somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিপস

২৫ শে আগস্ট, ২০০৬ ভোর ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নরকের দেবদূতরা খুব সমস্যায় আছেন, নিত্য নতুন শাস্তির ব্যবস্থা করতে করতে তাদের আইডিয়া বক্স খালি হয়ে গেছে। কত আর পারা যায়। যে ভাবে নরকের লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে কিছু দিন পর অবস্থা ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। মানুষ খুব বিচিত্র প্রাণী। একই ধরনের শাস্তি একজনকে বার বার দেয়া হলে পরবতর্ীতে দেখা যাচ্ছে সে ঐ শাস্তিতে অভ্যস্থ হয়ে যাচ্ছে। যতটুকু কষ্ট তার পাওয়া উচিত ততটুকু কষ্ট সে আর পাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে ঈশ্বরের কাছে শেষ পর্যন্ত মুখ দেখানোই মুসকিল হয়ে পড়বে।
নরকের প্রধান দেবদূত গালে হাত দিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন।
'গুড মর্নিং'- বলে নরকের এক বাসিন্দা এগিয়ে আসে। 'জনাব, আমি কি আপনার কোন উপকারে আসতে পারি?
প্রধান দেবদূত মুখ তোলে লোকটাকে পর্যবেক্ষণ করে খেঁকিয়ে উঠেন-'কি চাই?'
'আমি আপনার সমস্যা বুঝতে পারছি, আপনি যদি আমার সাথে একটা চুক্তিতে আসেন তবে আমি আপনার সমস্যার সমাধান করে দিতে পারি।'
দেবদূত প্রধান অবাক হন,'তুমি কে?, আর আমার সমস্যা সম্পর্কেই বা তুমি জানলে কি ভাবে?'
'অন্যের সমস্যায় নাক গলানোই আমার কাজ। আপনার শিস্যদের কাছ থেকে আমি আপনার সমস্যা সম্পর্কে জেনেছি।'
'তোমার পরিচয়?'
'আমি ছিলাম পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী একটা দেশের প্রেসিডেন্ট, আমার নাম...'
'ব্যস ব্যস আর বলতে হবে না'- দেবদূত হাত উঠিয়ে লোকটাকে থামিয়ে দেন। ' এবার আমি তোমাকে চিনতে পেরেছি, এ কারণেই তোমার চেহারাটা চেনা চেনা মনে হচ্ছিল।' 'তোমার মতো কুচক্রি বুদ্ধির লোক আমরা আর দ্বিতীয়টা পাইনি। সত্রাস দমন, গণতত্র প্রতিষ্ঠার নাম করে তুমি অনেক দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছ। বৃদ্ধ-মহিলা এমন কি শিশুদের কেও তুমি রেহাই দাওনি। এক ফোঁটা তেলের জন্যে তুমি হাজার ফোঁটা রক্ত ঝরিয়েছ। তোমার কাজের ফিরিস্তি দিতে গেলে আমার ধারণা খোদ ইবলিশ শয়তানও লজ্জায় মুখ ঢাকবে। শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলে গোপনে মিত্র দেশের কাছে অস্ত্র বিক্রি করেছ। নরকে সম্ভবত তুমিই একমাত্র লোক যার শাস্তির মেয়াদ কখনই শেষ হবে না। সে যাই হোক তুমি আমার কাছে কি চাও?'
'নরকে বসে বসে আমি একটা বই লিখেছি, সহজ শাস্তির ১০০১ টি টিপস -এটাতে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির উপর টিপস দেয়া আছে। আমি আপনাকে বইটি দিয়ে সাহায্য করতে পারি, বিনিময়ে আমাকে স্বর্গে যাওয়ার পারমিশন দিতে হবে।'
দেবদূত কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলেন ঠিক আছে, 'তুমি আমাকে বইটা দাও আমি দেখি তোমার জন্যে কি করতে পারি।'
লোকটা হাত নেড়ে জানতে চায়- 'তার মানে আপনি আমার চুক্তি গ্রহণ করছেন।'
আগে আমি তোমার বইটা পড়ে দেখি, আর স্বর্গে পাঠানো না পাঠানোর ব্যাপারে আমি একক ভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। পরবতী মিটিং ডাকা পর্যন্ত কয়েকটা দিন তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে।'
কয়েকদিন পর।
দেবদূত লোকটাকে তার বই ফেরত দেন-'তোমার আইডিয়া আমাদের পছন্দ হয়নি। তাই তোমার সাথে আমরা কোন ধরনের চুক্তিতে যাচ্ছি না। আর তোমার সম্পর্কে আমরা যতটুকু জানি, অতীতে তোমার সাথে যে দেশেরই চুক্তি হয়েছে পরবতীতে তারা ভয়ংকর বিপদের মুখে পড়েছে। অতএব আমরা একই ভুল করতে যাচ্ছি না।'
এর কিছুদিন পর। নরকে শাস্তির মাত্রা ভয়বহ আকার ধারণ করে। প্রতিদিন নতুন নতুন শাস্তির মাত্রা যোগ হয়। এবার লোকটা সরাসরি নরক প্রধানের কাছে গিয়ে অভিযোগ করে-'আপনাদের এখানকার দেবদূত প্রধান আমার বই থেকে আইডিয়া চুরি করেছেন । আমাকে স্বর্গেতো পাঠাননি উপরন্ত আমার আইডিয়াই আবার আমার উপর প্রয়োগ করছেন ।'
নরক প্রধান ম্ল্লান হেসে উত্তর দেন-'এখানে যা কিছুই ঘটে সব আমার র্নিদেশেই হয়ে থাকে। আমি থাকি পর্দার আড়ালে। তুমি দেবদূত প্রধানের কাছে যে বইটা দিয়ে ছিলে আমরা এরই মধ্যে সেই বইটার অনেকগুলি কপি করে ফেলেছি। এর একটা কপি আমার কাছেও আছে।'
'ও নো'- লোকটা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। 'আপনারা তাহলে আমার সাথে চিটিং করেছেন।'
'এটাও আমরা তোমার বই পড়েই শিখেছি, কি ভাবে বিভিন্ন দেশের সাথে বন্ধুত্ব করতে হয়, আবার চুক্তি ভঙ্গ করে কি ভাবে তাদের সর্বনাশ করতে হয়।' লোকটা মাথার চুল ছিড়তে শুরু করে- 'ইস আমি এত বুদ্ধিমান লোক হয়ে কিভাবে এত বড় বোকামি করলাম। আমি বন্ধু ভেবে তোমাদের বিশ্বাস করে ছিলাম, আর তোমরাই আমার সাথে এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা করলে।' নরকপ্রধান উচ্চ্চ স্বরে হাসতে শুরু করেন-'তুমি সবচেয়ে বড় ভুল কি করেছ জান? তোমার বইয়ের এক কোনে মনের ভুলে লিখে রেখেছ- আর যাকেই বিশ্বাস করো অন্তত আমেরিকার রাষ্ট্রপ্রধানকে কখনও বিশ্বাস করো না। আর তোমার জন্যে আমার বিনামূল্যে টিপস হচ্ছে, আর যাকেই বিশ্বাস করো নরকের বাসিন্দাদের কখনই বিশ্বাস করো না। কারণ, বিনা কারণে কাউকে নরকে পাঠানো হয় না। এখানকার পরিবেশের জন্যে উপযুক্ত লোকদেরকেই এখানে পাঠানো হয়ে থাকে।' এই বলে নরকপ্রধান বিদায় নেন।
নরকে প্রতিদিন নিত্য নতুন শাস্তি পুরোদমে চলতে থাকে।

====0====

যুদ্ধের প্রথম বোমাটা পড়ে হৃদয়ের ঠিক মাঝখানে। গুড়িয়ে যায় সমস্ত মূল্যবোধ- মানবতা- প্রেম -ভালবাসা ।- (লেখক এরিক মারিয়া রেমার্ক)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৩
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×