somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অমীমাংসিত।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুরুটা হয়েছিল একটা এক্সিডেন্ট দিয়ে। সময়টা তখন ২০০৭ । দিনটি ছিল মেঘাচ্ছন্ন। বাথরুমে গিয়ে পানির ট্যাপে হাত দিয়েই চমকে উঠি। হাতে সক লাগছে। কি ব্যাপার কি ব্যাপার সক লাগছে কেন। জানালায় হাত দিলাম আবার ধাক্কা খেলাম। পুরো বিল্ডিং টার লোহার জিনিস গুলো হাত দিলেই সক খাচ্ছিলাম। মা রান্না ঘর থেকে আমার রুমে এসে বলল একিরে বাসার এ অবস্থা কেন।

কতক্ষন পর ভাইয়া আসল বাসায়। ভাইয়ার সাথে একটু মজা করার জন্য বললাম ভাইয়া দেখ কলের পানি কি গরম। ভাইয়া পানিতে হাত দিয়েই চমকে ওঠে।

কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। বাবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম কখন আসবে। একবার ভাবলাম নিচের মেইন সুইচ টা অফ করে দেব কিন্তু সাহসে কুলালো না।

কিন্তু অঘটন যা ঘটার ইতমধ্যে ঘটে গেল। নিচ তলার সোহাগ ভাই আতঙ্কগ্রস্থ চেহারা নিয়ে আমাদের বাসায় হাজির। মা কে বলল কাকি আম্মু বাথরুমে বসে একটা চিৎকার দিছে। তারপর এত ডাকি সারা শব্দ নাই। আম্মু সাথে সাথে বলে গিয়ে দরজা ভেঙ্গে ফেল।আব্বুও এর মধ্যে এসে হাজির। সবাই নিচে গিয়ে আগে মেইন সুইচ টা অফ করি। তারপর বাথরুম এর দরজা ভেঙ্গে নিচ তলার আন্টি কে বের করি। আমার বড় ভাই তখন মেডিকেল এর ছাত্র। চোখে লাইট রিফ্লেক্স চেক করেই দেখে ডেড। কি আর করার সান্তনা দেবার জন্য হসপিটালে নিয়ে গেলাম তড়িঘড়ি করে। সেদিন কপাল টা ছিল আরও খারাপ । কারফিউ ছিল। এক এগার এর পরের দিন । হসপিটালে যেতেও বেগ পেতে হল। হসপিটালের ডাক্তাররা চেক করে মৃত ঘোষণা করল। মৃত্যু হয়েছে হার্ট অ্যাটাক করে। যতদূর মনে হয় সে সক খেয়ে ভয় পেয়ে মারা যায়। কত সুন্দর ছিল আন্টির মুখটা। সকালেও কথা হয়েছিল । আর এখন বিকেলের মধ্যেই মৃত্যু। মনটা অনেক খারাপ হয়েছিল সেদিন।

পরে বিল্ডিং চেক করে পাওয়া যায় নিচতলার বাসার ই একটা ফ্যানের তার লেগে গেছিল বিল্ডিং এর রডের সাথে । তারপর ই সমস্ত বিল্ডিং কারেন্ট।

তার মৃত্যুর সময় আমাদের দোতলার ফ্লোর টাতে কেউ থাকত না। কয়েকদিন পর নতুন ভাড়াটিয়া আসল। তারপর ই শুরু হল শব্দ। প্রায় প্রতিদিন ই রাত ১১ টার সময় শুরু হত শব্দ। শব্দ টা ছিল এমন যে ছাদে কোন একটি পাথর কে এমাথা থেকে ওমাথা নিয়ে যাচ্ছে কেউ। মাঝে মাঝে শব্দ পেতাম কেউ হাতুরি দিয়ে ছাদে বারি দিচ্ছে।

প্রথম দিকে ব্যাপার টাকে মাথায় নেই নি কেউ। ভাবতাম দোতলার কেউ বোধ হয় শব্দ করছে। কিন্তু প্রতিদিন ই এমন শব্দ হত। একদিন দোতলার ভাড়াটিয়া ভাবি এসে আম্মু কে জিজ্ঞেস করে আচ্ছা কাকি আপনাদের বাসায় কি কোন বাচ্চা ছেলে আছে যে প্রতিদিন রাতে হাটে? আমরা তো রাতে হাটার শব্দে ঘুমুতে পারি না। আম্মু বলে না তো কে হাঁটবে তবে আমরাও শব্দ পাই রাতে।

তার পরে এক রাতের ঘটনা । ছাদে প্রচণ্ড শব্দ। বাবার ঘুম ই ভেঙ্গে যায় শব্দে। রাত তখন একটা । আমি আব্বু আর ভাইয়া মিলে ছাদে চলে যাই চোঁর টোর আসল কিনা টা দেখতে। কার্নিশ খুজলাম , সারা ছাদ খুজলাম কিছুই দেখতে পেলাম না। পরে বাসায় ফিরে এলাম আবার সেই শব্দ। আব্বু কে বললাম আব্বু ভূত মনে হয়। আব্বু দিল এক ধমক । তিনি আবার এসব কিছু বিশ্বাস করেন না। তার ধমক খেয়ে আমি গিয়ে শুয়ে পরি।

কয়েকদিন পরে দোতলার ভাড়াটিয়ারা বাসা ছেঁড়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে আম্মু কে বলে কাকি আপনাদের বাসায় নিশ্চয়ই সমস্যা আছে। এক রাতে আমি দেখি একটা মূর্তি আমার পাশে এসে দারিয়ে আছে। আমি সেদিন চিৎকার দিয়ে বাসার সবাইকে জাগাই। পরে দেখি আর কিছু নেই। আমার মনের ভুল হোক আর যাই হোক এ বাসায় থাকা আর সম্ভব না।

আম্মুর কাছে একথা শুনে সেদিন অনেক ভয় পাই। নিচতলার সোহাগ ভাইয়ের সাথে এ বেপারে সেদিন কথা বলি। সোহাগ ভাই যা বলল তা শুনে আরও ভয় পেলাম। সে নাকি ওই বাথরুম এর সামনে তার মাকে এক রাতে দেখেছে হেটে যেতে। শব্দের ব্যাপার টা তারাও টের পায়।

আর এক রাতের ঘটনা । ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাত উঠে দেখি রুমের লাইট জ্বলছে । আমিতো প্রচণ্ড ভয় পাই। কারন আমি সবসময়ই লাইট নিভিয়ে ঘুমাই। আম্মু কে গিয়ে জাগাই পরে। ঘরে চোঁর ঢুকছে কিনা তা চেক করি । কিন্তু কিছুই নেই, দরজা আটকানো। সবকিছু ই ঠিক। তাহলে শুধু শুধু লাইট টা জ্বলল কিভাবে। সেদিন রাতে আম্মু আমার সাথেই ঘুমালেন।

কয়েকদিন পরে কোরবানি ছিল। আম্মু কই যেন শুনেছে যে কোরবানির গরুর চাপা কোথাও রাখলে তার কাছাকাছি কোন খারাপ জিনিস আসতে পারে না। তাই করল । ছাদে এনে রাখল। আব্বু প্রথম দিকে না করল যে এসব পাগলামি করার কোন মানে হয় না। পরে অবশ্য রাজি হল। বিস্ময়কর ব্যাপার হল সেটা রাখার পরই রাতে আর একটা টু শব্দ ও পেলাম না।

তাহলে কি নিচতলার আন্টির অতৃপ্ত আত্মা এতদিন এভাবে শব্দ করেছে? হতেও পারে। অথবা না ও হতে পারে। পুরো ব্যাপার টা অমীমাংসিতই রয়ে গেছে আজও। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে গরুর হাড্ডিটা এখনও আমাদের ছাদে আছে। সেই ৬ বছর ধরে একই যায়গায়।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×