somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেমস

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৬ রাত ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের সংগীতের আনত্দর্জাতিক তারকা খ্যাতিতে সবার উপরে ছিলেন রুনা লায়লা। ভারতীয় চলচ্চিত্রে রুনা ছিলেন আমাদের একমাত্র প্রতিনিধি। পরবর্তীতে অনেকেই সে পথে পা বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তবে তাতে সাফল্যের সংখ্যা ছিল অনেক কম। নতুন করে সেই ভাবনাতে দোলা দিয়েছেন তরুণদের কাছে রকগুরু হিসেবে পরিচিত জেমস্। ইতোমধ্যেই কলকাতা, বোম্বে কিংবা ঢাকায় জেমস্-এর পরিচিতি ঘটেছিল গ্যাংস্টার ছবির ভিগি ভিগি গানের মধ্য দিয়ে। এই গানটির টপচার্টে স্থান করে নিয়েছিল খুব সহজে। তখন সমালোচকরা অনেকেই বলেছিলেন এটিই হচ্ছে জেমস্-এর শেষ হিন্দি গান। কিন্তু গানটির অসম্ভব জনপ্রিয়তা সমালোচকদের হিসাব-নিকাস পাল্টে দেয়। প্রথম ছবিটির প্রযোজক মহেশ ভাট তার পরবর্তী ছবিতেও অন্যতম প্রধান গানটিতে জেমস্-কে প্লেব্যাক করার জন্য ডাকেন। তখন অনেকেই ভেবেছিলেন এটি হয়তো প্রথমটির মতো আলোড়ন তুলবে না। তবে দাবার ছকে আবারও চেক দিলেন জেমস্। নতুন ছবির গান রিলিজ হওয়ার পর বোম্বে জুড়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন জেমস্ তার 'ও লামহে' ছবির নতুন গানের মধ্য দিয়ে। গানটি হচ্ছে 'চল চলে আপনা ঘর'। প্রথমটি মৌলিক গান না হলেও এই গানটি লিখেছেন সৈয়দ কাদরি, তাই এটি একটি মৌলিক গান এবং জেমস্-এর গাওয়া প্রথম হিন্দি মৌলিক গান। এবারও গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন প্রীতম। তবে আগের ছবির পরিচালক অনুরাগ বসু নয় এই ছবিটি পরিচালনা করেছেন মোহিত সুরী। গত মার্চ মাসে জেমস্ এই গানটি গাওয়ার জন্য মহেশ ভাটের প্রোডাকশন কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। এপ্রিলে গানটি রেকর্ডিং করা হয়। গেল সপ্তাহে গানটির টিভি প্রোমো শুরু হয়। ইতোমধ্যেই গানটি শ্রোতাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করছে। বলা যায় আমাদের রক শিল্পী জেমস্ আবারও বলিউড মাতানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জেমসের পুরো নাম ফারুক মাহফুজ আনাম। নওগাঁ জেলার বড়হাট্টি গ্রামের এই ছেলেটি যেদিন জন্ম নেন, প্রকৃতি সেদিন ধারণ করেছিল রুদ্রমূর্তি। আকাশে দলাপাকানো কালো কালো মেঘ, বিজলীর তীব্র ঝিলিক আর উত্তাল ঝড়ো হাওয়া কি জানতো; এই নবজাতক একদিন গানে গানে ঝড় তুলবেন দেশ ছাড়িয়ে দেশানত্দরে? অবশ্য জেমসের বাবা মোজাম্মেল হক এবং মা জাহানারা খাতুন কখনো চান নি ছেলে সঙ্গীতশিল্পী হোক। কারণ তাদের পরিবারের কেউ তো গান-বাজনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না আগে। মা-বাবা চেয়েছিলেন ছেলেকে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই গিটার হাতে গানের সঙ্গে যার সখ্যতা, তাকে কি লেখাপড়ায় ডুবিয়ে রাখা যায়? গ্রামের বাড়ি নওগাঁয় হলেও জেমসের শৈশব কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রামের সমূদ্রপাড়ে। চট্টগ্রামে ব্যান্ডসঙ্গীতের চর্চাটা শুরু হয় অনেক আগে। ছোটখাট অনেক ব্যান্ড-ই তখন সক্রীয় ছিল। জেমস স্কুল পালিয়ে বসে থাকতেন বিভিন্ন ব্যান্ডের প্র্যাকটিস প্যাডে। অপার মনোযোগ দিয়ে দেখতেন মিউজিশিয়ানদের অনুশীলন। টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে ক্লাস এইটে পড়ার সময় কিনে নেন একটি হাওয়াই গিটার। সেই গিটার নিয়ে তিনি এতোই নিমগ্ন রইলেন যে, স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষাটাই আর দেয়া হলো না। ফলে তার লেখাপড়ার পাঠ চুকে যায় সেখানেই। ছেলের উচ্ছন্নে যাওয়া সহ্য হয় কোন বাবা-মা'র, কিন্তু যতোই তারা চাপাচাপি করেন পড়ালেখা করার জন্য, ততোই জেমস বেঁকে বসেন। শেষে একদিন বাবা-মার অবাধ্য হয়ে সঙ্গীতের নেশায় ঘর ছাড়েন। নাওয়া-খাওয়ার ঠিক-ঠিকানা নেই, সারাদিন গান আর গান। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে তারই মতো কিছু সঙ্গীতপাগল তরুণ মিউজিশিয়ানদের গড়ে তোলেন একটি ব্যান্ড, নাম 'ফিলিংস'। ব্যান্ডটির ভোকালিস্ট আর গিটারিস্ট জেমস। কয়েকটি ঘরোয়া কনসার্টে পারফর্ম করেই পুরো চট্টগ্রামে ঝড় তোলে ফিলিংস। আমন্ত্রণ আসে ঢাকা থেকেও। ঢাকার একাধিক কনসার্টে পারফর্ম করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ফিলিংস। বের হয় তাদের সেল্ফটাইটেলড ডেবু্য অ্যালবাম। 1995 সালে সাউন্ডটেক থেকে রিলিজ পায় ফিলিংস-এর দ্বিতীয় অ্যালবাম 'নগরবাউল'। আজকের জেমসকে তখনো মানুষ আলাদাভাবে চিনতে শুরু করেনি। ফিলিংসের মধ্যেই মিলেমিশে ছিল তার অসত্দিত্ব। 1996 সালে একই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয় জেমসের সলো অ্যালবাম 'দুঃখিনী দুঃখ করো না'। নতুন পরিচয়ে জেমসকে আবিষ্কার করলেন শ্রোতা-দর্শক। আধুনিক বাংলা গানে এটা যে এক নতুনধারা, এমন আবেগ আর দরদ তো খুব কম শিল্পীর গানেই খুঁজে পাওয়া যায়। ব্যস, দেশের দিকে দিকে রটে গেল নগরীতে এক ক্ষ্যাপা বাউল এসেছে। নগরবাউল খেতাবটি যুক্ত হলো জেমসের নামের আগে। 1998 সালে জেমস তার ব্যান্ড ফিলিংসের নাম পাল্টে রাখলেন 'নগর বাউল'। ফান্টি, বাবু, জুয়েল ও আসাদকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলা 'নগরবাউল' ব্যান্ড অল্পসময়েই অর্জন করে তুমুল জনপ্রিয়তা। 2001 সালে বের হয় নগরবাউলের ডেবু্য অ্যালবাম 'দুষ্ট ছেলের দল'। আর জেমসের সলো ক্যারিয়ার...? সেটা তো একটু একটু করে পেঁৗছে গেছে ঈর্ষণীয় উচ্চতায়। প্রতি বছরই বের হচ্ছে তার একাধিক সলো অ্যালবাম। আর বছরে গড়ে 10টিরও বেশি মিঙ্ড অ্যালবাম। পাশাপাশি চলছে দেশ-বিদেশের অসংখ্য কনসার্টে মনকাড়া পারফর্মেন্স। যেখানেই জেমস যান, তারুণ্যের বাঁধ ভাঙা উল্লাস-উচ্ছাস জমে ওঠে তাকে ঘিরে। দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে জেমস এখন পেঁৗছে গেছেন মুম্বাই ফিল্মডোম বলিউডে। আর কতোদূর যেতে চান তিনি, ডিঙিয়ে যেতে সাফল্যের কোন অচীন পাহাড়! এ কথা অনস্বীকার্য যে, জেমস গড়ে তুলেছেন তার গানের একটা আলাদা প্যাটার্ন। নিজের একটি আলাদা স্বকীয়ধারা গড়ে তোলা প্রসঙ্গে জেমস বললেন, আমি গান করি আমার নিজের রুচি ও ভালোলাগা থেকে। আমি মনে করি প্রতিটি শিল্পীর শিল্পচর্চার নিজস্ব একটা ধরণ থাকা উচিত। যেমনঃ যে কোন রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলে কাউকে আলাদাভাবে বলে দিতে হয় না যে, এটা রবীন্দ্রনাথের গান। জীবনানন্দের কবিতার দু'টো লাইন পড়লেই যে কেউ বুঝতে পারে, এটা জীবনানন্দের লেখা কবিতা। আমি অবশ্য এতো উঁচু মাপের কেউ নই। আমি নিতানত্দই একজন সাধারণ গায়ক মাত্র। আমার এতো ক্ষমতাও নেই। আমার গানের যদি কোনো স্বকীয়ধারা গড়ে ওঠে, সেটা গান করতে করতেই একসময় দাঁড়িয়ে গেছে। এই ধারা আদৌ টিকে থাকবে কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে। মুম্বাইয়ে গান করে আসার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে জেমস বললেন, মুম্বাইতে কাজের পরিবেশ দেখে আমি মুগ্ধ। ওরা সাংঘাতিক প্রফেশনাল। আর প্রফেশনাল বলেই ওদের কাজে পারফেকশন এসেছে। ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ওরা নিঃসন্দেহে এগিয়ে। তাছাড়া ওদের মিউজিশিয়নরা সাংঘাতিক দক্ষ। প্রফেশনাল দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই এতোটা দক্ষ হয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতে মুম্বাইতে নিয়মিত গান করতে চান কিনা জানতে চাইলে জেমস বললেন, আমি তো চাই-ই। ওরাও চাইছে আমি মুম্বাইতে নিয়মিত প্লে-ব্যাক করি। তাই বলে মুম্বাইতে স্থায়ী হবার কোন ইচ্ছে আমার নেই। কারণ আমি এ দেশের সনত্দান। আমার শরীরের ভাঁজে ভাঁজে মিশে আছে এ মাটির গন্ধ। আমি এই নাঁড়ির টানকে কখনো ছিন্ন করতে পারবো না।
মোর্শেদ নাসের টিটু
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×