somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিসর্জন জন্ম

১২ ই অক্টোবর, ২০০৬ রাত ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ABORTION DIALOGUES
==================

এক বিশাল হলঘর টিউবলাইটের সাদাটে আলোয় ফ্যাকাসে হয়ে আছে, ঘরের মাঝামাঝি সার সার ঝুলছে কতগুলো সাদাকালো ছবি, শুধু মুখের ছবি, প্রথম দেখে মনে হবে যেন শুন্যে ঝুলছে, ভালো করে দেখলে বোঝা যায় রূপোলি সুতোয় ঝুলছে ছবিগুলো, এক অদ্ভুত অনুভুতি হল ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে, অদ্ভুত এক গা ছমছমে অনুভুতি, বলে বোঝাতে পারবনা ঠিক কেমন, সবকটা ছবিতে একটি করে মেয়ের মুখ, কোন কোন ছবিতে মেয়েটি পেছন ঘুরে দাড়িয়ে আছে, শুধু তার মাথার চুলের ছবি, একদৃষ্টিতেই মনে হল, পৃথিবীর মুখ দেখতে চায়না বলে সে পেছন ফিরে দাড়িয়ে আছে,কিংবা উল্টোটও হতে পারে, সার সার মুখের ছবি,মাথার ছবি ।

দেওয়ালের দিকে চোখ পড়তে দেখলাম হাতে লেখা কতগুলো কাগজ সাঁটানো আছে কাছে গিয়ে পড়ে দেখলাম, বিভিন্ন হাতের লেখায় একটি করে গল্প, অ্যাবরশনের গল্প, ছবির ঐ মুখগুলোর গল্প, পুরো দেওয়াল জুড়ে এরকম পঁচিশ/তিরিশটি মেয়ের গল্প, ছবির ঐ মুখগুলোর গল্প, তাদেরই হাতের লেখায় তাদেরই গল্প ।

এই ছবিগুলো যার তোলা তার নাম, কোলেট কোপল্যান্ড, আমেরিকার মেয়ে, নিজের আলোকচিত্রের প্রদর্শনী নিয়ে কোলকাতায় এসেছিলেন, ঐ ঝুলন্ত ছবিগুলোর একটা ছবির মুখ কোলেটের নিজের। কোলেট,15 বছর বয়েসে ধর্ষিতা হয়ে গর্ভবতী হন, মা বাবা তাকে নিয়ে যান গর্ভপাত করাতে, গর্ভস্থ সন্তানের সাথে সাথে কোলেট হারান আবার মা হবার ক্ষমতা, কোলেট আর মা হতে পারেননি। দেওয়ালে সাটানো একটি কাগজে লেখা কোলেটের ও গল্প ।

সুতোয় ঝোলানো ঐ ছবিগুলো এরকমই সব মেয়ের,যাদের কেও কেও ধর্ষনের পর গর্ভপাতের শিকার, কেও বা নিজের আর্থিক অক্ষমতার জন্যে গর্ভপাত করাতে বাধ্য হন, তো কারো প্রেমিক প্রেম তো করেন কিন্তু সন্তানের দায়িত্ব নিতে অস্বিকার করেন যার ফলে গর্ভপাত ।

কোলেট, ছোটখাটো দেখতে মিষ্টি এক মেয়ে, এক অসম্ভব মিষ্টি হাসি তার মুখে সারাক্ষন, শুধু চোখদুটি ছলছল করে ওঠে যখন সে তার নিজের মা হতে না পারার দু:খ প্রকাশ করে, গভীর এক বেদনার ছাপ তার নীল চোখে, 15 বছর বয়েসে পাওয়া আঘাতকে আজো সে বয়ে বেড়াচ্ছে। যে সব মায়েরা নিজের অনিচ্ছা সত্বেও সন্তান বিসর্জন দিয়েছেন জন্ম দেওয়ার আগেই, তেমনই কিছু মায়ের কথা, তাদের ছবি নিয়ে কোলকাতায় এসেছিলেন কোলেট ।

********************

ঠিক এরকম না হলেও অনেকটা একই রকম এখানকার এক মেয়ের গল্প । সুবর্ণা, বাইশ বছর বয়েসে যে দুই সন্তানের মা, তৃতীয়বার সন্তান সম্ভাবনা হয় যখন তার ছোট ছেলের বয়স মাত্র আট মাস, আগের দুই সন্তানেরই জন্ম হয়েছিল সিজারিয়ান অপারেশনে, সুবর্ণা তৃতীয়বার গর্ভবতী হয় তার নিজের স্বামী দ্বারা ধর্ষিতা হয়ে। সুবর্ণার স্বামীর মত ছিলনা গর্ভপাতে, আরো একটি পুত্রের আকাংখা ছিল তার, কিন্তু সুবর্ণা নিজের ও দুই সন্তানের কথা ভেবে নিজেই যায় গর্ভপাত করাতে, স্বামীটিও ছিলেন সঙ্গে অবশ্য, শারিরীক কিছু জটিলতা ছিলই, কিছুটা হয়ত ডাক্তারের অসাবধানতাও ছিল, ডাক্তার ব্যার্থ হন, প্রাণসংশয় হয় সুবর্ণার, প্রাণ বাঁচানোর জন্যে আবার অপারেশন হয়, কেটে বাদ দেওয়া হয় সুবর্ণার জরায়ু তার অজ্ঞাতে, পরে তাকে জানানো হয়, কিছুটা জটিলতা দেখা দেওয়াতে একটা ছোট অপারেশন করতে হয়, বাড়ি ফিরে আসার পরে সুবর্ণা জানতে পারে তার অঙ্গহানির কথা, মানসিক ভারসাম্য হারায় সুবর্ণা । সুবর্ণার বয়স তখন বাইশ ।

দীর্ঘকালের চিকিত্সায় কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠে সুবর্ণা,হয়ত বেঁচে থাকার প্রবল আকাংখায় কিংবা সন্তানের মায়ায়। চেতনে অবচেতনে আজো সে বয়ে বেড়ায় সেই কষ্টকে, নিজের স্বামী কতৃক ধর্ষিতা হওয়ার কষ্ট, গর্ভস্থ সন্তানকে জন্ম দেওয়ার আগেই মেরে ফেলার কষ্ট, নিজের অঙ্গহানির কষ্ট ।

********************

রুহিনা, ছোটবেলা থেকেই মায়ের হাত ধরে কাজ করতে আসত পাশের বড়বাড়িতে, ঐ বাড়িতে কাজ করেই সে বড় হয়, একদিন তার বিয়েও হয়ে যায়, কিন্তু ছ'মাসের মাথায়ই সে ফিরে আসে তার মায়ের কাছে, তার বর তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। রুহিনা আবার কাজ করতে থাকে ঐ বড়বাড়িতে। সেই বাড়ির বড়মেয়ে রত্না যখন প্রথমবার সন্তানসম্ভবা হয়, রুহিনা আসে আতুঁড় সামলাতে রত্নার শশুরবাড়িতে (দুজনে প্রায় একই বয়েসী,একসাথেই খেলাধুলো করে বড় হয়েছে), রত্না সন্তানের জন্ম দিতে হাসপাতালে যায়, বেশ কিছুদিন তাকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল, ছেলে কোলে রত্না বাড়ি ফিরে আসে, মাস দুই পরে রত্না বুঝতে পারে রুহিনা সন্তানসম্ভবা । স্বামীর পরে অটল বিশ্বাস রত্নার, স্বামীকেই বলে, রুহিনার বোধ হয় বাচ্চা হবে ! রুহিনাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে রত্না তাকে নিয়ে যায় ডাক্তারের কাছে, ডাক্তার পরীক্ষা করে বলেন, রুহিনার পেটে 3 মাসের বাচ্চা! প্রচুর জেরা করেও রত্না জানতে পারেনা, কে এই সন্তানের পিতা, রুহিনা মুখ বুঝে থাকে, রত্নার শশুরবাড়িরে লোকেরা রত্নাকে বোঝান, এ তোমার বাপের বাড়ির লোক, কি মুখ দেখাবে বাপের বাড়ি গিয়ে? শশুরবাড়ির বদনাম হবে! আংউল উঠবে তোমার স্বামী,ভাশুরের দিকে, কাজেই অ্যাবর্শন করিয়ে দাও। সদ্য মা হোয়া রত্না কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা এই ঘটনা, অশান্তি শুরু হয় রত্নার সংসারে, স্বামী ভাশুর তাকে বাধ্য করেন রুহিনার গর্ভপাতে মত দিতে, রত্নার স্বামী নিজেই নিয়ে যায় রুহিনাকে হাসপাতালে, রুহিনা একটিও কথা না বলে গর্ভস্থ সন্তানকে বিসর্জন দিয়ে আসে, হাসপাতাল থেকে ফেরার পর রুহিনা রাজকীয় আতিথেয়াতা পায় রত্নার শশুরবাড়ির সবার কাছ থেকে, রত্না কাকে সন্দেহ করবে ? স্বামীকে ? ভাশুরকে ? নাকি শশুরকে?! রুহিনার কাছ থেকে রত্না কোনভাবেই কথা বার করতে পারেনি, কে ছিল ঐ সন্তানের পিতা, রত্না কোনদিনই তা জানতে পারেনি, নিজের সংসার বাঁচানোর প্রচেষ্টায় রত্না রুহিনাকে পাঠিয়ে দেয় তার বাড়ি ।

এর পরের ঘটনা আমার জানা নেই, কারণ রত্নারা এখন আর এখানে থাকেনা, রুহিনার কি হল সে কেমন আছে তা জানার ইচ্ছে থাকলেও আমি আর কোন খোঁজ পাইনি ওর ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×