somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বর্গীয় প্যাকেজ? (অনুপ্রেরণা: আস্তমেয়ে)

১৭ ই নভেম্বর, ২০০৬ সন্ধ্যা ৭:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আস্তমেয়ে ক্ষেপেছেন বুঝতে পারছি। প্রথম তীরন্দাজের অনুপ্রেরণায় লেখা দেখে ভয়ে চমকে উঠলাম। জনপ্রিয়তার শিখরে আমার আরোহন নয়, আর আমার কাছেই অনুপ্রেরনা ? তারপর দেখলাম আস্তমেয়ের নাম। এবার ভড়কে গেলাম বেশ। আমার মতো নাদান, ধর্মবোধহীন মানব আস্তমেয়ের অনুপ্রেরনার উৎস? তারপরও মোড়ক উন্মোচন করলাম অদম্য সাহসে। পড়লাম। ভাষার গাথুনি প্রতিবারের মতোই সুঠাম, শব্দের বিন্যাসে মুন্সীয়ানার টসটসে রস। তার যুক্তির সিড়ি বেয়ে উঠানামা করলাম একবার দুবার। একটু নড়বড়ে মনে হলো। কারণ কি? কোথায় শেক্সপীয়রের সাহিত্য আর কোথায় ধর্মগ্রন্থ কোরান ! দুটোর পুরোপুরি দুই আলাদা ধারা। দুটো একেবারেই ভিন্ন ধারাকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে মূহুর্তেই একলাফে মুক্তচিন্তার মুন্ডুপাত। মাঝখানে যে ফাঁক রয়ে গেল, তার কোন নিশানা খুজেই পাওয়া গেল না।

সে ফাঁকটি খুজতেই কেটে গেল সময়। আসলে এখন পৃথিবীটা প্যাকেজের। প্যাকেজ নাটক, সিনেমা, প্যাকেজ রাজনীতি, প্যাকেজ হিসেবে মুল্যবোধ, আরো কত কি। এরই মাঝে ধর্মান্ধদের অবদান হচ্ছে ধর্ম, সমাজ ও রাজনীতির এক বদ্ধ প্যাকেজ । এই প্যাকেজ এতই কঠিন প্যাকেজ যে, কোন নড়াচড়ার উপায় নেই। সামান্য নড়াচড়তেই ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। নাস্তিক, ধর্মদ্রোহী, মোরদাদ গালাগালির তখন অবিরাম বর্ষন। তারা নিজেরাও টের পাচ্ছেন না যে এই প্যাকেজের বন্দীত্বে নিজেরাও আবদ্ধ। সব চিন্তা ও যুক্তি এই প্যকেজের ভারেই অসাঢ়। যে ফাঁকের কথা আগে বলেছি, তার উৎপত্তি সেখানেই।

একই কান্ড দেখি আমাদের ত্রিভুজ সাহেবের। ধর্ম বিষয়টি, আলোচনা, কোন কোন ক্ষেত্রে সমালোচনারও উর্ধে নয়। যদি হতো তাহলে ধর্মে ধর্মে এত হানাহানি, এত রক্তক্ষয় হতো না। প্রত্যেক তার ধর্মের শ্রেষ্ঠতা প্রমানে উন্মাদ হতো না। একটিই ধর্মই থাকতো পৃথিবীতে। কিন্তু বাস্তবটি এমন নয়। ধর্মযুদ্ধে ধ্বংস হচ্ছে মানবতা, মানুষ, সে দিকে কোন নজর না রেখে প্রতিটি ধর্মের মৌলবাদীদের তারস্বর দাবী, "আমার ধর্মই সর্বশ্রেষ্ঠ" তালগাছটি আকড়ে ধরে বসে আছে। মানবিক ও যৌক্তিক চিন্তার মানুষজন ভাবে, আলোচনার দরজা খোলে। আর এ ধরণের আলোচনায় যারাই ত্রিভুজের চিন্তার প্রতিকুলে মুখ খুলেছেন, তাদের সকলকেই তিনি ঢালাওভাবে নাস্তিক ঘোষনা করে দিয়েছেন এবং এখনও দিচ্ছেন । জানিনা এ অধিকার স্বয়ং ধর্ম তাকে দিয়েছে কি না। ভদ্রলোক হিপোক্র্যাসিতেও কম যান না। ঈদের পরপরই সেদিন ঢাকায় ভয়াবহ আন্দোলন ও ধ্বংসের একটি দিন। রিকসা ভাংছে, গাড়ী পুড়ছে, মরছে মানুষ। বন্ধ যানবাহন। আমি লিখলাম কোন এক পোষ্টের উত্তরে "আমার এক পরিচিতকে পনেরো কিলোমিটার হেঁটে বাড়ী ফিরতে হয়েছে।" ওনি কমেন্ট করলেন, "ঢাকা তো শান্ত, আপনার পরিচিতজনের কি পকেটে পয়সা ছিল না তীরন্দাজ?" ছোট্ট কমেন্ট, কোন গালাগালি নেই- কিন্তু তাতে চরিত্রের শঠতা, চিন্তার অসাড়তা প্রকাশ পেয়ে যায়। রাজনীতিবিদদের মিথ্যে বুলি শুনে শুনে আমাদের কান ঝালাপালা, ব্লগেও তাই হবে ?

শাওন তার অনেক লেখার মাঝে ধর্মভিত্তিক লেখাও লেখে। ওর সব কথার সাথে একমত না হলেও ওর সারল্য ভালো লাগে। এই অল্প বয়েসের একটি ছেলে বিদেশ বিভুইএ বসে ডিসকো-মাতোয়ারা না হয়ে বাংলা লিখছে, ভাবতে ভাল লাগে। এমন প্রচেষ্টার প্রতি যথাযোগ্য সন্মানে আমার কার্পন্য নেই। শাওনের এমনি এক ধর্মভিত্তিক লেখায় আমি বললাম, "থাকুক না যার যার ধর্ম তার কাছে, সমাজ অবধিও যেতে পারে, তবে রাষ্ট্র আর ধর্মকে একসাথে করা মানবিক অধিকারকে খর্ব করতে পারে।" আস্তমেয়ে আমার কথাকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিলেন, কেন হাস্যকর, তার কোন পরিস্কার ব্যখ্যা না দিয়েই। তার এই ব্যবহার উন্নাসিক । এ উন্নাসিকতার পেছনে ব্যখ্যা কোথায় ? তার মন্তব্যকে শক্তিশালী করার যুক্তি কোথায় ? ওনি যদি বলতেন, ওনার দ্বিমত রয়েছে, তাহলে হয়তো কোন ব্যাখ্যা চাইতাম না, কিন্তু অন্যের মন্তব্যকে হাস্যকর বলার পেছনে অবশ্যই পর্যাপ্ত যুক্তি থাকা দরকার। আমি তার পরিপ্রেক্ষতে একটি পোষ্ট দিলাম, হাসান মোর্শেদ তার পরিস্কার প্রশ্ন রেখে আমার ভাবনাকে আরো শক্তিশালী করলেন। ফজলে ইলাহী এটা ওটা বলে পিছলে বেরিয়ে গেলেন বাইন মাছের মতো, আস্তমেয়ের কোন আধভাঙ্গা প্রচেষ্টাও দেখা গেল না। ফজলে ইলাহী বললেন, আমার অন্য লেখাগুলো পড়ুন, সব বুঝবেন। কিন্তু সে লেখাগুলোয় ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র নিয়ে একটি ছত্রও খুজে পাওয়া গেল না। পয়েন্ট টু পয়েন্ট উত্তরের কাছাকাছি কেউই গেলেন না। একমাত্র হামিদুর রহমান সরলভাবে তার নিজের বিশ্বাসকে আকড়ে ধরে কিছু বলার চেষ্টা করলেন যা সন্তোষজনক কোন উত্তর বহন করে না।

কি ভাববে তখন অন্যপক্ষ ? কেউ চুপচাপ হয়ে যায়, কেউ আসহিষ্ণু হয়ে গালাগালির পথ বেছে নেয়, কেউ কেউ এতে কমিকের চরিত্র খুজে পায়। গালাগালিকে আমি সমর্থন করি না, নিজে কখনও করি নি। যারা করে থাকেন, তাদের হতাশার বহিপ্রকাশের এই পথ আমার নয়, কিন্তু তাদের হতাশাকে অনুভব করতে পারি।

ফজলে এলাহীর অন্যান্য লেখাগুলো আমার খুব ভাল লাগে। তাকে তা আমি অপকটে অনেক বারই বলেছি। একবার এও বলেছি, আপনার এই লেখাগুলো আমাকে আপনার সাথে সব ঝগড়াঝাটি ভুলে যেতে বাধ্য করে। তেমনিভাবে আস্তমেয়ের অনেক লেখাই আমার ভাল লাগে। তবে অনেকক্ষেত্রে তার অন্ধ পক্ষপাতিত্ব তার প্রতি অবিশ্বাসী করে তোলে। শমোচৌ এর সাথে দন্ধ হলো শাওনের। ওখানে তিনি শাওনকে সমথর্ন দিলেন শমোচৌ এর লেখা না পড়েই। আর উন্নাসিকতায় এতোটাই অন্ধ যে,বলেই দিলেন, শমোচৌ এর লেখাটি পড়তে তার ইচ্ছেই করছে না। আমি এ ধরণের পক্ষপাতিত্ব না করার চেষ্টা হলেও করে থাকি। তার প্রমান আস্তমেয়ের অবশ্যই জানা থাকার কথা।

অনুবাদ নিয়ে আস্ত যা বলেছন, তার সাথে আমার দ্বিমত নেই। গড অফ স্মল থিংস এর অনুবাদ আমিও ছুড়ে ফেলে দিয়েছি। নিজেও অনুবাদ করি। জার্মান সাহিত্য সরাসরি জার্মান থেকে বাংলায় অনুবাদের সর্বপ্রথম কাজ আমিই করেছি। এর আগে যা হয়েছিল, তা জার্মান থেকে ইংরেজী পরে বাংলায়। দুই ভাষার মাঝখানে এক দেয়াল থেকে যায় সর্বদাই। অনুবাদ সেই দেয়াল পেরিয়ে অন্যপাশে একবার উঁকি দেয়ার মতোই অনেকটা। কিন্তু সে ভাষাটি জানা না থাকলে অন্য কি উপায় থাকবে ? নাকি আস্তমেয়ে বলতে চাইছেন কথিত ইসলামী রাষ্ট্রে সবাইকে বাধ্যতামূলক আরবীও শিখতে হবে !

আস্তমেয়ের ভাষাতেই বলছি, একটু সময় নিন। আপনার নিজের লেখা ছত্রের দিকে নজর করে আরেকটু ভাবুন। "এখনকার আমি বলতে পারি, তখন কিছুই বুঝি নি, কিন্তু আসল ব্যপার হলো, আমাদের জ্ঞান এবং পরিপক্কতা বাড়ার সাথে সাথে দেখার চোখ বদলে যায়।"
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০০৬ সন্ধ্যা ৭:৪৮
২৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×