কৃষক লাঙ্গল চালায় মাঠে। শুকনো শক্ত মাটিতে আটকে যায় লাঙ্গলের ফলা। কৃষকের শরীর থেকে চুইয়ে পড়া ঘাম সে মাটিকে নরম করে। তাতে আবার সচল হয় লাঙ্গল। আরো ঘাম ঝরে, আরো নরম হয় মাটি।
নিজের জমি নেই কৃষকের। পরের জমিতে তার ঘাম আর রক্ত ঝলিয়ে ফসল ফলায়। ফসলের সিংহভাগ যায় জমির মালিকের ভাগেই। কৃষকের কাটে আধপেটা দিন। রাতে ছেড়া কাথার আড়ালে যখন কৃষক কৃষানী ও তাদের শিশুসন্তান ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাপলেও বিধার আরশ কেঁপে ওঠে না। বিধাতার নেকী বান্দা জোতদার খলিলুল্লার বাড়িতে নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে আঘ্রানিক আনন্দ, বিধাতা সেদিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসিতে বিভোর হয়ে আরেকটু আরামে নড়ে চড়ে বসেন তার গদীতে।
বড়ই নেকী বান্দা খলিলুল্লা। গ্রামেরই আরেক কৃষককে ভুমিহীন করে মসজিদ তৈরী করিয়েছে গ্রামে। তাদের পেটে আধবেলা জুটুক বা না জুটুক, একটি মসজিদ তো হলো সবার। খলিলুল্লা আরেকটি নেকী কাজ করেছে। চারটি বিয়ে করে সুন্নত পালন করেছে অক্ষরে অক্ষরে। চারজন বাপকে উদ্ধার করেছে কন্যাদায় থেকে। তার নেকীর সমাচার আল্লাহর আরশ ছাড়িয়ে আরো বিস্তারিত। প্রতি নির্বাচনের আগে প্রতিটি বড় বড় দল থেকে ডাক আসে তার। খলিলুল্লাও সে দলের একটিকে বেছে ক্ষমতার ঘোড়ায় টগবগে সওয়ারী হয়। এমন টগবগে সওয়ারী বান্দাকে কি বিধাতা না ভালবেসে পারেন ?
পরদিন আবার মাঠে যাওয়ার জন্যে তৈরী কৃষক। রাতে বৃষ্টি হয়েছে একপশলা। বিধাতাকে ধন্যবাদ জানায় কৃষক। আজ নরম থাকবে মাটি, ঘাম ঝরবে কম। শীর্ন হাত তুলে মোনাজাত করে কৃষক। ছেলেও বাবার দেখাদেখি হাত তোলে কিছু না বুঝেই। মা বাবার চেহারায় পরিতৃপ্ত হাসি। মাঠে পৌছে কৃষক আরেক বিধাতা খলিলুল্লার লোকজনের দেখা পায়। কৃষকের ঘামে গতবারের ফসলে তৃপ্ত নয় খলিলুল্লা। আরেক কৃষককে জমি বর্গা দিয়েছে, যে হয়তো ঘামের সাথে রক্তও ঝরাতে পারে।
কোন বিধাতা শক্তিশালী ? জোতদার খলিলুল্লা নাকি আমাদের সাত আসমানের মহাসনে আসীন বিধাতা ?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০