কিছু মানুষ আছে চেহারায় সব সময় সুখী সুখী ভাব। কেউ আছে অনেক কষ্টেও হাসতে জানে... হয়তো এ ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা বলে। আর কিছু মানুষ আছে যারা বুকে প্রচন্ড কষ্ট নিয়ে নিশব্দে কেবল চাহনীতে তার বহিপ্রকাশ ঘটায়। এটি খুবই কষ্টকর আমার জন্য। কেনো জানি এই শেষ বিষয়টি প্রচন্ড নাড়া দেয় আমাকে। কেউ অসহায় ভাবে তাকালে কিংবা চোখে মুখে অসহায়ত্ব প্রকাশিত হলে আমার খুব খারাপ লাগে।
যেমন ধরেন একটি রিকশাওয়ালা দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ একটি পুলিশ এসে তার রিকশার হাওয়া ছেড়ে দিলো চাকায় পাংচার করে দিয়ে... রিকশাওয়ালার কিন্তু কিছুই করার নেই। পুলিশের সঙ্গে তো আর মারামারি করবেনা। বেচারা অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কি করার আছে ? মনে মনে চিন্তা করুন তো এমন একটি অসহায় মুখ।
মনে পড়ে আজ থেকে প্রায় সাত বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একদল বন্ধু সড়ক পথে নেপাল গিয়েছিলাম বেড়াতে। কাকরভিটা থেকে কাঠমান্ডুর দীর্ঘ পথে অনাকাঙ্খিত একটি ঘটনা ঘটে। আমাদের ভাড়া করা বাসের ড্রাইভার অতিরিক্ত ইনকামের আশায় একটি লোক ও তার 10/12 বছরের কন্যাকে গাড়িতে তুলে সে। যা যাত্রা শুরুর কিছু পরে টের পাই আমরা। ততক্ষনে রাত হয়ে গেছে । এ নিয়ে হৈ চৈ এর এক পর্যায়ে স্থানীয় পুলিশ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করে ড্রাইভারের ওই লোকটিকে গাড়ি থেকে নেমে যেতে বাধ্য করে। তাদের গাড়ি থেকে নামার সময় ছোট্র মেয়েটির যেই ভয়ার্ত.... অসহায় দৃষ্টি আমি দেখেছি তা আমিও আজো ভুলতে পারিনি। মাঝে মধ্যে এক ধরনের অপরাধ বোধও কাজ করে আমার মধ্যে যে ওদের না নামালেও হতো। কিন্তুঅন্য দেশ হওয়ায় তাদের পুলিশের পরামর্শ উপেক্ষা করার সাধ্য আমাদের ছিলোনা।
কিন্তু এর পর নিরাপরাধে কাঠমান্ডু পৌছলাম.. বেড়ালাম..ঢাকায় ফিরলাম... আজ এতো বছর পরেও আমার মনে সেই কিশোরীর অসহায় মুখখানি। মনে মনে বলি.. তুমি যেখানেই থাকো ভাই...ক্ষমা করে দিও আমাদের। আমাদের যে কিছুই করার ছিলোনা তোমার জন্য।