somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুজি নিজেকে

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম যে নিজেকে নিয়ে একটু লেখা উচিৎ, নিজের জন্নই লেখা উচিৎ। নিজের মনের শান্তি আরকি। যদিও আমি জানি মনের শান্তি টা আমার ওভাবে কোনদিনই আসবে না, তারপরও।এখন আমি যা এটা হল অনেক পরিবরতন এর পর আমি, এর মধ্যে অনেক আমিই আমি না, কিন্তু এখন এটাই আমি। ভালই বলা যাই এই পরিবর্তিত আমি।
সেই কবে জানি মা-বাবা হারালাম ২২/২৩ বছর আগে মনে হয়( মনে আছে, কিন্তু বলতে ইছা করছে না), তারপর থেকেই ভাইবোন দের কাছে মানুষ, ভাইবোন তার এই ছোট ভাই টিকে নিজের সন্তান এর মতই মানুষ করার চেষ্টা করলেন, সফল ও হলেন আপাত দৃষ্টিতে। আজ আমি মোটামুটি ভালই প্রতিষ্ঠিত, যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া একজন মানুষ। কিন্ত মনের ভিতর একটা ভয়ংকর খালি মাঠ। সেই মাঠে আমি একা একাই খেলা ধুলা করি, করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাই, কাউকে পাই না।
১৯৯৫ এর দিকে আমি তখন আমি আমার ২ বছর এর প্রেম আর আমার প্রেমিকা কে নিয়ে অনেক ব্যস্ত,সদ্য কলেজ ধরেছি কিন্তু ওর মধ্যেও কোথাই জানি আমার একটা শুন্যতা, বুঝতাম না। একটা আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা, যেটা আমি আমার প্রেমিকার মধ্যে পেতাম না, কিন্তু মন প্রান উজার করে ভালবাসতাম। আমার বড় ভাই আমার জন্য একজন গৃহ শিক্ষক ঠিক করলেন, বসে আছি সন্ধ্যা বেলাই আসবে নতুন শিক্ষক; আসলেন। দেখেই মনটা ভরে গেল আমার, একজন নাতিদীর্ঘ গোঁফ ওয়ালা গভীর চোখের মানুষ সদ্য বুয়েট থেকে পাশ করা। আমার ভাই বললেন, তোমরা কথা বল আমি যাই।
স্যার এর ছাত্র কে প্রথম প্রশ্ন, নাম কি তোমার! আমি নাম বললাম এবং আমি অনুভব করলাম একটা অদ্ভুত ভাল লাগা, যেটা আমি সেই প্রথম অনুভব করলাম আমার ১৭ বছর বয়েসে। এরপর সে আমাকে পরাতে আসা শুরু করল আমিও দিন দুনিয়া ভুলে তার জন্য অপেক্ষা করা শুরু করলাম , কখন সে আসবে পরাতে কতখন থাকবে, কি যে অদ্ভুত ভাললাগা, বোঝাতে পারব না। আমার শিক্ষক ও আমাকে নিয়ে খুশি ছিলেন,এতো মনযোগী ছাত্র কইজন পায়। কইদিন পর আমার এইচএসসি পরীক্ষা এর মধ্যে সে বলল যে সে আর পারবে না, তার চাকরি হয়ে গিয়েছে সে আরেকজন কে দিয়ে যাবে, আমি কি বলব বুঝে পেলাম না, নিঃশব্দে মাথা নেড়ে সায় দিলাম। এক সপ্তাহ পর সে নতুন একজন শিক্ষক এনে দিয়ে চলে গেলেন, যাওয়ার সময় আমি তার দিকে আমার টলটলে পানি ভরা দুই চোখ দিয়ে শুধু তাকিয়ে রইলাম, উনি অদ্ভুত ভাবে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কি বুঝলেন কে যানে; চলে গেলেন আর বলে গেলেন তোমার সাথে আমার যোগাযোগ থাকবে। এটুকুই অনেক ছিল আমার জন্য।
যাইহোক সে তার কথা রেখেছিল, মাঝেই মাঝেই ফোনে কথা হতো আমি আস্তে আস্তে বুঝতে পারছিলাম আমার মধ্যে একটা অদ্ভুত পরিবর্তন আসছে, আমি অনেক বেশি মনযোগী আমার শিক্ষক এর প্রতি যেটা হওয়া উচিৎ ছিল আমার প্রেমিকার প্রতি আমার। আমার এহেন আচরণ এর কারনে আমার আড়াই বছর এর সম্পর্কের ইতি ঘটল। এতে আমার অনেক দুঃখ হল, মন খারাপ হল কিন্তু চলেও গেল খুব তারাতারি। কারন সামনে পরীক্ষা। পরীক্ষার ঠিক কিছু দিন আগেই আমি তের পেলাম যে আমি আমার আগের গৃহ শিক্ষক এর প্রেমে পড়েছি। ছাত্রি শিক্ষক এর প্রেমে পরে নতুন নয়, কিন্তু ছাত্র যখন শিক্ষক এর প্রেমে পরে তখন এটা কি বলা যাবে! এটা নিষিদ্ধ, এটা সমকামিতা , এটা হতে পারে না। কিন্তু এতাই হল, আমি পাগলের মতো ভালবাসতে শুরু করলাম গভীর চোখের ওই মানুষ টিকে। আমার অন্তর আত্মা জুরে খালি সেই ছিল, এবং এটা সেও আস্তে আস্তে স্বীকার করল, কিছুটা আমার নিজের কারনেও। আমি এতো আবেগি ছিলাম, তারপর মা-বাবা ছাড়া সে ভাবল যে এটা হইত কেতে যাবে, কিন্তু হল উলটো আমি আরও বেশি আটকে ফেললাম, এক দিন ও না দেখলে ভাল লাগে না, এক দিন ও না ছুলে ভাল লাগে না। কি ভয়ংকর কষ্ট হতো আমাকে যদি একদিন আদর করে কথা না বলতো। এভাবেই আমাদের প্রেম এর ৭ বছর পার হল, এর মধ্যে আমি আমার স্নাতক এর শেষে পৌঁছলাম ঠিক তখনই সে আমাকে বলল এভাবে আর কতদিন আমরা থাকব, আমার অবুঝ মন আর আবেগি আমি বলে উঠলাম চল আমরা বিদেশ চলে যাই, সে আমার দিকে একটা দুঃখী হাসি দিয়ে বলল “ আরে বাচা টা বলে কি” আমি ওকে জোরে আমার নিজের দুই হাত দিয়ে জড়াই ধরে বলি “ তোমাকের ছাড়া আমি বাঁচব কিভাবে”।সে আমার দিকে করুন চোখে তাকাই বলল “ দেখি কি হয়”।
আমি তখনও জানি না যে আর দুই মাশের মধ্যে আমার জীবনে কি ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। ঈদ এর সময় ও সব সময় ওর দেশ এর বাড়ি চলে জেত, যেটা আমার একদম এ পছন্দ ছিল না। তারপরও কিছুই বলার নাই। পরিবারের এক মাত্র বড় ছেলে, এবং খুবই একটা সাধারণ মানের পরিবার ছিল ওদের। ওর আয়ে চলতো ওদের সংসার, আমি এতটাই ওর ব্যাপারে সিরিয়াস ছিলাম, যে আমার ভাইবোন বাদ দিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলাম যে আমি চাকরি নিয়ে ওর সংসার এ টাকা দেওয়া শুরু করব, কিন্তু সে সব কিছুই হয় নি। ঈদ শেষ হল এবং সে যখন ফেরত আসল ঢাকাই সে তখন আরেকজনের সাথে নিজের বিয়ে সেরে ফেরত এসেছে। এখনও আমি দেখতে পাই কি ভীষণ কষ্ট আমার, কি ভয়ংকর কান্না আমার। রাত নাই, দিন নাই ঘুমাতাম না, কি করতাম নিজেও জানি না। খালি মনে আছে, প্রচুর মদ খেতাম আর কোথায় কোথায় গিয়ে থাকতাম, কজনের সাথে থাকতাম তাও মনে নাই। যখন সকালে ঘুম থেকে উঠতাম তখন নিজেকে পেতাম কয়েক জন উলঙ্গ নারী পুরুষের মধ্যে, নিজেও ওরকমই অবস্থাই পরে আছি। কোনভাবে গায়ে কাপর দিয়ে গারিতে উঠে বাসাই এশেই পরে জেতাম বিছানাই। বাসাই বুঝত সবাই, কিন্তু কেউ কিছু বলতো না, কি বলবে তাদের একমাত্র ছোট ভাই আদরের নীলমণি। এভাবেই গেল আমার ২ বছর, হটাত একদিন আমার গাড়ি নেই সাথে সেদিন আমি একটা সিএনজি তে বসে আছি বুয়েট এর মোড়ে। সারা মুখ আমার চোখের পানিতে ভেসে যাছে, আর ভাবছি কই গিয়ে একটু হেরোইন পাওয়া যাবে, কষ্ট আমার কষ্ট তা কমানো জরুরী, ঠিক তখনই একটা মেয়ে ১৫/১৬ বছর বয়স এসে আমাকে বলে ভাইয়া একটা টাকা দিবেন, আমার কাছে কোন ভাংতি ছিল না, ১০ টাকা বের করে দিলাম, তখন বলে ভাইয়া আমার এই পকেট এ দেন দেখি একটা চটের একটা ব্যাগ বুকের কাছে বাধা ওটাতে টাকা দিতে বলল। আমি ওকে বললাম যে তুমি নিজে নিছ না কেন, ও বলল ভাইয়া আমার তো হাত নাইক্কা, আমি তখন দেখলাম যে ওর কোন হাত নাই, এবং আমি অনুধাবন করলাম পৃথিবীতে আমার চেও অনেক অনেক মানুষ আছে যারা আমার যে ১০০গুন বেশি কষ্টে থাকে। এই মেয়ে কে কইজন কবার ধর্ষণ করেছে তার কোন হিশাব আছে বলে মনে হয় না,তারপরও হাসি মুখে ভিক্ষা করে যাছে। আমি হেরোইন খোঁজা বাদ দিয়ে বাসাই আসলাম এবং ঠিক করলাম যা চলে গেসে, তা আমি আর পাব না তার চে কি করা যাই তাই ভাবা উচিৎ। এবং আমি ঠিক করলাম আমি দেশ এর বাইরে চলে যাব, তাই করলাম।
কিন্তু যেটা হল সেটা হল, পড়ালেখা হল, টাকাও হল কিন্তু ভালবাসা টা আর হল না। আপনারা আমাকে আনুষ্ঠানিক সমকামী ধরে নিয়েন না কিন্তু ভাল আমি বেসেছি একজন কেই। এখন আর ভালবাসা আসে না কেউ ভালবাশার কথা বললে হাসি পাই। এই অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি শিখলাম শরীর এর জন্য মন লাগে না; শরীর এর জন্য খালি শরীর,আর মনের জন্য মন। তবে হ্যাঁ আমি এখনও ওর ভাল চাই আর আমি ওকে দোষ ও দেই না। সে এখন এক সন্তান এর জনক এবং আমি খুব খুশি। এখনও তার সাথে আমার যোগাযোগ হয় কিন্তু আমি আর কিছুই অনুভব করি না কারন এই মানুষ আর আমার ওই মানুষ এক না, আমি ওকে একদম হারিয়ে ফেলেছি। কোথাও খুঁজে পাই না। আর পাবও না। শুধু অপেক্ষা আর অনেক কাজ, আমাকে তো অনেক বড় হতে হবে ওটাই তো আমার প্রাপ্তি তাই না!
রবি ঠাকুর এর এই লাইন তা এখনও গাই মাঝে মাঝেই...
দিবস রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি। তাই চমকিত মন, চকিত শ্রবণও ,তৃষিত আকুল আঁখি...............
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×