somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাত্তরের দিনগুলি---জাহানারা ইমাম

২৩ শে আগস্ট, ২০০৬ রাত ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


[সাইজ=3] আমার এই পোস্ট টা উৎসর্গ করলাম 29 এ আগস্ট এর সেই সব মুক্তিযোদ্ধাদের যারা আর ফিরে আসে নি.[/সাইজ]

একাত্তরের দিনগুলি---জাহানারা ইমাম
প্রকাশক--সন্ধানী প্রকাশনী.

4ঠা মার্চ
বিকেলে রিকশা নিয়ে আমি আর জামী বেরোলাম মালিবাগের মোড়ে ট্রাফিক আইল্যান্ডে ফারুক ইকবালের কবর দেখতে.দুই তারিখ বিকালে রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছিল ফারুক ইকবাল অন্য ছাএদের সঙ্গে.সেই সময় মিলিটারি পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সে.ক্রুদ্ধ ছাএ জনতা সেই মোড়ের ট্রাফিক আইল্যান্ড এর ওপরই তাকে কবর দিয়েছে.

21 এপ্রিল
আম্মা দেশের এই অবস্থায় তুমি যদি আমাকে জোড় করে আমেরিকায় পাঠিয়ে দাও আমি হয়ত যাব শেষ পর্যন্ত.কিন্তু তাহলে আমার বিবেক চিরকালের মতো অপরাধী করে রাখবে আমাকে...........
আমি জোরে দুই চোখ বন্ধ করে বললাম,'না তা চাই নে.ঠিক আছে তোর কথায় মেনে নিলাম.দিলাম তোকে দেশের জন্য কোরবানি করে.যা তুই যুদ্ধে যা.

3 রা মে
কবে যাবি?কাদের সঙ্গে?
তিন চার দিনের মধ্যেই.কাদের সঙ্গে নাম জানতে চেও না,বলা নিষেধ...জানতে চাওয়া ও চলবেনা---কোন পথে যাবে,কাদের সঙ্গে যাবে.রুমী এখন তার নিজের জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছে,তার একান্ত নিজস্ব ভুবন,সেখানে তার জন্ম-দাএীরও প্রবেশাধিকার নেই.

8 ই আগস্ট
রুমী এ সে ঘরে ঢুকল.রুমীর মুখ ভর্তি দাড়ি,চুল ঘাড় পর্যন্ত লম্বা,তামাটে গায়ের রঙ রোদে পুড়ে কালচে,দুই চোখে উজ্জ্বল ঝকমকে দৃষ্টি,গোঁফের জঙ্গল ভেদ করে ফুটে রয়েছে সেই ভুবন ভোলানো হাসি.রুমী দুই হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এলো,ওকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম.

21 ই আগস্ট
একটু হলে সবাই গুলি খেয়ে মরতে পাড়ত,জখম হয়ে নদীর পানিতে তলিয়ে যেতে পারত.কেনদিন জানতেও পারতাম না ছেলে গুলোর কি হলো.....রুমীকে সে কথা বলতে সে হাসল,'আমাদের সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ কি বলেন জান?তিনি বলেন,'কোন স্বাধীন দেশ জীবিত গেরিলা চায় না;চায় রক্ত-স্নাত শহীদ.অতএব মা মণি,আমরা সবাই শহীদ হয়ে যাব.....আমার হঠাৎ দু'চোখে পানি এসে গেল.

29এ আগস্ট
হঠাৎ কানে এল খুদিরামের ফাঁসির সেই বিখ্যাত গানের কয়েকটা লাইন.
একবার বিদায় দেয় মা ঘুরে আসি.
ওমা হাসি হসি পরব ফাঁসি
দেখবে জগৎবাসী.
রুমী বলল কি আশ্চর্য আম্মা!আজকেই দুপুরে এই গানটা শুনেছি.....একই দিনে দুবার গানটা শুনলাম,না জানি কপালে কি আছে.(সেই রাতেই রুমী ধরা পরে)

2 রা সেপ্টম্বর
ছাদে গিয়ে দেখি জামী খোলা ছাদের মেঝেতে বসে মাথা নিচু করে সেতারা বাজাচ্ছে.কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম.জামী টের পেল না.একটু নিচু হয়ে ও ওচাখ বুজে সেতারা বাজাচ্ছে,চোখের পাতা ভেজা.বুকে ধাক্কা লাগল,জামী প্র্যাকটিস করার সময় রুমী তবলা বাজাত.সেই কথা মনে হয়ে কি জামীর চোখে পানি?

4 ই সেপ্টম্বর
পাকিস্তানের পএিকা তে লিখেছিল 'দেশ প্রেমিক নাগরিকদের' কাছ থেকে খবর পেয়ে রুমী দের ধরা সম্ভব হয়েছিল.(হায়রে দেশ প্রেমিক তোদের ধিক)

21 ই অক্টোবর
ফখরুজ্জামানের কেবিনে ঢুকে দেখি ডাঃ ফজলে রাবি্ব তাকে দেখতে এসছেন.শুনলাম ফখরুকে ফ.রাবি্ব বলছেন,যান ভলো হয়ে ফিরে আসুন.এসে দেখবেন আমরা হয়তো অনেকেই নেই.(সম্ভবত 14 ই ডিসেম্বর ডাঃ.ফ.রাব্বী কে হত্যা করা হয়)

19 এ নভেম্বর
রুমীর ফটোটা স্ট্যান্ডে লাগিয়ে অনেক ণ চেয়ে রইলাম.কতোদিন দেখি নি ওই প্রিয় মুখ.এই কি ছিল বিধিলিপি?রুমী.রুমী.তুমি কি কেবলি ছবি হয়ে রবে আমার জীবনে?তুমি গেরিলা হতে চেয়েছিলে,গেরিলা হয়েছিলে......শাএু ও একদিন নির্ভুল আঘাত হেনে,রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে গেল তোমাকে.আর কি ফিরে পাব না তোমাকে?

14 ই ডিসেম্বর
রুমীর বাবা আর্মিদের টর্চার ও মানসিক আঘাত সহ্য করতে না পেরে মারা যান.

এই বইটা পরে চোখের পানি আটকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না
[link|http://members.tripod.com/~kamalres/main.html| wK
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেট্রোরেল পেয়েছি অথচ হলি আর্টিজানে নিহত জাপানিজদের ভুলে গেছি

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৫ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১১

জাপানে লেখাপড়া করেছেন এমন একজনের কাছে গল্পটা শোনা৷ তিনি জাপানে মাস্টার্স করেছিলেন৷ এ কারণে তার অনেক জাপানিজ বন্ধু-বান্ধব জুটে যায়৷ জাপান থেকে চলে আসার পরেও জাপানি বন্ধুদের সাথে তার যোগাযোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধে নিহত মনোজ দা’র বাবা

লিখেছেন প্রামানিক, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৭১ সালের এপ্রিলের ছব্বিশ তারিখ। দেশে তখন ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। উচ্চ শিক্ষিত এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের নিয়েই বেশি সমস্যা। তাদেরকে খুঁজে খুঁজে ধরে নিয়ে হত্যা করছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিয়ে থেতে ভাল্লাগে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৯

আমার বিয়ে বাড়ির খাবার খেতে ভালো লাগে। আমাকে কেউ বিয়ের দাওয়াত দিলে আমার খুসি লাগে। বিয়ের দিন আমি সেজে গুজে বিয়ে বাড়িতে আয়োজন করা খাবার থেতে যাই। আমাদের এলাকায় বর্তমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুর সামনের পাতার ৯টি পোষ্টে শুন্য (০ ) মন্তব্য।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৫ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০



আজকে সকালে একটু দেরীতে ( নিউইয়র্ক সময়, সকাল ৮:২১ ) সামুতে লগিন করলাম; লগিন করে আজকাল প্রথমে নিজের লগিন স্ট্যাটাস পরীক্ষা করি: এখনো সেমিব্যানে আছি। মোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহর সাহায্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৫ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪০



দুই মেয়ের পরীক্ষা বিধায় আমার স্ত্রীকে লক্ষ্মীপুর রেখে আসতে গিয়েছিলাম। বরিশাল-মজুচৌধুরীর হাট রুটে আমার স্ত্রী যাবে না বলে বেঁকে বসলো। বাধ্য হয়ে চাঁদপুর রুটে যাত্রা ঠিক করলাম। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×