somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধুসর গোধুলি

২৫ শে আগস্ট, ২০০৬ দুপুর ২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সবুজ খোলে ছেট ছোট হলুদ ফুলের ছাপ দেয়া শাড়ি একপেচে পড়ে দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে , মাথা নিচু করা। জেঠি বকে যাচ্ছে নিজ মনে ,
'পড়া শুনা টা তো করলি না, করলে আর এখন এই অবস্থা হয়। বুড়া বয়সে এহন নাম লিখা শিখস।মাথার মধ্যে কি গোবর দিয়া বানাইছে। এতো দিনে ও 3 অক্ষরের একটা নাম লিখতে পারস না।'

কিছু ই বলছে না ,মাটির দিকে তাকিয়ে আছে শাহানা। আসল নাম শাহানারা ।সিনেমার নায়িকাগো মতো নাম কাটছাট হয়ে শাহানা টিকা আছে। কি ই বা করবে, 'শাহানা' লিখা শিখতে 1 মাস লাগায়া দিল, তাও পারে না, আরও দুইটা যদি লিখতে হতো তো কত দিন লাগবে। এতো দিন কি আর ঐ বাড়ীর লোক জন বসে থাকবে? ঠিক ই একটা ভালো মায়ে দেখে বিয়ে করায়ে নিবে।

-যা সিলট আর চক লইয়া আয়,

বাড়ীর ছোট ছোট পোলা পান দাড়িয়ে দাড়িয়ে তামসা দেখছে, জেঠি বকছে শাহানা বু রে।শাহানা কিছু বলতে ও পারছে না,আর যাই হোক, শহরে থাকা এই শিক্ষিত জেঠিরে সবাই ডরায়।শাহনা ও কম বেশি ডরায়। তাই তো বাধ্য মেয়ের মতো সিলট নিয়ে বসে।

জেঠি বলে যায়,
প্রথমে দুইটা গোল্লা দেএকটার লগে একটা লাগায়া দিবি। এই বার এইহানে একটা টান দে। গোল্লাটার লোগে কাঠিটা একটা টান দিয়া লাগায়ে দে,আর কি করতে হইবো ক তো?

শহানা কিছুই বলতে পারে না, মুচকি মুচকি হাসে আর মাথা নীচু করে থাকে।পোলা পান তাকে দেখে হাসে।
-ঐ তোগো এইহানে কি যা এইহান থেইকা,কইয়া চিল্লান দিয়া উঠে।
ওর গলায় একটা কতৃত্ব ব্যাপার আছে,সবাই ভয় খায়।
-তুই ওগো দিকে তাকায়ে আছোস কেন তুই লেখ, কত ভালো বাড়ি,ভাল বংশ, দেখতে শুনতে ভালো আছহিস,একটু পড়া শুনা করলে তো আরো ভালো জায়গায় বিয়া দিতে পারতাম। তোর মা তো আর তগরে পড়াইলো না।

জেঠির কথায় আবার লেখায় ফিরে আসে, কিন্তু তার মন তো আর এখানে না, বেলা পইরা আইলো,এহনই বাছেদ চাচীর উঠান দিয়ে যাইবো,বাছেদ চাচির ঘরে উকি দিয়া দেখবোও , যাইতে ইচ্ছা করতাছে।কিন্তু এহন তো আর উঠা যাইবো না।সমানের মাসে তারে দেখতে আইবো, তার বয়সী মাইয়াগো সব বিয়া হইয়া গেছে, সেই বাকী,ওরা জানে মাইয়া সিক্স পাশ, এহন যদি নামডাও না লিখবার পারি কেমনে হইবো,এতো ভালো একটা বিয়া ছুইট্টা যাইবো গা।কিন্তু তার যে খালি ঐ হানে যাইতে ইচ্ছা করতাছে।

-হঅ এই তো 'শ' হইছে, এই বার আ- কার দে। আ-কার কেমনে দেয়?
শহানা ভুলে গেছে আ-কার কি জিনিস? কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকে।মনে হলো একটা টান দিয়া দিলো।
-এই তো হইছে, 'শ' এর লগে আ-কার দিলে কি হয়?
শহানা আবারও চুপ করে থাকে,কিছু বলতে পারে না,জেঠি ভাবে শরমাইতাছে।
-শরমের কি আছে? কি হয় কঅ।
-'শ' এর লগে আ-কার দিলে হয় 'শা'।এই বার কি ? এই বার হইলো 'হ'
শাহানা 'হ' ও ভুলে যায়,
গেছে গা মনে হয়, ধুর কখন ছাড়বো জেঠি,ওর লোগে বিয়া হইলে কি হইতো ? ওতো বিয়া করতে রাজী ই ।আমি ই না রাজী না। আমি কি রাজী না? নিজেরে ই জিগায়, নাকি আব্বায়, জেঠায় কাহায় পছন্দ করে না বইলা। ঐ ছেড়ায় ও তো কিছু করে না,তুই বিয়া করতি চাস কাম কাইজ করবি না?বাপের পয়সা আছে তো কি হইছে?ও ই কাম কাইজ করলে ঠিক ই দিতো মনে লয়।

শহানা ইলিয়াসের কথা ভাবে, দেখতে খারাপ না,
কি স্টাইল কইরা চুল কাটে,বাপে চাকরী করে ঢাহায়,মাঝে মইধ্যেই ঢাহা যায় পেনট পড়ে, ইস্তিরি করা জামা পইরা বাছেদ কাকির উঠান দিয়া গান গাইতে গাইতে যায়। শাহানা ঠিক ই বুঝে, কিছু কয় না। ভালোই লাগে শাহানার, কিন্তু ঐ যে তারে কেউ দেখতে পারে না, পড়া লেখা করে নাই, বাপ অনেক চাইছে, এর লগে ওর লগে মারা মারি করে,কেমনে দিবো, ওর নিজের ই তো ভাললাগে না।

-ঐ কি চিন্তা করশ? লেখ। আমার জানটা বাইরইয়া গেলগা তোরে এই নাম শিখাইতে।
-তইুনা বলে স্কুলে গেছস? প্রাইমারী পাশ করছশ নাম লিখাও শিখায় নাই?কি পড়াইছে তগো।
-হ্যা এইবার লিখ 'হ'।আবার ভুইলা গেছস? আর পারি না, একটা থাপ্পর লাগামু।কঅ 'হ' কেমনে লেহে।

শাহানা দাঁতে নখ কাটে,কিন্তু 'হ' কি করে িলখে বলতে পারে না, বা লিখতে পারে না।চুপ করে বসে থাকে,হাতে চক,চোখ শ্লেটের দিকে নীচু করা
ইলিয়াসের লগে বিয়া হইলেতো আর এই নাম লিখা শিখতে হইতো না।বেলা পুরা পইড়া আইছে, কতখন পরেই আব্বা য় আইবো আরং এর থেন।
জেঠার লগা শুনা যায়, জেঠায় বাড়ি আসছে ,
কি যে খুশি লাগে , এখন আর পরতে হইবো না,মনচায় তখন ই দৌড় দেয়। ছামি নাইয়র আইছে,তার লগে দেহা করতে যাইতে হইবো,চিন্তা করতে থাকে, প্রথমে বাছেদ চাচীর ঘরে যাইবো, হের পর ছামীগো বাইত,
ছামির বিয়া হয়েছে 2 বছর,সারা দিন এক সাথে থাকতো ওরা। ছামীর বিয়ের পর শাহানার বাবা মায়ের নিজের মেয়ে নিয়েও চিন্তা।মেয়ে হলো ডাকা বুকা ,সারা দিন টই টই করে,ঘাটের নৌকা লইয়া গাঙ্গে যায়গা একলা একলা।নিজের বাড়ির কোন কাম করবো না ,আর মুখ তো মাসাল্লা,কোন কথা মাটিত পড়তে দিবো না।কে বিয়া করবো।কিন্তুজেঠার সেই এক কথা,
এতো ছোড মাইয়া এখন ই কিয়ের বিয়া

জেঠা বাড়ীত ঢুইকাই ডাক দেয়...
-ও শাহানা হাইনজালা ঘর আন্ধাইর কইরা পরতাছোশ কেন,যা কউট্টা জালা আগে। চোখ নষ্ট হইবো তো?
-আর মাদাইন্না ধর তোর বুয়ার কাছে দে।
শহানা মনে মনে খোদার কাছে 2 রাকাত নফল নামাজ মানে,আর পড়তে হইবো না এহন।
জেঠার হাত থেকে বিস্কুটের পেকেট টা নিয়ে বুয়ার কাছে দিতে যায়। এই টাই নিয়ম এই বাড়ীর। পরথমে সব বুয়ার হাতে যাইবো, বুয়া সবাইরে দিবো।এই জেঠা তারে তার মাইয়ার চেয়ে ও বেশি আদর করে। হের লাইগাইতো জেঠা জঠির মুখের উপর কিছু কইতে পারে না। নাইলে,এই শাহানারে হগ্গলতে ডরায়, এই ইলিয়াস হেরে তো একদিন দিছিলো ঠুন্ডা পিছা দিয়া ইডাল,পুরা বিন্দা গেছিলো পায়ের মইধ্যে। হের পরও বেহায়ার মতো পিছে পিছে ঘুরে।আবার নাকি আংটিও কিনা রাখছে,হেয় বিয়ে করলে নাহি আমারেই করবো।বাছেদ চাচীর কাছে হুনা।তারে কয় সব। হেয় বিদেশ যাইবো।আইচ্ছা হেয় বিদেশ গেলে তো ভালোই,করিমনের জামাই ও বিদেশ থাহে,বছরে বছরে আহে, কত বিদেশি সাবান শেম্পু নিয়া আহে,সোনার চেইন হাতের বালা,কানের দুল। যদিও শাহানার এই সব পরতে ভাল লাগে না।হের পরও নাকি দিবু না বিয়া ।ইলিয়াসের বাপ,রশীদ কাহায় আব্বার কাছে কইছিলো,আব্বা হগলতের লগে কথা কইছে, জেঠায় রাজী না। পোলায় কিছু করে না, তার উপর পোলার নামে নানান জন নানান কথা কয়, বাপের অবাধ্য পোলা।বাপের পয়সা থাকলেই কি বাপে নাকি ঘুষ খায়া পয়সা করছে।
জেঠা আবার ডাক দেয়। শাহানার মায় ডাক দেয় ওই তোর জেঠায় না কাইছে কউট্টা জালাইতে, জালাস না কেরে ?হাইনজালা ঘর আইন্ধার কইরা রাখছোস,অলক্ষি কোন খানকার।

ছোড ঘর থেকে কউট্টা নিয়া জেঠার কাছে যায় ম্যাচ আনতে,কউট্টায় সলতা জালায়ে অন্ধকার ঘরে রাখতে যায়, আর ভাবতে থাকে কেমন দেখতে ওর জামাই? এতো প্রশংসা, সবাই কত খুশি নাম লিখতে পারলেই এতো ভালো পোলার লোগে আমার বিয়া হইবো?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০০৬ সকাল ৭:০৯
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×