somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প: দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী (১৮+)

৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক
জরিনার বুক বাড়াবাড়ি রকমের স্ফীত হচ্ছে। চৌদ্দ থেকে পনেরোতে পা দেয়া এক কিশোরীর জন্য তা অস্বাভাবিকই। মিসেস রফিকের কপালের ভাঁজ গুলো ক্রমশ বড় হচ্ছে জরিনার বুকের সাথে পাল্লা দিয়ে। কয়েক মাস ধরে তার সবকিছু কেন জানি উলট পালট হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি মুহূর্ত তার জন্য যেন সুদীর্ঘ বছর; সাফোকেটিং। কএকদিন ধরে অসুস্ততার ভাণ করে স্কুলে যাওয়াও বন্ধ। টিকটিকির মতন বলদে যাচ্ছে তার জীবনের রঙ; খুব দ্রুততার সাথে। তার এত বছরের সাজানো গোছানো অনেক স্বপ্নের অনেক ভালোবাসার অনেক যত্ন আত্তিতে গড়ে তোলা সংসার যেন কোন এক প্রলয়ঙ্করী সুনামিতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে। তার চোখের সামনে। তার যেন কিছুই করার নেই। এক দিকে সমাজ আরেকদিকে পরিবার-সংসার। দুটির মাঝামাঝি পড়ে সে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে।

দুই
জরিনার মা অনেকগুলো বছর ধরে রফিক সাহেবের বাসায় কাজ করত। জরিনার জন্মের পরপর আরও তিনটি সন্তান ফেলে পালিয়ে যায় তার বাবা। এরপর শুরু হয় তার মার যুদ্ধ। নিজে বেঁচে থাকার, চার চারটে সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার। সারাদিন এই বাসা অই বাসা দৌড়াতে দৌড়াতে সে হাফিয়ে উঠে। এভাবে চলে যায় অনেকগুলো বছর। শরীর আর সয় না। একসময় জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে সে। আর কাজ করার শক্তি থাক্র না। তারপর জরিনা কে দেয় রফিক সাহেবের বাসায়; অন্য দুজনকে পাশের এক গার্মেন্টসে। তিন মেয়ের আয়ে কিছু চিকিৎসা করা হয় কিন্তু তা ছিল খুবই অল্প।বছর খানেক পর বেঁচে থাকার যুদ্ধে হেরে যায় জরিনার মা। সেই থেকে আজ প্রায় তিন বছর হল জরিনা রফিক সাহেবের বাসায়।

তিন
তাদের ভালোবেসে বিয়ে। বিয়ের পর কেটে গেছে প্রায় অনেকগুলো বছর। বলতে গেলে সুখে শান্তিতেই ছিল। এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলেটি বড়, সদ্য কলেজে পা দিয়েছে। মেয়েটি স্কুলে পরে,ক্লাস এইটে। অনেকটা জরিনার সমবয়সী। মিসেস রফিকের মাথায় ভাঁজ পড়া শুরু হয়ে যায় ছেলের পরিবরতন দেখে। কিছু বখাটেদের খপ্পরে পড়ে সিগারেট খাওয়া শুরু,তারপর আস্তে আস্তে নেশার জগতে ডুবে যেতে বসে। মিসেস রফিক স্বামীকে অনেকবার বললেও ছেলের দিকে তাকিয়ে শুদ্ধ দেখে না। আজকাল রফিক সাহেব অফিস নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের ব্যস্ত। পরিবার কে সময় দেয়া কী জিনিস তা যেন রফিক সাহেব ভুলেই গেছেন। মিসেস রফিকের ভিতর এসব ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। একসময় বিস্ফোরণ হয়। ফলাফল বিছানা আলাদা। মুখ চাওয়া চাওয়ি পর্যন্ত বন্ধ। তারা এক ঘরে থাকেন কিন্তু তাদের মাঝে দুরত্ব যেন লক্ষ মাইলের। ইদানিং রফিক সাহেবের আরেক নতুন রোগ ধরা পড়েছে। তিনি বাড়ী আসেন অনেক রাত করে। খেয়ে দেয়ে একদম টালমাটাল অবস্তা।

চার
জরিনার সারা শরীর জুড়ে প্রচণ্ড ব্যথা। তাপও আস্তে আস্তে বাড়ছে। বিছানায় রক্তের চিহ্ন, রক্তের প্রতিটি ফোঁটা তার আর্তনাদের সাক্ষী। রাত বারটার দিকে জরিনা হঠাত তার বিছানায় কার যেন অস্তিত্ব অনুভব করে। ঘুম ভেঙ্গে যেতেই চিৎকার দিয়ে উঠে। কিন্তু কে শোনে কার চিৎকার!! অনেক ধ্বস্তাধস্তির পর সে আর পেরে উঠে না। একজন ‘মানুষ’ তার স্তনগুলো সজোরে কামড়াতে কামড়াতে নিচের দিকে নামতে থাকে। যখন নামা শেষ তার আর হুঁশ থাকে না।
ঘুম থেকে উঠে মিসেস রফিককে বলতে চায়,কিন্তু পারে না। এর আগে কয়েকবার যখন তার বুকে বিচরণ করেছিল অই ‘মানুষ’টির হাত, তখন সাহেবা কে বলে উল্টো অপদস্ত হতে হয়েছিল। উল্টো তাকে ধমকের সুরে বলে, ‘বেশ্যা কোথাকার! আমার ছেলের নামে অপবাদ দিস! আরেকবার যদি তোর মুখ থেকে এই কথা শুনি জিহ্বা কেটে ফেলব।’
সেই থেকে জরিনা প্রায়ই তার বিছানায় আবিষ্কার করে অই ‘মানুষ’টিকে। শুরুতে কিছুদিন জরিনার কষ্ট হলেও এখন সয়ে গেছে। কারণ, তার কোনও আশ্রয় নেই, নেই কোনও আপনজন। বোন দুইটির খোঁজ খবর নেই বহুদিন। আর এত বড় ঢাকা শহর, পালিয়েই বা কোথায় যাবে, সে তো একটি রাস্তাও চিনে না। আবার যদি তাকে পায় নতুন আরেক হায়েনার দল? সে ভয়ে ভয়ে রয়েসয়ে দিন গুজরান করে জরিনা।
প্রথম কয়েকবার কনডম ব্যবহার করলেও পরবর্তীতে অই ‘মানুষ’টি আর কনডম ব্যবহার করে না।
এরই মাঝে জরিনা বুঝতে পারে, তার অই স্ফীত বুকের উত্থিত স্তনগুলোর দিকে নজর পড়েছে রফিক সাহেবেরও। রফিক সাহেব তার বুকের দিকে কেমন করেই না বা তাকায়! পুরুষদের দৃষ্টি বোঝার ক্ষমতা প্রায় প্রতিটি নারীর সহজাত একটি গুণ!
রফিক সাহেব ডাক দেয়, ‘জরিনা’
-জ্বি
-একটু এদিকে আয় তো
জরিনা গিয়ে দেখে রুমে কেউ নেই। মিসেস রফিক তাকে না বলেই আজ স্কুলে চলে গেছে।
-আমার পাশে বস, একটু মাথাটা টিপে দে
পাশে বসার পর রফিক সাহেব তার পিঠে হাত দেয়। জরিনা নড়েচড়ে বসলে রফিক সাহেবের হাতকে তার ঊরুতে আবিষ্কার কার করে। জরিনা উঠে যেতে চায়লে হাত প্রবলভাবে চেপে ধরে। আস্তে আস্তে বুকের দিকে এগিয়ে চলে রফিক সাহেবের হাত। রফিক সাহেব যেন আজ বিশ বছরের কোন এক যুবক। জরিনার স্তনে হাত রেখে সে যেন পাড়ি দিয়েছে অন্য জগতে। জরিনার চেঁচামেচি আরও বেশি উপভোগ করে রফিক সাহেব। জরিনা রেহায় পায় না সাহেবের হাত থেকেও।

পাঁচ
এ মাসে জরিনার মাসিক হয় নি। পেটে কিসের যেন অস্তিত্ব অনুভব করে সে। ভয়ে ভয়ে সাহেবাকেও বলতে পারে না। মাথা ব্যথা আর বমি আসে প্রায় সময়। কিচ্ছু খেতে পারছে না। এসব কিছু সাহেবার চোখে পড়ে। সাহেবা দেখতে পায় জরিনার বুকের সাথে সাথে তলপেটও স্ফীত হচ্ছে দিনে দিনে।
-জরিনা
দৌড়ে আসে জরিনা
-জী
-সত্যি করে বলতো, তুই কী পেট বানাইছস?
-খালাম্মা, আন্নি কিয়া কন মুই বুঝবার পারছি না
-তুই কার লগে শুইছস?
নিরুত্তর জরিনা
-বল, বল কে?
কোনও কথা নেই জরিনার মুখে
-এই মাসে কী তোর মাসিক হয়ছে?
-না খালাম্মা, গত মাসেও হয় নি
এইবার আর সাহেবার বুঝতে বাকি থাকে না। খসে থাপ্পড় লাগায় জরিনার গালে। চুলে ধরে দেয়ালের সাথে ধাক্কা দিয়ে বলে
-বল হারামজাদি, বেশ্যা!! বল, কে?
আর চুপ স্তব্ধ থাকে না জরিনার মুখ।একে একে সব বলে ফেলে। সাহেবা তৎক্ষণাৎ বেহুঁশ হয়ে যায়। জরিনা অনেক কষ্টে হুঁশ আনে।
তারপরের দিন সকালে সকালে জরিনাকে তাড়িয়ে দেয় সাহেবা। জরিনা অনেক চেষ্টা করে, তাও সাহেবার মন গলে না। আর্তনাদ করতে করতে সে বেরিয়ে যায়। কোথায় যাচ্ছে সে জানে না। জানে না কেউ। যে অচেনা ঢাকাকে ভয় পেয়ে এতদিন পালায় নি সে, সেই ঢাকাই তার আজ নিরুদ্দেশ ছুটাছুটি। সাথে কাপড়ের একটি পুটলি, সাহেবার দেয়া কিছু টাকা। আর অই পেট তো আছেই।

ঐদিনই সাহেবা পৃথিবীর মায়া ছেড়ে পালায়।
পাশে ছিল একটি সুইসাইড নোটঃ
‘তোরা বাপ-বেটা দুইজনে মিলে একটি বিয়ে করে সুখে থাকিস!আমি গেলাম!’


সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:৪১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×