somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হ্যালো থিওরি টেস্টিং 1, 2, 3,: 2: খাউক্কা জাতি বাঙালি

১৬ ই আগস্ট, ২০০৬ সকাল ৭:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

থিওরি টেস্টিং ধারাবাহিকের শানে-নজুল বুঝতে হলে আগের সংশ্লিষ্ট পোস্ট পড়তে হবে। যারা পড়েছেন, তারাও ঝালাই করে নিন। রসাস্বাদনে সুবিধা হবে। যারা আগে পড়েননি তাদের জন্য তো অবশ্য কর্তব্য নীচের লিংকে ঢুঁ মারা

Click This Link


বাঙালি একটা খাউক্কা জাতি (উৎসর্গঃ অন্যমনস্ক শরৎ)

আমাদের খাদ্যের অভাব সুতরাং জাতি আমাদের ক্ষুধার্ত। দুর্ভিক্ষ? সেও আমাদেরই আছে (শব্দটাও আমাদের কেবল; ভিক্ষার অভাব ঘটেছে বলে আর কোনো দেশে অর্থনৈতিক অবস্থাকে চিহ্নিত করা হয় না)। তবে সর্বশেষ যে বাঙালি নোবেল প্রাইজ বাগালেন তা এই দুর্ভিক্ষের থিওরি দিয়েই। ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ে নাড়াচাড়া করে বাহবা নেবো, নিজেকে অতো নীচে আমি নামাতে চাই না । আমি বরং বলতে চাই বাঙালি ভোজনরসিক, খেতে ভালবাসে। দুর্জনে বলতেই পারে দরিদ্র আর ক্ষুধার্তরা খাবার পেলেই পেটে পুরে রাখে, অভাবের সময়ের সঞ্চয় হিসেবে। 'এইবেলা পেটপুরে খেয়ে নাও, ওইবেলায় নাও পেতে পারো'-ই কি মূলমন্ত্র? সে তর্ক থাক। আগে মূলদাবীটাকে প্রতিষ্ঠা করি।

ভোজনরসিক শব্দটি বেশ রসমাখানো যোগবাদী (পজেটিভ) শব্দ। খাদক উপাধি দিলে দানব বা রাক্ষসের কথা মনে হয়। এই দুটির তুলনায় খাউক্কা শব্দটা বেশি লাগসই; নতুনত্ব আছে, স্মার্ট। যোগ ও বিয়োগবাদ দুটো বিষয়ই এর মাঝে খেলা করে। শব্দ ব্যবহারের উদাহরণ: ওরা 'খাউক্কা' পরিবারের সন্তান।

বাঙালি যে জাতি হিসেবে খাউক্কা, তার প্রমাণ বাঙালির জীবন থেকেই দেয়া যায়। জন্ম, মৃতু্য আর বিবাহ; মানুষের জীবনের তিন গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। মৃতু্যতে শোকপালন আর জন্ম ও বিবাহে আনন্দ সবাই করে। বাঙালির এ সবক'টা অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ হলো খানা-দানা। তারা বিয়া খায়, কুলখানি খায়, চলি্লশা খায়। কেউ মারা গেলে শোকের সময় কাটতে না কাটতে বিরাট খানার বিপুল আয়োজন। তবে মৃতু্যতেই সেই সংকট কাটে না। ফি বছর মৃতু্যবার্ষিকী। বাঙালির জাতির পিতার হত্যাদিবস গেল কাল। পথে-পথে মোড়ে-মোড়ে এলাকায় এলাকায় শোকপালন হয়েছে। এর সাথে খানাও ছিল; নামেই কাঙালিভোজ, আসলে এর নাম হওয়া উচিত বাঙালিভোজ।

পশ্চিমাদের দেখাদেখি জন্মদিন পালনটাও শুরু করলো বাঙালি। তবে কেক কেটেই থামে না তারা। পোলাও-বিরিয়ানি না খাওয়াতে পারলে জন্ম নিয়ে দুনিয়াকে কি আর দিলেন?

অবিবাহিতদের দেখলে লেজকাটা বয়োজ্যেষ্ঠরা খাওয়া-দাওয়ার কথা বলে সম্বর্ধনা জানায়। 'অনেকদিন পোলাও-বিরানি খাই না মিয়া, এই শীতে বিয়া লাগাও'। শীতে বিয়া লাগাইলে বিরানি খাইতে সুবিধা হয় কিনা সেই জরিপ চালানো দরকার। গরমে বিয়া হইলে পাড়া-প্রতিবেশির অসুবিধা কী?

জন্ম-মৃতু্য-বিয়াতে খাওয়া-দাওয়া নিয়া আর উদাহরণ দিবো না। জায়গার অভাব। গায়ে-হলুদ, মেহেদী সন্ধ্যা, পানচিনি, আকিকা, হাতেখড়ি, সাতমাইস্যা; জীবনের ধাপে ধাপে বাহারি খাওয়ার উৎসবের নাম আমার চেয়ে আপনারাই বেশি জানবেন। এবার অন্যদিকে চোখ ফেরাই।

পরীক্ষায় পাশ দিয়েছেন, নতুন চাকরি পেয়েছেন, প্রমোশন হয়েছে, নতুন বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড জোগাড়, বৃত্তি পেয়েছেন, লটারিতে 12 ইঞ্চি সাদাকালো টিভি; খাওয়া দিয়ে দিন। ইংরেজরা যেসব ঘটনায় বন্ধু-স্বজনকে বলে, 'লেটস্ সেলিব্রেট'। বাঙালিরা বলে 'মিয়া, একটা খানা দেও!'। সেলিব্রেশনের পোষাকী অনুবাদ 'উদযাপন' হলেও ব্যবহারিক বাংলা তাই 'খানা দেয়া'। উদযাপনের মত বিষয়টিকে খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলার পরও কি বলা যাবে না বাঙালির খাদ্যপ্রীতি মারাত্মক? তারা আসলে একটি খাউক্কা জাতি!

জীবনের মোড়ে মোড়ে ছাড়াও অনুষ্ঠান আছে নানা রকমের। মিলাদের কথা মনে পড়ে আগে। পূজা, কীর্তন, বড়দিন - বাঙালি যে ধর্মেরই হোকক না কেন, ধর্মের কোন অনুষ্ঠান বড় বুঝতে হলে বুঝতে হবে কোন অনুষ্ঠানে বড় খানা দেয়া হয়। মাজারে শিনি্ন, মানত থেকে শুরু করে খানা-দানার আয়োজন নাই কোথায়? ব্যান্ড-কনসার্টেও নাকি আজকাল প্যাকেট লাঞ্চ দেয়া হয়। জাতীয় কবিতা উৎসব বাদ দিলাম, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলনে উঁকি দিয়ে দেখেছি আয়োজকরা খানা-দানার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত।

খাটি বাঙালি খানার সাথে পিনা শব্দ ব্যবহার করে না বলে, খানা-দানা। (অর্থাৎ দানাদার খানা খাওয়া)। সুতরাং অভিধানে থাকলেও কোনো পান করায় বাঙালি নাই। বাঙালি পানকেও তুলে এনেছে খাওয়ার পর্যায়ে। পাশের প্রদেশের ভারতীয়রা তাই টিটকারি দেয়, 'বাঙালি সব কুছ খাতা হ্যায়, কুছ পিতা নেহি'। নিভর্ুল নৃতত্ত্ব। বাঙালি সিগারেট খায়, সিরাপ খায়, শরবত খায়, কোল্ড ড্রিংকস্ খায়, পানিও খায় এবং কালেভদ্রে হলেও মদও খায়।

যারা খাওয়াকে এত ভালবাসে তারা যখন রাষ্ট্র বানালো 1971 এ তখন খাদ্যের কথা ভুলেনি। তাদের জাতীয় পতাকা দেখলে মনে হয় সবুজ দস্তরখানের মধ্যে লাল সুরুয়াভর্তি তরকারির গোলাকার বাটি। বাঙালি তরকারিতে লালমরিচ ভালবাসে সেকথা বুঝতে লঞ্চ স্টেশনের রেস্টুরেন্টগুলোয় যাওয়ার দরকার নাই, তাদের পতাকার দিকে তাকালেই হবে। জাতীয় খাবার বলে জাতিরা কিছু ঠিক করে না। সুতরাং বাঙালির পছন্দের জাতীয় খাবারের নাম জানা কঠিন। তবে জাতীয় ফল একটা আছে মাশাআল্লাহ। জ্যাক সাহেবের এই ফল দিয়ে দশজনের একবেলা খানা দেয়া যায়। এই ফল আবার তারা খায় নানা প্রকারে। কাঁচা, পাকা ও শুকনো কাঁঠাল খাওয়ার চলও আছে। খাউক্কা জাতি ফলটি নিয়ে খুব গর্বিত; এর নাকি কিছুই ফেলা যায় না, সবই খাওয়া যায়। আষাঢ়ে গল্প শুনতে নাকি কাঁঠাল বিচি ভাজা খেতে হয়।

দুমর্ুখেরা বলবেন, ফল তো খাবার জন্যই। তা জাতীয় আর বিজাতীয় হোক। এর সাথে জাতিকে খাউক্কা বলার সম্পর্ক কী? তা কাঁঠালের মত ফলে যাদের পেট ভরে না তাদের জন্য রইলো শাপলা ফুল। বাঙালির জাতীয় ফুল। পৃথিবীর আরো কোনো জাতি তাদের জাতীয় ফুল পেটপুরে খেতে পারে বলে শুনিনি। বাঙালি পারে। গোপালগঞ্জের ছেলে শাপলাকে যখন জাতীয় ফুল বানালো তখন এর খাদ্যবৈশিষ্ট্যের কথা একেবারেই ভাবেনি একথা কেউ দিব্যি দিয়ে বলতে পারবে না। দুর্ভিক্ষে, অনাহারে বাঙালিতো এর আগে শাপলাকে খাদ্য বলেই জানতো!

যে জাতি জাতীয় ফুল পর্যন্ত খায়, তাকে আপনি কী বলবেন...?


আপনি যাই বলুন, আমি বলবো খাউক্কা জাতি।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×