somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রদ্ধেয় ড. ইউনুস স্যার আর আমার কিছু কথা!

১৭ ই অক্টোবর, ২০০৬ রাত ৮:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ড. ইউনুস স্যারকে নিয়ে লিখতে গিয়ে, সবকিছু তাল-গোল পাকিয়ে ফেলেছি। গত কয়েকদিন ধরেই ভাবছি স্যারকে শ্রদ্ধা জানিয়ে একটা লিখা লিখবো, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে আর সময় হয়ে ওঠেনা। নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পর স্যারকে নিয়ে অনেকেই এই সাইটে অনেক লিখা লিখেছেন, অনেকের লিখাও আমি পড়েছি, ভালোও লেগেছে।

কোন একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পএিকায় এরকম একটা খবর দেখবো বলেই অনেক দিন ধরেই প্রত্যাশার করছিলাম। অনেকদিন ধরে এ কারণেই বলছি যে, আমার ধারণা ছিলো স্যার 2006এর আগেই নোবেল প্রাইজ পাবেন। স্যারের মূল্যায়নটা আমার দৃষ্টিকোণ থেকে একটু দেরীতেই হয়েছে, তবুও ভালোলাগছে এই ভেবে যে, অবশেষে তিনি পেয়েছেন, জয় করেছেন কোটি কোটি মানুষের ভালোলাগা, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা।

স্যারের ব্যাপারে আমি প্রথম জানতে পারি 1994 সালের শেষ দিকে। আমার শ্রদ্ধেয় ছোট চাচার (বর্তমানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সেন্ট্রাল ব্যংকের ইকোনমিক কাউনসিলর হিসেবে পাকিস্তানে কর্মরত আছেন) কাছ থেকেই স্যারের ব্যাপারে জানতে পারি। স্যার কি করছেন, তার পরিকল্পনা কি, গ্রামীন ব্যাংক কি করছে, এইসব ব্যাপারে তিনি আমাকে ধারণা দিয়েছিলেন। তখনও আমি এইসব ব্যাপার বোঝার মতো ততটা সক্ষম হইনি। তবে পরে ব্যাপারগুলো ধীরে ধীরে বুঝতে পারি সত্যিকার অর্থে এই দেশের জন্যে, সমগ্র বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্যে স্যারের আন্দোলন কতটা জরুরী। তখন থেকেই স্যারের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধাবোধ জন্মাতে থাকে। বেশ কয়েকবার সুযোগ হওয়ার পরেও স্যারের সাথে সরাসরি দেখা করতে পারিনি, এটা আমার নিতান্তই দুর্ভাগ্য।

দারিদ্রের বিরুদ্ধে স্যারের আন্দোলন তিন দশকেরও বেশী সময় ধরে। এতটা পথ তিনি পেরিয়েছেন, মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর বিশ্বাসের উপর ভর করে। নিজের কাজের প্রতি স্যারের অগাধ আস্থা এবং শ্রদ্ধা আমাকে অনুপ্রাণিত করে, প্রতিদিন, প্রতিটি মুহূর্তে। হয়তো অনেকেই মনে করবেন, এখন নোবেল পাওয়ার পরই এসব বলছি কেন? প্রশ্নটা অযৌক্তিক হলেও অপ্রাসঙ্গিক নয়। ঢাকায় থাকাকালীন সময় স্যারের বিভিন্ন লিখা আমি বিভিন্ন সময় সংগ্রহ করেছি। পেপার কাটিং থেকে টাইপ করে কম্পিউটারে সেইভ করে রাখতাম। সেসব কথা না হয় আর নাইবা বললাম।

ভারত থেকে সেন স্যার অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়ার পর আমার কেবলই মনে হচ্ছিলো, ইউনুস স্যার কবে পাবেন এই সম্মান, কেন এত দেরী হচ্ছে? মাঝে মাঝে মনে হতো, হয়তো স্যারকে তারা(নোবেল প্রাইজ কমিটি) সঠিক মূল্যায়ণ করছেন না! না, আমার লিখা পড়ে ভাববেন না যে আমি অতিমাএায় প্রত্যাশী ছিলাম, তবে আমার বিবেচনায় মনে হতো স্যার এটার উপযুক্ত একজন। তবে এ কথা সত্যি যে, আমি কখনোই ভাবিনি স্যার নোবেল পিস প্রাইজ পাবেন। আমার ধারণা ছিলো তিনি অর্থনীতির জন্যেই পাবেন, পাওয়া উচিত। তবে আমিও সেন স্যারের কথা অনুসরণ করেই বলবো অর্থনীতির সাথে শান্তির একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে।

স্যারের নোবেল প্রাইজ পাওয়া বাংলাদেশ তথা সমগ্র বাঙালী জাতির জন্যে অত্যন্ত গৌরবের একটা ব্যাপার। স্বাধীনতার পরে এটাই বাঙালী হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। তৃতীয় বিশ্বের দেশ, পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হিসেবে উপাধি দেয়ার পরেও সেই দেশ থেকে একজন মানুষ নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন, এটাই প্রমাণ করে আমরাও পারি, আমাদের মেধা আছে। যখনই স্যারের কথা মনে হয়, যখনই মনে হয় আমি বাংলাদেশের নাগরিক তখনই মাথা উঁচু হয়ে উঠে, আনন্দে, ভালোবাসায়, ভালোলাগায় দু'চোখে পানি চলে আসে। এরকম অনুভূতিতে আমি কখনো কাঁদিনি, কিন্তু স্যার যেদিন মনোনীত হলেন সেদিন কেঁদেছি। আজ যখন এই লিখাটা লিখছি তখনও দু'চোখে আনন্দ অশ্রু। এই অনুভূতি কোন ভাষাতেই বোঝানোর নয়।

বিদেশের মাটিতে বাঙালী জাতির বিরুদ্ধে মন্দ কথা শুনতে শুনতে খুব কষ্ট হতো। কিন্তু নোবেল প্রাইজ পাওয়ার সেই দৃশ্যপট এখন অনেকটাই পালটে গেছে। খুব ছোট্ট একটা উদাহরণ দিচ্ছি- আমি যেখানে জব করি, সেখানে দু'দিন আগে একজন স্প্যানিশ বৃদ্ধা এসেছিলেন, উল্লেখ্য যে ভদ্র মহিলা ভালো ইংরেজী বলতে পারেন না। তিনি আমার দিকে খানিকক্ষন তাকিয়ে থেকেই জিজ্ঞেস করলেন-
-ইউ বাংলাদেশী?
আমি বললাম হঁ্যা। তিনি বললেন-
-ইউর কান্ট্রি ম্যান, নোবেল পা্রইজ। গ্রেট ম্যান। কনগ্রাটস।
এই প্রথম কেউ আমাকে বাংলাদেশী বলে ধন্যবাদ জানালো। কান্না আর ধরে রাখতে পারলাম না, কেঁদে ফেললাম। এই অনুভূতির, এই ভালোলাগার কোন তুলনা হয়না। আমি ধন্য, ধন্য আমার জন্ম মাগো তোমার কোলেতে, ধন্য আমি বাংলাদেশী।

স্যার আমাদের যে অনুভূতির স্বাদ দিলেন, যে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দিয়েছেন কোটি কোটি বাঙালীর প্রাণে, তা চিরকাল বেঁচে থাক।

স্যারের নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পর পরই আমার মত নিশ্চয়ই অনেকেই ভেবেছেন যে, স্যারের রাজনীতিতে আসা উচিত। এমন একজনের হাতে দেশের দায়িত্ব দিয়ে আমার বিশ্বাস বাংলার প্রতিটি মানুষ নিশ্চিন্ত হতে পারবেন। এই নিয়েও একটা ছোট্ট ঘটনা বলছি- স্যারের প্রাইজ পাওয়ার পরদিন আমি নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে গিয়েছি একটা রেস্তোরায় নাস্তা করতে, সাথে আমার এক বন্ধু ছিলো। কথা প্রসঙ্গে স্যারের কথা আসতেই বাঙালী অর্ধশিক্ষিত একজন হোটেল বয় দূর থেকে আমাদের কথা শুনছিলো, কাছে এসে বললো-
- ভাই, হাসিনা আর খালেদারে রশি দিয়া বাইন্দা, জেলে একটা সেলে ফালাইয়া রাইখ্যা, স্যারেরে ক্ষমতা দিয়া দেউন উচিত, হের পর যদি দেশ খারাপ চলে তাইলে আপনেরা আইয়্যা আমারে জুতা দিয়া গালডা ফাডাইয়া দিয়েন। স্যারের অহন রাজনীতিতে আসন উচিত, কি ভাই ভুল কিছু কইছি?

আমি তার কথা শুনে খুব অবাক হইনি, বরং ভালোলেগেছে এই ভেবে যে, আমাদের দেশের মানুষগুলো বুঝতে শুরু করেছে যে, আসলে ক্ষমতা কাদের হাতে যাওয়া উচিত। আমারও দৃঢ় বিশ্বাস স্যার ক্ষমতায় যেতে পারলে, সত্যি সত্যি আমরা একটা সোনার বাংলাদেশের আশা করতে পারি, তবে সেজন্যে স্যারের রাজনীতিতে আসা উচিত।

এরপরদিন মানে আজ, প্রথম আলোর পএিকা খুলেই দেখলাম স্যার সিউলে যাওয়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে তার রাজনীতিতে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এতটা খুশি আমি আমার জীবনে খুব কমই হয়েছি। অসম্ভব ভালোলেগেছে স্যারের এই আশ্বাসে। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, স্যার রাজনীতিতে এলে দেশের ভালো বৈ মন্দ হবেনা।

আমি সেদিনের প্রত্যাশায় আছি, যেদিন এমন একজন আলোকিত মানুষের হাত ধরেই আমাদের বাংলাদেশ একটি ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত দেশ হবে। তবেই অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব। বাংলাদেশের যে ক্রান্তিকাল যাচ্ছে সেখান থেকে বের হয়ে আসার জন্যে এর চেয়ে ভালো কোন পথ আমি দেখছিনা।

বিশ্বের কোটি কোটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্যে স্যার যে আলোর প্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়েছেন, আজ তার আলোয় আলোকিত হচ্ছে সমগ্র পৃথিবী, ধীরে ধীরে এই আলোয় উদ্ভাসিত হবে পৃথিবীর শত কোটি দরিদ্র জনগোষ্ঠী, এমন কামনাই করি। পাশাপাশি আশা করবো স্যার আমার এই বাংলা মা'কে একটা সুন্দর দেশ হিসেবে মাথা উচু করে দাঁড়াতে তিনি এগিয়ে আসবেন। আমি নির্ভয়ে, আত্মবিশ্বাসে বলতে পারি, শত শত তরুন, যুবক এগিয়ে আসবেন, দেশের জন্যে কাজ করবেন। 71'এর পর এখন আবার সময় এসেছে একসাথে, হাতে হাত রেখে কাজ করার। দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আমরা এমনই একজনকে পেয়েছি যাকে প্রয়োজন আমাদের জন্যে, আমাদের দেশের জন্যে, আগামী প্রজন্মের জন্যে।

স্যারের সুস্বাস্থ্য, মঙ্গল আর দীর্ঘায়ু কামনা করছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক এই প্রত্যাশায় থাকছি।


নোট ঃ কথাগুলো একান্তই আমার ব্যক্তিগত ভাব না থেকে লিখা। অনেকের দ্্বিমত থাকতেই পারে। তবে আশা করবো সবাই আমার কাঁচা হাতের লিখাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

উৎসর্গ ঃ আমার এই ছোট্ট আর দুর্বল হাতে, এত বড় মাপের যে মানুষটিকে নিয়ে লিখতে চেষ্টা করেছি, সেই শ্রদ্ধেয় ড. ইউনুস স্যারকে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্কুলের বাচ্চাদের ভয় দেখানো উচিত হয় নাই

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২২ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

ফরিদপুরে একটা গার্লস স্কুলের ১৫ থেকে ২০ জন মেয়েকে দিনে দুপুরে এক বা একাধিক ভুত এসে ভয় দেখিয়ে গেছে। আমার মতে ভুতেরা এই কাজটা ঠিক করে নাই। ক্লাস সিক্স থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

লাডাইটসঃ প্রযুক্তি যাদের চাকরি কেড়ে নিয়েছিল

লিখেছেন অপু তানভীর, ২২ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:০২



কর্মক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি আর প্রযুক্তির ব্যবহারের একটা অর্থ হচ্ছে কিভাবে আরো কম লোকবল ব্যবহার করে আরো বেশি পরিমান কাজ করানো যায় ! আর এআই এর বেলাতে এই লোকবলের সংখ্যা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাত্র ৯৭ রানের জন্য প্রথম টি-টুয়েন্টি সেঞ্চুরি মিস করলো শান্ত!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২২ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০২



বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন লর্ড শান্ত'র ব্যাডলাকের ভাগ্য খারাপ। চমৎকার খেলছিল। ১১ বলে ৩ রান করার পর হঠাৎই ছন্দ পতন। এতো কাছে গিয়েও সেঞ্চুরি মিস। কি আর করা.........আসলে শান্তর... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×