somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকায় উচ্চতর শিক্ষা (1) - কেন?

২৩ শে অক্টোবর, ২০০৬ রাত ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একসময় শিক্ষা দীক্ষায় চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য ছিল মানুষের লক্ষ্য। ধীরে ধীরে সেরা শিক্ষাক্ষেত্রের মুকুটটা যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে ছিনিয়ে নিয়েছে সেটা আমার জানা নেই। তবে আজকের এই বিশ্বায়নের যুগে শিক্ষা দীক্ষায় প্রতিযোগিতা কম চলছে না। তাই কোন দেশের শিক্ষাকেই আমি ছোট করি না। তবুও যুক্তরাষ্ট্রের ডিগ্রীর দিকে অনেক ঝোক মানুষের। সবাই এখানে পড়তে আসতে চায়। কেন? কিভাবে?

কারন হিসেবে আমি যেগুলো চিহ্নিত করেছি সেগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে ভাল চাকুরী চট করে পেয়ে যাবার নিশ্চয়তা। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বছর প্রতি 50-60 হাজার ডলারের চাকুরী পেয়ে গেলে জীবনে আর কি চাইবার থাকে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও বেশ ভালো অবস্থা। বিশেষ করে ইলেকট্রিক্যাল আর কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ আরো ভাল বেতন। তবে তুলনা মূলক ভাবে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রতিযোগিতা অনেক বেশী। চাকুরীর বাজার হিসেবে পড়াশোনার অন্যান্য ক্ষেত্রও কিন্তু খুব ভালো। তবে আর্টস বা কমর্াসে পড়তে আসলে কিন্তু ইংরেজী কমিউনিকেশনটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তবে যে বিষয়েই পড়ার চিন্তা করুন না কেন, বাজার যাচাই করে নিতে ভুলবেন না। এক্ষেত্রে বিভিন্ন চাকুরীর ওয়েবসাইট ঘেঁেট দেখাটা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

বাইরে পড়তে চাইলে আরেকটা টেনশন থাকে সেটা হলো টিউশন পে করা যাবে কিভাবে। আমেরিকায় এ ব্যাপারে সুযোগের অভাব নেই। ইউনিভার্সিটিগুলোতে টিচিং , রিসার্চ, গ্রাজুয়েট এসিসটেন্টশীপ মেলা তেমন দুষ্কর নয়। তার উপর আছে ঘন্টাচুক্তিতে চাকুরী, বাইরে বিভিন্ন দোকানে চাকুরী। আর প্রোগ্রামীং বা ওয়েব ডেভলপমেন্টের কাজ জানা থাকলে তো 'লারে লাপপা'। টিচিং এসিসটেন্টদেরকে বিভিন্ন কোর্সের খাতা দেখা, ছাত্রদের সাহায্য করার কাজ করতে হয়। রিসার্চ এসিসটেন্টদেরকে কোন প্রফেসরের আওতায় কোন গবেষনা কাজে সাহায্য করতে হয়। এই দুইধরনের কাজে ইউনিভার্সিটি থেকে টিউশন পুরোটা দিয়ে দেয়, আর থাকা খাওয়ার জন্য মাসে বারশ থেকে পনেরশ ডলার বেতন। তবে বিভিন্ন দোকানে চাকুরীটা সত্যিই খুব কষ্টকর এবং আমাদের বাঙ্গালী মানসিকতার উপর বড় ধকল।

আরেকটা ব্যাপার হলো আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পড়তে আসলে কিন্তু এইসব চাকুরী মেলা প্রায় অসম্ভব। তাই এক্ষেত্রে বেশীরভাগকে বাইরে ঘন্টা চুক্তির কাজ করতে হয়। কিন্তু মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে আসলে এসব ফান্ডিং পাওয়া বেশ সহজ হয়ে যায়। তাই যত বড় ডিগ্রীতে এনরোল করবেন তত সুযোগ বেশী।

এরপরে আসে শিক্ষাদীক্ষা। আমেরিকার শিক্ষা পদ্ধতি সারা দুনিয়ায় স্বীকৃত। তাই এখান থেকে একটা ডিগ্রী বাগাতে পারলে পৃথিবীর যেকোন জায়গায় সেটার স্বীকৃতি থাকবে বলাই বাহুল্য। গবেষনা, বা সাধারন পড়াশোনা এত বাস্তব কাজের সাথে সম্পৃক্ত যে চাকুরীর ক্ষেত্রে কোন অসুবিধাই হয়না। যে সমস্ত বিষয়ের বাস্তব এপ্লিকেশন নেই সেসব জিনিস এরা সিলেবাস থেকে কবেই বের করে দিয়েছে! এব্যাপারে আমার প্রফেসরের একটা কথা মনে পড়ল। তিনি বলছিলেন, 'আমরা এখানে শিক্ষা প্রদান করি না, শিক্ষা বিক্রী করি। তাই যারা শিক্ষা কিনছে তারা যেন না ঠকে সেটা আমাদের দেখতে হয়।'

তাছাড়া আরো একটা কিছু কিছু কারন আছে। তার মধ্যে একটা হল এখানকার সমাজ ব্যবস্থা। অরূপ সেদিন যেমনটা বলল, মানুষের ব্যবহার এখানে এত ভাল! সকাল বেলা দেখা হলে চেনে না জানে না এমন লোকও কি সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলে গুড মনিং। বিদায়ের সময় কি সুন্দর করে বলে হ্যাভ অ্যা নাইস ডে। এই সমস্ত সোশ্যাল এলিমেন্ট সত্যিই অতুলনীয়।

তাছাড়া জীবন যাপনে, ভাল এবং সেরা চিকিৎসার নিশ্চয়তা, খাবার দাবার শতকরা ভাগ ভাল হবার নিশ্চয়তা, পৃথিবীর সেরা যে কোন পন্য বা সেবা পাবার নিশ্চয়তা এসব তো আছেই। আর আপনি আপনার ধর্ম কর্ম নিয়ে আপনার মতো করে বাঁচুন আপনাকে কেউ ঘাঁটাবে না, বরং আপনাকে সাহায্যই করবে। আগে আমেরিকান সমাজকে মিশ্র সমাজ ব্যবস্থা বলা হত। কিন্তু সব জাতির লোক এখানে তাদের স্বাতন্ত্র্য নিয়ে থাকতে পারে বলে এখন এটাকে 'সালাদ সোসাইটি' বলা হয়।

এই সমস্ত বিষয় ইউরোপের বা এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক আকর্ষণীয় বলে আমেরিকা সত্যিই উচ্চতর শিক্ষার জন্য একটি ভাল পছন্দ।

(সাদিককে কৃতজ্ঞতা বিষয়টি তুলে ধরবার জন্য। পরবতর্ী অংশে থাকবে কিভাবে কি করতে হবে সে ব্যাপারে বিস্তারিত।)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×