somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কমিউনিস্ট জোকস্ ৮

১১ ই নভেম্বর, ২০০৬ সকাল ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাতীয় উৎসব চলছে । বেরিয়েছে বিশাল শোভযাত্রা । বিরাট এক পোস্টার হাতে নিয়ে পায়ে পা মিলিয়ে চলেছে রাবিনোভিচ । পোস্টারে লেখা : ্তুআনন্দময় শৈশবের জন্য কমরেড স্তালিনকে ধন্যবাদ ।্থ
পোস্টারটা দেখেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন পার্টির এক হোমরা চোপরা ।
ধমক দিয়ে তিনি বললেন : কমরেড রাবিনোভিচ, এটা কি আপনি ফাজলামি পেয়েছেন ? এই পোস্টারের মানে কি ? আপনি যখন শিশু ছিলেন, কমরেড স্তালিনের তখন তো জন্মই হয়নি ।
-- ধন্যবাদ তাঁকে সে কারণেই -- রাবিনোভিচের নির্বিকার উত্তর ।

স্ত্রীর সঙ্গে ট্রামে চড়ে যাচ্ছে রাবিনোভিচ । নিজের দুর্দশার কথা ভেবেই সম্ভবত সে হঠাৎ সশব্দে এক গভীর দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করল । ট্রামের অন্যান্য যাত্রীরা সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে দাঁড়িয়ে ক্রূর দৃষ্টিতে রাবিনোভিচকে দেখতে লাগলেন ।
ভীত সন্ত্রস্ত স্ত্রী তাকে কানে কানে বলল :
-- কতবার তোমাকে বলেছি, লোকজনের সামনে রাজনীতি নিয়ে টুঁ শব্দটিও করবে না !

একদিন অস্ফূটে বলেই ফেলল রাবিনোভিচ :
-- শালার অভিশপ্ত জীবন
সাদা পোশাকে কেজিবির লোক ছিল আশেপাশেই । খপ করে ধরল এবং বলল :
-- চলুন আপনাকে যেতে হবে আমার সঙ্গে ।
ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গিয়ে তোতলাতে তোতলাতে রাবিনোভিচ বলে :
-- আমি তো খারাপ কিছু বলিনি । বলছিলাম পশ্চিমি পুঁজিবাদী দেশগুলোর অভিশপ্ত জীবনের কথা ।
-- আপনি বললেন আর আমি বিশ্বাস করলাম, এতটাই নিরেট নাই আমি ? অভিশপ্ত জীবন কোথায়, তা ভালো করেই জানা আছে আমাদের । চলুন আমার সঙ্গে ।

রাবিনোভিচ প্রশ্ন করল তার বন্ধুকে :
-- স্তালিনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় কত খরচ হল ?
-- পঞ্চাশ লক্ষ রুবল ।
-- আঃ ওই টাকা দিয়ে গোটা সরকারকে কবর দিতে পারতাম আমি !

রাবিনোভিচকে প্রশ্ন করা হল:
-- জাতি হিসাবে ইহুদিরা এত আশাবাদী কেন ?
-- ইতিহাস আমাদের বাধ্য করেছে আশাবাদী হতে ।
-- কি রকম ?
-- যেমন ধরুন, মিশরের ফারাওরা যখন ছিল, ইহুদিরাও তখন ছিল । আজ ফারাওরা নেই । কিন্তু ইহুদিরা আছে । ছিল প্রাচীন গ্রীকরা, তখন ইহুদিরাও ছিল । প্রাচীন গ্রিকরা আজ নেই, কিন্তু ইহুদিরা আছে । ছিল রাশিয়ার জার, ছিল ইহুদিরা । আজ জার নেই, কিন্তু ইহুদিরা আছে । স্তালিন ছিল, ইহুদিরা ছিল । স্তালিন নেই, ইহুদিরা আছে । নাসের ছিল, ইহুদিরা ছিল । নাসের নেই, ইহুদিরা আছে । এখন আছে কমিউনিস্টরা, আছে ইহুদিরা ।
-- আপনি কি কিছু ইঙ্গিত করতে চাইছেন ?
-- মোটেও না । আমি শুধু বলতে চাই, আমরা ফাইনালে উঠেছি ।

কেজিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে রাবিনোভিচকে ।
-- আমাদের কাছে খবর এসেছে, আপনি হিব্রু ভাষা শিখছেন । তার মানে ইজরায়েল যাওয়ার প্ল্যান আছে আপনার ।
-- মোটেও না । আমি ধর্মীয় গ্রন্থে পড়েছি, স্বর্গে হিব্রু ভাষায় কথা বলতে হবে ঈশ্বরের সঙ্গে । তাই হিব্রু ভাষাটা শিখে রাখছি ।
-- মৃত্যুর পর আপনি স্বর্গে যাবেন, এই ধারনা আপনার হল কোথা থেকে ?
-- তা নিশ্চিত করে বলতে পারি না ঠিকই । তবে নরকে যদি যেতেই হয়, তার জন্য রুশ ভাষাটা তো শেখাই আছে !

অবশেষে রাবিনোভিচ অনুমতি পেল বিদেশ ভ্রমনের । বিদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে সে টেলিগ্রাম পাঠাতে শুরু করল । টেলিগ্রামগুলি এরকম :
স্বাধীন বুলগেরিয়া থেকে শুভেচ্ছা । -- রাবিনোভিচ
স্বাধীন রুমানিয়া থেকে শুভেচ্ছা । -- রাবিনোভিচ
স্বাধীন হাঙ্গেরি থেকে শুভেচ্ছা । -- রাবিনোভিচ
অষ্ট্রিয়া থেকে শুভেচ্ছা । -- স্বাধীন রাবিনোভিচ

ইমিগ্রশন নিয়ে যেসব সোভিয়েত ইহুদি ইজরায়েলে চলে এসেছে, তাদের নস্টালজিয়া দূর করার একটা উপায় বাতলেছে রাবিনোভিচ । উপায়টি এরকম :
তেল আবিবে ্তুজন্মভূমির টান্থ নামে একটা রেস্তোরা খুলতে হবে । সেখানে খদ্দের গিয়ে চেয়ারে বসবে, কিন্তু অর্ডার নেওয়ার জন্য বহুক্ষন কেউ আসবে না । খেতে দেবে যাচ্ছেতাই । দুর্ব্যবহার করবে, বিল মেটাবার সময় ঠকাবে এবং বেরবার সময় পেছন থেকে কেউ গজগজ করে করে বলেব, শালা ইহুদির বাচ্চা ! ভাগ্ ব্যাটা ইজরায়েলে !

রাবিনোভিচ মারা যাওয়ার পর তাকে নরকে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হল । যমদূতদের কাছে সে তীব্র প্রতিবাদ জানাল । বলল :
-- সোভিয়েত দেশে এত বছর কাটানোর পরেও কি আমার স্বর্গে যাওয়ার সৌভাগ্য হতে পারে না ?
-- যে জীবন তুমি সোভিয়েত দেশে কাটিয়ে এসেছো, হে রাবিনোভিচ, যমদূত বলল, তারপর নরকই তোমার কাছে মনে হবে স্বর্গের মতো !

এক বস্তা রুবল নিয়ে গ্রাম থেকে এক কৃষক এল মস্কো শহরে । শহরে পৌঁছে সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল । পুরনো রুবলের বদলে নতুন রুবল কোথায় দিচ্ছে, তার হদিশ অনেক জিজ্ঞাসা করেও কারও কাছ থেকে পেল না । ঘাড়ে ওই ভারি বস্তা নিয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করাও সম্ভব হচ্ছে না । তাই সে ফুটপাতে তার বস্তাটা রেখে নিজেই খোঁজ নিতে গেল কোথায় মুদ্রা বদলের কাউন্টার খোলা হয়েছে । সব জেনে ফিরে এসে দেখে তার রুবলগুলি সব ফুটপাতে গড়াগড়ি যাচ্ছে, আর বস্তাটা হাওয়া !

দেশলাই ফ্যাক্টরির ডিরেক্টর বিশেষ পুরস্কার পেলেন । কারণটা কি ? কারণ হল প্রতিবিপ্লবীরা সামরিক বিমান বন্দরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিতে চেয়েছিল । তাদের কাছে ছিল ওই ফ্যাক্টরির দেশলাই । অনেক চেষ্টা করেও তারা সেই দেশলাই দিয়ে আগুন জ্বালাতে পারেনি !

যৌথ খামারে জুতোর সরবরাহ এসেছে মাত্র একজোড়া । সেই জুতো জোড়া কাকে দেওয়া হবে তা নিয়ে মিটিং চলছে । অনেকে দীর্ঘ বক্তৃতা দিলেন । সবার শেষে উঠলেন যৌথ খামারের ডিরেক্টর । তিনি বললেন : আমি প্রস্তাব করছি, জুতোজোড়া আমাকে দিয়ে দেওয়া হোক । এই প্রস্তাবের পক্ষে যারা, তাঁরা চুপ করে বসে থাকুন । আর সোভিয়েত শাসনব্যবস্থার বিপক্ষে যাঁরা, তাঁরা হাত তুলুন !

স্তালিন ফোন করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে :
-- গমের সরবরাহ আসতে দেরি হচ্ছে কেন ?
-- বন্দর শ্রমিকরা লাগাতার ধর্মঘটে নেমেছে । বেতন বাড়ানোর দাবি করছে তারা ।
-- কেন, আপনাদের দেশে কি পুলিশ নেই ?

যৌথ খামার পরিদর্শনে বেরিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ক্রুশ্চেভ । ইচ্ছে খামারের অন্দরমহলটা নিজের চোখে দেখবেন । তাই বিশাল নিরাপত্তা বাহিনীকে বাইরে রেখে খামরের এক কর্মীর সঙ্গে ঘুরে ঘুরে দেখছেন । হঠাৎ ম্যানহোলের মুখ খোলা এক সার পচানোর গর্তে পড়ে গেলেন তিনি । খামারের কর্মী কোনও রকমে তাঁকে টেনে তুললেন । মোটামুটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ক্রুশ্চেভ সেই কর্মীকে চুপিচুপি বললেন:
-- দ্যাখো, আমি যে গর্তে পড়ে গিয়েছিলাম, সেটা কাউকে বোলো না । দারুন লজ্জার ব্যাপার হবে সেটা ।
-- তা বলব না কমরেড ক্রুশ্চেভ । কিন্তু আপনিও ভুলেও কাউকে বলবেন না যে আমিই আপনাকে গর্ত থেকে তুলে বাঁচিয়েছি । তাহলে, আমাকে আর আস্ত রাখবে না কেউ !

ছেলে প্রশ্ন করছে বাবাকে :
-- বাবা এখন কি দেশে কমিউনিজম ? না কি, অবস্থা আরও খারাপ হবে ?

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×