somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প: অনেকটা পথ পেরিয়েছি বলেই (১)

১৭ ই অক্টোবর, ২০০৬ সন্ধ্যা ৭:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতি সকালেই কুয়াশা নামে আর বিষন্নতার একটা রং লাগে সর্বত্র। আর তখন কেমনি যেনো কমে যায় চারপাশের শব্দগুলো। কবরের নিস্তব্ধতা চেপে বসে যেনো প্রকৃতিতে। আমার খুব ভালো লাগে রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় কাঁকরের উপর জুতোর ঘষার শব্দ শুনতে। কিন্তু ভেজা রাস্তায় সে শব্দগুলোও কেমন যেনো অন্যরকম লাগে। বিরক্ত লাগে তখন। আমি কোন কথা না বলে, কান পেতে চেষ্টা করি এর মাঝেও আমার ভালো লাগা শব্দ খুঁজে বের করার। অনেক সময় সে শব্দ পাই ও পেয়ে অনেকটাই শান্ত হই। কিন্তু ঠিক এমনি মুহুর্তে প্রতিবারই একটা কোন কথা বলে কেয়া আমার মনযোগ ভেঙ্গে দেয়। ভয়ংঙ্কর রেগে যাই আমি । ভেতর থেকে একটা দাঁতাল শুয়োর বেরিয়ে যেনো লাফালাফি করে আমাদের চারপাশে। হাজারো চেষ্টা করে সে শুয়োরটাকে আর বাগে আনতে পারি না। একসময় সে শুয়োর নিজেই কান্তিতে থেমে যায়, আমি নিজেও তখন অবসন্ন। কিন্তু কেয়ার কোন কান্তি বা অবসাদ নেই। দম দেয়া পুতুলের মতো তার অনবরত একই আওয়াজ, একই কক্ষপথ। আমার তখন একা হতে ইচ্ছে করে খুব। কিন্তু কেয়া এক ভয়াল অক্টোপাস হয়ে চেপে ধরে আমায়। আমার সাময়িক মৃত্যু ঘটে তখন। তারপর কি হয়, তা আমি আর জানিনা। কিন্তু একসময় কোন এক অসহ্য শারিরীক যন্ত্রনা আমাকে আবার আমার কাছে ফিরিয়ে আনে। দেহের উপর আমার কোন আর প্রভাব থাকেনা, এ যন্ত্রণার মাঝেও মন আমাকে আমার চেনা অচেনা নানান পথে বিচরণ করায়।

অনেকদিন ধরে কথা বলার কোন সঙ্গী নেই। নিজের কাছেই অবাক লাগে। আমি নিজেওতো তেমন বেশী বকবক করতে জানিনা। কথার ব্যাপারটা ভাবলেই আমার তুষারের কথা মনে হয়। আমাদের ছেলেবেলার বন্ধু তুষার। তার কথার তোড়ে যেনো ভেসে যেতাম আমরা। সকাল বেলা একসাথে ক্লাশে যাওয়ার সময় কথা, ক্লাসের ভেতরে বসে কথা, এমনকি খেলাধুলার সময়েও তুষারের কোন কান্তি ছিলনা। ক্লাস সিক্স থেকে শুরু করে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত একসাথে পড়াশোনা করেছি আমরা। সাত বছর ধরে তার অনেক অনেক কথা শুনতে হলো আমাদের। বেশীরভাগ সময়েই ওর কথা ভালোই লাগতো আমাদের। কিন্তু তুষার কোন একদিন আমাদের কোন কিছু না বলেই চিরদিনের জন্যে নিজেই নীরব হয়ে গেলো। আমরা বিস্ময়ে, কষ্টে বিমূঢ় হয়ে ওর বাবা-মার সাথে দেখা করতে গেলাম। ওরা জানতে চাইলেন, ঘনিষ্ট বন্ধু হিসেবে আমরা তার লুকোনো কোন কষ্টের কথা জানি কি না। আমরা এতো কথা শুনলাম তুষারের, কিন্তু ওনাদের এ প্রশ্নের উত্তর দেযার সাধ্য আমাদের ছিলনা।

ডান হাতে ভীষন একটা ব্যাথা সারাক্ষন। কয়েক বছর ধরে এটা আমার সার্বনিক সঙ্গী। যখন ব্যাথার কষ্ট কম থাকে, তখন সেখানে হাত বুলিয়ে আনন্দ পাই। ডাক্তারের কাছে সময়মেতা গেলে হয়তো দুর হয়ে যেতো এটা। সেজন্যে যাই ই নি সেখানে। আর ব্যাথা বেশী হলে কোথাও যাওয়ারও ক্ষমতা থাকেনা। সুতরাং ওটা রয়েই গেছে। একে আমি মাঝে ঘৃণা করি, মাঝে মাঝে ভালোওবাসি। আসল ব্যাপার হচ্ছে, আমার আর আলাদা করার মতা নেই কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ। কোনটা সাদা, কোনটা কালো জানিনা আর আমি।

কেয়া খুব ভালো করে সাদা কালো আলাদা করতে জানে। করতে করতে এমন হয়ে গেছে যে, সে সাদা আর কালো ছাড়া অন্য কোন রংই চিনতে পারে না। তাছাড়া ও বেশীরভাগ সময়েই একটা কালো চশমা পড়ে থাকে বলে, কালো রংই বেশী দেখে। কেয়া বেশ ধার্মিক, ধর্মকর্ম খুব একটা না করলেও। আমি নিজে তো ঈশ্বরেই বিশ্বাস করিনা। আমি বিশ্বাস করি মানুষে। মানুষকে দেখি তো চোখের সামনে, তাই। কেয়ার মতো মানুষেরা চোখের সামনে যা দেখছে, সেগুলোকে উপেক্ষা করে অদৃশ্য কিছু নিয়ে মেতে থাকতে ও প্রয়োজনে যখন তখন দৃশ্যত অস্তিত্বের উপর সাদা কালো রং ছড়াতে ভালোবাসে। ওদের ছড়ানো রং সাদা না কালো, সেটা নির্ভর করে, চোখের চশমার উপর। কেয়া বেশীরভাগ সময়েই কালো চশমা পড়ে থাকতে পছন্দ করে।

তুষারের কথা মনে করে হাসি পাচ্ছে খুব। ব্যাটা সারাজীবন কথা বলে গেলো, কিন্তু আসল কথাটিই বললো না কাউকে। ওর চশমার কি রং ছিলো মনে করার চেষ্টা করেও করতে পারলাম না। হয়তো কোনদিনই সে রং ধরতে পারিনি।
চলবে.......
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০০৬ সন্ধ্যা ৭:৩৯
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×