ধর্মের যে একটা প্রচার-প্রসারের বিষয় আছে, এ আর নতুন কি। নিন্দুকের মত শোনাতে পারে, তবে সমব্যথী হলে ধরে নিতে পারেন রস করেই একে আমরা ধর্ম-ব্যবসা বলতেই ভালবাসি। তো ধর্মের যে ব্যবসা তা বাঙালি হিন্দুরা আর করবে কি করে, ব্যবসাটাই যে সে বুঝে কম। হিন্দু ও বাঙালি, দুটোই জন্মসূত্রে হতে হয়- দুর্গার সীমাবদ্ধতার জন্য এইতো মস্ত দুর্ভাগা বিষয়। বাঙালি মুসলমানদের মধ্যেও যারা হিন্দু ধর্মানুসারীদের কাছাকাছি, কোলকাতা-কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক বলয়ে বাঁধা তারাও ব্যবসার অলি-গলি চিনতে পারেন না। (মৃত্তিকাবিজ্ঞানীরা হয়তো মাটির মধ্যে এর কোনো কার্যকারণ খুঁজে পাবেন)। যমুনা পাড়ি দিতে পারলেও চকবাজারে পথ তারা পাবেন না নিশ্চিত। বাগেরহাটের আতিয়ার ভাইকেই এ খোঁচাটাই দিতাম সবসময়। 'এতো বড় ষাটগম্বুজ মসজিদ, বিশাল দীঘি, কালাপাহাড়-ধলাপাহাড় কুমির, তবু তো খান জাহান আলীর নামটা ঠিকমত ফাটাতে পারলেন না'। সিলেটের শাহজালাল-শাহপরান, চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোসত্দামি-আমানত শাহের ধামাকার কাছে খান জাহান আলী কেমন স্লো-আইটেম হয়েই রইলেন। সিলেটিরা তো গণতান্ত্রিক মিথ বানিয়ে ফেলেছেন। 'শাহজালালের সিলেট সদরে যে দল জেতে সেই দলই ক্ষমতায় যায়'। ভোটের বাজারে শাহজালাল তাই একচেটিয়া।
দুর্গায় ফিরে আসি। বাঙালি হিন্দুরা রবীন্দ্রনাথের কথাকে ম্লান করে দিয়ে এখন নানা দেশে আস্তানা গেঁড়েছেন। আমেরিকা-ইউরোপের নানা দেশে দুর্গাপূজাও হচ্ছে। এই লন্ডনেও হচ্ছে প্রায় 30 বছর ধরে। কিন্তু এই প্রথম বাঙালির মা দুর্গা টেমস্ পেলেন। সব সংবাদ মাধ্যমেই ফলাও করে সংবাদটা প্রচার করা হয়েছে। আমি ভাবছিলাম নদী বাঁচাও আন্দোলনের কর্মীরা না বাঙালি-হিন্দুর এই অগ্রগতিতে এসে বাগড়া লাগায়। বিবিসি'র প্রতিবেদক দেখলাম, প্রতিবেদনের শেষ বাক্যে এসে আশংকামুক্ত করলেন। জানালেন, ভয়ের কিছু নেই, এই দুর্গা বায়োডিগ্রেডেবল।
(দুর্গার জন্য দু:খগাঁথা: ওরা স্থায়ীরূপ ভালো বাসে না মা, সবকিছুপচে গলে যাক, তাই চায়।)