somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝরাপাতার সাত সতেরো আর আমার আড়াই

১০ ই আগস্ট, ২০০৬ সকাল ৮:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রিসার্চ বেইজ লেখাগুলো ঠিক আমাদের জন্য নয়... ন্যাশনাল জিওগ্রাফি কিংবা আর একটা কোন পত্রিকার নাম তিনি বললেন -(নেচার হতে পারে ঠিক মনে নেই) ... এরা প্রোভাইড করতে পারে আমরা পারি না...".দেশের সবচাইতে কাটতিওয়ালা পত্রিকার মফস্বল পাতার ডাকসাইটে সম্পাদক যখন আমাকে ডেকে এই কথা বললেন আমার আক্কেল গুড়ুম... আমি তখন ফুলটাইম ভবঘুরে ... আর পড়াশোনার সঙ্গে যেটুকু যোগ সেটা পরীক্ষা আর নাম্বারের ইকুয়েশনের বাইরে কখনও যায় নি... আর আমাকে রিসার্চ ... এই জটিল শব্দটার সঙ্গে জুড়ে দিলেন ব্যাপারটা হাসির না কান্নার ঠিক বুঝতে পারছিলাম না... কারন মোনাজাতউদ্দিনের রিপোর্টগুলো পড়ে একসময় সাংবাদিকতার ইচ্ছা হয়েছিল কিন্তু সেটা কখনও পরিকল্পনা পর্যন্ত গড়ায় নি... যে সময়ের কথা বলছি সেই সময়ে আমি শহর থেকে পালানোর অভিপ্রায়ে বেশ কিছুটা সময় পাহাড়ে পাহাড়ে কাটাই আদিবাসীদের সাথে..... আমার কোন এক শুভাকাঙ্খীনি বড়দি তখন সেই সম্পাদকের পিএস ... একদিন শহরে এলে পাকড়াও করে বললেন - তুইতো আদিবাসীদের ওখানে ঘুরে ঘুরে বেড়াস - তো ওদের উপর রিপোর্ট টিপোর্ট কর না... ভেবে দেখলাম মন্দ কি... আমার গলায় বিশেষ রিপোর্টারের আইডিন্টিটি ঝুলিয়ে দিলেন যখন তখনও ব্যাপারটা মন্দ লাগে নি... বেশ কিছুদিন ঘুরে ঘারে শহরে ফিরে আসার সময় সঙ্গে নিজের আড়াইটা লেখা ... গারো সমপ্রায়ের সাথে আমি একনাগাড়ে সবচাইতে বেশিসময় থাকি পাচ মাস.. ভাঙা ভাঙা মিলিয়ে বছরের কিছুটা বেশি... এই সময়গুলোতে গারো মিউজিকের চেইন্জটা জানতে গিয়ে এক আজব অভিজ্ঞতার মধ্যে পরি... সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে , সময়ের সাথে সাথে সঙ্গীত পাল্টে যায়... এর পেছনে অনেক সোশ্যাল ফ্যাক্টর কাজ করে এটাও সত্য.. কিন্তু বছরের ইতিহাসের অনুসন্ধানে এর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরন বের হযে আসবে এটাও আমাদের জানা... কিন্তু মাত্র বারো বছরের মধ্যে গারো ( গারোরা নিজেদের মান্দি নামে পরিচয় দেন- অনেকে কিন্তু গারো বললে মনক্ষুন্ন হন) গানের পরিবর্তন ... অনেক আকষ্মিক অনেক তীব্র এবং বাকময়... মজার ব্যাপার হচ্ছে এই পরিবর্তনের সবচাইতে বড় বাকটি মাত্র ষাট বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ঘটেছে... উনিশশত আটচলি্লশ থেকে ষাট এর মধ্যে ... মূল কারন তাদের সমপ্রদায়গত জমি হারানো... জমির মালিকানা হারানোর সাথে সাথে তাদের সঙ্গীত.. গানের কথাই শুধু নয়.. সুরও .. পরিবেশনার ঢংটাও পাল্টে গেল - আমি শ্রেফ কৌতূহলে ( তখনও পত্রিকার ব্যাপারটি ঘটে নাই) ই ব্যাপারে খোজ খবর নেওয়া শুরু করি... ব্যাপারটা খুব সাধারন .. আপনি যদি আদিম সমাজে যান তাহলে দেখবেন গান কিংবা সঙ্গীত যাই বলুননা কেন বাজানো বা গাওয়া যে কোন উপস্থাপনার ধরনের অনেকটাই সমবেত... আপনি যদি গোষ্ঠীকে ভেঙে দেন এবং পূর্বকালের মতো গোত্রযাত্রার উপায় যদি না থাকে তবে সে হয়ে পড়ে একা .. অনেক কিছুর মতোই গানও জন্মায় সমাজবিজ্ঞানের সূত্রমতে .. একক ব্যক্তিগত আনন্দ বেদনার রূপ-রস মেখে... ( আর একটি মজার ব্যাপার আছে ... বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে বাঙালীদের যুদ্ধে পার্টিসিপেশনের রেশিও থেকে গারো সমপ্রদায়ের মুক্তি সংগ্রামে পার্টিসিপেশনের রেশিও অনেক হাই... গারো সঙ্গীতের যুথবদ্ধ রুপ থেকে ইন্ডিভিজূ্যয়াল রূপের এই পরিবর্তনের সাথে এই ঘটনার একটা যোগসূত্র আছে.. কোন গবেষক এই বিষয়টি নিয়ে এখনও কাজ করেছেন কিনা জানা নেই.. কারো ইন্টারেস্ট থাকলে কাজ করে দেখতে পারেন... খুবই ইন্টারেস্টিং একটা সাবজেক্ট হবে) এখনও অনেকে সেই পরিবর্তনের সাক্ষ্য বুকে ধরে বেচে আছেন... আমি তাদের কাছে বসে রাতভর... আগুনের লালচে আলোতে হান্ডির গেলাসে মুখ রাখতে রাখতে সেই গল্প শুনতে শুনতে ভোরকে দেখেছি ........ পাবর্ত্য চট্টগ্রামের সবচাইতে আদিমতম জাতি মুরঙরা ( ওদের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যেদিক দিয়ে রাস্তা যায় ওরা সেই রাস্তা থেকে আরো দুরে চলে যায়.. সেইধর্মহীন ... তাদের লিখিত কোন ভাষারূপ নেই.. অথচ তাদের একদিন ধর্ম ছিল .. ভাষার লিখিত রুপ ছিল ... কিভাবে তারা তাদের ধর্ম হারালো ... অক্ষর হারালো এই নিয়ে একটি গল্প আছে .. এই গল্পটিরও কয়েকটি ভার্সন আছে... ওদের সাথে আমার বাস ছিলো তিন মাসের ...সঙ্গে এই দুটো লেখা আর একটা বমদের উপর ছোট্ট একটা ফিচার টাইপের জিনিষ নিয়ে হাজির হতেই পাতার সম্পাদকের সেই গম্ভীর মন্তব্য... সেই দিন বুঝলাম একেই বুঝি বলে রিসার্চ... তো সেইদিনই আমার আবার ভবঘুরে জীবনে ফিরে যাওয়া... আরো কিছুদিনের জন্য... ওই আইডেন্টিটি কার্ডটা সেইদিন ফিরিয়ে দিয়ে আসলেও ভেতরে ভেতরে ওটাও যে আমাকে খেয়ে ফেলেছে বুঝেছিলাম কয়েকদিন পরেই.. তাই আবার ফিরে আসা ... যারা ক্যামেরা চালান তাদের মধ্যে একটা কথা প্রচলিত আছে... যদি দৃশ্যগ্রাহ্য সমস্ত কিছু যদি একই অবস্থানে থাকে , লাইট কন্ডিশনও যদি একই থাকে, এবং ফ্রেম অবিকল একই রেখে, একই ক্যামেরায় সমস্ত টেকনিক্যাল নন টেকনিক্যাল ফিচারগুলো একই অবস্থানে রেখে দুইজন ক্যামেরাম্যান যদি ছবি তোলেন দুটো ছবি একটু হলেও এক হবে... নিওমেরিক্যাল কনটেকট্স ও পারসোনাল বা দৃষ্টিভঙ্গিগত প্রভাবমুক্ত না.. এই নিয়ে তো বিরাট দার্শনিক বিতর্ক এরও অনেকদিন পার হয়ে গেল... তবু আমরা ডাটার উপর ভর করা ছাড়তে পারি না কারন এটিই নৈর্ব্যেক্তিকতার সবচাইতে কাছের বলে মনে করা হয়... তবে গবেষনা কিংবা সামাজিক জীবনের প্রাত্যহিকতায় কোয়ানেএটটিভ এপ্রোচের একটা বড় শক্তি এটা যে এটি আমাদের পারসোনাল প্রায়োরিটি বা ইগোসেন্ট্রিক বিচারের বিরুদ্ধে একটা মোক্ষম অস্ত্র ... অবশ্য একই কারনে এটিও সবচাইতে বেশি প্রতিক্রিয়াশীল কারন এটি ঘোষনা করে সংখ্যাগরিষ্ঠের একনায়কত্বের.... আর মিঙ্ড ... ব্যাপারটা বুদ্ধিমানের বটে কিন্তু বড় গোলমেলে... একবার আমার এক বন্ধু পিঠ চাপড়ে বলেছিলো সবই প্রোপরশন বুঝলে... বুঝতে না পেরে বোকা বোকা চোখে তাকাতে সে দূবের্াধ্য হাসি হেসে বললো .. সত্যর অনেক পিঠ বুঝলি সত্যের অনেক পিঠ.... তোর বুঝতে- রিসার্চ লাগবে... ধন্যবাদ ঝরাপাতা
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০০৬ বিকাল ৪:৫৬
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×