somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নে সন্দেহ

০৩ রা নভেম্বর, ২০০৬ ভোর ৫:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যতটা ঝামেলা হবে ভেবেছিল তার কিছুই হয়নি। এখন তাদের দু'জনকেই বেশ ভারমুক্ত মনে হচ্ছে। রফিক-নীলা দু'জনে বিয়ে করেছে আজ। সকালে নীলা বাসা থেকে একটা সাধারন শাড়ি পড়ে বের হয়েছে। রফিক স্বল্পদামের একটি পাঞ্জাবি কিনেছিলো গতকাল। সারাদিনের জন্য তারা একটি ট্যাক্সিক্যাব ভাড়া করে। সঙ্গে দু'জন বন্ধু, স্বাক্ষী হিসাবে। ব্যস হয়ে গেল, মিরপুর কাজী অফিসে তিনবার কবুল বলতে হলো। রফিক ভেবেছিল বিয়ে বাবদ কমপক্ষে হাজার দশেক টাকা খরচ হবে। তার কিছুই হয়নি। বিয়ের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তার কাছে সাত হাজার দুইশো টাকা রয়ে গেছে। এবারে একটা শাড়ি কিনে দেয়া যায় নীলাকে, ভাবলো রফিক।

বিয়ে করেছি অথচ নীলাকে সামান্য নাকফুলটাও দিইনি। কী লজ্জার কথা! 'চলো তোমাকে একটা লাল টুকটুকে শাড়ি কিনে দিই', নীলাকে রফিক এ কথা বলতেই সে তার অবাক করা হাসি হাসতে শুরু করলো। নীলা যতবার হাসে রফিক অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। যেন পৃথিবীর বিস্ময়কর কিছু দেখছে সে। হয়তো নীলার এই হাসিটার জন্যই রফিক তার প্রেমে পড়েছিল। বিয়ের পর রফিক-নীলা দু'জনের মধ্যেই নির্বাক ভাবনার ভ্রম খেলা চলতে থাকে। নীলাই প্রথম সে ভ্রম কাটে। 'কী ব্যাপার, বিয়েটা হয়েছে এখনো এক ঘন্টাও হয়নি, এর মধ্যে সব পুরুষের মতো তুমিও ভাবা শুরু করলে নাকি ....... বিয়ে করাটা বড় ভুল হয়ে গেছে ...... এক শরীরী ও অশরীরী চাপ তোমাকে নুইয়ে দিচ্ছে'-ঠোঁট উল্টে কথাগুলো বলে নীলা আবারো হাসতে থাকে। রফিক তার জীবনের গত এক ঘন্টায় নীলার মধ্যে এক অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করে। প্রেম করার সময় নীলা কখনো এভাবে কথা বলেনি। তার কথাবার্তা ছিল একেবারে শান্ত, স্রোতহীন নদীর মতো, হ্যাঁ বা না সূচক। ঠিক উপন্যাসের লেখকদের বর্ণনা করা মেয়েদের মতো।

রফিক-নীলা দু'জনে গন্তব্যহীনভাবে ট্যাক্সিক্যাবে ঘুরছে। বিয়ের পর তাদের এমনই প্ল্যান ছিল। রফিকের বন্ধু দের স্বাক্ষীর কাজ শেষেই বিদায় দেয়া হয়েছে। আজ সারাদিন তারা দু'জন ঘুরবে। এরপর রাতে রফিক নীলার বন্ধুদের নিয়ে একটি চাইনিজে খাওয়া দাওয়া করবে। ক্যাবের সিডি প্লেয়ারে প্রেম জশুয়া'র ইন্সট্রুমেন্টাল বাজছে। এও রফিকের পরিকল্পনা মাফিক। এই বিয়ে নিয়ে দু'জনার গত একমাসে কত রাতইনা জাগতে হয়েছে। অথচ আজ কত অবলীলায় জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে গেল। কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই।

অবশ্য ঝামেলা হওয়ার কথাও নয়। রফিক ঢাকা শহরের নির্ঝঞ্ঝাট যুবক। মা মারা গেছেন সেই ছোটবেলায়। বাবার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই অনেক কারনে। রফিকের বাবা রাজশাহীর কোনো এক থানার ইউপি চেয়ারম্যান। এলাকায় তার নামে অনেক দূর্নাম রয়েছে। এলাকার সবচেয়ে প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে রফিক। অথচ তাকে ঢাকায় মেসে থেকে একটা বায়িং হাউসে চাকরী করে জীবন চালাতে হয়। রফিকের মা ছিলো সেই প্রভাবশালী পরিবারের দাসী মাত্র। দুই স্ত্রীর সংসার থাকা সত্বেও চেয়ারম্যানের নজর যায় সুন্দরী দাসীর ওপর। এরপর তাদের অবৈধ সম্পর্কে রফিকের পৃথিবী দেখা ........ এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে অনেকটা চাপে পড়েই চেয়ারম্যান স্বীকৃতি দিয়েছিল তার মাকে তৃতীয় স্ত্রী হিসাবে। কিন্তু বিয়ের মাত্র দুই বছরের মাথায় রফিকের মা'র মৃতু্য আজো রহস্যাবৃত। এরপর রফিককে ফেলে দেয়নি চেয়ারম্যান। হয়তো আগের ঘরে কোনো ছেলে সস্তান ছিলনা বলে। সময় বাড়ে। বাড়ে রফিকের বুদ্ধির বয়স। সমাজের কানাকানি আর বন্ধুদের মাধ্যমে চেয়ারম্যান বাবার খুন, ধর্ষণের সব রেকর্ডই নথিভুক্ত হয়ে যায় রফিকের ডায়রীতে। এক পর্যায়ে দুই সৎ মা তাদের ভাইদের নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় রফিককে খুন করার। সম্পত্তির ভোগদখলের জটিল সমীকরন তখন চেয়ারম্যান বাড়ির অন্দরমহলে। এরপরই অনেকটা স্বেচ্ছা নির্বাসনের মতো বাবার বিশাল সাম্রাজ্য ত্যাগ করে রফিকের ঢাকায় আগমন।

রফিক-নীলার ছোট্র সংসার শুরু হয়েছে। নীলা একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ নিয়েছে। দুটি নিন্ম মধ্যবিত্ত বর্ণ একত্রে এসে মধ্যবিত্ত সংসারের রুপান্তর রফিক-নীলার। ছোট দুই রুমের এক ঘরে তাদের স্বপ্নের বাস। রফিকের এক বিবাহিত বন্ধু বলেছিল, 'বিয়ের প্রথম বছর তোরা থাকবি স্বপ্নের মধ্যে। দু'জন দু'জনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবি, কিন্তু কেউ কারোটা জানবিনা। এই না জানা থেকে শুরু হবে স্বপ্ন সন্দেহের মিশেল সময়। স্বপ্ন কমবে, সন্দেহ বাড়বে। শুরু হবে সংকটের পালা। এরপর সেই সংকট কাটতে না কাটতেই জীবন চলে যাবে'। বেশ কৌতুক করে মবিন সেইদিন কথাগুলো বলেছিল। এসব তত্ত্বকথা শুনে রফিক-নীলা দু'জনেই সেদিন হেসেছিল। হয়ত সংসারের শুরুতে এমন অকারন হাসি বাড়ে প্রতিটি দম্পতির ......... এভাবেই গড়ে উঠে ঢাকা শহরের এক চিলে কোঠায় স্বপ্ন সন্দেহের মিশেল সংসার।

চলবে ..........................
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৫৩
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ড্রেনেই পাওয়া যাচ্ছে সংসারের তাবৎ জিনিস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫০



ঢাকার ড্রেইনে বা খালে কী পাওয়া যায়? এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) একটি অভুতপূর্ব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাতে ঢাকাবাসীদের রুচিবোধ অথবা পরিচ্ছন্নতাবোধ বড় বিষয় ছিল না। বড় বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×