somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

[গাঢ়]বিরানপুরের সহযাত্রী-3ঃ যুগল দাশ[/গাঢ়]

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০০৬ রাত ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিরানপুর ছোট্ট একটি গ্রামের নাম- যা বাংলাদেশের শাশ্বত গ্রামের প্রতীক। প্রতিদিনের অভাব, অনাহার এবং দারিদ্রতার সাথে সংগ্রাম করেও বিরানপুর গ্রামের শব্দ-সৈনিকরা লিখে যাচ্ছেন ছড়া, কবিতা, গল্প, উপন্যাস কিংবা গান। আমার দৃষ্টিতে এইসব শব্দ-সৈনিকরাই বিরানপুরের সহযাত্রী। তাঁরা বেঁচে থাকবেন দেশের সিংহভাগ মানুষের প্রাণে। কিন্তু অনেকের কাছেই হয়তো থাকবে অজানা অচেনাই তাদের জীবন। আমার শ্রদ্ধা প্রতিনিয়ত নত হয় সেইসব কবি-সাহিত্যকদের প্রতি। এই পর্বে আমি কবি, সহযাত্রী যুগল দাশের কথা বলবো।।

উচ্চ শিক্ষার্থে যখন ময়মনসিংহ যাই তখনই পরিচয় ঘটে কবি যুগল দাসের সাথে। আগেও বলেছিলাম- ময়মনসিংহে থাকাকালীনই আমার লেখার পূর্ণতা পায়। আর এ পূর্ণতার পিছনে ছিলেন আমার সহযাত্রী এক ঝাঁক তরুণ কবি বন্ধু এবং কিছু সিনিয়র কবির বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনাই ছিলো প্রধান। যুগল দাশ ছিলেন সিনিয়র কবিদের মধ্যে অন্যতম কবি। যুগল দাশ-এর পরিচয় আমার উচ্চশিক্ষার্থেছাত্রাবাসে থাকাকালীন। ডাক বিভাগের পিয়ন ছিলেন তিনি। আমাদের রুমে রুমে চিঠি বিলি করতেন। চাকরীর সামান্য বেতন, সংসারের অভাব কোনোদিনই তাঁর কাব্য প্রতিভাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। এর পরিচয় পেতাম যখন সাহিত্য আসরে তাঁর ক্ষুরধার লেখা কবিতা শুনতাম। অসুস্থ কবিকে একবার দেখতে গিয়েছিরাম তাঁর বাসায়। তাঁর সাংসারিক অবস্থার দৈন্যতা আমাকে কষ্ট দিয়েছিলো। অবশ্য সহযাত্রী কবি বন্ধুদের ভালোবাসায় সেবার সেরে উঠেছিলেন তিনি। কিছুদিন আগে খবর নিয়ে জানলাম- বয়স হয়েছে, বেঁচে আছেন এবং লিখছেনও তিনি।

কবি যুগল দাশ -এর জন্ম 1364 সালের 22 অগ্রহায়ন, ময়মনসিংহে। সত্তরের মাঝামাঝি থেকেই তিনি লিখছেন। লিটন ম্যাগাজিন, ময়মনসিংহের আঞ্চলিক পত্র-পত্রিকায়ও তাঁর লেখা ছাপা হয়; কিন্তু জাতীয় পত্র-পত্রিকায় ছাপা লেখার সংখ্যা নিতান্তই কম। যুগল দাশ বৈরী সময়ের রুক্ষ প্রতিবেশে দীর্ণ-বিদীর্ণ। সে পরিচয় শিল্পায়িত তাঁর কবিতার স্বগত উচ্চারণে। এই সময়ের ক্ষয়িত যৌবনকে যুগের কর্কশ চিত্রে রূপ দিয়েছেন তিনি। যুগল দাশ কখনো উচ্চকিত হননি, তাঁর আর্তি কখনো তাল কাটে না, কিন্তু অনুভুতিকে নাড়া দেয় কোমল আঙুলে। কবি, গল্পকার আতা সরকারের ভাষায় তাঁর কবিতা ব্যক্তিগত অনুভূতির বৃত্ত থেকে সমষ্টির পরিমণ্ডলে সোচ্চার হয়ে ওঠে, প্রতিবাদ ভাষা পায় তাঁর পংক্তিমালায়। সমকালীন জীবনযাত্রা নিয়ে উচ্চকিত তাঁর কণ্ঠস্বর থেকে বেরোয়- আমাকে ঝুলিয়ে দাও ফাঁসীর রজ্জুতে/ আমি দুঃশাসনের করাল ফণা;/ আমার বিরুদ্ধে গড়ে তোল সশস্ত্র ব্যারিকেড/ ছুড়ে দাও তুমুল ঘৃণার থুথু/ উচ্চারণ করো নিরস্ত্র ক্যাম্পাসে 'দুঃশাসনের রক্ত চাই'।

1993 সালের জানুয়ারিতে ময়মনসিংহ ছাড়ার পর আর তাঁর সাথে যোগাযোগ নেই। পেশাগত কাজে ময়মনসিংহের দু'একটা উপজেলায় ভ্রমণ করলেও তাঁর সাথে দেখা নেই এক যুগেরও বেশি সময়। সমপ্রতি কবি-সাহিত্যিক মুজাফফর আলী তালুকদার স্যারের কাছে শুনলাম দু'-তিনটে বই বেরিয়েছে তাঁর। খুব প্রচারবিমুখ কবি যুগল দাশ। আমার শ্রদ্ধা কবি যুগল দাশ -এর প্রতি। আমার সংগ্রহ থেকে তাঁর একটি কবিতা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।


[গাঢ়]নদী ছিঁড়ে যায়- যুগল দাশ[/গাঢ়]

নদী ছিঁড়ে যায় স্রোতের ভিতর
নদীর ভেতর নেই কোন জল গান।

চোখে চোখ রেখে বাড়িয়েছি চোখের অসুখ
কর্পূরের মত উবে যায় পারিজাত প্রেম।

ইচ্ছে হোক, ছিন্ন শৈশবের বাঁকা পথ
জটলা করা কুমারী কথার শান বাধা ঘাট;

আমি শুধু শুনে যাবো কোলাহল, উদাস দুপুরে
ছিঁড়ে যাক দম দেয়া গ্রামোফোনে হেমন্তের গান।


সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×