somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জয়নাল অনুসন্ধান।

৩০ শে আগস্ট, ২০০৬ ভোর ৬:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মমতাজের গান বাজছে ক্যাসেটে, মাদকবিরোধী প্রচারনার অংশ হিসেবে এখানে সবই মাদক বিরোধী গান, মমতাজের চড়া গলার অনুরোধ রাখবে কেউ এমনটা মনে হচ্ছে না, সামনে গাঁজার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, কপালের পাশটা আর চোখের নীচেরটা ঘামেভেজা ছেলেটার ঘনঘন ছোটো ছোটো চুমুকে চা খাওয়া দেখে বোঝা যাচ্ছে তার ভেতরে ফেন্সিডিল, দোকানির থুতনিতে সামান্য দাড়ি, কাচা পাকা, মাথায় টুপি, জয়নাল মুগ্ধ হয়ে লোকটার হাতের কাজ দেখছে, এদের চামচগুলো কিভাবে বানায় এটা নিয়ে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায় মাথায়, পিতলের চামচ,তাও ক্ষয়ে যাওয়া, চায়ের সাথে পেতলও ভেতরে চলে যেতে পারে, নিখুঁত ভাবে প্রতিটা চায়ের কাপে খটখট চামচ ঘুরাচ্ছে আর এক ফোঁটা চা'ও উপচে পরছে না, তার পর একটা প্লেটে করে সামনে দিচ্ছে, পেছনে মমতাজের চড়া গলার অনুরোধ, আপনারা যারা মাদকাসক্ত ........ কদিন আগে মমতাজের শোনা গানটার কথা মাথায় চলে আসলো
যৌবন একখান গোলডলিফ সিগারেট
রাতের ভ্যানের সাথে গানটাও কোথাও হারিয়ে গেলো, এমন কত গানই হারিয়ে যায়, কলেজের সামনের দোকানে বসে শোনা আবাল কালের সওদাগর না খাইলা দুধের সর না খাইলা নারকোল ভাইঙ্গা পানি গো ও মোর সওদাগর গানটা শুনিয়ে কল্লোল ফাজিল গলায় বলেছিলো গানের অর্থটা বুঝছিস?
গানটার মধ্যে তেমন বিশেষত্ব ছিলো না, দুধের সর, নারকোল সবগুলোকে বিভিন্ন উপমা বানিয়ে যা সামনে আসলো সেটা গানের আসল অর্থ এমনটা ভাবতে মন চায় নি, করমগঞ্জের মেলায় যাত্রা দেখার পর সেই ভুল ভেঙেছে, আসলে সবার ভেতরেই অশুদ্ধ যৌনতার প্রকোপ বেড়েছে, মানুষের ন্যাংটা শরীর দেখার শিহরন থেকে বাইরে আসতে না পারা মানুষগুলোর কঙ্কালসার শরীরের ভেতরটা উত্তেজনায় শক্ত হয়ে যায়, কোটরাগত চোখ বিস্ফোরিত করে রাত 2টায় ড্যান্স কুইন শেফালি ব্রা আর হাফপ্যান্ট পরে মঞ্চে আসার পর সব গুঞ্জন স্তব্ধ হয়ে যায়। এবং বিভিন্ন রকম আক্ষেপের পর ব্রামুক্ত স্তন ঝুলিয়ে ড্যান্স কুইন শেফালি যাওয়ার পর চাপা দীর্ঘশ্বাস আর ওয়ান মোর ওয়ান মো র চিৎকারের ভেতরে ঝনঝন বেজে উঠে, মাথার পাগড়ি ঠিক করতে করতে ভেতরে ঢুকে সিরাজুদ্দৌলা, অবশ্য ক্ল্যাপ পায় না তেমন, দর্শকের চোখের খিদা মিটে নাই, আবারও শেফালিকে আসতে হয় মঞ্চে এবং সবার কামনা নিবৃত না হওয়া পর্যন্ত অবিরাম বিক্ষুব্ধ ঝাঁকুনি দিয়ে যেতে হয়, প্রাথমিক উত্তেজনার শরীর সাড়া দিলেও এখন বিষয়টা রীতিমতো বিরক্তিকর পর্যায়ে চলে গেছে, শরীর সাড়া দিচ্ছে না বরং বিদ্্রোহ করছে, যৌন উত্তেজনা তিরোহিত বরং গলার কাছে টক স্বাদ টের পেয়ে ফেরত আসা জয়নালের অনেক দিন এই কথা মনে পড়ে, মমতাজের গান শুনে।
বগা শামীমের জন্য অপেক্ষা করছে চৌধুরি পাড়ায়, রেল লাইনের ধারে চায়ের দোকানে আসবে কথা আছে, আঙ্গুরকে কাজের কথাটা বলেছে বগা শামীম, তেমন পরিচিত কেউ না, সবার সাথেই ভালো সম্পর্ক রেখে চলে, মুরুবি্ব ধরে চলা মানুষ, সরকারি দল আর বিরোধি দল, সব দলের মানুষের সাথেই তার খাতির, সবার কাজই করে দেয়, নিয়মিত আড্ডা দেয় ছাত্র দলের ক্লাবে, লীগের অফিসে গিয়ে সবাইকে চা খাইয়ে আসে, এবং কোনো খানেই কোনো কেস নাই ওর নামে, অথচ এই লাইনে সবারই মাথার উপরে একটা দুইটা কেস ঝুলতেছে,
তার কাছে সবার খবর থাকে, ঢাকা শহরের সবগুলো সাংসদের ব্যাক্তিগত নাম্বার জমা আছে ওর মোবাইলে, মাঝে মাঝেই এদের ফোন দিয়ে শাররীক কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে, ফোন নামিয়ে রাখার সময় বলে আপনার এই ছোটো ভাইটার দিকে খেয়াল রাইখেন ভাইয়া, প্রয়োজন হলে বলবেন, আপনার সেবার জন্য অধম এক পায়ে খাড়া।
মধ্যবর্তি পর্যায়ের মানুষ ও, সবার কাছ থেকে নির্দেশ আসে, সে সেই কাজের যোগ্য মানুষটাকে বলে দেয়, 2 পক্ষই কমিশন দেয়, ভালোই দেয় মনে হয়, বগা শামীমকে দেখে এমনটাই মনে হচ্ছে, ক্যাটস আইয়ের শার্ট আর ডেনিমের সাথে স্ট্যালিয়নের জুতা, হাতে সোনালি ঘড়ি, গলায় চেইন ঝুলছে, ফ্যাশনদুরস্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মনে হয়, শুধু গালের পাশে একটা কাটা দাগ দেখে বুঝা যায় মানুষটাকে যতই সাধারন মনে হোক আসলে একে ঘাঁটাতে যাওয়া ঠিক হবে না।
জয়নাল ভাই সরি আপনাকে অনেকক্ষন বসিয়ে রাখলাম, আর বলবেন না আব্বাস ভাই ডেকেছিলো, তার ওখানে গিয়ে আসতে আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো। বসেন চা খান, মাল লাগলে বলেন আনায়া দিবো, কি চান শুধু বলেন?
না এত ব্যাস্ত হওয়ার কিছু নাই, আসছি একটু আগে, কিছু কথা ছিলো এখানে বলা যাবে না কি আলাদা কোথাও বলতে হবে?
আমি জানি আপনি কি বলতে চান, ঐটার উত্তর আমার কাছে নাই, রাগ কইরেন না ভাই, টাকা নেই মানুষের সাথে যোগাযগো করে দেই, আমার কাজ এইটুকুই, ক্যানো, কি দরকার এইসব প্রশ্নও করি না, আর সততা বলে একটা জিনিষ আছে। নিমকহারামিগিরি করতে পারবো না।
মইজুদ্দি ভাই 2টা চা দাও, নরমাল, আপনি বসেন জয়নাল ভাই, ছোটো ভাইয়ের সাথে একটু চা খেয়ে যায়, না খেলে ভাববো মাইন্ড করছেন।
জয়নাল চায়ের কাপে চুমুক দেয় আনমনে, অবশ্য আগেই জানতো বগার কাছে উত্তর পাওয়া যাবে না, প্রফেশনাল এথিকস, সততা, এসবের চেয়ে বড় সত্য হচ্ছে ঝামেলা এড়াতে চাওয়া, তার কাছে এ খবর এসেছে এটা জানবেই, এমন কি সে যে বগার সাথে দেখা করেছে এ সংবাদও যাবে ওদের কাছে।
বগা না বললেও যাবে।
যাই, আবার কথা হবে, জয়নালের নিজেকে শ্রনীবিহীন মনে হয়, কোনো শ্রেনীতেই তার স্থান নেই,মোখলেস ভাইয়ের কথা মনে পড়ছে তার এই মুহুর্তে, আধাপগল লোকটাকে কোনো পার্টিই নিলো না শেষ পর্যন্ত, সবাই সন্দেহের চোখে দেখতো তাকে, সবাই তাকে আদর্শচু্যত কমুনিস্ট আখ্যা দিয়ে দিলো, অথচ মানুষটা ভালো, শুধু ভালো না, অনেক নেতার চেয়ে ভালো বিশ্লেষণে,বিভিন্ন কুটনৈতিক পাড়ার সামনে লাইন ধরে দাঁড়ানো মানুষগুলোকে পার্টির আর আদর্শের চেয়ে পকেটের দিকে মনোযোগী বেশী এমন মন্তব্য করায় নেতারা তার উপর ক্ষিপ্ত ছিলো, এর উপরে তার স্বদেশিয়ানা ভাবটা সবটুকুই নষ্ট করে দিয়েছে, ন্যাশনালিস্ট মার্ক্সিস্ট বলে কোনো শব্দ অভিধানে নেই, কমুনিস্ট মানেই আন্তর্জাতিক, তাদের শুধু একটা জাতিসত্তা নিয়ে ভাবলে চলবে না, বিশ্বের প্রতিটা শ্রমিক প্রতিটা মানুষ তার আদর্শের লড়াইয়ের সাথে যুক্ত- এমন কথার বিপরীতে মোখলেস ভাইয়ের জোড়ালো জবাব ছিলো- আমি আমার দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবছি, আমার দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করছি, আমার দেশের মানুষ উন্নত চেতনা ধারন করুক এই লক্ষ্য নিয়ে চলছি, অথচ এই বিশ্বাসটা বলতে পারবো না কেনো। রাশিয়ায় যখন বিপ্লব হলো তখন লেলিন কি বিশ্বের কথা ভেবে শুরু করেছিলেন, তার লক্ষ্য ছিলো রাশিয়ার জনগন, তার লড়াই শুধু জারদের বিরুদ্ধে ছিলো না বরং ভিন্ন মতের লোকদেরও নিশ্চিহ্ন করেছে সে বিপ্লবের শত্রু বলে, অথচ লেলিনকে মহান নেতা বলা হচ্ছে, বিশ্বের সকল মানুষের আদর্শ ভাবা হচ্ছে, এটা ঠিক না, এমন নেতার অন্ধ অনুকরন আমাদের কর্মিদের আদর্শিক বিভ্রান্তিতে ফেলবে, আর সম্পুর্ন সমাজতান্ত্রিক হয়ে উঠার আগেই রাশিয়া সমাজতন্ত্রকে জোড় করে রপ্তানি করেছে পোলান্ডে, বুলগেরিয়ায়, অথচ সেখানের মানুষ তখনও এর জন্য প্রস্তুত ছিলো না, ফলাফল কি হয়েছে, ওরা বিদ্্রোহ করেছে, ওদের দমন করার জন্য সৈন্যবাহীনি গেছে, যদি কেউ কোনো আদর্শ গ্রহন করার মতো পরিপকক না হয় তার উপরে চাপিয়ে দেওয়া আদর্শের বোঝা সে বহন করতে পারবে না, এটা সমাজতন্ত্র বলে না, এটা পুঁজিবাদি আচরন, আগ্রাসন সব সময় পুঁজিবাদি সমাজের বৈশিষ্ঠ্য, অথচ রাশিয়া সেই কাজটাই করে গেছে, সেন্টরাল গভর্নেসের নামে বিভিন্ন অঞ্চলে সৈন্যবাহিনী দিয়ে বিদ্্রোহ চাপা রেখেছে, আর রাজনৈতিক শোধনের নামে ক্যাম্পে পাঠিয়েছে মানুষ।
ফলাফল কি হয়েছে? রাশিয়ার পতন হয়েছে, রাশিয়ার পতন হতোই, সূচনাই ভুল ছিলো, এই সব আন্তর্জাতিকতাবাদ সমাজতন্ত্রের শেষ ধাপের বিষয়, যখন অনেকটা অংশ সমাজতান্ত্রিক ধারনা আত্মস্থ করতে পারবে এর পরে আন্তর্জাতিকতাবাদ শুরু হতে পারে, সকল শ্রমিকের ঐক্য হওয়ার জন্যও তো সবাইকে একটা নির্দিষ্ট মানে পৌঁছাতে হবে।
লেলিনের বিরুদ্ধে কথা বলার অর্থই পার্টিতে অপাংক্তেয় হয়ে যাওয়া, এর উপর লেলিনের কর্মের সমালোচনা, পার্টি সহ্য করে নাই তার সদস্যপদ বাতিল করা হলো, তাকে পার্টির সভায় নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হলো, এমন কি তার গড়ে তোলা গ্রুপটাকেও কৌশলে কথা বলতে বাধা দেওয়া হতো, অবশেষে তারাও পার্টি ছেড়ে দিলো, নতুন মতের রাজনীতি শুরু করবে বলেছিলো, বিশ্লেষনকে পুনর্বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, বাংলাদেশের দ্্বান্দ্বিক বস্তুবাদের সঠিক ব্যাবহারের উপায় এখনও জানে না মানুষ।
অথচ মোখলেস ভাইয়ের কথায় জোড়ালো স্বপ্নের শেকড় ছড়িয়ে যেতো ভেতরে,নিজেদের ক্ষুদ্্র সত্ত্বার ভেতরেও পুর্নাঙ্গ মানুষ হওয়ার বাসনা জেগে উঠতো। এই লোকটাই পার্টি ছেড়ে চলে গেলো কিশোর গঞ্জ, ওখানেই আছে, একটা স্কুলে পড়াচ্ছে, মানুষ গড়ার কারিগর হয়েছে তার ভাষ্যে, বিষন্নতা গ্রাস করে নি এখনও তাকে, চোখটার উজ্জলতা কমে নি এক ফোঁটাও। তার বিশ্বাস টলে নি অথচ জয়নালের বিশ্বাস ভেঙে চুড়ে খানখান।
গত মাসেও একবার গিয়েছিলো কিশোরগঞ্জ,মাঝে মাঝে দেখা করে আসে, বুকে জোড় ফিরে পায়।
মোখলেস ভাই এখনও বিশ্বাস করে তার যে স্বপ্ন, তার যে আদর্শ তা একদিন মানুষ বুঝতে পারবে, দ্্বান্দ্বিক বস্তুবাদের বিভ্রান্তি কাটিয়ে উঠে দেশ গড়ার কাজ করবে, দেশের মানুষকে অন্যসব মানুষের সাথে মিশিয়ে ফেলবে না, যা কিছু ভালো তাই গ্রহন করবে এবং অশুভ সব কিছুকে বর্জন করবে-
জয়নালকে ডেকে ঘরে বসিয়ে চা খাওয়ালো, অবশ্য ঘর বলা উচিত হবে না, বইয়ের ফাঁকে একটা বিছানা, ঘরের কোনায় কেরোসিন স্টোভ, সেখানেই পানি বসিয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলো এবার অনেক দিন পর এলে জয়নাল? খুব ব্যাস্ত? মইনুদ্দিন ভাই এখনও আসে অফিসে?
জয়নাল এখনও তার অধঃপতনের কথা বলতে পারে না,মোখলেস ভাইয়ের আশাকে ব্যার্থ করে দিতে মন চায় না তার, তাই এখনও এখানে সে পথ খুঁজে ফেরা এক কমু্যনিস্ট।
মোখলেস ভাই বাইরে গিয়ে বসি, এখানে কেমন দমবন্ধ লাগছে, কেরোসিন স্টোভ ভেতরে জ্বালানো ঠিক না, কোন দিন কি দুর্ঘটনা ঘটে কোনো নিশ্চয়তা আছে?
মোখলেস ভাই চায়ের কাপটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে সিগারেট জ্বালালো, জয়নালের ভেতরেও নেশা জেগে উঠে, দেশের রাজনীতি বিশ্লষন হয়, সামাজিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়টা আলোচিত হয়, জয়নালকে স্পশর্্ব করে না কিছুই। তার ভেতরে অনেক আগে শোনা কথাগুলো ঘুরপাক খায়,
শ্রমিক কৃষক এদের চেতনা উন্মেষের কোনো প্রয়োজন নেই, সব শোষিতই একটা কমন মানসিকতা ধারন করে, ওদের শোষনের খোলসটা চিনিয়ে দাও, ওরা নিজেরাই খোলসটা ভেঙে ফেলবে।
আমাদের দেশের মানুষের ভেটরে যা আছে তা অন্য কোনো দেশের মানুষের ভেতরে নেই, এই যে দেখো সাধারন মানুষের গান, এখানে অসামপ্রদায়িকতা, দেশের কথা যেভাবে বলা আছে ওভাবে কোন শিক্ষিত মানুষ ভাবতে পেরেছে বলো-
হিন্দু মিসলিম 2 ভাই কিংবাসবার উপরে মানুষ সত্য এমন বলে যাও লালনের ভেতরে সামপ্রদায়িকতার ছিঁটেফোঁটাও নেই, অর্ধশিক্ষা কলুষিত করে দিচ্ছে আমাদের চেতনা। আমরা এখন শিবিরে ভাগ করি মানুষকে, পুঁজিবাদি সমাজ দিন দিন একটা দালাল শ্রেনী তৈরি করছে, সব শিক্ষিত মানুষেরা একটা পুঁজিবাদী বিষ ভেতরে নিয়ে ঘুরছে, প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে, অথচ শিক্ষা প্রকৃত হলে তারা প্রতিষ্ঠা না সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখতো।
আমরা মানুষকে গোত্রে ভাগ করছি, একে মুসলিম বলছি, ওকে হিন্দু, পানি জলের রাজনীতিতে মাথাকুটে মরছি, অথচ সেইসব বস্তুরা কখনও কোনো প্রতিবাদ করছে না। আমরা বিভিন্ন শ্রেনিকে স্পষ্ট করে কথা বলি, শ্রেনী কোথায় থাকে?
শ্রেনী থাকে আমাদের চেতনায়, শ্রেনী থাকে মাথার ভেতরে বলে আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিতো মাথার উপরে মোখলেস ভাই, সেই সময়টার পর আবার পিছিয়ে শুরু করতো,
অথচ শ্রমিক শ্রেনীকে আমরা ধরেই নিয়েছি ওরা চেতনাবিহীন নিষ্পেষিত গোষ্ঠি, ওদের উদ্ধার করার মাহত্ব্যের অংশ হতে চাই আমরা, আমরা 2-4 পাতা মার্ক্সবাদ পড়ে ধরে নিচ্ছি শ্রমিক শ্রেনীর চেতনাটা বাইরে থেকে আসবে, আমরা তাদের জ্ঞান চক্ষু খুলে দেবো, ওরা কি হিন্দু মুসলিম রাজনীতি বুঝে? কোথায় কি নিয়ে গোলমাল চলছে এটা নিয়ে তারা উদাসিন, শ্রমিক শ্রেনীর চেতনা নয় তাদের সামগ্রিক রাজনৈতিক উদাসীনতার বিরুদ্ধে সচেতনতা গ্রো করা প্রথম কাজ।আধা সামন্তবাদী আধা পুঁজিবাদী সমাজে আমাদের রাজনৈতক প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাদী ছাপ, আমরা মতের বরশী ফেলে মানুষ গাঁথতে চাই, আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ওদের ভেতরে থেকে ওদের সিঁড়ি বানানোর প্রক্রিয়াটা শিখিয়ে দেওয়া,তত্ত্বকথা, বস্তুবাদ ওদের জানার দরকার নেই, ওদের দরকার সাদাকালো দাগটাকে চিনতে পারা, ওদের ভাবনায় ওরা আমাদের চেয়ে বেশী বস্তুবাদী, ওদের সামনে নিয়ে আসতে হবে ওদের ভাষায় কথা বলে, পূঁজিবাদ যখন যেভাবে বিভ্রান্ত করা দরকার সেভাবে বিভ্রান্ত করছে, আমরাও তাই করছি আসলে, শ্রমিকের আন্তর্জাতিকতা শেখার প্রয়োজন নেই, রাশিয়ার গালগল্পে এ দেশের শ্রমিকের মন ভরবে না, পূঁজিবাদ এদের নৈতিকতা, এদের ভেতরের মনুষ্যত্ববোধকে আঘাত করছে, আমাদের কাজ এই নৈতিকতা আর মনুষ্যত্ববোধটাকে আক্রান্ত হটে না দেওয়া, শুধু এইটুকু চরিত্র বিশ্লেষন করা প্রয়োজন ওদের কাছে- যেনো পুঁজিবাদী কল্পনা ওদের ভেতরটা ঝাঁঝড়া করে না দিতে পারে।
এখন দেখো বাংলা ছবি- ওখানে মোটা দাগের যৌনতা ছড়িয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে রিকশা ওয়ালা শ্রমিক শ্রেনী এসবই পছন্দ করে, দেশের সংখ্যাগুরু মানুষের ভাবনার প্রতি এমন কদর্যতা কোথাও প্রকাশিত হয় নি।
জয়নাল মানতে প্রস্তুত ছিলো, তবে অধঃপতনের সূচনা আসলে ধীরে ধীরে হয়, এই মোটাদাগের বিষয়টা সামনে নিয়ে আসা, স্থুল রস, স্থুল ইঙ্গিত একটা সামগ্রিক প্রক্রিয়া যার উদ্দেশ্য কল্পনাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলা।
এর পর আরও ভাবনাবিমূখ,শিল্প বিমুখ হলে তাদের আরও মোটা দাগের জিনিষ দেওয়া হবে এবং পুরো সমাজটা যারা চালাচ্ছে তারা আসলে কিছুই ভাববে না, ধর্ম নিয়ে অহেতুক মাতামাতি করতে পারে যাদের ঘরে দু মুঠো খাওয়ার সংস্থান আছে, গরীবের আল্লাহ থাকে খাওয়ার প্লেটে, ইশ্বর বলো ভগবান বলো সবই অন্ন, অন্নপূর্নার পূজা করে কাটে তাদের জীবন।
এখানেও জয়নালের ভুমিকা অন্নগৃহীতা স্থুল চেতনার একজন কসাইয়ের, এখানে খেটে খাওয়া মানুষের ভেতরে তার ব্যাবসা লোভ ছড়ানো, অর্থের লোভ, তার আদর্শের বিপরীতে চলছে জীবন, তার কাজ নিরাপত্তা দেওয়া, পুঁজিবাদের বিষগুলো যেনো অবাধে ছড়িয়ে পড়তে পারে তা নিশ্চিত করার কাজ করছে সে,
হোন্ডাটা ঘুরিয়ে নিয়ে সদর ঘাটের দিকে রওনা হলো সে। ওখানে নিরিবিলিতে বসে কিছুক্ষন ভাববে সে, কিছুই মাথায় আসছে না, অথবা বলটুর ডেরায় যাওয়া যায়।

****
পূর্ন লিখিত হতে পারে, তাই হঠাৎ বদলে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই
******
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০০৬ ভোর ৬:৫৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ফাঁদ (The Middle Class Trap): স্বপ্ন না বাস্তবতা?

লিখেছেন মি. বিকেল, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৪৫



বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত কারা? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কিছু রিসার্চ এবং বিআইডিএস (BIDS) এর দেওয়া তথ্য মতে, যে পরিবারের ৪ জন সদস্য আছে এবং তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×