somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এটা যথেষ্ট অমানবিক নয়-1

১৯ শে আগস্ট, ২০০৬ রাত ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানবতার বানী আউরানো মানুষেরা সব বিষয়ে মুখ খুলে না, তাদের শালীন মানবতাবাদী মুখোশ শুধুমাত্র কিছু রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ধারন করে। সেই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে যদি কোনো বিষয় না আসে তাহলে সেটাকে তারা তাদের ভাবনার প্লেটে তুলে জনসাধারনের সামনে পেশ করেন না। সেসব সংঘাত আর মানবতার মৃতু্যর খবর, যা আমাদের মানবতাবাদীদের চোখের আড়ালে রয়ে গেছে খুঁড়ে দেখা যাক।
বিশ্বে এখন চলমান যুদ্ধের সংখ্যা 24টির মতো। সবগুলো দখলদারিত্বের যুদ্ধ না, কিছু গৃহযুদ্ধ, কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদি কিংবা স্বাধীনতার লড়াই, নির্ভর করে আপনারা কোন দলকে সমর্থন করেন তার উপরে।
সবচেয়ে পুরোনো ক্ষত কলম্বিয়ার যুদ্ধ। 1948 এ , প্রেসিডেন্ট ইলেকশনের প্রচারনার সময় কলম্বিয়ান লিবারেল পার্টির প্রধান নিহত হওয়ার পর তাৎক্ষনিক রায়টে 4000এর বেশী লোক নিহত হয়, এবং এর পর কনসারভেটিভ পার্টি এবং লিবারেল পার্টি ধারাবাহিক রাজনৈতিক হত্যায় অংশগ্রহন করে, এই হত্যা-পালটা হত্যার রাজনীতি চলে 10 বছর, অবশেষে এই দুই বিবাদমান দল একটা সাময়িক সমঝোতা প্রক্রিয়ায় শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করে। এই সমঝোতা ভেস্তে যায় 1974 সালের দিকে।
1960 এর দিকে কিউবায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে কলম্বিয়ার কমুনিস্ট পার্টিও দেশের রাজনীতি বদলানোর প্রচেষ্টা শুরু করে কিউবার অনুকরন করে, এবং সমাজতান্ত্রিক দলের গেরিলা বাহিনী কলম্বিয়ান মিলিটারির উপর ঝটিকা আক্রমন শুরু হয়। প্রতিক্রিয়ায় কলম্বিয়ান সৈন্যবাহীনি গেরিলা নিধন কর্মসূচি নেয়। সমাজতান্ত্রিক জুজুর ভয়ে আক্রান্ত আমেরিকা তখন ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে, এর আগেই আমেরিকা তার দেশে সমাজতান্ত্রিক মতবাদধারীদের নিধন শুরু করে, এবং সমাজতন্ত্রকে নির্মুলের প্রচেষ্টায় মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাও ঘটতে থাকে। তাই আমেরিকা সৈন্য দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে এবং পরিকল্পনা দিয়ে কলম্বিয়ার সমাজতান্ত্রিক গেরিলা নিধন কর্মসূচিকে সমর্থন দেয়। এবং একই সাথে সভ্য মানুষের মুখোশ নিয়ে আমেরিকা কলম্বিয়ার পূর্নগঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে, জন এফ কেনেডির এই রাজনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া কলম্বিয়ার কিছু অংশে সফল হয় তবে অনেক আংশেই এটা ব্যার্থ হয়, সমাজতন্ত্রি নিধনের প্রক্রিয়ায় যেসব অংশ বেশী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলো তারা সবাই এই গরু মেরে জুতা দান ধাঁচের প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে।
60এর দশকে শুরু হওয়া এই নিধন প্রক্রিয়ার ফলে একটা পর্যায়ে গেরিলা বাহীনি দূর্বল হয়ে যাওয়ায় 70 দশকের প্রথম দিকে এই সমাজতন্ত্র নির্মূল প্রক্রিয়া থেমে যায়, 1974এ আবার শুরু হয় নতুন করে এই সংঘাত। নির্বাচনী কারচূপির অভিযোগে একদল আরেকদলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলে , অবশ্য এই সংঘাত গনতান্ত্রিক দলের সাথে ৈস্বরাচারি দলের সংঘাত।

দশকে দশকে একএকটা ইসু্য নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যের সংঘাত ছড়িয়ে পড়ছে দেশের ভেতরে এবং রাজনৈতিক হত্যা চলছে নির্বিচারে। এখন পর্যন্ত তিন বার বিবাদমান দলগুলো শান্তি আলোচনার টেবিলে এসেছে এবং প্রতিবারই সাময়িক সাফল্যের পর এই শান্তিপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। এই ব্যার্থতার কারন অনুসন্ধান করে একজনের মতামত হলো-
সংঘাতের মূল বিষয় অনুধাবনের ব্যার্থতা, প্রতিটা দলই আংশিক ধারনা নিয়ে এসেছে আলোচনার টেবিলে
বিবাদমান দলগুলো বয়কটের হুমকি দিয়ে অন্য পক্ষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে।
কোনো তৃতীয় পক্ষ ছিলো না এই শান্তিস্থাপন প্রক্রিয়া, তাই নিরপেক্ষ মনিটরিং করা সম্ভব হয় নি।
এবং আবেগাধিক্য, জনমতের সাথে ভেসে যাওয়ার প্রবনতা। জনমত গ্রহন না করলে শান্তি আলোচনা বাতিল করে দেওয়া।
কলম্বিয়া প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধাশালী একটা দেশ, তবে ধারাবাহিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, দেশের ভেতরে ধারাবাহিক সংঘাত কখনই দেশের অর্থনীতির চাকা সামনের দিকে ঘুরতে দিচ্ছে না, দারিদ্্রতা বাড়ছে, বাড়ছে সংঘাত। সামান্য যেটুকু সময় সংঘাত বিহীন কাটে সেই সময়ে সামান্য উন্নয়ন হয় এবং আবার সংঘাত আবার অবকাঠামো ধ্বংস আবার কেঁচে গন্ডুষ।

কলম্বিয়া 26 বিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করে, বিশ্বের অন্যতম কয়লা রপ্তানিকারক দেশ, তার পরও ধনী গরীবের আয়ের ব্যাবধান বাড়ছে চক্রবৃদ্ধি হারে, এবং এসব ক্ষেত্রে ওয়ার্লড ব্যাংকের পরামর্শদাতারা মুখিয়ে থাকে সমাধান দেওয়া জন্য, রাষ্ট্রায়ত কোম্পানিগুলোকে প্রাইভেট সেক্টরে দাও, এবং এই পদ্ধতি অনুসরন করতে গেলে 40 হাজার লোক চাকরিচু্যত হবে। তেল এবং কয়লা উত্তোলন করার কাজে নিয়োজিত কোম্পানিগুলো অধিবাসীদের পূর্নবাসনের বিভিন্ন রঙ্গিন প্রকল্প সামনে আনছে যেনো তাদের কোম্পানি নির্বিবাদে খনিজ আহরন করতে পারে।
কলম্বিয়ার মাদক ব্যাবসার শেকড় অনেক গভীরে প্রেথিত হয়েছে, তা সহসা থেমে যাওয়ার সম্ভবনা নেই, আমেরিকায় পাচার হওয়া মাদক এবং অবৈধ্য আগ্নেয়াস্ত্রের চালান আসে কালম্বিয়া হয়ে এই বানী সামনে এনে আমেরিকা মাদকনির্মূল অভিযান চালাতে চাইছে কলম্বিয়ায়, কলম্বিয়ার সরকার রাজী হচ্ছে না, আরও একটা সংঘাতের সূচনা হতে পারে এই ভিত্তিতে।
সরকারের অব্যাবস্থাপনার সাথে যুক্ত হয়েছে সরকারের ক্ষমতাহীনতা, দেশের সব অংশ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রনে নেই, এই অবস্থায় ধনীরা নিজেদের জন্য প্রাইভেট আর্মির ব্যাবস্থা করেছে, তারা নিজেদের সম্পদ নিজেরাই রক্ষা করতে চায়। রাজনৈতিক সংঘাত, এই ধনী গোষ্ঠিকে নিয়ন্ত্রন করতে না পারার অক্ষমতা প্রশাসনকে দূর্বল করেছে।

এবার মানবিক বিপর্যয়ের দলিল খোলা যাক,
1985 থেকে প্রতিবছর সংঘাতে গড়ে 25 হাজার করে লোক নিহত হচ্ছে, গত 18 বছরে নিহতের সংখ্যা 3 লক্ষাধিক এবং এর 18% রাজনৈতিক হত্যা।
গত 1 দশকে 35 হাজারেরও বেশী লোক নিহত হয়েছে রাজনৈতিক মতাদর্শিক ভিন্নতার জন্য,
স্বাভাবিক মৃতু্যর প্রধান কারন হত্যা, কলম্বিয়ায় কোনো রকম রক্তপাত ছাড়া মরে যাওয়াটাই একটা আশ্চর্য ঘটনা। 18-45 বছরের অধিকাংশ পুরুষের মৃতু্যর প্রধান কারন এই সহিংস্রতা। মেয়েদের মৃতু্যর 2য় প্রধান কারন এই সহিংস্রতা।
যেখানে মোট মৃতু্যর 16 % রাজনীতির বলি, এবং গুপ্তহত্যা, সেখানে স্বাভাবিক মৃতু্যর স্বপ্ন দেখে সময় কাটানো যায়।
মোট জনসংখ্যার 10 শতাংশ মানুষ নিরাপত্তার জন্য গৃহহীন।
3 লক্ষ মানুষ ঘর ছেড়েছে,
11 লক্ষ লোক নিরাপত্তার জন্য ভিন দেশে আবাস গড়েছে।
30 লক্ষ কলম্বিয়ার নাগরিক আবাস নিয়েছে ভেনিজুয়েলায়,
কলম্বিয়ার জন সংখ্যা 3 কোটি 60 লক্ষ,
কলম্বিয়ায় নিরাপত্তার কারনে গৃহচু্যত মানুষের সংখ্যা পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক।
তবে এই মানবিক বিপর্যয় এবং নিরাপত্তাহীনতার কোনো রাজনৈতিক পুঁজি নেই, বাংলাদেশের মানবতাবাদী ব্লগারেরা এই পরিসংখ্যান নিয়ে কোনো কথা বলবেন না কারন এটাতে জনপ্রিয় হওয়ার কোনো উপাদান নেই।
আমরা লেবাননে নিহত 13 শত মানুষের নামে শোকগাঁথা লিখি, আমরা প্যালেস্টাইনে নিহত হওয়া 150 জন মানুষের সম্মানে নিজেদের ঘরে মোমবাতি জ্বালাই কিন্তু প্রতিবছর রাজনৈতিক কারনে নিহত হওয়া 20 হাজার মানুষের খবর আমরা রাখতে চাই না। আমরা সেই 36 লক্ষ গৃহহীন নরনারীর খবর রাখবো না, আমরা প্রায় 50 লক্ষ উদ্্বাস্তুর খোঁজ রাখবো না, কারন এটার কোনো রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক মূল্য নেই
সাবাশ মানবতাবাদী ব্লগার-
অবশ্য আমার কলম্বিয়ার কথা ভাবলে অশনি সংকেতের মতো বাংলাদেশের কথা মনে পড়ে।



সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০০৬ রাত ২:০১
৩৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×