somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুদাই

০৯ ই নভেম্বর, ২০০৬ বিকাল ৩:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

1.
রাসেল ঢাকায় নামনের পর উপলব্ধি করলো সে বিখ্যাত ব্যক্তি হইয়া উঠছে। কিন্তু বিখ্যাত ব্যক্তি হইলে পরে কি কি করণীয় এইটা আবার তার ঠিক ঠিক জানা নাই। আসলেই কি অন্যরম কিছু করতে হয়? যদিও সুপার হিরোরা অনেক কিছু করে, অনেক সুক্ষ তাগো ম্যানারিজম সমূহ। তো রাসেল এইরম সংশয়ী মনেই ঢাকা শহরের রাস্তায় নামে। এমনেই ঢাকা শহর বহুত পালটাইয়া গ্যাছে এই কয় বছরে, তারমধ্যে আবার এমন সংশয়ী মন, কিচ্ছু তো চিনতে পারতাছে না! এখন কই যাইবো সে? তা'ও যদি একলা হইতো! লগে আবার সাধের একখান কোলের শিশু। লাগেজ আর বাচ্চা কোনটা যে কোন কান্ধে রাখবো সেই চিন্তা করতে করতেই হঠাৎ তার সামনে এক মাস্তান টাইপ চেহারার লোক আইসা খারাইয়া হাত বাড়াইয়া দিলো। রাসেল তো ভয়েই আধমরা। ছিনতাইকারী!? কিন্তু সেই লোক কেরম গদগদ কয় - 'অটোগ্রাফ' । রাসেল তো অপ্রস্তুত। কিন্তু হাত তার ঠিকই শার্টের বুক পকেটে গেলো গা। কলমের খাপ খুইলা সে খুবই মোলায়েম গলায় জিগাইলো, 'আপনার নাম?' সেই লোক কয়, 'এই অধমের নাম অমি রহমান পিয়াল।'
তারপর তো বাংলার ছবির মতো একে অপরকে জড়াইয়া ধইরা কান্না কাটি। রাসেলের মনে হইতে শুরু করলো এই পিয়াল তার বহুকাল আগে হারাইয়া যাওয়া বড় ভাই। কোলের শিশুটা একটু কাইন্দা উঠনে রাসেলের সম্বিত ফিরে। দেখে শিশুটা কখন তার কোল থেইকা পইরা পাশে দাঁড়াইয়া আছে আর ছোট ছোট হাতে হাত তালি!

2.
পিয়ালের মোটর বাইকেই কেমনে জানি রাসেল আর তার কোলের শিশু যে সবে হাটতে শিখা গ্যাছে, এই দুইজনের জায়গা হইয়া গেলো। রাসেল আমেরিকা থেইকা যা যা আনছে তার বিবরণ দিতে গেলে একজন আমেরিকা ফেরত প্রবাসী বাঙালীর অপমান হইবো বিধায় এইখানে লিখনটা সম্ভ্রম সিদ্ধ নয়। পিয়ালের মোটর বাইক ঘ্যাচ কইরা থামলো সিদ্ধেশ্বরীর গলির মুখে। 'পিয়ালভাই, চলেন আম্মাজানের সাথে আপনার পরিচয়...'। পিয়াল থামায় তারে। না রাসেল এখন না, যেইদিন আমি আবার সমাজে প্রতিষ্ঠিত হইয়া উঠতে পারবো, যেইদিন আমি সেই লন্ডন শফিকের কাঁচা কলিজা মায়ের পায়ে সমর্পণ করতে পারবো, শুধু সেইদিন...শুধু সেইদিন আমি যাবো...তার আগে আমাকে তোর বাসায় যেতে বলিসনে ভাই।' রাসেল বুঝতে পারে পিয়ালের চাকরী নাই। তার মনে হয় দিন গেলে পিয়ালেরো চাকরী হইবো। সে ফিক কইরা হাসে। সেইটা দেইখা ঋকও হাসে। 'সে এইবার কথা বলে,' ড্যাড, ওয়াই আর ইয়া লাফিং?' রাসেল তার শিশু সন্তানের মুখে এই বাক্য শুইনা গেলো ঘাবরাইয়া। কি হইতাছে এইসব! সে চীৎকার দেয় টারজানের মতো,'কৌশিইইইইইইইইইক!'

3.
পিয়াল ভাই বলছে আজকেই সেইদিন। রাসেলের তাই গলা শুকাইয়া আসে। সে খানিক্ষণ তার ছেলের সাথে হামাগুড়ি খেলে। কিন্তু তাতে তার মন শান্ত না হইয়া আরো অস্থির হয়। পিয়াল ভাই তারে কোন দিনের কথা বলতে চায়? সে হামাগুড়ি দিতে গিয়া কয়টা বুকডনও দিয়া ফেলে মনের ভুলে। কলিংবেল।
পিয়াল ভাইরে রাসেল গুইনা গুইনা 10 বার জিগায়, 'কই নিয়া যান আমারে পিয়াল ভাই?' পিয়াল খালি হাসে। রাসেল সামনের আয়নাতে তার হাসি দেইখা ঠিক অনুমান করবার পারে নাএই হাসি কিসের। এর অর্থ কি। পিয়ালের মোটর বাইক থামে একটা বিশাল দালানের সামনে যেইটারে তার কেরম চিনা চিনা লাগে। প্রচুর লোক সমাগম তার সামনে। রাসেল হাত নাড়ে সবার উদ্দেশ্যে। কিন্তু দেখে সবাই আগের মতোই যার যার আলাপে মত্ত থাকে। রাসেল তার উঠানো হাত দুইটারে আড়মোড়া ভাঙনের মতো কইরা নামাইয়া আনে। তারপর পিয়ালের পেছন পেছন যায়।
পিয়াল হঠাৎ রাইসু বইলা ডাক পারে কারে জানি। রাসেলের এই নাম পরিচিত ঠেকে। তার শরীর শক্ত হয়। সিক্সথ সেনস? এক এলোমেলো চুলের ফ্রেঞ্চকাট দাড়িওয়ালা তাগো সামনে দিয়া যাওনের মুখে থামে। পিয়াল সেই লোকরে বলে, 'রাইসু তুমি এই মুহুর্তে যদি রাসেলরে পাও তাইলে কি করবা?' লোকটা কয়, 'কিচ্ছু না'। পিয়াল আবার জিগায়, রাইসু তুমি এই মুহুর্তে যদি রাসেলরে পাও তাইলে কি করবা? লোকটা আবারো কয়, 'কিচ্ছু না'। এইবার তার গলা আরো ঠান্ডা। লোকটার এইরম কিচ্ছু না শুইনা রাসেলের কেরম উদাস উদাস লাগে। সে কি তাইলে বিখ্যাত হয় নাই! রাসেল গলা ফাটাইয়া হাক দেয়, 'আমার গীটার কই!!' কে জানি তার হাতে একটা গিটার দিয়া যায়, যাওনের আগে চুপে কয়, 'এইটা আপনের না'।

4.
রাসেল গীটার বাজাইয়া গান ধরে। তার চাইরপাশে ভীড় জইমা যায়। গোলাম আলীর গান ধরে সে। আবেগ দিতে গিয়া তার চোখ বন্ধ হইয়া আসে। গান শেষে চোখ খুইলা দেখে তার সামনে 103জন রাইসু তার দিকে তাকাইয়া হাত তালি দিতেছে। পিয়াল ভাইয়ের চেহারাটাও কেরম রাইসু হইয়া আসে। সে জ্ঞান হারায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০০৬ বিকাল ৪:০১
২২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×