হয়ে এ আয়াত থেকে আপাত দৃষ্টিতে সৃষ্ট প্রশ্ন থেকে বাঁচার জন্য কুরআনের অন্যান্য আয়াত এবং সাহাবা ও তাবেঈন থেকে বর্ণিত তাফসীরকে পৃষ্ঠদেশে নিক্ষেপ করে একটি প্রসিদ্ধ অর্থকে অস্বীকার করে বসেছেন এবং বড় বড় মুফাসসিরগনের ওপর দোষারূপ ও তাদের তাফসিরকে ভুল সাব্যস্ত করেছেন। ডা. সাহেব যে অর্থ উল্লেখ করেছেন তা ‘মা’ ইসমে মাউসূল-এর ব্যাপকতায় তো আসতে পারে এবং অনেক মুফাসসিরগণ প্রথম অর্থের মধ্যে এই অর্থও উল্লেখ করেছেন। কিন্তু অপর অর্থকে অস্বীকার করা একেবারেই ঠিক নয়। বরং এটা ডা. সাহেবের খেয়ালিপনা এবং তাফসীরের ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনের উক্তি থেকে বিমুখ হওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ। কেননা ডা. সাহেব যেই অর্থকে নাকচ করে দিয়েছেন তার দিকেই ইঙ্গিত করছে সূরা রা’আদের এই আয়াত- ‘আল্লাহ জানেন প্রত্যেক নারী যা গর্ভধারণ করে এবং গর্ভাশয়ে যা সংকুচিত হয় ও বর্ধিত হয়।

[রা’আদ ৮]

এছাড়া প্রখ্যাত তাবেঈ ও তাফসীরের ইমাম হযরত কাতাদাহ রহ. থেকে এই অর্থই বর্ণিত আছে। যেমন : হযরত কাতাদাহ রহ. বলেন- ‘মায়ের গর্ভাশয়ে ভ্রণ পুরুষ না নারী এর নিশ্চিত জ্ঞান আল্লাহ তা’য়ালা ছাড়া আর কারো নেই। অনুরূপভাবে ইবনে কাসির তার তাফসিরে ৬/৩৫৫ এবং আল্লামা নাসাফী তাফসিরে মাদারেকে ৩/১১৬ ও ইমাম শওকানী ফতহুল কাদির ৫/৪৯৮ এ উল্লেখিত আয়াতের এই অর্থই বর্ণনা করেছেন। অথচ ডা. সাহেব এসকল বড় বড় মুফাসিসরগণের বর্ণনাকে ভুল সাব্যস্ত করে নিজের বর্ণনা করা অর্থটিকে নিশ্চিত সঠিক সাব্যস্ত করায় অটল রয়েছেন।

সঠিক জবাব : আয়াতে কারীমার উদ্দেশ্য আল্লাহ তায়ালার জন্য ইলমে গায়েব প্রমাণ করা আর ইলমে গায়েব মূলত ঐ নিশ্চিত ইলমকে বলে যা বাহ্যিক কোনো কারণ ছাড়া কোনো যন্ত্রের মাধ্যম ব্যতিত অর্জিত হয়। আর চিকিৎসকদের ইলম শতভাগ নিশ্চিতও নয় এবং মাধ্যমহীনও নয়; বরং নিছক প্রবল ধারণা প্রসূত এবং যন্ত্রের মাধ্যমে অর্জিত হয়। তাই আল্ট্রাসনোগ্রাফি দ্বারা অর্জিত ধারণা প্রসূত ইলম দ্বারা কুরআনের আয়াতের ওপর কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হবে না।



গ. ইরশাদ হচ্ছে, হে নবী! ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে এ মর্মে বাইয়াত করে যে তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না।



[সূরা মুমতাহেনা ১২]

ডা. সাহেব এই আয়াতের তাফসিরে বলেন-‘এখানে বাইয়াত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আর বাইয়াত শব্দে আমাদের আজ কালের ইলেকশনের অর্থও শামিল আছে। কেননা নবীজি সা. আল্লাহ তা’য়ালার রাসূলও ছিলেন সেই সাথে রাষ্ট্রপতিও ছিলেন। আর বাইয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য তাকে সরকার প্রধান হিসেবে মেনে নেয়া ছিল। ইসলাম সেই যুগে নারীদের ভোট দেয়ার অধিকার অর্পণ করেছিল। [ডা. জাকির নায়েক, ইসলাম মেঁ খাওয়াতীনকে হুকুম : [৫ পৃষ্ঠা]

এখানেও ডা. সাহেব আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করে নারীদের জন্য ভোট দেয়ার অধিকার প্রমাণ করতে চাচ্ছেন যে নারীদের নবীজি সা. এর দরবারে এসে বাইয়াত করা বর্তমান যুগের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ারই একটি প্রাচীন পদ্ধতি। অথচ গণতন্ত্রের বাস্তবতা সম্পর্কে যারা অবগত তারা খুব ভালোভাবেই বুঝতে সক্ষম যে ডা. সাহেবের এই ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ বাস্তবতা পরিপন্থী এবং কুরআনের তাফসিরে নিজের জ্ঞানের অযথা ব্যবহার। কারণ বর্তমান গণতন্ত্র মোতাবেক সবার এখতিয়ার থাকে যে তারা প্রধান নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজেদের রায় দিবে। যদি কারো ব্যাপারে সংখ্যাধিক্য ও মতাধিক্য না থাকে তাহলে সে প্রধান হতে পারে না। যদি নবীজি সা. এর বাইয়াত নেয়া ভোট নেয়া হতো তাহলে ঐ সকল নারী সাহাবীদের নবীজি সা. এর নেতৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করার এখতিয়ার থাকতো।



ঘ. ইরশাদ হচ্ছে, হে হারূনের বোন তোমার পিতা মন্দ লোক ছিলেন না এবং তোমার মা ব্যভিচারি ছিলেন না’ [সূরা মারয়াম : ২৮]



সূরা মারয়ামের এই আয়াতটি না বুঝার কারণে একটি প্রসিদ্ধ প্রশ্ন তোলা হয় যে- ‘হযরত মরিয়ম আ. হযরত হারূন আ. এর বোন ছিলেন না এবং উভয়ের যুগের মাঝে এক হাজার বছরের ব্যবধান।’

এই প্রশ্নের জবাবে ডা. সাহেব বলেন- খ্রিস্টানরা বলে থাকে যে হযরত মুহাম্মদ সা. যিশুর মা ‘মেরী’ মারয়াম এবং হারূনের বোন মারয়ামের মধ্যে পার্থক্য জানা ছিলো না। অথচ আরবিতে উখতুন এর অর্থ আওলাদ (সন্তান)ও আছে। এ কারণে লোকেরা মারয়ামকে বললো হে হারূনের সন্তান এবং এর দ্বারা মূলত হারুণ আ. এর সন্তানই উদ্দেশ্য।

ডা. সাহেবের হাদিস ও লুগাত সমন্ধে অজ্ঞতার ওপর প্রতিষ্ঠিত এই গবেষণার বিশ্লেষণ স্বরূপ মুসলিম শরিফের হাদিসই যথেষ্ঠ। সহিহ মুসলিমে আছে- হযরত মুগীরা ইবনে শো’বা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- ‘যখন আমি নাজরানে গেলাম তো লোকেরা আমাকে প্রশ্ন করলো তোমরা ‘ইয়া উখতা হারূন’ পাঠ করে থাক অথচ মুসা আ. ঈসা আ. থেকে এতো এতো বছর পূর্বে। পরে যখন আমি নবীজি সা. কাছে এলাম তাকে এ সমন্ধে জিজ্ঞেস করলাম, তখন তিনি উত্তরে বললেন- ‘তারা তাদের পূর্ববর্তি নবী ও নেককারদের নামে নিজেদের নাম রাখতো।

[হাদিস নং ৫৭২১]

নবীজি সা. এই আয়াতের ব্যাখ্যা আজ থেকে চৌদ্দশত বৎসর পূর্বেই করেছেন যার ‘সারাংশ হলো হযরত ঈসা আ. এর মা হযরত মারয়াম হযরত মুসা আ. এর ভাই হারূন আ. এর বোন ছিলো না; বরং হযরত ঈসা আ. এর মায়ের ভাইয়ের নামও হারূন ছিলো এবং তারা নিজেদের নবী ও মাকবুল ব্যক্তিত্বের নামে নিজেদের নাম রাখতো। এতে বুঝা গেলো এটা কোনো নতুন প্রশ্নও নয় এবং নিজের পক্ষ থেকে কোনো জবাব বানানোরও কোনো প্রয়োজন নেই।

ডা. সাহেবের তাফসিরসংক্রান্ত হাদিস সমূহের ব্যাপারে কেমন অজ্ঞতা যে হাদিস ও তাফসিরের ভান্ডার থেকে বাস্তবতা পর্যন্ত পৌঁছার চেষ্ট না করে মনগড়া ব্যাখ্যা করছেন।



ঙ. ইরশাদা হচ্ছে-

{ وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا} [النازعات: ৩০]

‘ওয়াল আরদ্বা বা’দা যালিকা দাহা-হা’

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ডা. জাকির নায়েক সাহেব বলেন-‘এখানে دَحَاهَا দাহা-হা শব্দটি ডিমের অর্থে ব্যবহৃত আরবি শব্দ। যার অর্থ উট পাখির ডিম। উট পাখির ডিম পৃথিবীর আকৃতির সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে। অথচ যখন কুরআন নাযিল হয় তখন ধারণা করা হতো পৃথিবী চেপ্টা।’

[খুতুবাতে জাকির নায়েক কুরআন এবং বর্তমান সাইন্স :/৭৩-৭৪]

কুরআনে কারীমের বিষয়বস্ত্ত হলো- তাওহীদ এবং রেসালত প্রাকৃতিক বিষয়াদির আলোচনা প্রাসঙ্গিকভাবে আছে। ব্যাপারটি না বুঝা এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে ডা. সাহেব পৃথিবীর আকৃতির ব্যাখ্যা করতে যেয়ে আয়াত দিয়ে ভুল পদ্ধতিতে প্রমাণ দিচ্ছেন। এবং আয়াতের মনগড়া ব্যাখা করেছেন। ‘দাহবুন’ শব্দ ও দাল, হা. ওয়াও এর মাদ্দাটি আরবিতে ছড়ানো এবং ছড়িয়ে যাওয়ার অর্থ বুঝায়। সে মোতাবেক ‘দাহা-হা’ -এর ব্যাখ্যা ও অনুবাদ হলো পৃথিবীকে ছড়ানো এবং বড়



৩। হাদিস সম্পর্কে অজ্ঞতা :



হাদিসের ভান্ডারের ব্যাপারে অজ্ঞতার কারণে ডা. সাহেব অনেক স্থানে সহীত হাদিসের পরিপন্থি মাসায়েল বলেছেন- এমনকি অনেক জায়গায় কোনো মাসআলায় একাধিক হাদিস থাকা সত্ত্বেও বলে ফেলেছেন যে এ ব্যাপারে কোনো দলীল নেই। নিম্নে ডা. সাহেবের হাদিসের ব্যাপারে অজ্ঞতা, অথবা জেনে বুঝে না দেখার ভান করার কিছু নমুনা উল্লেখ করছি



ক. নারীদের জন্য হায়েজ অবস্থায় কুরআন পাঠ করার বৈধতা :



এক আলোচনায় নারীদের বিশেষ দিন সম্পর্কে ডা. সাহেব বলেন-‘কুরআন ও হাদিসে নামাজের ব্যাপারে ছাড় দেয়া আছে। তবে কোনো হাদিসে এ কথা নেই যে কুরআন পড়তে পারবে না।’

অথচ তিরমিজি শরিফে স্পষ্ট হাদিস- ‘ঋতুবর্তি ও জুনুবি কুরআনের কিছু পাঠ করবে না।’ [হাদিস নং ১৩১]

এখন চিন্তুা করুন ডা. সাহেব সহীহ ও স্পষ্ট হাদিস থাকা সত্ত্বেও সবজান্তা হওয়ার দাবি করে এটাকে অস্বীকার করে দিলেন।



খ. রক্ত বের হলে অজু ভাঙ্গার ব্যাপারে হানাফিদের কোনো দলীল নেই।



ডা. সাহেব একটি বক্ততৃায় রক্ত বের হলে অজু ভাঙ্গা ও না ভাঙ্গার বিষয়ে কথা বলতে যেয়ে বলেন- ‘ কোনো কোনো আলেম বিশেষ করে হানাফি মাযহাবের সাথে সম্পৃক্ত উলামায়ে কেরামের ধারণা মতে রক্ত বেয়ে পড়লে অজু ভেঙ্গে যায়। নামাজের মধ্যে রক্ত বেয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কার কি করা উচিত এই প্রশ্নের জবাবে তাদের (হানাফিদের) ফতোয়া অনেক লম্বা। তবে তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থনে বাহ্যিকভাবে কোনো প্রমাণ নেই।’

[হাকিকতে জাকির নায়েক : ২১৪]

এখানে ডা. সাহেব হানাফি মাযহাবের সাথে সম্পৃক্ত উলামায়ে কেরামের ওপর অভিযোগ দিচ্ছেন যে তারা প্রমাণ ছাড়াই অজু ভাঙ্গার কথা বলেন- অথচ রক্ত বের হলে অজু ভাঙ্গাসংক্রান্ত অনেক হাদিস বর্ণিত আছে। তাছাড়া সাহাবায়ে কেরামের আমলও এর উপর ছিলো। নিম্নে কিছু উদ্বৃতি দিচ্ছি- হযরত আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- ফাতিমা বিনতে আবু হুবাইশ রা. নবী কারীম সা. এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার এতো বেশি রক্তস্রাব হয় যে, আর পবিত্র হইনা। এমতাবস্থায় আমি কি সালাত ছেড়ে দেবো? রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করলেন- না, এতো ধমনি নির্গত রক্ত, হায়েয নয়। তাই যখন তোমার হায়েয আসবে তখন সালাত ছেড়ে দিও। আর যখন তা বন্ধ হবে তখন রক্ত ধুয়ে ফেলবে, তারপর সালাত আদায় করবে। হিশাম বলেন, আমার পিতা বলেছেন, তারপর এভাবে আরেক হায়েয না আসা পর্যন্ত প্রত্যেক সালাতের জন্য উযু করবে। [বুখারি ২২৮]

অপর হাদিসে এসেছে- ‘নামাজের মধ্যে যদি কারো নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে তাহলে তার কর্তব্য হচ্ছে রক্ত ধুয়ে নিবে এবং অজু দুহরিয়ে নিবে। [দারেকুতনী হাদিস নং ১৭/১৮/১৯]

অপর হাদিসে এসেছে- ‘রক্ত গড়িয়ে পড়লে অজু আবশ্যক হয়ে যায়।’ [নসবুর রায়াহ ১/৩৭]

এগুলো এবং এগুলো ছাড়াও আরো অনেক রেওয়াত থাকা সত্ত্বেও ডা. সাহেব নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ না করে উল্টো মুজতাহিদ সুলভ দাবি করে বসলেন যে বাহ্যিকভাবে রক্তের কারণে অজু ভাঙ্গার ওপর কোনো প্রমাণ নেই।



গ. পুরুষ ও নারীর নামাজে পার্থক্য করা বৈধ নয়



অন্য এক জায়গায় ডা. জাকির নায়েক সাহেব পুরুষ ও নারীর নামাজের মধ্যে পার্থক সম্পর্কে বলেন- ‘ কোথাও একটিও সহীহ হাদিস পাওয়া যায় না যাতে নারীদের জন্য পুরুষদের থেকে আলাদা পদ্ধিতিতে নামাজ আদায়ের নির্দেশ আছে, বরং তদস্থলে সহীহ বুখারির রেওয়াতে আছে হযরত উম্মে দারদা রা. বর্ণনা করেন আত্তাহিয়্যাতুর মধ্যে নারীদের পুরুষদের মতোই বসার নির্দেশ রয়েছে।

এখানে ডা. সাহেব দুটি বিষয় একেবারেই ভুল বলেছেন- এক. নামাজের ক্ষেত্রে পুরুষ নারীর মাঝে পার্থক্যসংক্রান্ত কোনো হাদিস নেই।



দুই. নবীজি সা. নারীদের পুরুষদের মতো বসার নির্দেশ দিয়েছেন।

ডা. সাহেব প্রথম কথাটি বলে ঐ সকল হাদিস অস্বীকার করে দিয়েছেন যার মধ্যে পুরুষ ও নারীর নামাজের পার্থক্য উল্লেখ আছে। নিম্নে এমন কিছু রেওয়াত উল্লেখ করছি-

নবীজি সা. ইরশাদ করেন- ‘তোমাদের কি হয়েছে, সালাতে কোনো ব্যাপার ঘটলে তোমরা হাততালী দিতে থাকো কেন? হাততালি তো মেয়েদের জন্য।’

[বুখারি ১/১৭৪]

হযরত ওয়াইল ইবনে হজর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমাকে নবীজি সা. বলেছেন- ‘ হে ওয়ায়েল ইবনে হজর! যখন সালাত আদায় করবে তখন তোমার হাতদ্বয় কান পর্যন্ত ওঠাবে এবং নারী তার হাত তার স্তন পর্যন্ত ওঠাবে।

[আল মুজামুল কাবীর ২৮]

হযরত এযিদ ইবনে আবি হাবীব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবীজি সা. এমন দু’জন নারীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, যারা নামাজ পড়ছিলো, তখন তিনি বললেন- যখন তোমরা সেজদা কর তখন শরীর জমিনের সাথে মিলিয়ে রাখবে, কেননা, নারী এক্ষেত্রে পুরুষের মতো নয়।

[বাইহাকী- ৩০১৬]

এই রেওয়ায়াতগুলোতে পুরুষ ও নারীদের নামাজের মধ্যে বিভিন্ন পার্থক্যের উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া আরোও অনেক হাদিস রয়েছে। এ বিষয়ে লিখিত গ্রন্থাবলীতে বিস্তারিত দেখা যেতে পারে। আর দ্বিতীয় কথাটি হলো- বুখারি শরিফে নারীদের পুরুষদের মতো বসার নির্দেশ সম্পর্কিত নবীজি সা. নির্দেশের ব্যাপারটিকে নবীজি সা. এর দিকে একটি ভুল সম্পৃক্তকরণ বৈ কিছু না। হযরত উম্মে দারদা রা. এর যে বর্ণনার রেফারেন্স ডা. সাহেব দিয়েছেন তার ভাষ্য হলো-

হযরত উম্মে দারদা তার সালাতে পুরুষদের মতো বসতেন এবং তিনি ফকীহ ছিলেন। [বুখারি ১/১১৪]

এখানে কোথাও নবীজি সা. এর কর্মের আলোচনা নেই; বরং এটা একজন নারী সাহাবীর আমল। যার উল্লেখ করে ইমাম এই কথারই ঈঙ্গিত দিয়ে ছিলেন যে তিনি ফকিহ ছিলেন নিজের ইজতিহাদে এমন করতেন। উপরন্তু ইমাম বুখারি হাদিসটি মুয়াল্লাক করে উল্লেখ করেছেন সনদ বলেননি।



৩। আইয়্যিম্মায়ে মুজতাহিদীনের অনুসরণ থেকে পালায়ন এবং ফেকহী মাসায়েলের ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ মত থেকে স্পষ্ট বিচ্যুতি।



ডা. জাকির নায়েক সাহেবের লিখনি ও বক্তব্যের আলোকে তাকে কোনো ইমামের অনুসারী বলে মনে হয় না। বরং তিনি স্বেচ্ছাচারিতা, প্রগতিশীলতা, মাযহাববিহীন মানুষ হিসেবে প্রতিয়মান হন। শুধু যে তিনি নির্দিষ্ট কোনো ইমামের তাকলীদ করেন না- তাই নয়; বরং তাকলীদকারী নিষ্ঠাবান জনসাধারণকে তাকলীদ না করার পন্থা অবলম্বনের শিক্ষা দেন এবং নিজের বয়ান কৃত মাসায়েলে কোথাও কোনো ইমামের কথা ও তার ইস্তিম্বাত করা হুকুম নিজের দিকে সম্পৃক্ত করে নকল করেন। আবার কোথাও নিজে মুজতাহিদ সুলভ ভঙ্গিতে মাসআলা বয়ান করতে থাকেন। অথচ তার মাসায়েল নকল করার ক্ষেত্রে ঐ নির্দিষ্ট ইমামের নাম নেয়া কর্তব্য ছিল। যিনি এই মাসআলাগুলো ইস্তিম্বাত করেছেন। যাতে করে শ্রোতাগণ এই ভুল না করে বসে কুরআন ও সুন্নাহ থেকে শুধুমাত্র এটাই প্রমাণ হয়। এছাড়া যে অন্য সকল বিষয় যার ওপর লোকেরা আমল করছে তা কুরআন ও হাদিস থেকে প্রমাণিত ও আইয়্যিম্মায়ে মুজতাহিদীনের বক্তব্য হলেও তা ভুল। নিম্নোক্ত উদাহরণসমূহ থেকে বিষয়গুলো খুব সুন্দরভাবে অনুমান করা সম্ভব।





ক. অযু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা বৈধ

ডা. সাহেব এক স্থানে বলেন- ‘অজুছাড়া কুরআনে কারীম স্পর্শ করার অনুমতি থাকা চাই। অথচ ডা. সাহেবের এই বক্তব্য কুরআনে কারীমের আয়াত-

{لَا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ} [الواقعة: ৭৯]

‘লাইয়া মাসসাহু ইল্লাল মুতাহ হারুন’ [সূরা ওয়াকিয়া ৭৯]

তাছাড়া সকল মুজতাহিদ ইমামগণের মতেরও বিরুদ্ধে।



খ. জুমার খুতবা আরবি ভাষার স্থলে স্থানীয় ভাষায় হওয়া চাই ।

একস্থানে জুমার খুতবার সম্পর্কে ডা. সাহেব বলেন- ‘আমি মনে করি আমাদের দেশে জুমার খুতবা স্থানীয়, মাতৃভাষায় দেয়ার ওপর গুরুত্ব দেয়া হোক যাতে করে …. অথচ নবীজি সা. এর যুগ থেকে আজ পর্যন্ত জুমার খুতবা আরবি ভাষায় দেয়ার ধারাবাবিহক নিয়ম চলে আসছে। আজ ডা. সাহেব এই দাওয়াত দিচ্ছে যে খুতবা স্থানীয় ভাষায় হওয়া চাই। যাতে জনগণ বুঝতে পারে। অথচ এই স্বার্থ আরবি যারা জানেনা তাদের বুঝা নবীজি সা. এর যুগেও বিদ্যমান ছিল। কারণ নবী কারীম সা. খুতবা সমূহতে অনারব ব্যক্তিবর্গও শরীক হতো। তবুও নবী কারীম সা. সর্বদা আরবিতেই খুতবা দিয়েছেন। অন্যকোনো ভাষায় খুতবা দেয়ানোর ব্যবস্থা করেননি। আর পরে এর অনুবাদও করাননি। অনুরূপভাবে সাহাবায়ে কেরাম তাবেঈন ও তাবে তাবেঈন এবং তাদের অনুসারীগণ আরব থেকে বের হয়ে ভিন্ন দেশে গিয়েছেন। প্রাচ্যে পাশ্চাত্যে ইসলাম ছড়িয়েছে। তদুপরি সকল স্থানে খুতবা সর্বদা আরবি ভাষায়ই দিয়েছেন। অথচ তাদের দ্বীনের তাবলীগের প্রয়োজন বর্তমান থেকেও বেশি ছিলো। মোট কথা খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনের ইজমামের কর্মধারা ও নিরবচ্ছিন্ন আমল এবং সমস্ত উম্মাহ ধারাবাহিক কর্ম পন্থা। একথার স্পষ্ট প্রমাণ যে খুতবা আরবি ভাষায় দেয়াই আবশ্যক। এমনকি ইমাম মালেক রহ. বলেন- জুমার নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য খুতবা আরবি ভাষায় হওয়া আবশ্যক। যদিও পূর্ণ উপস্থিতি অনারবদের হোক না কেন এবং আরবি কেউ না জানুক এবং আরবি ভাষায় খুতবা পাঠ করতে সক্ষম এমন একজনও উপস্থিত না হয়ে থাকে তাহলে সকলের জোহরের নামাজ আদায় করা আবশ্যক হবে। জুমা তাদের রহিত হয়ে যাবে।

[হাশিয়ায়ে দুসুকী আলাশ শারহিল কাবীর ১/৩৭৮]

তাছাড়া শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ. বলেন- খুতবা শুধু আরবি ভাষাই হওয়া আবশ্যক। প্রাচ্চ্য থেকে পাশ্চাত্বের সকল মুসলমানের আমল এটাই ছিল। [মুসাফফা শরহে মু’আত্ত্বা ১৫২]



গ. তিন তালাক একটি তালাকই হওয়া চাই



ডা. সাহেব বলেন- ‘তিন তালাকের জন্য এতো শর্ত রয়েছে যা পূর্ণ হওয়া সম্ভব নয়। সৌদি আরবে তিনশত ফতোয়া আছে। তাই তালাক একটিই বর্তমানের অবস্থার বিবেচনায় একটিই হওয়া চাই’।

[খুতুবাতে জাকির নায়েক : ৩৩১]

অথচ সাহাবায়ে কেরাম তাবেঈনে ইজমা, চার ইমাম, উম্মাহের সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামা এবং বর্তমান যুগের সৌদি আরবের সকল গ্রহণযোগ্য আলেমগণের কাছে এক মজলিসের তিন তালাক তিনটি তালাকই সংগঠিত হয়, একটি নয়। এ মাসআলায় পূর্ণ ইতিহাসে গ্রহণযোগ্য কোনো আলেমের মতোবিরোধ নেই। ইবনে তাইমিয়া এবং তার শাগরিদ ইবনুল কাইয়্যিম ছাড়া। কিন্তু সমগ্র জাতির যাদের মধ্যে চার ইমাম- ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলও শামিল। মুকাবিলায় এই দুইজনের মতে কিছুতেই অনুসরণযোগ্য হতে পারে না।

ডা. সাহেব এমন ঐক্যমতের বিধানের পরিপন্থি মাসআলা বলে জাতিকে পথভ্রষ্ট করছেন। এই বিধানটি কুরআনের আয়াত অসংখ্য হাদিস এবং সাবাবায়ে কেরামের কর্মপদ্ধতি থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণীত হয়।

‘হযরত নাফে বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. এর কাছে যখন ঐ ব্যক্তি সমন্ধে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হতো যে তিন তালাক দিয়ে দিয়েছে। তখন তিনি বলতেন যদি তুমি এক. দুই তালাক দিতে (তাহলে ফিরিয়ে নিতে পারতে) কেননা নবীজি সা. আমাকে এর (ফিরিয়ে নেয়ার) নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দেয় তাহলে হারাম হয়ে যাবে যতোক্ষণ না অন্য স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

অপর হাদিসে আছে- হযরত মুজাহিদ বলেন, আমি ইবনে আববাস রা. কাছে ছিলাম এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে বললো, সে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন হযরত ইবনে আববাস রা. চুপ থাকলেন। আমি মনে করলাম তিনি স্ত্রীকে ফিরিয়ে দিবেন। (রোজআতের নির্দেশ দিবেন) কিন্তু তিনি বললেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ বোকামি করে বসে অতঃপর ইবনে আববাস ইবনে আববাস বলে চিল্লাতে থাকে। শোন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- ‘ যে আল্লাহকে ভয় পায় তার জন্য রাস্তা করে দেন। তোমরা নিজেদের প্রভুর সাথে নাফরমানী করছে (তিন তালাক দিয়ে দিয়েছে) তাই তোমাদের স্ত্রী বিচ্ছেদ হয়ে গেছে।

হযরত ইমাম মালিকের কাছে এই বর্ণনা পৌঁছেছে যে এক ব্যক্তি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাসের কাছে জিজ্ঞাসা করলে। আমি আমার স্ত্রীকে এক তালাক দিয়ে দিয়েছি। আপনি এ ব্যাপারে কি বলেন? হযরত ইবনে আববাস রা. উত্তর করলেন এর মধ্য থেকে তিন তালাক তোমার স্ত্রীর ওপর পতিত হয়েছে অবশিষ্ট সাতানববই তালাকের মাধ্যমে তুমি আল্লাহ পাকের আয়াত নিয়ে খেলেছ।

আরেক হাদিসে আছে- হযরত ইমাম মালিকের কাছে এই রেওয়াত পৌঁছেছে যে এক ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের কাছে এসে বললো আমি আমার স্ত্রীকে আটটি তালাক দিয়েছি। হযরত ইবনে মাসউদ রা. জিজ্ঞাসা করলেন লোকেরা তোমাকে কি বলেছে? সে জবাব দিলো আমার স্ত্রী বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। হযরত ইবনে মাসউদ রা. বলেন ঠিক বলেছে। অর্থাৎ তিন তালাক হয়েছে।

[মুআত্ত্বা ইমাম মালেক-১৯৯]

অপর হাদিসে আছে- হযরত হাসানের বর্ণনা আমাদের হযরত ইবনে উমর রা. বলেন- যে তিনি তার স্ত্রীকে মাসিকের সময় এক তালাক দিয়ে দিয়েছিলেন। অতপর ইচ্ছা করলেন দুই তোহরে (পবিত্রতার সময়) অবশিষ্ট দুই তালাক দিয়ে দিবেন। নবীজি সা. অবগত হলেন এবং বললেন- ‘হে ইবনে উমর! এভাবে আল্লাহ তোমাকে নির্দেশ দেননি। তুমি সুন্নত তরীকার খেলাফ করেছো। সুন্নত তরীকা হলো তোহরের অপেক্ষা করবে এবং প্রতি তোহরে এক তালাক করে দিবে। এরপর নবীজি সা. আমাকে ফিরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিলেন। সেমতে আমি ফিরিয়ে নিলাম। এরপর বললেন- যখন সে পবিত্র হয়ে যাবে তখন তোমার এখতিয়ার, ইচ্ছা করলে তালাক দিয়ে দিতে পারবে আর ইচ্ছা করলে রেখেও দিতে পারবে। হযরত ইবনে উমর রা. বলেন, এরপর আমি নবীজি সা. কে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি তিন তালাক দিয়ে দিতাম তাহলে কি আমার ফিরিয়ে আনা জায়েজ হতো? নবীজি বললেন- না। সেক্ষেত্রে তোমার স্ত্রী তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো এবং তোমার এই কাজ (তিন তালাক প্রদান) গুনাহের কাজ হতো। দারেকুতনী ২/৪৩৮

আপনি লক্ষ্য করেছেন যে উল্লেখিত হাদিসসমূহে তিন তালাকের মাধ্যমে তিন তালাকই হওয়ার বিধান রয়েছে। এছাড়াও আরোও অনেক রেওয়াত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে যে- তিন তালাক তিন তালাকই হবে। এক তালাক নয়।

বি:দ্র: ডা. জাকির নায়েক তার বক্তৃতায় সৌদি আরবের তিনশত আলেমের উদ্বৃতি দিয়েছেন। তারপর নিজের মতামতও পেশ করেছেন। কিন্তু তারা কোন কোন আলেম তা উল্লেখ করেননি। অথচ সৌদি আরবে তাহকীকাতে ইলমিয়ার সম্মানীত মুফতীগণ তিন তালাক দ্বারা তিন তালাক হওয়ারই ফতোয়া দিয়েছেন। তাদের সিদ্ধান্তটি নিম্নরূপ :-

এক শব্দে তিন তালাকসংক্রান্ত বিষয়ে হাইয়াতুল বিবারিল উলামা এর সাধারণ পরিষদ থেকে পেশকৃত ও লাজনাতুদ্দায়েমা লিল বুহুস ওয়াল ইফতা থেকে প্রস্ত্ততকৃত গবেষণার ওপর অবগতি লাভ পূর্বক মাসআলাটি নিয়ে স্টাডি মতবিনিময় ও সংশ্লিষ্ট মতামতসমূহ পেশ করা এবং প্রত্যেক মতামতের ওপর আরোপিত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনার পর বোর্ডের অধিকাংশ এক শব্দের তিন তালাকে তিন তালাক পতিত হওয়ার বিষয়টিই গ্রহণ করেছেন। মাজাল্লাতুল বুহুস আল ইসলামিয়া ১ম খন্ড ৩য় সংখ্যা



১৩৯৭ হি:

ঘ. ডা. সাহেব একটি আলোচনায় বক্তৃতার সময় পরামর্শ দেন ‘ মুসলমানদের এমন পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত যেনো সমগ্র বিশ্বে একই দিন ঈদ হতে পারে।’



ডা. সাহেবের এই বক্তব্য ‘ছূমূ লিরুয়াতিহী ওয়া আফতিরুলি রুয়াতিহী’ মুসলিম-২৫৬৭

অর্থাৎ ‘চাঁদ দেখে রোজা রাখা ও চাঁদ দেখেই ইফতার করো।’ এ হাদিসটির পরিপন্থি হওয়ার সাথে সাথে সুস্থ বিবেকেরও পরিপন্থি। কেননা একই দিনে ঈদের মাসআলাটির মূলত এই ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় যে ঈদকে একটি উৎসব দেশীয় অনুষ্ঠান বা জাতীয় দিবস সাব্যস্ত করা হয়। অথচ এটা চূড়ান্ত পর্যায়ের একটি ভুল চিন্তা। কেননা আমাদের ঈদ রমজান বা মুহাররম কোন উৎসব নয়, বরং সবগুলোই ইবাদত, তাছাড়া সময় সব দেশ ও এলাকার আকাশ সীমার বিবেচনায় হওয়া একটি আবশ্যকীয় বিষয় আমরা হিন্দুস্তানে যখন আসরের নামাজ আদায় করি তখন ওয়াশিংটনে সকাল হয়। যখন হিন্দুস্তানে আমরা জোহরের নামাজ আদায় করি তখন লন্ডনে মাগরিবের নামাজ হয়ে যায়। এছাড়া এমনও হয় যে এক দেশে জুমার দিন হলে অন্যদেশে তখনো বৃহস্পতিবার, আবার কোথাও শনিবার শুরু হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালনের চিন্তা কিভাবে করা যায়?

মোটকথা এসকল সমালোচনার আলোকে বুঝা গেলো ডা. জাকির নায়েক অনেক মাসআলায় আহলে সুন্নাতওয়াল জামাআত থেকে বিচ্যুত। কুরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যায় আরবি ভাষাও পূর্বসূরিদের থেকে বর্ণিত তাফসিরসমূকে দূরে ঠেলে দিয়ে খোড়া যুক্তির মাধ্যমে তাফসির করে অর্থগত বিকৃতির শিকার। তাছাড়া তিনি (ডা. সাহেব) শরীয়তের ইলম ও এর উদ্দেশ্যাবলী সম্পর্কে গভীর জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও কোনো ইমামের তাকলীদ করেন না। বরং উল্টো তিনি মুজতাহিদ ইমামগণের সমালোচনা করেন। তাই তার কথাবার্তা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। তার প্রোগ্রাম দেখা তার বয়ান শোনা এবং তাহকীক ছাড়া তার ওপর আমল করা অত্যন্ত ক্ষতিকর। আর যেহেতু বাস্তব তাহকীক করা সব ধরনের মানুষের কাজ নয়। তাই তার প্রোগ্রাম সমূহ থেকে সাধারণ জনতার বেঁচে থাকাই আবশ্যক। তাছাড়া প্রত্যেক মুমিনের সর্বদা মনে রাখতে হবে যে দ্বীনের বিষয় যা অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়। মানুষ দীনের কথা শুনে এবং এর ওপর আমল করে শুধু আখেরাতের নাজাতের জন্য। এক্ষেত্রে শুধু মাত্র নতুন নতুন তাহকীক, ত্বরিত জবাব, রেফারেন্সের আধিক্য এবং মানুষের মাঝে বাহ্যিক গ্রহণযোগ্যতা দেখে তাহকীক ছাড়া কারো কথার ওপর কখনোই আমল করা উচিত নয়; বরং মানুষের চিন্তুা করা জরুরি যে সে ব্যক্তি দীনী ইলমের কতোটুকু যোগ্যতা রাখে। কোন কোন উস্তাদদের থেকে ইলম অর্জন করেছে। কোন পরিবেশে সে প্রতিপালিত হয়েছে। তার পোশাক-আসাক, বাহ্যিক অবস্থা অন্যান্য উলামায়ে কেরামের সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে কিনা?

তাছাড়া সমসাময়িক গ্রহণযোগ্য উলামা মাশায়েখের তার ব্যাপারে কি মতামত? এটাও দেখা জরুরি যে তার দ্বারা প্রভাবিত ও তার আশপাশে একত্র হয় এমন ব্যক্তিবর্গের মধ্যে কি পরিমাণ সহীহ দ্বীনি অনুভূতি রাখে এবং দীনি খিদমতে জড়িত গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির পরিমাণই বা কেমন? তার কাছাকাছি কিছুগ্রহণ যোগ্য ব্যক্তি থাকলে তাদের কাছে জানা প্রয়োজন যে তার ধরন কি? তারা কেন তার কাছে আছে? এমন তো নয় যে কোন ভুল ধারণার বশিভূত হয়ে বা জ্ঞানের স্বল্পতা অথবা কোন স্বার্থে কাছাকাছি দেখাচ্ছে। মোটকথা এই সকল বিষয় তাহকীক করার পর যদি নিশ্চিত হওয়া যায় তাহলেই কেবল দ্বীনি বিষয়ে তার কথা গ্রহণ ও আমলযোগ্য সাব্যস্ত হবে। নতুবা তার কাছ থেকে দূরত্ব অবলম্বন করার মধ্যেই ঈমানের নিরাপত্তা। প্রসিদ্ধ তাবেঈ মুহাম্মদ ইবনে সীরিনের বাণী- ‘দীনের কথা শোনা ও শিখার জন্য জরুরি হলো যে খুব চিন্তা করো যে কেমন লোক থেকে ইলম অর্জন করছো এবং দীন শিখছো। আল্লাহ তা’য়ালা সবাইকে সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন।

আমীন



আরবি হাওয়ালা ও বিস্তারিত দেখার জন্য নিচের লিঙ্কে মুল ফতোয়াটি দেখুন ।

http://darulifta-deoband.org/
সূত্রঃ
৩৬টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×