somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সে দিনগুলো 02

১৪ ই অক্টোবর, ২০০৬ রাত ২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কোন ফরমালিটি ছাড়াই আমরা তিনজন খুব কাছের বন্ধুতে পরিণত হয়েছিলাম। আমাদের পেরিয়ে যাওয়া সময় আর ঘটে যাওয়া ঘটনার মাঝে বুদ্ধদেব বসুর "পুরাণা পল্টনের" ছায়া দেখতে পেতাম কখনো সখনো।

আমার আর সুজার ছিল ভিডিও গেমস খেলার বাতিক। ভুশার সেই শখ ছিল না, এ নিয়ে ওকে অনেক খেপাতাম। সেও সুযোগ পেলে দেড়-হাত নিত আমাদের উপর! আমাদের তিনজনেরই আলাদা কিছু বন্ধু ছিল। আমার স্কুলের রজব আলী- মাস্টার ছিল যার উপাধি, টালটু বরিশাইল্যা- কলেজে সুজার প্রথম দিকের বন্ধু, থেতে মুরাদ- ভুশার এলাকা আর ইশকুলের দোস্ত।

শুরুর দিকে ছয়জন মোটামুটি একই সাথে জুট্টি বাঁধলেও সেটা কেমন করে যেনো তিনে এসে ঠেকলো একসময়।

ক্লাশে একেকজন বিভিন্ন সময়ে ঢুকলেও একসাথে বের হওয়া, একসাথে খেতে যাওয়া, একসাথে ল্যাবে যাওয়া, একসাথে ফাঁকি দেয়া, মধুমিতায় সিনেমা দেখতে যাওয়া, বাদামের প্যাকেট হাতে কমলাপুর স্টেশনের কোন এক প্লাটফরমের শেষ প্রান্তের সবুজ লন পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া, একসাথে রিক্সায় ঘুরতে যাওয়া, রাস্তায় কোন এক সুন্দরী ললনাকে পরষ্পরের "ভাবী" বানানো, এমন কি একসাথে একজনের প্রেমে পড়াও হয়েছে আমাদের!

আমরা তিনজন। একজনের প্রেমে পড়ে একজন লিখেছে কবিতা, একজন লিখেছে গল্প আর একজন জানালা দিয়ে উদাস দৃষ্টি মেলে দিয়ে শুনেছে রবিবাবুর গান। সৌভাগ্যবশতঃ সেই একজনকে সেদিনের পর আর দেখা যায়নি বলেই বন্ধুতটা টিকে গিয়েছিল। নাহলে কী হতো কে জানে!

রিক্সা করে কোথাও যাবার সময় ভাড়া ঠিক করার আগেই তড়াক করে লাফ দিয়ে সুজা উপরে উঠে বসতো, তার দেখাদেখি আমি, আর ভুশা করতো দামাদামি। এইকাজটা ও বরাবরই খুব ভালো পারতো। কখনো আমাদের ওপর ক্ষেপে গিয়ে এই রিক্সা ছেড়ে অন্য রিক্সার সাথে ভাড়া ঠিক করে নিজেই আগে উঠে বসে থাকতো গিয়ে। আমরাও নামবোনা নামবোনা করে একসময় ঠিকই ওর সাথে গিয়ে বসতাম। তবে প্রতিশোধ নিতাম ওর মাংশালো গাত্রে "ফ্রী-হ্যান্ড এক্সারসাইজ" করে।

ল্যাবে হতো মজা। তিনজন তিন গ্রুপের সাথে ল্যাব করতাম। কিন্ত যখনই মেক-আপ খাওয়ার চান্স দেখেছি, আস্তে করে সরে এসে সুজা কিংবা ভুশার গ্রুপে মিশে গেছি। সাথের মুরগীগুলা কাউ কাউ করলেই তিনজনের সমসরে হুমকি, "তাইলে কিন্ত তোরেই বাইর কইরা দিমু"। যে ল্যাব গুলো একা করতে হতো, খবর হয়ে যেতো। আমি কলেজের শেষ দিন পর্যন্ত "মিটার স্কেলের ব্যবহার" শেষ করতে পারিনি। অথচ এটা দিয়েই আমাদের ফিজিক্স ল্যাব শুরু হয়েছিলো।

চোখের সামনে দিনগুলো কেটে যাচ্ছিলো একএক করে। ভদ্র স্যারের কানমলা, সুশীল স্যারের ঝারি, আজমল স্যারের মজার পচানী, মিজান (ভুঁইয়া) স্যারের হুমকি, মুক্তার স্যারের চিবানো ধামকি, মনোরঞ্জন স্যারের "থার্ড বেনচ মিডল ম্যান" টাইপের শকুন দৃষ্টি, সুশান্ত স্যারের ঢিলাঢালা শাষন ছাপিয়ে আমরা তিনজন একদিন নিজেদের আবিষ্কার করলাম বিজ্ঞান কলেজের একরুমে।

এইচ, এইচ, সি পরীক্ষার শেষদিন বের হবার মুহুর্তে বারান্দায় মাথায় চাটি মারাকে কেন্দ্র করে লেগে গেলো সুজা আর জুয়েল রোজারিওর মধ্যে। জুয়েলকে উপুর্যপরী লাথি দিয়ে ফ্লোরে বসিয়ে দিয়েছিলো সুজা। ঠিক পরমুহুর্তেই আবার আমাদের আলোচনায় ফিরে আসে। আমার মাথায় ততক্ষণে অন্য চিন্তা।

ফার্মগেটের ফিরিঙি পাড়ার পোলা জুয়েল। কলেজে কখনো আমাদের তিনজনের কারুর সাথেই ওদের গ্রুপটার তেমন সুসম্পর্ক ছিলো না। তার ওপর সবার সামনে আজকের এই "অপমান"! গেটের কাছের সামনের বারান্দায় আসতেই বুঝতে পারলাম, যা ভেবেছি তার চাইতেও বড় চমক অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

সুজার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বল্লাম, "ব্যাটা! আজ তু বহত পিটেগা"।


[ইটালিক](শেষ হয় নাই কইলাম, এইবারো)![/ইটালিক]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০০৬ রাত ২:৫১
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×