somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেন্ড সার্টিফিকেটে সর্বকনিষ্ঠ - আমাদের শিশির

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাত্র ১৩ বছর বয়সে জেন্ড সার্টিফিকেট অর্জন করে বিশ্বের কনিষ্ঠতম প্রোগ্রামার হিসেবে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছেন শিশির চক্রবর্তী। শিশির। জন্ম ১৯৯৯ সালের ২৫ জুন। ৫ বছর বয়সেই তার খেলার সঙ্গী কম্পিউটার। একমাত্র ছেলের এমন কৌতূহল দেখে তাকে কোলে নিয়েই বাসায় কম্পিউটারে কাজ করতেন মা শিখা চক্রবর্তী। শিশির এখন ম্যাপল লিফ স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ফার্স্ট বয়।
বাবা একটি ওষুধ কোম্পানির জ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক বিক্রয় ব্যবস্থাপক। মা শিখা চক্রবর্তী আইবিসিএস-প্রাইমেক্সে কর্মরত। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান শিশির। শুরুতে কম্পিউটার গেমসের প্রতি দারুণ আগ্রহ ছিল তার। মাস ছয়েকের মধ্যেই কল অব ডিউটির মতো গেম যেন ওর কাছে নস্যি হয়ে গেল। কম্পিউটারে গেম খেলতে খেলতে এক সময় ইন্টারনেটের অলিগলিতে প্রবেশ করতে শুরু করেন শিশির। এরপর ওয়েবসাইট তৈরি বা ওয়েবসাইটের কর্মপদ্ধতির বিষয়গুলো নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয় তার।
বছর পাঁচেকের মধ্যে গেমসের উন্মাদনা ছাপিয়ে শিশিরের আগ্রহ জন্মে সার্চ ইঞ্জিন গুগল, ইয়াহু ও ফেসবুকের মতো সামাজিক নেটওয়ার্কের প্রতি। শিশিরের মনে বারবার ঘুরপাক খেতে শুরু করে কীভাবে কাজ করছে এই ওয়েবসাইটগুলো। আর সন্তানের এমন কৌতূহলের খোরাক মেটাতে ২০১১ সালের মার্চে প্রোগ্রামিং শেখার জন্য আইবিসিএস-প্রাইমেক্সে ভর্তি করা হয় শিশিরকে।
আইবিসিএস-প্রাইমেক্সের শিক্ষক মাসুদ আলমের কাছ থেকে শিশির জানতে পারে বিশ্বব্যাপী ওয়েসসাইট এবং ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে পিএইচপি একটি স্বীকৃত এবং বহুল ব্যবহৃত প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ। ফেসবুক বা ইয়াহুর মতো সাইটগুলোতেও ব্যবহার করা হয়েছে এই প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ।
পিএইচপির বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করলেন শিশির। কিন্তু ক্লাসের পড়ার চাপে নির্দিষ্ট তিন মাসে কোর্সটি শেষ করা হয় না। ফলে পরীক্ষা শেষ করে ফের বাদ পড়া ক্লাসগুলো শেষ করে।
এগিয়ে চলা :এরই মধ্যে মাত্র ১৪ বছরে বয়সে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পিএইচপির জেন্ড সনদ অর্জন করে বিশ্বজুড়ে তাক লাগিয়ে দেয় অভিনেত্রী মিতা নূরের ছেলে শেহাজদ নূর তাউস। খবরটি যেন চাঙ্গা করে তোলে শিশিরকে। এবার সে মনস্থির করে পিএইচপির সনদের জন্য পরীক্ষা দেওয়ার। শিক্ষক মাসুদ আলমের সঙ্গে কথা বলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করেন। ষষ্ঠ শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা শেষে ২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ। অবশেষে গত বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর পিএইচপি ৫.৩ সার্টিফিকেশন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। দেড় ঘণ্টার পরীক্ষা শেষ হয় ৪৫ মিনিটেই। সাফল্যের সঙ্গে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শেহজাদ এখন শুধু বাংলাদেশেরই নয়, বিশ্বের কনিষ্ঠতম জেন্ড সার্টিফায়েড ইঞ্জিনিয়ার [জেড সিই]।
বর্তমানে দেশের জেড সিই'র সংখ্যা মাত্র ৫২ জন। আর বিশ্বব্যাপী এ সংক্রান্ড জেন্ড সার্টিফায়েড ইঞ্জিনিয়ার আছেন ৫ হাজারের কিছু বেশি। কনিষ্ঠতম জেডসিই সার্টিফিকেট তাই শিশিরের জন্য এক বিশাল অর্জন।
এমন অর্জন সম্পর্কে শিশির জানান, 'খেলতে খেলতে, অনেকটা মজা করতে করতে।' পিএইচপি আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। আমি আরও প্রোগ্রামিং শিখতে চাই। পড়ার পাশাপাশি চেষ্টা করছি নতুন নতুন প্রোগ্রাম শেখার।
শিশিরের দিনরাত্রি : শিশির, প্রোগ্রামিংয়ের পাশাপাশি বিদ্যালয়েও সেরা। ম্যাপল লিফ স্কুলের সপ্তম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। শিশির কেবল বাংলাদেশেরই নয়, বিশ্বের কনিষ্ঠতম জেন্ড সার্টিফায়েড ইঞ্জিনিয়ার [জেড সিই]। এত অল্প বয়সে জেন্ড সনদ পেয়েও সবকিছু পাওয়া হয়ে গেছে বলে ভাবছেন না শিশির। বর্তমানে তিনি জেন্ড ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে কাজ শিখছেন আইবিসিএস-প্রাইমেক্সে। নিজের মেধা আর শ্রম দিয়ে প্রোগ্রামিং জগতে আরও একটি রেকর্ড গড়তে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই প্রোজেক্ট কনটেন্ট-ভিত্তিক পত্রিকার জন্য ব্যবহৃত একটি সিএমএস অ্যাপস তৈরি করেছেন শিশির। অচিরইে ফেসবুকের মতো বার্তা আদান-প্রদানে সক্ষম একটি ইন্টারঅ্যাক্টিভ মোবাইল অ্যাপস তৈরিতে মনোযোগ দেবেন শিশির। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আগ্রহ রয়েছে শিশিরের। আর তা না হলে বুয়েটে সিএসই বিভাগে পড়তে চান তিনি। সবসময়ই তার মাথার মধ্যে ঘুরছে নতুন কিছু করার। ঠিক এমন ধরনের কোনো অ্যাপ্লিকেশন সে বানাতে চায়, যা আগে কেউ করেনি। কথা প্রসঙ্গে শিশির বলেন, 'আমি একদিন বিল গেটস বা মার্ক জুকারবার্গের মতো ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়াতে চাই।' আমরা বিশ্বাস করি, শেহজাদের মেধা আর শ্রম তাকে নিয়ে যাবে তার লক্ষ্যের দোরগোড়ায়। ছেলের সফলতা সম্পর্কে মা শিখা চক্রবর্তী জানান, 'ওর ইচ্ছাই আমাদের ইচ্ছা। আসলে এখন আর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারই সব নয়, প্রযুক্তিতেও অনেক অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। সে দেশের জন্য আরও গৌরব বয়ে আনবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।'

এ ধরনের আরও জানা অজানা অসংখ্য ফিচারের ছড়াছড়ি এখানে

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×