পটভূমি: বহু বছর আগের গল্প যখন বঙ্গের মানুষ মনের ভাব প্রকাশে ব্ল্লগাতো। হঠাৎ করে বঙ্গদেশে ধুরন্ধর এক বান্দর সৃস্টি করল মহা যন্ত্রণার। দেশের রাজ সিংহাসনের চাবির গোছা রাণী মাতা ষড়যন্ত্র করে লুকিয়ে রেখেছিলেন এই বান্দরের কাছে। নাম তার আজিজ বান্দর। কিন্তু এই চাবির গোছার স্বত্ত্ব নিয়ে বিবাদ বাঁধল দেশের রাণীমাতা আর রাজকন্যার মধ্যে। রাজকন্যা অনাথিনী। সিপাহীরা রাজক্ষমতা অন্যায়ভাবে কুক্ষিগত করে নেওয়ার সময় হারিয়েছেন তার বাবা-মা ও পরিবারবর্গ। বাবা মা হারাবার অনেক অনেক বছর পর বিধবা সেনাপত্নী রাজ ক্ষমতা নিলেন তন্ত্র-মন্ত্রের কবিরাজদের আশীর্বাদে। কিন্তু রাজকন্যা তা মানবেন কেন?
তাই অবশেষে মুণি-মনীষিরা ঠিক করলেন এক নিরপেক্ষ বান্দরের কাছে থাকবে রাজসিংহাসনের চাবি। সূর্যসকালে প্রজাসকলের আশীর্বাদে যার কুটির আলোকিত হবে সেই পাবে রাজসিংহাসনের চাবি। মণিষীদের এই সিদ্ধান্ত রাজকন্যা আর রাজমাতা সানন্দে মেনে নিলেন। কিন্তু রাজমাতা নিলেন কুটিল লোকদের বুদ্ধি। তিনি ঠিক করলেন ছলে বলে কৌশলে বধ করবেন রাজকন্যাকে। তাহলে তিনি পাবেন রাজক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্ধক। চেস্টা করেও রাজকন্যাকে বধ করা সম্ভব হলো না। তখন তিনি বুদ্ধি করে খুঁেজ বের করলেন ধুরন্ধর আজিজ বান্দরকে। বিভিন্ন ধরণের দেহজ ও বনজ কলা দেখিয়ে সম্মোহিত করলেন ধুরন্ধর এই বান্দরকে যাতে প্রজা সকলের আশীর্বাদ পএ নিজের মতো সাজানো যায়। তার পর...
কিন্তু বান্দর আজিজ প্রথম হতে প্রজাবর্গের তালিকা নিজের মতো লুকিয়ে চুড়িয়ে সাজানো শুরু করলেন যাতে আশীর্বাদ পএে কারচুপি করা যায়। তিনি ঔদ্ধত্যসহকারে প্রজাবর্গের নিকট সত্য গোপন করতে থাকলেন। প্রজাবর্গ ও রাজকন্যা যখন বুঝলেন এবার চাবির গোছা ধুরন্ধর বানর লোপাট করে দিবে তখন তারা সবাই তাকে সরে যেতে বললেন। কিন্ত বাধ সাধলেন রাজমাতা আর তার পারিষদরা। ধুরন্ধর বান্দরের জায়গায় সবাই অন্ধ বান্দরের সন্ধান করতে লাগল। কিন্তু আজিজ বান্দর বললেন, তাকে সরাবার বিধান কোন পুরাণে নেই। রাজমাতার পারিষদ বললেন, এই বিশ্বস্ত আজিজ বান্দরকে সরালে পুরাণ ও রাজকীয় বিধান অপবিএ হবে। তারা ষড়যন্ত্র করতে লাগল। কিন্তু প্রজাবর্গ তো আর বোকা নয়। তারাও সোচ্চার হয়ে উঠল। রাজ্যের পথে প্রান্তরে তারা বাধা সৃস্টি করে ন্যায্য দাবী আদায় করতে চাইল। অপসারণ চাইল নির্লজ্জ ধুরন্ধর আজিজ বান্দরের। কিন্তু আজিজ বান্দর তো যুধিস্থির। সে তো পিছু হটে না। প্রজাবর্গ ভাবে আর ভাবে, এই বান্দরের সমস্যা কোথায়?
দেশের রাজন্যবর্গ বান্দরকে মর্তমান কলার ছড়ি দেখায়, প্রসাদ দেয়। উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করে বান্দরের সুমতির প্রত্যাশায়। টিভির বিজ্ঞাপনের বৃদ্ধ কাকাও তিন বোতল সরিষার তেল নিয়ে আজিজ বান্দরকে মর্দনে হাজির হলেন। কবিরাজবর্গ আসলেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে। সংবাদ বাহক আসলেন, রাজদূতরা আসলেন। কিন্তু বান্দর আজিজ অনড়। তিনি সরবেন না। অনেক কবিরাজরা ভুত নামাবার জন্য ঝাড়ু ও পাদুকা চিকিৎসার আয়োজন করল রাজপথে। অনেক পাগল মিছিলও করল। কিন্তু বান্দর আজিজকে হাগারগাঁও থেকে সরানো যাচ্ছে না। তারপর...
অবশেষে লক্ষীপেঁচা আর হনুমান আসল আজিজ বান্দরের এই অনড় অবস্থানের হেতু উদঘাটনের জন্য। তারা স্বচক্ষে যা দেখলেন তাতে তারাও প্রস্তরমূর্তিতে রূপান্তরিত হলেন। শুধু দেখা গেল হনুমানের চোখ থেকেও অশ্রু ঝড়ছে। অবশেষে ঐতিহাসিক শোমচৌর বিবরণী থেকে জানা যায়, হনুমান দেখল হাগারগাঁও শহরের সুপারি বৃক্ষের সাথে আজিজ বান্দর লটকে আছে। হাতে তার কুড়াল। বাঁদারামি করতে গিয়ে কুড়ালের আঘাতে সুপারি গাছ হালকা করে ফাঁক হয়ে আছে। যন্ত্রণায় কাতর হয়ে বিড়বিড় করে নির্লজ্জ আজিজ বান্দর হনুমানকে বলল, "রাজ সিংহাসনের চাবি লুকাতে গিয়ে সুপারি গাছের চিপায় তার একটি বিচিও আটকে গেছে"। হনুমান তাকে আশ্বস্ত করে বলল, "সমস্যা কি? বিচি তো আরেকটি আছে"। অতি দীর্ঘশ্বাস টেনে আজিজ বান্দর বলল, "আরেকটি তো রাজমাতার কাছে বন্ধক দিয়েই এই হাগারগাওঁতে আমার আগমন, আমার কি উপায়"? (ক্লোজআপহাসি)