somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় আসিফ ফিরে এসো, মৃত্যুঞ্জয়ী হও.........(উৎসর্গঃ আপনাদেরকে যাদের লেখনীর ক্ষমতা আসিফের চেয়েও ক্ষমতাশালী, মাশাআল্লাহ্ )

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

প্রথমেই আসিফের সাথে আমার পরিচয়ের কথাটা বলি।

আমি সামহয়্যার ইন ব্লগ'র সদস্য দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর যাবৎ। যখন সদস্য হয়েছিলাম, মনে করেছিলাম এটা হয়তো কোন ভ্রমণ বা মজার কোন গ্রুপ হবে। কিন্তু প্রথম প্রথম যখন ব্লগে ঢুকতাম তখন দেখতাম কি সব সাহিত্য মার্কা লেখা লিখা থাকে। ভালো লাগতো না। তাই ব্লগে আর ঢুকা হতো না। মাঝে মাঝে আমার মেইল এর ইনবক্সে দেখতাম সামহয়্যার ইন ব্লগ থেকে বিভিন্ন ইভেন্টের খবরগুলো দিয়ে আমাকে মেইল করা হয়েছে। আমি করতাম কি, কোন প্রকার দেরি না করে এই মেইলগুলোই প্রথমে মুছে ফেলতাম। তারপর দীর্ঘ সময় চলে গিয়েছে। আমি একটা এন্ড্রয়েড মোবাইল কিনলাম। একদিন রাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি এমনিতেই মোবাইল থেকে সামহয়্যার ইন ব্লগ এ লগইন করি। তখন বিভিন্ন ব্লগ পড়ে আমার খুব ভালো লেগে যায়। তারপর নিয়মিতই কম্পিউটার থেকে ব্লগে লগইন করতাম। একদিন দেখি একটি পোষ্টের মন্তব্যের জায়গাতে অনেক গালাগাল দিয়ে লেখককে নাজেহাল করা হচ্ছে (আমি তখনও জানতাম না এটা ব্লগে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া)। আমার দেখে খুব খারাপ লাগলো। আমি এর প্রতিবাদ করলাম, যে কেন এখানে পরিবেশ খারপ করা হচ্ছে? তখন দেখি উল্টো আমাকেও গালাগাল দিয়ে আমার মন্তব্যের প্রতিউত্তর দিলো। আমি আমার পরবর্তী মন্তব্যে মডারেটরের সাহায্য চাইলাম এই মন্তব্যকারীকে সাবধান করার জন্য (আমি তখনও জানতাম না যে, এখানে আসলেই মডারেটররা সব কিছু পর্যবেক্ষণ করেন)। তারপর একদিন কি মনে করে আসিফ এর একটি পোষ্ট পড়লাম ব্লগে। তাকেও দেখি বিরামহীনভাবে গালাগালি করা হচ্ছে। কিন্তু আসিফের কোন মন্তব্য চোখে পড়েনি। তখন ব্লগটির উপরের দিকে গিয়ে দেখি তিনি লিখে রেখেছেন, যত ইচ্ছা গালাগালি পাঠাতে পারেন, তারনীচে তার ইমেইল ঠিকানাটি দেয়া। আমি তখন বুঝতে পারলাম "তিনি মনে হয় জনস্বার্থ বিরোধী লেখা সবসময় লিখেন, তাই উনার এসব মন্তব্যে কোন প্রতিক্রিয়া হয় না।" পরে মাঝেমধ্যে সামহয়্যার ইন ব্লগ এর বিভিন্ন ইভেন্টে যোগ দেই আর অন্যান্য ব্লগারের কাছে আমার জিজ্ঞাসার জবাবে জানতে পারি, আসিফ মহিউদ্দিন একজন নাস্তিক এবং উনাকে একবার নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরাও ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে তাকে আমি সেভাবেই চিনি এবং আমি কখনো তার ব্লগে আর ঢুকিনি। এই হলো তার সাথে আমার পরিচয়ের পর্ব।

প্রিয় আসিফ, সেদিন সন্ধ্যায় যখন ব্লগে লগইন করি, দেখি একটি পোষ্ট, ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন ছুরিকাহত। আমার কেন জানি মনে হলো এটা মনে হয় সেই ব্লগারটি, যাকে আমি নাস্তিক হিসেবে চিনি। তারপর ব্লগার "অন্যমনস্ক শরৎ" এর একটি পোষ্টে ঢুকে দেখলাম আপনার ছবির সাথে এই ছবি সম্পুর্ণরূপে মিলে যাচ্ছে। আমি নিশ্চিত হলাম এটা আপনি। মনের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো। সাথে সাথে দেখলাম সামহয়্যার ইন ব্লগ'র প্রথম পাতাটি ভরে উঠলো আপনার বিরুদ্ধে লিখায় এবং মন্তব্যের ঘরগুলো আপনার মৃত্যু কামনা এবং কারা আপনার উপর হামলা করতে পারে এগুলো নিয়ে আলোচনায় মুখর।

পরের দিন, বিকাল সাড়ে তিনটায় ব্লগে প্রবেশ করতেই দেখি, শাহবাগে আপনার উপর হামলার প্রতিবাদে মানব বন্ধন এর আয়োজন করা হয়েছে। আমি সাথে সাথে ফেইসবুকে গোয়িং দিয়ে বের হয়ে পড়লাম। আমার একঘন্টা লাগলো পৌঁছাতে। সেখানে ছিলাম অনেক্ষণ আর দেখলাম কে কি বলছে। যদিও আমি কাউকে চিনিনি এবং আমাকেও কারো চিনার কথা না। আমি আমার মোবাইলে কয়েকটা ছবি তুললাম।

আসিফ, আমি পরের দিন আবার সামহয়্যার ইন ব্লগ এ লগ্ইন করলাম। একটি পোষ্টের সূত্রধরে আপনার ব্লগে প্রবেশ করলাম। তারপর ক্লিক করে আপনার "পবিত্র রমজান মাস" সম্পর্কে লিখা একটি পোষ্টে প্রবেশ করলাম। বিশ্বাস করুন, আমি রাগে, ক্ষোভে, দুঃখে আপনার পোষ্টের শেষ পর্যন্ত যেতে পারিনি। আমি চিন্তা করছি, কেউ একজন সৃষ্টিকর্তাকে অবিশ্বাস করতে পারে (নাউযুবিল্লাহ, আল্লাহপাক আমাকে ক্ষমা করুন), তার ভুল শিক্ষা কিংবা বিরূপ পরিবেশ পরিস্থিতির কারনে। কিন্তু তাই বলে এগুলো লিখতে পারে? আমি এতোটাই কাঁদছিলাম যে, আমি কম্পিউটার বন্ধ করে দিলাম আর আমার মোবাইলে গতকাল তোলা মানব বন্ধন এর ছবিগুলো মুছে ফেললাম।

এবার আমার লেখার মধ্যে মনোনিবেশ করতে চাই :-

তখন ১৯৯৩-৯৪ সন হবে হয়তো। আমি ৯ম অথবা ১০ম শ্রেণীর ছাত্র। আমাদের বাসায় দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকা রাখা হতো। ইনকিলাব পত্রিকাটি তখন অনেকটা বিএনপি ও ইসলাম ঘেষা হিসেবে পরিচিত ছিল তখন। আমি সবসময় উপ-সম্পাদকীয়টি পড়তাম মনযোগ দিয়ে। হঠাৎ একদিন একটি উপসম্পাদকীয় লেখা দেখে চমকে উঠলাম। লেখাটি ছিল "দুঃখিত ড: আহমদ শরীফ"। কে লিখেছিলেন এই মুহুর্তে আমার মনে পড়ছে না। আমি লেখাটি পড়ে জানতে পারলাম ড: আহমদ শরীফ একজন নাস্তিক ছিলেন এবং তিনি মারা গিয়েছেন। তাই উক্ত উপ-সম্পাদকীয় এর লেখক দু:খ করে লিখেছেন, "আমার তীব্র ইচ্ছা ছিলো আপনার বাসায় গিয়ে আপনার সাথে একান্তে কিছুক্ষণ কথা বলবো, আর সৃষ্টিকর্তা এবং ইসলাম সম্পর্কে আপনার ভুলগুলো শুধরে দিবো। কিন্তু তার আগেই আপনি চিরবিদায় নিলেন।"

আমরা যারা কমবেশি ইসলামকে জানি বা বুঝি, তারা সবাই প্রিয় নবী (সাঃ) এর চলাচলের রাস্তায় কাঁটা বিছানো বুড়ির কথা আর বোঝা নিয়ে পালানো বুড়ির কথা শুনেছি। তারপর এটাও জানি, মক্কা বিজয়ের পর তিনি কিভাবে শত্রুদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।

আজকে যখন আসিফ মহিউদ্দিন ছুরিকাহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন, তখন আমাদের অনেকেই (যারা ধর্মকে ভালোবাসেন আর ধর্মের অবমাননা সহ্য করতে পারেন না) এই হামলার পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিচ্ছি কিংবা এটাও বলছি তিনি কেন এখনো বেঁচে আছেন? তিনি কেন মারা গেলেন না? যারা এর পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিচ্ছেন, আমি তাদের মন্তব্যগুলোও মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। তারাও যথেষ্ট পরিমাণ ভালো এবং অত্যন্ত শক্তিশালী ব্লগার। আমি দেখেছি, আসিফ যে ভাঘায় আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল (সাঃ) কে কটাক্ষ করে লিখেন (নাউযুবিল্লাহ) তারাও ঠিক সে ভাষায় সেগুলোর উত্তর দেন। তাই আমি আজকে আশাবাদী হয়েই এই লেখা লিখছি, আপনারা কি পারেননা, একগুচ্ছ ফুল হাতে করে নিয়ে আসিফের বিছানার পাশে হাজির হতে? আপনারা কি পারেন না আসিফ কে ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে এনে আলোর পথ দেখাতে? এখনই কি সেই উপযুক্ত সময় নয় তাকে বুঝানোর? তাহলে কেন আপনার বসে আছেন? কিসের অপেক্ষায় ? আমাদের বন্ধুদের সাথে কি আমাদের মতবিরোধ হয় না কিংবা পরিবারে আমাদের ভাই-বোনের মাঝে মতবিরোধ হয় না? তাই বলে কি আমরা তাদেরকে কোন বিপদের মুখে পড়ে যেতে দেখে বসে থাকি নাকি তাকে উদ্ধার করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ি? তাহলে আসিফকে বিপদের মধ্যে দেখেও কেন আমরা বসে আছি? অনুগ্রহপূর্বক আপনারা আপনাদের হৃদয়ের দরজা খুলে দিন, আপনারা ভুলে যান আসিফ কি নিয়ে লিখতো। আপনার এটা ধরে নিন তিনিও একজন মানুষ এবং ভুলত্রুটি তিনি করতেই পারেন। হয়তো তার ভুলগুলো একটু অন্য রকম। কিন্তু তাতে কি, আমিতো আপনাদের মাঝে আসিফের ভুলগুলো শুধরে দেয়ার মতো ক্ষমতা দেখেছি। অনুগ্রহপূর্বক আপনার আর বসে থাকবেন না, অনুগ্রহপূর্বক এটা আর করবেন না।

আসিফ, আপনার কাছে সবিনয়ে জানতে চাই, যারা আপনাকে মুক্ত চিন্তার অধিকারী বলে আল্লাহ্ ও তাঁর প্রিয় রাসুল (সাঃ) এর বিরুদ্ধে লিখতে সাহস যোগাচ্ছে, আপনার উপর হামলার প্রতিবাদে টিভি চ্যানেলে টক শো হচ্ছে, তারা কি কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে যখন বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কটুক্তি (ফেইসবুকে) করায় পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে মামলা দিয়েছিলো মুক্ত চিন্তার কথা বলে প্রতিবাদ করেছিলো?

"যখন পৃথিবীতে এসেছিলে তুমি, কেঁদেছিলে তুমি, হেসেছিলো ভুবন, এমন জীবন করিতে হইবে গঠন, মরনে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভুবন"

হে প্রিয় আসিফ মহিউদ্দিন, অনুগ্রহপূর্বক ফিরে আসুন, মৃত্যুঞ্জয়ী হোন।

১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফিরে দেখা - ২৭ মে

লিখেছেন জোবাইর, ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:০৪

২৭ মে, ২০১৩


ইন্টারপোলে পরোয়ানা
খালেদা জিয়ার বড় ছেলে, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন বেনজীর আহমেদ ও আমাদের পুলিশ প্রশাসন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪২



বৃষ্টিস্নাত এই সন্ধ্যায় ব্লগে যদি একবার লগইন না করি তাহলে তা যেন এক অপরাধের পর্যায়েই পরবে, যেহেতু দীর্ঘদিন পর এই স্বস্তির বৃষ্টির কারণে আমার আজ সারাদিন মাটি হয়েছে তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×